গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি: নাটোর-৪ আসনের উপনির্বাচনে নৌকা পাওয়া নিয়ে কোনো বিতর্ক না থাকলেও নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তবে নানান কথা উঠছে প্রার্থীর রাজনৈতিক জীবনী নিয়ে। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বড়াইগ্রামের উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী।
তার মনোনয়ন পাওয়াকে কেন্দ্র করে গুরুদাসপুরের সাধারণ নেতা-কমীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অসন্তোষ রয়েছে বড়াইগ্রাম উপজেলার বৃহৎ একটি অংশেরও। তবে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে পশ্চিম বড়াইগ্রামের বনপাড়া এলাকায়। মূলত প্রবীন নেতা আব্দুল কুদ্দুসের মৃত্যুতে ৩০ আগস্ট আসনটি শূণ্য হওয়ায় এখানে ১১ অক্টোবর উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
দলীয় সূত্র বলছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বিএনপিকে পরাজিত করে ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। মূলত আওয়ামী লীগের পক্ষে এই নেতারই দুই উপজেলায় নিজস্ব ভোট ব্যাংক ছিল। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে ৭ বার মনোনয়ন পেয়ে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই নেতার মৃত্যুতে ৪৭ বছর পর আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে।
বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন, দল মনোনীত প্রাথী ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী ২০১০ সাল থেকে আওয়ামী রাজনীেিত প্রবেশ করেন। প্রয়াত সংসদ সদস্যের মদদপুষ্ট হওয়ায় ২০১৫ সালের দিকে এই নেতা জেলা কমিটির স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এরপর বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আকরামুল ইসলামের মৃত্যুতে ২০১৮ সালের দিকে সেখানে উপনির্বাচনের আয়োজন করা হয়। ওই নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনেকেই দলীয় প্রতিক নৌকা চান। তবে সেসময় ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীকে নৌকা দেয় আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন এই প্রাথী।
বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. মিজানুর রহমান জানান, ২০২০ সালে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী। সর্বশেষ এই নেতা ২০২২ সালে বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে দাঁড়ালেও সভাপতি নির্বাচিত হন আব্দুল কুদ্দুস।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রামের একাধিক নেতা-কমী জানান, উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়া ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পড়া অস্থায় জাসদ ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। লেখা-পড়া শেষের পর বড়াইগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় রোগী দেখা শুরু করেন। এক পর্যায়ে ২০০৫ সালের পরে বড়াইগ্রামের বনপাড়ায় প্রতিষ্ঠা করেন পাটোয়ারী জেনারেল হাসপাতাল। মূলত তখন থেকে তিনি চিকিৎসা পেশায় মনোনিবেশ করেন। আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতিতে নবীণ হওয়া স্বত্তেও তিনি নৌকা প্রতিক পেয়েছেন।
অনেক নেতা মনে করেন, নাটোর-৪ আসনে (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) ৭ বার নৌকা প্রতীকে ভোট করে ৫ বার জয়ে এনেছিলেন প্রয়াত এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস। অথচ একই আসনে ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করা সিদ্দিকুর রহমানকে এত কম সময়ে দলীয় প্রতিক নৌকা দেওয়ায় নেতা-কর্মী সমর্থক এমনকি সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
দলের কয়েকজন প্রবীণ নেতা জানান, গুরুদাসপুরের শাহনেওয়াজ আলী, কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, আহম্মদ আলী মোল্লা ও বড়াইগ্রামের কেএম জাকির পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতা। এসব নেতারা ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করেছেন। অথচ এসব নেতাকে মূল্যায়ণ না করে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করা সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
মনোনয়ন চাওয়া গুরুদাসপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জ্যেষ্ঠাতা অনুসারে সিদ্দিকুর রহমান রাজনীতিতে নবীণ। সিদ্দিকুরের চেয়ে আমি, শাহনেওয়াজ, জাকির হোসেনসহ অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা ছিলাম। কিন্তু আমাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। একারণে দুই উপজেলাতেই অসন্তোষ রয়েছে।’
নৌকার ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী মোবাইল ফোন রিসিভ না কারায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।