নাটোরের ৪টি আসনেই আ’লীগ দলীয় প্রার্থীর গলার কাঁটা  দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী

Spread the love

আবুল কালাম আজাদঃ আসন্ন ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নাটোরের ৪টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বড় চ্যালেঞ্জ নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দলীয় প্রার্থীদের গঁলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। ভোটে বিএনপি- জামায়াতের প্রার্থীরা অংশ না নিলেও তাদের সমর্থিতদের ভোট নিজেদের করতে প্রার্থীরা আপ্রাণ  চেষ্টা করছেন। এছাড়া অন্য দলগুলোর প্রার্থীরা ভোটের মাঠে থাকলেও আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থীদের সাথে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মূল লড়াই হবে। যদিও নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দল থেকেও উৎসাহ দেয়া হচ্ছে।

দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে, নির্বাচনের মাঠে একই দলের একাধিক প্রার্থীর উপস্থিতি বিশৃঙ্খলা এবং দলীয় কোন্দল বেড়েই চলছে বলেও মনে করছেন দলের কেউ কেউ।

গত ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত  জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম এবং নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম পরস্পরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে সভায় উত্তেজনা তৈরি হলে জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা দুজনকেই থামিয়ে দেন।

আগামি ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয়  দ্বাদশ নির্বাচনে নাটোর-১ লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলা নিয়ে ।নাটোর-১ আসনে মোট ৯ জন প্রার্থী হয়েছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল আওয়ামি লীগের মনোনীত প্রার্থী ।তবে এ আসনে ৪ জন আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে  প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। আসনটিতে শহিদুল ইসলাম বকুলের সঙ্গে ২০১৪ সালের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে বলে স্থানীয় ভোটাররা ধারণা করছেন। এছাড়া লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ সাগর, জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক কাজল রায়, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনিসুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এই আসনটিতে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আশিক হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির লিয়াকত আলী ও স্বতন্ত্র জামাল উদ্দিন ফারুক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নাটোর-০২ আসন নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলা নিয়ে । এই আসনটিতে ৫ জন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলকে আওয়ামী লীগ দল থেকে  মনোনয়ন দিয়েছে। দুই বারের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী  জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার। জেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ আহাদ আলী সরকারের পক্ষে অবস্থান নেয়ায়  নৌকা এবং আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্তীর সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে অনেকের ধারণা ।

আসনটিতে বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির বজলুল রশিদ, জাতীয় পার্টির নূরুনবী মৃধা ও জাসদের  শফিকুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নাটোর-৩ আসন  সিংড়া উপজেলা নিয়ে। এই আসনে মোট ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। আসনটিতে ৩ বারের সংসদ সদস্য ও দুইবারের আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পলকের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শফিকুল ইসলাম শফিক।

এই আসনটিতে স্বাধীনতার পর ২০০৮ সালে প্রথম আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হয়। পলকের আগে আসনটিতে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী জয়ী হতে পারেনি। তবে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ২ জন প্রার্থী থাকায় বিএনপি-জামায়াতের ভোটাররা শফিকের পক্ষে অবস্থান নেয়। ফলে শফিক চেয়ারম্যান নির্বাচিত  হন।

সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতের প্রার্থী না থাকায় তাদের ভোটার শফিকের পক্ষে অবস্থান নিলে পলকের সঙ্গে শফিকের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে জানাচ্ছেন  ভোটাররা।

এছাড়া আসনটিতে ওয়ার্কার্স পার্টির মিজানুর রহমান, জাকের পার্টির রাকিবা হক, বাংলাদেশের তরিকত ফেডারেশনের (বিটিএফ) আলতাফ হোসেন,বাংলাদেশ কংগ্রেসের আমিরুল ইসলাম, বিকল্প ধারার আনোয়ার হোসেন ও তৃণমূল বিএনপির আবুল কালাম আজাদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নাটো-৪ আসন বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলা নিয়ে নিয়ে । আসনটি গত অক্টোবরে উপ-নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীকে এবারও মনোনয়ন দেয়া হয়েছে । তবে  এই আসনটিতে ত্রিমুখী লড়াই হবে। এই আসনে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক বড়াইগ্রাম উপজেলা। এছাড়া এই আসনের ৫ বারের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (চলতি বছরের আগস্টে মারা যান) প্রয়াত আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে আসিবফ আব্দুল্লাহ বিন কুদ্দুস স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। স্থানীয় ভোটাররা জানান, এই ২ প্রার্থীর মধ্যে মূল  প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে না থাকায় তাদের ভোটারদের ভোট নেয়ার চেষ্টায় আছেন প্রার্থীরা। এছাড়া এ আসনে স্বতন্ত্র হিসাবে গুরুদাসপুর পৌর আ’লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, তৃণমূল বিএনপির আব্দুল খালেক সরকার, বিএনএমের গাজী আবু সায়েম রতন, জাকের পার্টির রবিউল করিম, বাংলাদেশ কংগ্রেসের শান্তি রিবারু সুজন আহম্মেদ (স্বতন্ত্র),  এবং জাতীয় পার্টীর মোঃ আলাউদ্দিন মৃধা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।তবে জাতীয় পার্টির আলাউদ্দিন মৃধা দলীয় কোন্দলের অজুহাতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁরান্নোর ঘোষনা দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা আবু নাছের ভূঁইয়া জানান, এ নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা, ফ্রি স্টাইলে হতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘দলীয় সরকার বহাল থাকলেও আমরা এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করছি। কমিশন যে বিধিবিধান প্রয়োগ করতে বলেছে, আমরা তা প্রয়োগ করব। এ ক্ষেত্রে কে কোন দলের তা দেখব না।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD