সৈয়দ শুকুর মাহমুদ লেখার ভুবনে এক দৃষ্টান্তের বাতিঘর

Spread the love

সৈয়দ শুকুর মাহমুদ লেখার ভুবনে এক দৃষ্টান্তের বাতিঘর

অধ্যাপক ফজলুর রহমান

জীবন কর্মময় একথা প্রায়ই শোনা যায়-যদি তাই হতো কে আর বাঁচতে চাইতো । যদি তাই হতো তাহলে ঢাকা স্টেডিয়াম পাটের গুদামে পরিণত হতো। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ঘনিষ্ট সাথী (বর্তমানে বিশিষ্ট ব্যাংকার) বন্ধু আকমল প্রায়-ই এরকম কথা বলতো- তার মানে একটু বেশী পড়লে, বেশী কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকলেই বলতো দোস্ত! আয় ঘুরে আসি। ঘুরে ফিরে ব্যস্ততম পৃথিবীতে মাঝে মধ্যে ফিরে দেখার যে একটা আনন্দ তা বন্ধু আকমলের কাছ থেকেই শেখা। এভাবে চলতে চলতে মনের মধ্যে এমন এক জানার আকাংখার উদ্ভব হয়েছে যে, মনে হয় সারা পৃথিবী আমার। যেখানে প্রয়োজন সেখানে যাব। যা দরকার তাই নেব। যা হোক গত ০২/০৮/২০১৮ ইং তারিখ রবিবার জš§াষ্টমীর ছুটি থাকায়- আমার প্রিন্সিপাল জনাব মোঃ জাফর ইকবাল স্যার আমাকে খুব সকালে ফোন দিয়ে বললো ফজলুর রহমান আজ ছুটির দিন, চলো সাহিত্যের ভুবনে একটু সময় ব্যয় করে আসি। তাঁর সফর সঙ্গী হয়ে এর আগে আরো অনেক জায়গায় গিয়েছি। কিছু দিন আগে ঐতিহাসিক চলন বিলের আদর্শ গ্রাম হুলহুলিয়া দেখে এলাম (সিংড়া,নাটোর)। গ্রাম দেখে চমকে গিয়েছিলাম। মনে হলো দেশের ইতিহাসে এরকম ব্যতিক্রমধর্মী গ্রাম ২য়টি আছে কিনা জানি না। গ্রাম দেখার পর আগ্রহ ভরে কিছু লিখতে বাধ্য হয়েছিলাম।
আজ ছুটির দিনে ঐতিহাসিক চলন বিলের সব চেয়ে কর্মব্যস্ততম জনপদ যমুনা, করতোয়া, ফুলজোড়, বড়াল কনাই অববাহিকার বেষ্টনে বেস্টিত বিখ্যাত কবি, সাধক, তাপস ও অলি আউলিয়ার পূণ্যভ‚মি বৃহত্তর পাবনা জেলার শাহজাদপুর। এ জনপদটা এতো বিখ্যাত এজন্য যে, সাধক কুলের ওস্তাদ শামস্ তাবরিজ এখানে ঘুমিয়ে আছেন। বিশ্ব কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর তাঁর গুরুত্বপূর্ণ সময় গুলো অতিবাহিত করেছিলেন এই পূণ্যভ‚মিতে। আবার প্রখ্যাত সাহিত্যরতœ খ্যাত নজিবর রহমান এর জšে§াও এখানে।
যা হোক যার জন্য আজ লিখতে বসেছি, যাকে নিয়ে কিছু লিখতে উৎসাহ বোধ করছি। তিনি হলেন বিশিষ্ট কবি সৈয়দ শুকুর মাহমুদ। ১৯৫২ সালের ৯ই নভেম্বর বিখ্যাত সৈয়দ পরিবারে তাঁর জš§। তাঁর সম্পর্কে যতদুর জেনেছি তিনি নানা প্রতিকুলতার মধ্যদিয়ে শৈশব ও কৈশরের দিনগুলো অতিবাহিত করেছেন। তিনি কোন প্রতিষ্ঠানে পড়েননি, যা একটু হাতে খড়ি তাঁর বাবার কাছে। লেখাপড়ার জন্য কোন শিক্ষকও ছিল না। তাঁর মানে দাঁড়ায় তিনি স্বশিক্ষিত। আমার জানা ছিল না চলন বিলে এত বড় একজন কবি, কথা সাহিত্যিক, মিষ্টভাষী, পন্ডিত আছেন, যিনি কিনা আবার স্বশিক্ষিত। আসলে সত্য কথা বলতে কি মহান সৃষ্টিকর্তা যাদের সরাসরি শেখান, যাদের সরাসরি লেখান, তাঁদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হয় না। বাউল সম্রাট লালন, বিদ্রোহী কবি নজরুলসহ অনেক প্রখ্যাত সাধক ও লেখকরাই এর জলন্ত উদাহরন।
সৈয়দ শুকুর মাহমুদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর-তিনি আমার হাতে ১০টি কবিতার একটি পান্ডুলিপি দিয়ে আমাকে বললেন, প্রফেসর সাহেব কবিতা গুলো এক বিশেষ বইয়ের জন্য সিলেকশন দিতে চাচ্ছি দেখুনতো কেমন হয়েছে- একজন নবীন লেখক হিসাবে হয়তঃ লেখার জগতে আমি একেবারে নবীন। তার পরেও যতটুকু বুঝলাম, একজন কবির লেখনি কত হৃয়দস্পর্শী ও গভীর হলে পাঠককে প্রতিটা লাইনে, প্রতিটা চরনে থমকে দিতে পারে। খ্যাতিমান লেখক হুমায়ুন আজাদ এর একটি কবিতা পড়েছিলাম। “শব্দ থেকে কবিতা”। আসলে এই শব্দ গুলো মিলিয়েই তো কবিতা লিখতে হয়। শব্দের তাল লয় ঠিক থাকলে মনে হবে শব্দ গুলো যেন কথা বলছে। যা মনের মধ্যে ভাব, আবেগ ও ভাবনার উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে তাইতো কবিতা ! কবি সৈয়দ শুকুর মাহমুদ এর কবিতা পড়ে তাঁকে একজন পথিতযসা কবি হিসাবেই আমার মনে হয়েছে। একটা পড়ার পর আরেকটা পড়ার যে আবেগ, যে আকর্ষণ-এটাই শুকুর মাহমুদের লেখনির মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। এর মধ্যে তাঁর কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখা “অনাদরে কেন আজ মায়ের ভাষা, মানব সভ্যতা ও মানুষের ভাষা, রোহিঙ্গা মুসলিমদের আদি ইতিহাস, ভারত উপমহাদেশে মুসলিম শিক্ষা ও স্বাধীনতার সুচনা। মানবতা ও বিবেক সহ অনেক গরুত্বপূর্ণ সময় উপযোগী লেখনি পাঠকদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে চলেছে। তাছাড়া নতুন লেখক ও কবি সৃষ্টির পিছনেও তিনি অনন্য অবদান রেখে চলেছেন । প্রখ্যাত লেখক নজিবর রহমান সাহিত্যরতেœর ঘনিষ্ট আত্মীয় (নাতী) হলেও ইতোমধ্যে তিনি স্বনামে পরিচিতি লাভ করেছেন। শুধু শাহজাদপুর নয় গোটা চলন বিলের একজন বিশিষ্ট কবি, সাংবাদিক, লেখক, ও গবেষক, বিশেষ করে কথা সাহিত্যিক হিসাবে আলাদা একটা জায়গা করে নিয়েছেন। আর একজন লোকের বড় গুণ তাঁর সৃজনশীলতা। লেখায় যেমন প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি কথায়, আলাপচারিতায়, চেহারায় সত্যিই এক অসাধারন মানুষ কবি সৈয়দ শুকুর মাহমুদ। চেহারাতে যেন অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ টি.কের প্রতিচ্ছবি। সৈয়দ পরিবারে জš§ গ্রহণ করলেও সৈয়দ এর অহমিকা তাঁর মধ্যে লক্ষনীয় নয়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধেও তিনি অবদান রাখতে পেরেছেন। তাই তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাও বটে।
আমরা তাড়াশ থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা পত্রিকার মাধ্যমে প্রায়ই তাঁর লেখা পড়তে পাই। ভাল লাগে তাঁর রচনাবলী। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, তিনি আরো অনেকদিন চলনবিলের মানুষের কাছে সাহিত্যের বিচিত্র পুষ্পমালা উপহার বিলিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু র্দুভাগ্য মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁকে আর সে সময়টা দিল না। আমরা তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। মালিক যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD