সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা, সংখ্যা ১৪, ২০২৩

Spread the love

আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস 

ডেস্ক রিপোর্ট ঃ আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে সর্বোচ্চ অর্জনের ও আত্মগৌরবের একটি দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি বিজয় ছিনিয়ে আনে।
বাঙালি জাতির ইতিহাস হাজার বছরের পরাধীনতার ইতিহাস। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের হাত থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাধীন হলেও এই ভুখন্ডের বাঙালির স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আসেনি। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্রে ভিত্তিতে ভারত বিভক্ত হয় এবং পূর্ব বাংলাকে নিয়ে পাকিস্তান নামে একটি অসম রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। তখন থেকেই পাকিস্তানেরনের শাসক গোষ্ঠী বাঙালির ওপর চেপে বসে এবং শাসন, শোষণ ও নির্যাতনের স্টিম রোলার চালায়। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জাতি ১৯৭১ সালে উপনীত হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আধুনিক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাঙালি জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। এরই প্রেক্ষাপটে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে বন্দি করে রাখা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতেই তাকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত বাংলাদেশের সরকারের অধীনে পরিচালিত দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। এই বিজয় অর্জনে মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান আর দুই লাখ মা-বোনের ত্যাগ-তিতিক্ষায় এই বিজয় অর্জিত হয়। কোটি বাঙালির আত্মনিবেদন ও গৌরবগাঁথা গণবীরত্বে পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় বাঙালি জাতি।
এ দিবসটি বাঙালির বিজয় দিবস ও বাংলাদেশের জাতীয় দিবস। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। দিনটি সরকারি বেসরকারি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপন করছে। সূত্রঃ বিডিনিউজ২৪।

গাজায় যুদ্ধবিরতি চেয়ে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস

ডেস্ক রিপোর্ট ঃ ফিলিস্তিনের গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। বাংলাদেশ সময় গত বুধবার ভোর ৪টার আগে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় প্রস্তাবটি পাস হয়। খবর: সিএনএন ও আলজাজিরা’র
মানবিক দিক বিবেচনায় গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে মৌরিতানিয়া ও মিসর এই প্রস্তাব তুলেছিল। বাংলাদেশ ও ভারতসহ ১৫৩টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে।তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলসহ ১০টি দেশ ভোট দিয়েছে বিপক্ষে। আর ভোটদানে বিরত ছিল ২৩টি দেশ। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান নৃসংশ হামলা থামানোর আহ্বান জানিয়ে গত শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব তুলেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। প্রস্তাবটিতে ভেটো দেয় নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র।গাজায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এতে করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকাটির ১৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত ও ২৩ লাখ বাসিন্দার ৮০ ভাগই উদ্বাস্তু হয়েছেন। সূত্রঃ সমকাল।

প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেই রেজাল্ট আনতে হবে: কাদের
ডেস্ক রিপোর্ট ঃ সবাইকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে নির্বাচনে জিততে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, প্রতিদ্ব›িদ্বতা আমরাও করবো, শরিকদেরও করতে হবে। প্রতিদ্ব›িদ্বতার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেই নির্বাচনের রেজাল্ট আনতে হবে। গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। দেশ, জাতির নিরাপত্তার জন্য বিএনপি-জামায়াত সবচেয়ে বড় হুমকি-এমন অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মানুষকে জিম্মি করে রাজনীতি করে। বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচি মানেই যানবাহনে আগুন, সহিংসতা, গুপ্ত হামলা। গত সোমবারও বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছে। আমরা বলতে চাই, সহিংসতা করে, সন্ত্রাস করে নির্বাচন বানচাল করা যাবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্বাচনের বিপক্ষে যে কোনো বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানাই। সূত্রঃ কালের কণ্ঠ।

ফিলিস্তিনি প্রাণহানির সংখ্যা ১৮ হাজার ছাড়িয়েছে

ডেস্ক রিপোর্ট ঃ ইসরাইল ও হামাসের চলমান যুদ্ধে অবরুদ্ধ গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ১৮ হাজার ৪১২ জনে পৌঁছেছে। দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে ইসরাইলি হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৫০ হাজার ১০০ ফিলিস্তিনি। গত মঙ্গলবার হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, কেবল গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় গাজায় কমপক্ষে ২০৭ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া একই সময়ে আহত হয়েছেন আরও ৪৫০ জন। ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় উপত্যকাজুড়ে ধ্বংসস্তুপ তৈরি হয়েছে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ ভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচে আরও অসংখ্য মানুষ আটকা পড়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষাবাহিনী (আইডিএফ) বলছে, গত অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনী ৭ হাজারের বেশি হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। সূত্রঃ যুগান্তর।

তাড়াশে বেগম রোকেয়া দিবস পালিত

লুৎফর রহমান তাড়াশ ঃ “নারীর জন্য বিনিয়োগ সহিংসতা প্রতিরোধ” এই প্রতিপাদ্য নিয়ে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বেগম রোকেয়া দিবস ও আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উদযাপন উপলক্ষে জয়িতাদের সন্মাননা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মনি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক মর্জিনা ইসলাম, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খাদিজা নাসরিন,চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান ম্যাগনেট, নারী কাউন্সিলর রোখসানা রুপা, সিনিয়র সাংবাদিক অধ্যাপক মেহেরুল ইসলাম বাদল, তাড়াশ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মালিহা মুক্তি, তাড়াশ মহিলা ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী হিমু সরকার প্রমুখ ।
সভাপতি বক্তব্য মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বেগম রোকেয়ার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে নারী সমাজকে আত্মোন্নয়নে ব্রতী হতে হবে। বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় সমাজ ছিল নানাবিধ কুসংস্কারে পূর্ণ। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে তিনি নারী জাগরণের অগ্রদূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ঊনবিংশ শতাব্দীর এই খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজসংস্কারক ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ শীর্ষক কার্যক্রমের আওয়তায় অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারীর স্বীকৃতি স্বরূপ উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা সেলিনা খাতুনকে সন্মাননা সনদপত্র ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারীর ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা মাহফুজা খাতুনকে সন্মাননা সনদপত্র ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান এই ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সন্মাননা সনদপত্র ও ক্রেস্ট পেয়েছেন জহুড়া জান্নাত। অপরদিকে সফল জননী নারী ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা সন্মাননা সনদপত্র ও ক্রেস্ট পেয়েছেন মোছাঃ রোকেয়া হোসেন।

 

শহীদের সন্তান ভিক্ষা করে খায় !!

আব্দুল কুদ্দুস তালুকদার ঃ সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউপির ধলজান (চকপাড়া) গ্রামে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার উষালগ্নে ডিসেম্বর মাসের ১২ তারিখ ২.৩০ মিনিটে পাকহানাদার বাহিনীর দোসর ঘৃনিত রাজাকার আলবদরদের হাতে ৪ জন নীরিহ গ্রামবাসী শহীদ হন। এরা হলেন ১। হরিপদ রায়, পিতা – দীনবন্ধু রায় ২। দীনেশ চন্দ্র , পিতা – বীরেন চন্দ্র ৩। সোমেশ্বর চন্দ্র সিংহ, পিতা – যশোবন্ত সিংহ । সাকিন – ধলজান ৪। পরেশ চন্দ্র পিতা – পঞ্চানন চন্দ্র গ্রাম লাংগলমুড়া (ঘুরকা ইউপি)। এর মধ্যে শহীদ হরিপদ রায়ের মেয়ে সাধনা (৫৫) আজও ভিক্ষা করে খায়। না পেয়েছে সরকারি ভাতা না পেয়েছে স্বীকৃতি। সমাজের সকলের কাছে সে নিবেদন জানিয়েছে, যেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার দিকে নজর দেন।

সিরাজগঞ্জে আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থীদের আর্থিক অনুদান প্রদান

ডেস্ক রিপোর্ট ঃ সিরাজগঞ্জে আত্মসমর্পণকারী ৩১৪ জন চরমপন্থিকে পুনর্বাসনের আওতায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক দেওয়া প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে সিরাজগঞ্জে র‌্যাব-১২ প্রধান কার্যালয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন আত্মসমর্পণকারী ৩১৪ জন চরমপন্থির মধ্যে আর্থিক অনুদানের চেক হস্তাস্তর করেন।
সিরাজগঞ্জ র‌্যাব-১২ অধিনায়ক মারুফ হোসেনের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম হোসেন আলী হাসানসহ র‌্যাবের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ। অনুষ্ঠানে র‌্যাব মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেন, একসময় দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় চরমপন্থি সর্বহারা দলের সদস্যরা খুন, ডাকাতি, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে উক্ত জেলাসমূহে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। সময়ের পরিক্রমায় র‌্যাবের উপর্যুপরি অভিযানে চরমপন্থিদের সৃষ্ট ত্রাসের রাজত্ব ভেঙে পড়ে। অধিকাংশ চরমপন্থি দলের সদস্যরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। অনেকে অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করে। র‌্যাব-১২ তাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তিনি আরও বলেন, আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থি সদস্য ও তাদের পরিবারকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করার জন্য র‌্যাব-১২ ‘উদয়ের পথে’ নামক পাইলট প্রোগ্রামের মাধ্যমে হস্তশিল্প প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বৃত্তিমূলক ও কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল’ থেকে ৩১৪ সদস্যকে ১ লাখ টাকা করে মোট ৩ কোটি ১৪ লাখ টাকার আর্থিক অনুদান প্রদান করেছেন। সূত্র : ইত্তেফাক।

বিএনপি নেতাদের মাঠে চায় হাইকমান্ড

ডেস্ক রিপোর্ট ঃ দেশের প্রাণকেন্দ্র রাজধানী ঢাকায় বিএনপির চলমান আন্দোলন জোরদার না হওয়ায় হতাশ তৃণমূল নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি নেতাদের দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা না থাকায় অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে পালন হচ্ছে হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি। মূল দলের এখন সাংগঠনিক শক্তি নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। বাইরের জেলাগুলো ইতোমধ্যে দলটির নীতিনির্ধারকদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ঢাকায় কর্মসূচি সফল না হলে বাকি জেলাগুলোর নেতাকর্মীরা যতই মাঠে সক্রিয় থাকুক কোনো লাভ হবে না।
অতীতে সারাদেশে আন্দোলন জোরালো হলেও ঢাকা মহানগরের কারণে সফলতা ঘরে আনা যায়নি-এমন অভিযোগ ছিল বিএনপির তৃণমূলের। পরে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি করে দলটি। তারা মহানগরের দুই শাখা ঢেলেও সাজান। কিন্তু প্রায় দেড় মাস ধরে সরকার পদত্যাগের একদফা দাবিতে চলমান আন্দোলনে এর কোনো ফল পাচ্ছে না দল। শুরুতে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা গেলেও এখন তাদের দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই। শুধু অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন কিছু ‘ঝটিকা মিছিল’ করছে। যে কারণে রাজধানীর আন্দোলন জমাতে পারছে না। কর্মসূচির দিনে রাজধানীর চিত্র দেখে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। এ নিয়ে চিন্তিত দলটির নীতিনির্ধারকও। আন্দোলন জোরদার করতে করণীয় নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন। নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রঃ যুগান্তর।

ভূঁয়াগাতীতে কমার্স একাডেমীর কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

রায়গঞ্জ প্রতিনিধিঃ গত মঙ্গলবার বিকেল ৪ টায় নিমগাছির কমার্স একাডেমী ও আইসিটি সেন্টার ভূঁয়াগাতী শাখার উদোগে হাইস্কুলের পিছনে স্থানীয় মডার্ন কিন্ডারগার্টেন এর হলরুমে সংক্ষিপ্ত পরিসরে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়। একাডেমীর পরিচালক মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সভায় কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক রাসেল, সরাই হাজীপুর দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক হারুন অর রশীদ প্রমূখ। শেষে কৃতি শিক্ষার্থী মরিয়ম, মনিরাকে ক্রেস্ট প্রদান করেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং অন্যান্যদের শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করেন আগত অতিথি শিক্ষকগণ। উল্লেখ্য, আইসিটি সেন্টারের কৃতি শিক্ষার্থী মরিয়ম ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় আইসিটিতে ১০০ নম্বরের মাঝে ৯৪ পেয়েছে। একাডেমীর শিক্ষার্থী মরিয়ম ছাড়াও মনিরা, ইমরান এ প্লাস পায় এবং ইউসুফ, আলামীন, রিফাত, শামীমা, খুসী, নুপুর, কামরুল, কাকলী, ফেরদৌসীসহ বাকীরা এ পেয়েছেন। এবারে মোট ১৫ জন শিক্ষার্থী একাডেমী থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় যার মধ্যে ৭ জন মেয়ে।

তাড়াশে সরিষার হলুদ ফুলে ভরে গেছে খেত

মোঃ মুন্না হুসাইন তাড়াশ প্রতিনিধি ঃ তাড়াশ উপজেলার চলনবিলের মাঠে সরিষার ক্ষেতগুলো ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। মাঠজুড়ে যত দূর চোখ যায়, তত দূর দেখা যায় হলদে রঙের সরিষা ফুল। বিশাল এ মাঠ দূর থেকে দেখতে মনে হয় বিশাল আকৃতির হলুদ চাদর বিছানো। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার এই মাঠজুড়ে এখন সরিষার আবাদ। হলদে রঙের সমারোহে চোখজুড়িয়ে যায়। মাঠের পর মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্যে ভরে ওঠার পালা। ফুলে ফুলে মধু আহরণে ভিড়ছে মৌমাছি। তোফায়েল হোসেন জানান, ভালো ফলনের সম্ভাবনার দেখা দিচ্ছে এবারে।
সব মিলিয়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন সরিষা চাষিরা। সাধারণত রবি মৌসুমে কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সরিষার বীজ বপনের সময়। শীতকালে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি সরিষা ফুলে ছেয়ে থাকে চারদিক। তবে উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের মহেশরৌহালীর মাঠে গুলোতে অগ্রীম জাতের সরিষা আবাদ করা হয়েছে। এছাড়া যে জমিতে সরিষা আবাদের পর বোরো ধানের চাষ করা হবে সেসব জমিতে আগাম সরিষা চাষ করা হয়। নওগাঁ ইউনিয়নের মহেশরৌহালী, চাকরৌহালী, বিরল, মহিষলুটি, খালকুলা, নওগাঁ, কোনাবারি, পংরৌহালী, ও চলন বিল, সহ বিভিন্ন স্থানে এ মৌসুমে সরিষার আবাদ লক্ষ্য করা যায়। আমন ধান ঘরে তোলার পরই কৃষকরা ওই জমিতে সরিষা চাষ করেন। ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে সরিষার আবাদ নব্বই ভাগ শেষ হয়েছে কিছুদিন আগে। বিশেষ করে তাড়াশের চলনবিলের মাঠ পুরোদমে ফুল ফুটতেছে। মহেরৌহালীর মাঠে সরিষাক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, সরিষা মাঠে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছে বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ, শিশুসহ বিনোদন প্রেমীরা
হলুদ সরিষা ফুলের সাথে ছবি-সেলফি তুলছেন কেউ কেউ। প্রকৃতি প্রেমীদের ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়বে এসব ছবি। ছবি, ভিডিও ধারণের জন্য এসেছেন এলাকার সাগর হোসেন নামের এক যুবক। তিনি জানান,ছবি, ভিডিও সংগ্রহ করতে এসেছি। সত্যি এখানে এসে মন ভরে গেছে। মনজুড়ানো দৃশ্য চারদিকে শুধু হলুদ আর হলুদ। তাড়াশ চলনবিলের বাসিন্দা মানিক ইসলাম, আবু হোসেন, ইসমাইল হোসেন সহ একাধিক কৃষক জানান, এবার দ্রæত বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় আগাম চাষ করায় জমিতে সরিষা গাছে ফুল এসেছে। প্রায় সব জমিতে পুরোপুরি ফুলে ফুলে ভরে গেছে। তবে এ বছর সরিষাক্ষেতে ভালো ফলন হবে বলে আশাবাদী কৃষক। একটু সমস্যা হয়েছে কয়কদিন বৃষ্টি ও কুুয়াশার জন্য। এখন গাছগুলো সুন্দর আর স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠেছে।
উপজেলার কৃষি অফিসার মামুনুর রশিদ বলেন, বপন সময় থেকে শুরু করে এ ফসল ফলনে সময় লাগে ৮৫-৯০ দিন। তবে এ উপজেলায় ২০ ভাগ কৃষক সরিষার চাষ করতে থাকে। এবার কৃষকদের আগাম চাষ করা সব জমিতে ফুল ফুটেছে। তবে অবহাওয়া প্রতিকুল ভাল থাকলে শরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলীর বীরত্ব গাঁথার গল্প শুনি
“আজ নওগাঁ স্বাধীন হবে, নয়তো নওগাঁর মাটিতে তোমাদের কবর হবে”
মোঃ আবুল কালাম আজাদ
মোঃ জাফর আলী প্রাং, পিতা- খোদাবক্স প্রাং, মাতা- আজিরণ বেগম , গ্রাম- চলনালী, ইউনিয়ন- ধারবারিষা, উপজেলা- গুরুদাসপুর, জেলা- নাটোর। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে জাফর আলী প্রাং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর মুক্তিযোদ্ধা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের স্বীকৃতি নং-০১৬৯০০০০৫১২।
১৯৩৪ সালে জন্ম হিসেবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ে তাঁর বয়স হয়েছিল ৩৭ বছরের টগবগে যুবক। স্ত্রী ও এক বছরের ১টি ছেলে সন্তান ও মা-বাবাকে ঘরে রেখে দেশমাতৃকার টানে স্বাধীনতার ডাকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রথমে লাল্পুরের ওয়ালিয়ার ময়নার যুদ্ধে পরে হান্ডিয়াল নওগাঁর পলাশডাঙ্গার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছেন। জাফর আলী সবসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করণ। আসুন আমরা তাঁর নিজ মুখ থেকই মুক্তিযুদ্ধকালীন বীরত্ব গাঁথার গল্প শুনি-
১৯৭০ সালের ২৩ নভেম্বর গুরুদাসপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসেছিলেন। তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট চাইলেন। তখন বঙ্গবন্ধু মঞ্চে বক্তৃতায় বলেছিলেন- ‘ভায়েরা আমার, আমাকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিবেন। আমি জয়যুক্ত হতে পারলে কৃষক ভাইদের ২৫ বিঘা জমির খাজনা মওকুফ করে দিব। আর তোমাদের নামে সার্টিফিকেট মামলা হবে না। গরিব- দঃুখিদের বাসস্থান করে দেব, জেলে ভাইদের মাছ ধরার ব্যবস্থা করে দেব, তাদের জমি দেব, তাঁতি ভাইদের জন্য তাঁত করে দেব। পশ্চিম পাকিস্তানে ১৬০ টি কাপড়ের মিল রয়েছে। পুর্ব পাকিস্তানে একটিও নাই। আমি কাপড়ের মিল করে দেব। যাতে আমার শ্রমিক ভায়েরা খেটে খাতে পারেন। তিনি আরো বলেছিলেন, ৪ আনা সের চিনি খাওয়াবো। পুর্ব পাকিস্তানের মানুষকে আমি ভাতে মরতে দিবনা। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে আমরা আপ্লুত হয় পড়লাম। বঙ্গবন্ধুর নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য আমরা দুই হাত তুলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম। সেসময় গ্রামে ফিরে ১০ পয়সা দিয়ে টিকিট কিনে আওয়ামী লীগের সদস্য হলাম। গ্রামে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করলাম। সে সময় চলনালী গ্রামের ঈমান উদ্দিন সরকার,উত্তর নারিবাড়ি গ্রামের হাসান উকিল, সন্তোষপুর গ্রামের গুলমামুদ, পোয়ালশুড়া গ্রামের গুলমামুদ মহুরি,শিধুলী গ্রামের রিয়াজ শাহ্ চাঁন চেয়ারম্যান, ধারাবারিষার নজির মন্ডল, তালবাড়িয়ার আলিমদ্দিন চেয়ারম্যান,চাঁচকৈরের হাকিম সরকার, এন্তাজ মোল্লা,কায়েম বিশ্বাসদের নিয়ে আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন করা হলো।
আমরা নৌকায় ভোট দিলাম। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগ জয়লাভ করলো। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কাছে পাকিস্তানী শাসক ইয়াহিয়া খান গদি ছাড়ে নাই। তারপর থেকেই আমাদের সেই কমিটি একটি সংগ্রাম কমিটি পরিণত করেছিলাম আমরা। এর মধ্যে ৭ ই মার্চ বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিলেন। সেই ডাকে সারা দিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধের জন্যে পুরো প্রস্তুতি শুরু করে দিলাম।
১৯৭১ এর ২৬ মার্চে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন। হঠাত একদিন শুনতে পেলাম, নাটোরের লাল্পুর থানার ওয়ালিয়া নামক স্থানে পাকিস্তানী মিলিটারি আক্রমণ করেছে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মোতাবেক তীর-ধনুক, লাঠি,ফালা,সড়কি, হাসুয়া যে যা পাড়ি তাই নিয়ে আমরা পায়ে হেঁটে ওয়ালিয়াতে গেলাম। সে সময় ঐ অভিযানে ছিলেন- ছইমদ্দিন,আব্দুল কাদের,বাচ্চু, সেকেন্দার ( তার হাতে রাইফেল ছিল) সহ অনেকেই ছিলাম। ওয়ালিয়াতে গিয়ে দেখলাম ট্রাকের উপড় ত্রিপল দিয়ে কয়েকজনের লাশ ঢেকে রাখা হয়েছে। আজাহার মাষ্টারকে গাছের সাথে ঝুলিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তার লাশটি ঝুলন্তই ছিল। ওয়ালিয়ায় তিনদিন থাকার পর ফিরে আসলাম। তখন চারিদিকে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। কেবল গুরুদাসপুরে কোন যুদ্ধ নাই। যুদ্ধে যাওয়ার জন্য মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প খোঁজাখুঁজি শুরু হলো। এরই মধ্যে নওগাঁও মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পের খোঁজ পেলাম। এরমধ্যে হঠত করেই গুরুদাসপুরে ১৭ জনকে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করলো পাকবাহিনী।
যুদ্ধে যাওয়ার আকাক্সক্ষা আরো বেড়ে গেল। ১ বছরের ছেলে আর স্ত্রীসহ বাবা-মা ছেড়ে আমি আফসার খবির ও রহমান নৌকা নিয়ে চলে গেলাম মির্জাপুর হাটে। সেখানে গিয়েই দেখা হলো বীর মক্তিযোদ্ধা এডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন,আনোয়ার হোসেন মাস্টার, সাত্তার চেয়ারম্যান,মকবুল হোসেন ও আনিসের সাথে। নৌকা নিয়ে তাদের সাথে চলে গেলাম নওগাঁর ক্যাম্পে। যাওয়ার পথে তোফাজ্জল ভাই এলাকার অনেক খোঁজ নিলেন আমার কাছ থেকে। সেখানে গিয়ে তোফাজ্জল ভাই বললেন- তোদের আর বারী ফেড়া হবেনা। বাংলা স্বাধীন করে তারপর ফিরতে হবে। সে সময় নওগাঁ ক্যাম্প ছিল ৭ নং সেক্টরের আওতায়। লতিফ মির্জা ছিলেন ঐ ক্যাম্পের সর্বাধিনায়ক। লতিফ মির্জা আমাকে নৌকা চালানো এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাত রান্নার দায়িত্ব দিলেন। নওগাঁ ক্যাম্পে তিন দিন থাকার পর সর্বাধিনায়ক লতিফ মির্জার দেওয়া দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে আমার নৌকায় ২৫ জন যোদ্ধা নিয়ে চলে গেলাম হান্ডিয়াল। শুরু হল দেশ মাতাকে মুক্ত করার লড়াই। কখনো কুঁচিয়ামারা ক্যাম্প, কখনো তাড়াশ, কখনো হান্ডিয়াল নৌকা নিয়ে নিয়মিতভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে থাকলাম।
১৯৭১ সালের ১০ নভেম্বর রাতে আমরা নওগাঁর পোরতাব নামের একটি হাটখোলাতে অবস্থান করছিলাম। খবর পেলাম রাতেই নওগাঁর ক্যাম্পে ফিরতে হবে। কনকনে ঠান্ডা বাতাসে সবাই জড়োসর হয়ে যাচ্ছিলাম। সব প্রতিকুলতা ছাপিয়ে তবুও নৌকা নিয়ে চলে গেলাম নওগাঁর ক্যাম্পে। ফজরের নামাজ পড়ে সবেমাত্র নৌকার ওপর বসলাম। হঠাত গুলির আওয়াজ ! সময় তখন ১১ নভেম্বর প্রভাত।গুলির আওয়াজের সাথে মানুষের আর্ত্মচিতকার ভেসে আসছিল। এরই মধ্যে লতিফ মির্জা একটা হুইসেল দিয়ে যোদ্ধাদের ডাকলেন। আমরা সহ মোট ৮০৮ জন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে জড়ো হলেন। লতিফ মির্জা বললেন, শত্রুপক্ষ আক্রমণ করেছে। তাদের প্রকৃত সংখ্যা জানা যায়নি। নওগাঁ স্বাধীনের জন্য তোমাদের লড়তে হবে। সবাই যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুতি নাও। ‘আজ নওগাঁ স্বাধীন হবে,নয়তো নওগাঁর মাটিতে তোমাদের কবর হবে’ । লতিফ মির্জার নির্দেশে আমি নৌকা থেকে অস্ত্র নামিয়ে বাঙ্কারে ঢুকলাম। আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। যুদ্ধের সময় আমি বাঙ্কারে যোদ্ধাদের গোলা-বারুদ এগিয়ে দিচ্ছিলাম। সেই সকাল ৭ টায় যুদ্ধ শুরু হয়ে দুপুর ১ টায় শেষ হলো। যুদ্ধে ৪০ জন মিলিটারির মধ্যে ১ জন জীবিত ছিলেন। সেই পাক সেনাকে শিতলাই দীঘীতে মারা হলো। আমরা যুদ্ধে জয়লাভ করলাম। নওগাঁ স্বধীন হলো।
এরপর লতিফ মির্জার নির্দেশে নওগাঁও ক্যাম্প ভেঙ্গে দেওয়া হলো। সবাই শিতলাই দীঘি এলাকায় তিন দিন থাকার পর লতিফ মির্জা বললেন,শত্রু পক্ষের সাথে যুদ্ধ করার মতো অস্ত্র আমাদের হাতে মজুদ নাই।তাই সব যোদ্ধাদের প্লাটুনে ভাগ হয়ে অন্যত্র যুদ্ধে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন লতিফ মির্জা। তাঁর নির্দেশে সবাই প্লাটুনে ভাগ হয়ে গেল। আমিও অন্য ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পথে দুর্ভাগ্যবশতঃ ধরা খেলাম। শাহজাহান রাজাকারসহ তার সঙ্গিরা আমাকে নিয়ে গেল লবিন নামে একটি বিলের মধ্যে। সেখানে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুদাসপুর থানায় আটকে রাখা হলো। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান নিশ্চিতের জন্য আমার ওপর চালানো হলো অমানুষক নির্যাতন। তবুও আমি মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দেইনাই। আমি বলেছিলাম, আমি মুক্তিযুদ্ধে যাই নাই। মুক্তিযোদ্ধাদের চিনিনা।রাজাকাররা ভেবেছিল , আমি সত্যিই কিছু জানিনা। তাই, সেসময় জমি বিক্রির টাকা দিয়ে কোনমততে সেই যাত্রা মুক্তি পেলাম।
বাড়িতে ৪-৫ দিন অবস্থান করছিলাম। এই ৪-৫ দিনে থানার কর্মকর্তা মনমহন আবারও আমাকে ধরে থানায় নিয়ে নির্যাতন করলেন। সে যাত্রায়ও মুক্তি পেলাম।কিন্তু দেশ তো তখনো স্বাধীন হয়নাই। বাড়িতে এক রাত থাকার পর আবারও যুদ্ধের জন্য বের হলাম। কিন্তু তোফাজ্জল ভাইদের কোন সন্ধান পাচ্ছিলামনা। গোপনে খুঁজতে শুরু করলাম। এরই মধ্যে দেশ স্বাধীনের সুসংবাদ পেলাম। কিন্তু গুরুদাসপুর তখনো স্বাধীন হয়নাই। হানাদার-রাজাকার বাহিনীর দখলেই ছিল। এরই মধ্যে শুনলাম মুক্তিযোদ্ধারা গুরুদাসপুর থানা দখল নিবে। সাহস করে এগিয়ে এলাম। দেখলাম , মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল ভাই,আব্দুস সাত্তার,আনোয়ার হোসেন মাস্টার ফিরে এসেছেন। তাঁদের সাথে যুক্ত হয়ে থানা দখল করলাম। সেই দিনটি ছিল ১৮ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সাল।
যুদ্ধপরবর্তী সময়ে ভালই ছিলাম। কিন্তু ৭৫-এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারে হত্যা করার পর আমরা আর নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দিতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধা বলে পুলিশ বেশ কয়েকবার থানায় ধর নিয়ে নির্যাতন করেছে।এভাবেই চলছিল আপন ঘরে পরাধিনতা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেন। রাজশাহীতে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সমাবেশ করলেন। আমিও সেই সমাবেশে ছিলাম।সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই সমসবেশে শেখ হাসিনার বক্তৃতা শুনছিলাম।বক্তৃতায় শেখ হাসিনা বললেন-“ আপনারা কী আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের মুক্তিযোদ্ধা?” আমি সবার সাথে হাত তুলে সারা দিলাম। শেখ হাসিনা বললেন-“ দুই হাত তুলে কথা দেন,আপনারা আমার সাথে আছেন।” আমরা দুই হাত তুলে আবারো সারা দিলাম। তার পর শেখ হাসিনাকে ভোট দিলাম। তিনি সরকার গঠন করলেন। আমাদেরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে শেখ হাসিনার সরকার গেজেটভূক্ত করলেন। তারপর আবার বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে শুরু করলাম। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় শেখ হাসিনা।

লেখক ঃ বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, কবি ও সাংবাদিক। গুরুদাসপুর, নাটোর।

 

 

বিজয়ের কবিতা
ওঁরাই আমার ভাই
ফিরোজা বিউটি

ওঁরা এনে দিয়েছে বিজয়ের পতাকা
আমার মায়ের হাতে
ডরেনি কভু শত্রুকে তাঁরা, চলেছে মাথা উচিয়ে।
নির্ভীক সৈনিক চলেছিলো বুক ফুলিয়ে
পিছু ফিরে চায়নি একটিবারও
প্রিয়া যে তাঁর থেকেছে পথ পানে চেয়ে।
দেশের জন্য ছোট্ট শিশুটিকে ঘুম পাড়িয়ে
রেখে গেল সেই যে বাবা
ফিরলো না আর কভু।
কতো সকাল গেলো, কতো যে বিকেল
গড়িয়ে এলো রাত। বাবা তার এলোনা ফিরে।
কিশোরী বধুটি আলতা পায়ে এসেছিলো
নব সাজে। বিয়ের মাস না গড়াতেই বিধবা হলো
স্বামী তার মুক্তিযুদ্ধের বীর সৈনিক।
দেশের বিজয় আনবে বলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো
দেশকে শত্রæমুক্ত করবে বলে নিজের জীবন
বাজি রেখেছিলো, ফিরলোনা আর।
কলেজ পড়ুয়া সেই ছেলেটি বড়ই মেধাবী।
মা-বাবার ইচ্ছা ডাক্তার বানাবে
সেইটিও পূরণ হয়নি বাবার।
চারিদিকের আত্ম চিৎকারে, থেমে থাকতে
পারেনি ছেলেটি। ঝাঁপিয়ে পড়েছে
শত্রæদের বিরুদ্ধে। জীবন বলি দিয়েছেন
দেশের জন্য।
আমরা তো বীরের জাতি, কে রুখবে মোদের
এখনো চলছে যুদ্ধ, আমরা এখনো শত্রæদের
দমাতে পারিনি। এখনো মায়ের বুক খালি হয়।
এখনো শিশুটি হারাচ্ছে পিতা।
বধুটি তার পথ চেয়ে থাকে
প্রিয়ার আসায়।
আর কতো?? ক্ষান্ত হও,সব বাধা বিপত্তি
থেকে মুক্ত করো এদেশ
তবেই হবে, সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা
সোনার বাংলাদেশ।

বিজয় দিবস আমার অহংকার
এ্যাড. মো. আ. ওহাব(বীর মুক্তিযোদ্ধা)

বিজয় দিবস আমার অহংকার
স্বাধীনতার যুদ্ধের ইতিহাস পড়েছি
সিপাহি যুদ্ধের ইতিহাস পড়েছি বার বার
আমি একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি।

দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর
১৬ ডিসেম্বর রেসর্কোস ময়দানে
পাকিস্তানি সেনাপতি নিয়াজি
মুক্তিবাহিনী আর মিত্রবাহিনী নিকট
আতœসম্পর্ণের খবর আমার অহংকার
এক আনন্দ বেদনায় হাহাকার।

রাইফেল কাধেঁ নিয়ে গাঁয়ের পথে চলেছি
বাড়ি বাড়ি সবুজের মাঝে ওই লাল পতাকা উড়ছে
পতাকা দেখে দাঁড়াতেই
যুবক কৃষক কৃষাণী এসে জড়িয়ে ধরে করলো আলঙ্গন
খেজুর গুর আর মুড়ি দিয়ে করলো মোদের বরণ
গাঁয়ের দর্জি উপহার দিলো ঐ পতাকা
রাইফেলের আগায় বেঁধেছি।

শত শত বাঙ্গালীর রক্তে মাখা পতাকা নিয়ে
মিছিল করেছি আর শ্লোগান দিয়েছি
“ স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখবই”
বিজয় দিবস, অমর হোক, অমর হোক
আমি বিজয় দেখেছি
বিজয় দিবস আমার অহংকার।

বিজয় দিবস
আব্দুল কুদ্দুস তালুকদার

ঊনিশ’শ একাত্তর সনের মহান এই দিনে
পাক হানাদারে সারেন্ডার করে ভঙ্গ দেয় রণে।
নয় মাস যুদ্ধ শেষে দেশ মুক্ত হলে
বাঙ্গালী উৎসব করে রাস্তায় সদলবলে।
এর আগে পঁচিশে মার্চের ভয়াবহ রাতে
জাতিকে নিধন করতে হায়েনাগণ মাতে।
বাংলাদেশের নিরীহ মানুষ অস্ত্র নেয় হাতে
প্রতিরোধ গড়ে তোলে সকলে একসাথে।
পাক হানাদার নির্বিচারে গণহত্যা করে
ধর্ষণ শেষে মেরে ফেলে উল্লাস ভরে।
নির্যাতন ক্যাম্পে নারীদের আটকায় যত
অত্যাচার করে ওরা নরপশুর মত।
ঘর-বাড়ি, কল-কারখানায় আগুনে জা¡লায়
প্রাণের ভয়ে কোটি লোক ভারতে পালায়।
দূর্বিসহ কষ্ট সয় শরণার্থীগণে
দুঃসহ সেই স্মৃতির কথা ভোলেনি জীবনে।
দেশ মাতার মুক্তির জন্য অস্ত্র হাতে নেয় যারা
মু্ক্িতবাহিনী হিসেবে পরিচিত হয় তারা।
বিভিন্ন শিবিরে মরণ পণ ট্রেনিং নিয়ে
স্বাধীন করে বাংলাদেশ জীবন বিলিয়ে দিয়ে।
ষোলই ডিসেম্বর একাত্তরে শুভ মাহেন্দ্র ক্ষণে
অস্ত্র ছাড়ে ঘাতকেরা রেসকোর্স ময়দানে।
এর ফলে কুলাঙ্গার পাক বাহিনী পরাজিত হয়
দেশবাসী তাই এই দিনকে বিজয় দিবস কয়।

বিজয় আমার
মুহাম্মাদ গোলাপ হোসেন

বিজয় আমার প্রভাতি তারা
বিজয় আমার নয়ন কাড়া।
বিজয় আমার স্বচ্ছ সৌরভ
বিজয় আমার লক্ষ্য গৌরব।
বিজয় আমার ঘুমের চেতন
বিজয় আমার দেশের কেতন।
বিজয় আমার চলার সাথী
বিজয় আমার চাঁদনি রাতি।
বিজয় আমার সহজ পথ
বিজয় আমার প্রগতির রথ।
বিজয় আমার দিশার পান
বিজয় আমার পুষ্পিত ঘ্রাণ।
বিজয় আমার হারা বাঁশিয়াল
বিজয় আমার সেরা কবিয়াল।
বিজয় আমার হৃদয় চোখ
বিজয় আমার বীণার শোক।
বিজয় আমার আযান ধ্বনি
বিজয় আমার আষাঢ় শ্রাবণী।
বিজয় আমার উচ্চ আসন
বিজয় আমার মুক্ত শয়ন।
বিজয় আমার জাগরিত গান
বিজয় আমার দেশের সম্মান।
বিজয়ের মাস
সাকিব আল হাসান

ডিসেম্বর মানেই বিজয়ের মাস
নয়টি মাসের দাম
দেশ স্বাধীনে জীবন দিলো অজানা কত প্রাণ
দু-চোখ মেলে তাকিয়ে দেখো বাঙালির প্রতি ঘরে
বিজয়ের উল্লাস বইছে আজ ১৬ই ডিসেম্বরে।

বছর ঘুরে বাংলার ঘরে এলো বিজয়ের মাস
বাংলার প্রতি প্রান্তরে আজ বিজয়ের মহা উল্লাস
বিজয়ের এই উল্লাস পেতে ঝরেছে লাখো প্রাণ
আজ মোরা তাদের তরে গাই বিজয়ের গান।

শত শ্রদ্ধা সালাম জানাই বীর শহীদদের তরে
জীবন দিয়ে বিজয় যারা আনলো বাংলার ঘরে
দোয়া আর ভালোবাসা দিয়ে বিজয় দিবস হচ্ছে পালন
বীর বাঙালির আত্মত্যাগ এ-বুকে করবো লালন।

বীর বাঙালি দিয়েছে প্রাণ করেছে কতো অঙ্গহানি
তাদের নিয়ে হচ্ছে লেখা শত কৃতজ্ঞতার বাণী

সবুজের বুকে লাল বিন্দু দেখো সূর্য নয়তো ওটা
এতো আমার শহীদ ভাইয়ের তাজা রক্তের ছিটেফোঁটা।

শহীদদের তরে উৎসর্গ হোক আমার লেখা এই কাব্য
বাংলার ঘরে পৌঁছালো যারা বিজয়ের দীপ্ত বাদ্য।

পতাকা
শামস (আবু শামা)

একাত্তরে দেশের মায়ায়
যুদ্ধ করেছে যারা
লাল-সবুজের পতাকা
নিয়ে এসেছে তাঁরা।
আমার ভাইয়ের রক্তের লাল বৃত্তটা
মা-বোনের ত্যাগের ফল

লাল-সবুজের ওই পতাকার
জন্য যারা সেদিন
আনলো বিজয় লড়াই করে
আনন্দে জয় বাংলার গান তুলে
কেমন করে ভুলবো তাদের
শুধাবো তাদের বিজয় ঋণ?

বিজয়ের পতাকা দিই উড়িয়ে
স্বাধীন তোমার-আমার দেশে
লাল-সবুজে মুক্ত বাতাস
খেলবে হেসে হেসে।

বিজয় নিয়ে
মোঃ সৈয়দুল ইসলাম

বাংলা মাগো তোমার ছেলে
জন্মে তোমার কোলে
দেশ ও মাটির জন্য তারা
অস্ত্র নিলো তুলে।
স্বাধীন হাসি হাসতে মাগো
দীর্ঘ নয়টি মাস
যুদ্ধ করে পাকবাহিনীর
করলো সর্বনাশ।
বিজয় নিয়ে তোমার ছেলে
ফিরলো বীরের বেশে
তাইতো আমরা বীর বাঙালি
বলি দেশ-বিদেশে।
বিজয়ের মাস এলে মাগো
বিজয় নিশান নিয়ে
শহীদ ভাইদের শ্রদ্ধা জানাই
ফুলের তোড়া দিয়ে।

কবীন্দ্র – কবিশ্রেষ্ঠ
মোঃ জয়নাল আবেদীন জয়

হে-কবীন্দ্র :
তোমার সোনার বাংলা আজ শ্বশান হয়ে গেছে
ফাগুনের আমের বনে মুকুলের গন্ধ আজ আর নাই
ফাগুনের গন্ধে ভরেছে আগুনে বাতাস
অবারিত মাঠ-গগণ ললাট আজ উত্তপ্ত।
দস্যুদের সেলের আঘাতে বাংলার শ্যামল রূপ আজ বিপর্যস্ত
মেশিন গান মর্টার আর বোমার আঘাতে আঘাতে
বাংলার আকাশ বাতাস ভরে গেছে।
হে রবীন্দ্রনাথ তোমার সোনার বাংলা আজ শ্বশ্মান হয়ে গেছে।

হে- বিদ্রোহী :
ওরা সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর খোরাক কেড়ে নিতে চায়
ওরা বুলেটের আঘাতে বাঙ্গালীকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়
ওই শোনো বাংলার আকাশে বাতাসে
নিপীড়িত মানুষের ক্রন্দন রোল।
ওই দেখো অত্যাচারিতের খড়গ কৃপাণ
রক্তের হোলি খেলায় মেতে গেছে
বাংলার পথ প্রান্তর রক্ত লেখায় পূর্ণ।
এসো বন্ধু তোমার সেই শমশের নিয়ে
মোদের রক্ত লেখায় ওদের নিশ্চিহ্ন করে দেই।

অগ্নি ঝড়া ডিসেম্বরে
তাহমিলুর রহমান (মাহিম)

উন্নত করিয়া বল শির
মোরা আজ স্বাধীন
মোরা হইলাম বীর।
ধরণীর বুকে মোরা আজ
কুড়িয়েছি খ্যাতি
সবাই মোদের চিনে
বলে বীরের জাতি।
বিশ্বের কোনো জাতি
ভাষার জন্য দেয়নি প্রাণ
এ জন্য মোরা বীরের জাতি
ভাষা রক্ষায় করিয়াছিলাম প্রাণ দান।
হে ভূমি,চক্ষু মিলিয়া দেখিয়াছি তোমায়
বলিতে পারিনে গুণে
এমন সুন্দর দেশ আর আছে
পৃথিবীর কোন কোণে।
শত বছর মোরা পাইনিকো
মুক্তির স্বাদ
শোষকেরা করেছিল শোষণ
আর দিয়েছিল অপবাদ।
স্বাধীনতা তুমি ইজ্জত হারা
মা-বোনের দান
তাইতো তোমার বীর সন্তান
স্বাধীনতায় দিয়েছিল প্রাণ।
স্বাধীনতা তোমায় পেতে
কত মায়ের হয়েছে
বুক খালি
কষ্টে মায়ের হৃদয় ফাটে
কান্নায় কান্নায় চোখ হয়েছে কালি।
শহীদের মা জনম দুঃখিনী
আজও আকাশ পানে চায়
দীর্ঘ শ্বাস ফেলিয়া বলে
আয় খোকা ফিরে আয়।
জাতির পিতার ঘোষণার পরে
যুদ্ধ হয়েছে নয় মাস ধরে
সাত সূর্যের রক্তের পরে
বিজয় এলো বাংলার ঘরে ঘরে।
দীর্ঘ দিনের ত্যাগ তীরিক্ষা দিয়ে
৩০ লক্ষ শহীদের তরে
বিজয় অর্জন করিয়াছি মোরা
অগ্নিঝড়া ডিসেম্বরে।

দিতে পারিনি কো দাম
আবদুর রাজ্জাক রাজু
সুখের জন্য এনেছি বিজয়
সুখ কোথা খুঁজে পাই
পেঁয়াজের দামেই নাস্তানাবুদ
স্বস্তির দেখা নাই।
শান্তির জন্য আনলাম বিজয়
কীভাবে শান্তি পাবো
হরতাল আর অবরোধের মাঝে
নিরাপদে কোথায় যাবো।
গণতন্ত্রের জন্য এনেছি বিজয়
গণতন্ত্র কেমন আছে
সবকিছু যেন পরাভূত হল
কর্তৃত্ববাদের কাছে।
বৈষম্য কমাতে এনেছি বিজয়
তবু বাড়ে ব্যবধান
আর্থ-সামাজিক সকল ক্ষেত্রেই
হলো কাদের উত্থান ?
দুর্নীতি রুখতে এনেছি বিজয়
সে দুর্নীতির কী চেহারা
যে দিক তাকাই নাই কিছু নাই
অবক্ষয়-দুর্নীতি ছাড়া।
নির্বাচনের জন্য এনেছি বিজয়
সে নির্বাচন গেল কোথা
এই নিয়ে আজ কুরুক্ষেত্র
শুরু হল নতুন প্রথা।
সুশাসনের জন্য এনেছি বিজয়
আইনের শাসন নাই
ন্যায়-বিচার আর সাম্য
ন্যায্যতার জন্য শুধু চেঁচাই।
এনেছি বিজয় দুঃশাসনটা
দূর করবার তরে
সেইটাই আজ বসেছে চেপে
রাষ্ট্রের প্রতিটা স্তরে।
কিসের জন্য এনেছি বিজয়
কে করে তার মূল্যায়ন
এ যেন আজকে নৈরাজ্যের
কাছে আত্মসমর্পণ।
শঙ্কা-আশঙ্কা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা
এ নয় বিজয়ের নাম
এত রক্তের বিনিময়েও বিজয়ের
দিতে পারিনি কো দাম।

দেশকে মাদকমুক্ত করতে খেলাধুলার বিকল্প নেই

আরাফাত হোসেন, নন্দীগ্রাম, বগুড়া: দেশকে মাদকমুক্ত ও সমাজকে অবক্ষয় থেকে রক্ষা করতে খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। তরুণ প্রজন্মকে মাদকাসক্তি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তি থেকে দূরে রাখতে সবাইকে খেলাধুলায় আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দৈনিক বাংলাদেশের দিনকাল পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ইঞ্জিনিয়ার এম এফ রহমান ফিরোজ। গত সোমবার বিকালে নন্দীগ্রামের মনসুর হোসেন ডিগ্রী কলেজ মাঠে যুব সংঘের উদ্যোগে সিমলা ক্রিকেট একাদশ বনাম পন্ডিতপুকুর ক্রিকেট একাদশ টুর্নামেন্ট উদ্বোধন করেন তিনি । পরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন ।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টর যেমন এগিয়েছে, তেমনি এগিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা স্মরণীয়। খেলোয়াড়দের উৎসাহ যোগানোর পাশাপাশি তিনি বরাদ্দ বাড়িয়েছেন ক্রিকেটে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ, তাই বাংলাদেশের খেলা দেখতে তিনি ছুটে যান খেলার মাঠে।

তাড়াশে নবাগত ওসিকে ফুলেল শুভেচ্ছা

লুৎফর রহমান ঃ সিরাজগঞ্জের তাড়াশে নবাগত ওসি নজরুল ইসলামকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। গত সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলা হলরুমে আইন শৃঙ্খলা মাসিক সভায় নতুন ওসিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. খালিদ হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আরশেদুল ইসলাম, পৌর মেয়র মো. আব্দুর রাজ্জাক, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক মর্জিনা ইসলাম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনোয়ার হোসেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. মনিরুজ্জামান, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মুসাব্বির হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল খালেক, ময়নুল হক, মেহেদী হাসান ম্যাগনেট, মিজানুর রহমান মজনু, হাবিলুর রহমান হাবিব ও জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসাক, তাড়াশ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. শামিউল হক শামীম, তাড়াশ উপজেলা ইসলামী ফাউন্ডেশনের আনিসুর রহমান প্রমুখ। তাড়াশ থানার নতুন ওসি মো. নজরুল ইসলাম গত ৯ ডিসেম্বর শনিবার সন্ধায় দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি বিদায়ী ওসি মো. শহিদুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হলেন। মো. নজরুল ইসলাম এর আগে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার নিজ জেলা পাব

তাড়াশে মানসিক প্রতিবন্ধীর
মানবেতর জীবনযাপন

গোলাম মোস্তফা ঃ সিরাজগঞ্জের তাড়াশে মানসিক অসুস্থতাজনিত কারণে ময়দান আলী (৫৩) যুগ যুগ ধরে লোহার শিকলে বাঁধা পড়ে বহু কষ্টে বেঁচে রয়েছেন। বস্তুত পারিবারিক সচেতনতা ও চিকিৎসাসেবাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন এই প্রতিবন্ধী ব্যক্তির। ময়দান আলীর বাড়ি তালম ইউনিয়নের গোন্তা গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত ইজ্জত আলী।
জানা গেছে, ময়দান আলীর মা-বাবা বেঁচে নেই। তার বড় বোন রেজাতন খাতুন ৩৩ বছর যাবৎ মানসিক প্রতিবন্ধীতার শিকার ভাইকে লালন-পালন করে আসছেন। রেজাতন খাতুন চলনবিল বার্তাকে বলেন, কোমড়ে লোহার শিকল বাঁধা অবস্থায় বসে থেকে তার ভাই ময়দান আলী এখন দাঁড়াতে পারেনা। দিন-রাত শুয়ে বসে কাটিয়ে দেয়। কথাও বলতে পারেনা। ক্ষুধা লাগলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে মুখের দিকে। তার বসবাসের জায়গা নেই। গরুর গোয়াল ঘরের পাশে একটি গাছের সাথে শিকল পেঁচিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। নয়তো হারিয়ে যেতে পারে, পানিতে পড়ে ডুবে মরতে পারে। সেই শঙ্কা থেকে বাধ্য হয়ে লোহার শিকলে বেঁধে রেখেছেন।রেজাতন খাতুন আরো বলেন, ময়দান আলীর থাকার জায়গা নেই। বেশিরভাগ সময় নিজের মলমূত্রের মধ্যেই গড়াগড়ি করে কাটে। তাছাড়া মানসিক প্রতিবন্ধীতার সাথে অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে তার। একজন মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকার নূন্যতম অধিকার থেকে সে বঞ্চিত।
প্রতিবন্ধীতার সাথে দরিদ্রতা যেন ময়দান আলীকে জীবন্ত লাশ বানিয়ে রেখেছেন। সরেজমিনে সেটাই প্রতিয়মান হয়। গোয়াল ঘর ও খড়ের পালার পাশে শিকলে বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছে মানসিক প্রতিবন্ধী ময়দান আলী। তিন খানা পুরান টিনের একটি খুপড়ি ঘরের মধ্যে রাখা হয়েছে তাকে। সে ঘরের চারপাশে নেই কোন বেড়া। হাড়কাঁপানো শীতের কষ্ট, প্রখর রোদের তাপ কিংবা ঝড়-বৃষ্টি সয়ে যেতে হয় নিরবে। এদিকে স্থানীয় পরিবর্তন নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কর্মী (সিএইচডিআরপি) রোকসানা খাতুন বলেন, মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধীতার শুরুতেই সঠিক চিকিৎসা করানো গেলে দ্রæত আরোগ্য লাভ সম্ভব। তাদের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি পারিবারিক সচেতনতা ও যতœশীলতা অতিব জরুরি। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এ কে এম মনিরুজ্জামান বলেন, শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ডের সামান্য টাকায় ময়দান আলীর মত প্রতিবন্ধীদের ভরণ-পোষণ সম্ভব নয়। এজন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা প্রয়োজন। মানসিক প্রতিবন্ধী ময়দান আলীর বিষয়টি নিজে দেখার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

উল্লাপাড়া হানাদার মুক্ত দিবস পালিত

উল্লাপাড়া প্রতিনিধিঃ ১৩ ডিসেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদায় উল্লাপাড়া হানাদার মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে । দিবসটি উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন আয়োজনে গত বুধবার বেলা ১১ টায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানার নেতৃত্বে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা গণ উপজেলা চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন । পরে বর্ণাট্য র‌্যালি বের করে উপজেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক গুলো প্রদক্ষিণ করেন। এছাড়াও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, উপজেল মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে । ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ১১ ডিসেম্বর তাড়াশের নওগাঁ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজিত হয় পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী। এতে উল্লাপাড়া থানা সদরে অবস্থিত হামিদা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে (বর্তমানে এইচটি ইমাম গার্লস স্কুল) ও উল্লাপাড়া সড়ক উপ-বিভাগীয় অফিসে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পের সেনারা মনোবল হারিয়ে ফেলে।
পরে ১২ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের পরিচালক আব্দুল লতিফ মির্জার নেতৃত্বে ৫ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা হামিদা স্কুলে ও উল্লাপাড়া সড়ক উপ-বিভাগীয় অফিসে হানাদারদের ক্যাম্প আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়। অবস্থার বেগতিক দেখে এ দিন মধ্যরাতে হানাদার বাহিনীর উল্লাপাড়া ক্যাম্পের অস্ত্রগুদামে আগুন ধরিয়ে দিয়ে নগরবাড়ী-বগুড়া মহাসড়ক পথে ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়। পরদিন ১৩ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় উল্লাপাড়া। পরে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ জনগণ মিলে থানা চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

উল্লাপাড়ায় শ্রমিকের হাট

ডাঃ আমজাদ হোসেন ঃ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় উপজেলা সদরের পৌর মুক্ত মঞ্চ চত্বরে দিনের ভোর সকাল আর শেষ বিকেলে প্রায় এখানে দিন আয়ের শ্রমিকদের ভীড় জমে থাকে। এরা কাজের জন্য বাড়ী থেকে বেরিয়ে কাজ শেষ বিকেলে দিনের হাজিরার টাকার জন্য বসে থাকেন। উল্লাপাড়া উপজেলা সদরের পৌর মুক্ত মঞ্চ চত্বরে প্রতিদিন চার থেকে পাচটি গ্রামের দিন আয়ের শ্রমিকদের ভীড় জমে থাকে। গ্রাম কটি হলো নাগরৌহা, বাখুয়া, ভদ্রকোল, নতুন চরপাড়া ও চরপাড়া।
এরা শহরের বিভিন্ন মহল্লায় মাটি কাটা, অবকাঠামো নির্মাণসহ নানা কাজে মজুরী খাটেন। এরা দিন হাজিরায় মজুরী বেচেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে পৌর মুক্ত মঞ্চ চত্বরে কাজ শেষে মজুরীর টাকার জন্য বসে থাকা কজন হলেন আফসার, কুরমান, নাসির, কুড়ান।প্রতিবেদককে নতুন চরপাড়া গ্রামের আফসার আলী বলেন, তারা প্রতিদিন কাজ করার জন্য দল বেধে পৌর মুক্ত মঞ্চ চত্বরে বসে থাকেন। বাখুয়া ফকিরপাড়ার শান্তা মিয়ার অধীনে সবাই কাজ করেন। তিনি কাজ জোটান এবং দল বেধে কাজে পাঠান। কাজ শেষ করে মজুরীর টাকার জন্য বসে সময় পার করেন।

সিংড়ায় অবৈধ ব্যানার-ফেস্টুন-বিলবোর্ড অপসারণ

সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি ঃ নাটোরের সিংড়ায় অবৈধ ব্যানার-ফেস্টুন-বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়েছে। গত বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। জানা যায়, নাটোর-৩ (সিংড়া) সংসদীয় আসনে নির্বাচনী আচরণবিধি সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালনের উদ্দেশ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আল ইমরান দিনব্যাপী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় তিনি বিভিন্ন স্থান হতে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অবৈধ বিলবোর্ড, ব্যানার ও পোস্টার অপসারণ করেন এবং উপস্থিত জনসাধারণকে নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে অবগত করেন। একই সাথে নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আল ইমরান বলেন, মাননীয় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকেই মাঠে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা সবগুলো অবৈধ ব্যানার-ফেস্টুন-বিলবোর্ড অপসারণ করেছি। নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবেনা। এসময় সিংড়া থানা পুলিশের সদস্যরা সহযোগিতা করেন।

সিংড়ায় ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল

সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি ঃ বিএনপির ডাকা অবরোধের সমর্থনে এক দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল। সিংড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দাউদার মাহমুদের নির্দেশনায় অবরোধের শেষ দিনে গত বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে সিংড়া-বগুড়া মহাসড়কের জোলারবাতা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন নেতাকর্মীরা।
উপজেলা, পৌর ও কলেজ ছাত্রদলের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সড়ক অবরোধ করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দাউদার মাহমুদ বলেন, বিএনপির এক দফা দাবী আদায়ে আন্দোলন চলবে। যতক্ষণ দাবী আদায় না হবে ততক্ষণ বিএনপি মাঠে থাকবে।

গুরুদাসপুরে চলনবিলের জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় মানববন্ধন

আবুল কালাম আজাদ ঃ নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় মষড়নধষ ফধু ড়ভ ধপঃরড়হ ভড়ৎ লঁংঃরপব উপলক্ষে গত শনিবার ৯ ডিসেম্বর বেলা ১১ টায় ‘চলনবিলের জলজ জীববৈচিত্র রক্ষা ও জলবায়ুর ন্যায্যতার দাবীতে’ মানববন্ধন, আলোচনা ও র‌্যালী অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলনবিল রক্ষা আন্দোলন গুরুদাসপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি ও বিডিএসসি-র নির্বাহী পরিচালক মজিবুর রহমান মজনুর সভাপতিত্বে থানামোড় শাপলা চত্বরে র‌্যালী ও মানববন্ধন শেষে চলনবিল প্রেসক্লাবে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অঝওঅঘ চঊঙচখঊঝ গঙঠঊগঊঘঞ ঙঘ উঊইঞ অঘউ উঊঠঊখঙচগঊঘঞ এর সহাতায় ঈঙচ-২৮, ডঅঞঊজকঊঊচঊজঝ ইঅঘএখঅউঊঝঐ, বিডিএসসি, চলনবিল প্রেসক্লাব, পিএস কে এস এবং আরডিও সংস্থার আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন, র‌্যালী ও আলোচনা সভায় প্রধান ও বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোছাঃ রোকসানা আকতার লিপি ও নাটোর জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ মেহেদি হাসান। আরও বক্তব্য রাখেন চলনবিল প্রেসক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা মোঃ আবুল কালাম আজাদ, সভাপতি এম এম আলী আককাছ, সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ জালাল উদ্দিন শুক্তি,সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক, গুরুদাসপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি দিল মোহাম্মদ, আরডিও সংস্থার মোঃ জাকির হোসেন। বক্তারা ‘চলনবিলের জলজ জীববৈচিত্র রক্ষা ও জলবায়ুর ন্যায্যতা পেতে হলে চলনবিলের প্রাণ বড়ালের তিনটি ( চারঘট ও আটঘরিয়ায় বড়াল ও নন্দকুঁজা নদীর মুখে) মরণ কোপাট সহ সকল স্থাপনা অপসারণ করে পানির প্রবাহ সচল করার দাবী জানান। বড়াল, আত্রাই , নন্দকুঁজা, এবং গুমানীসহ সংশ্লিষ্ট নদী, জলা- জলাশয় বাঁচলে চলনবিল বাঁচবে, চলনবিল বাঁচলে চলনবিলের জলজ জীববৈচিত্র রক্ষা পাবে এবং জলবায়ুর ন্যায্যতা রক্ষা হবে। দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্ষাতিগ্রস্থ চলনবিলের সকল শ্রেণি-পেশার জনগনকে নিয়ে প্রতিরোধ আন্দোলন গেড়ে তোলার আহবান জানান।

গুরুদাসপুরে রোকেয়া দিবস পালিত

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি ঃ নাটোরের গুরুদাসপুরে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে মান্ববন্ধন ও আলোচনা সভা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় চার জয়িতাকে পুরষ্কার ও সনদপত্র প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গত শনিবার (৯ নভেম্বর) উপজেলা চত্বরে মানববন্ধন শেষে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ওই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদী হাসান শাকিল। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন, পৌর মেয়র মো. শাহনেওয়াজ আলী মোল্লা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকসানা আক্তার লিপি, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেখামণি পারভীন, প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম মিঠু প্রমুখ। আলোচনা শেষে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে উপজেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের মাঝে পুরষ্কার ও সনদ বিতরণ করা হয়।
জয়িতারা হলেন- সফল জননীর বেগম লুৎফুন্নেছা, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতে ফিরোজা বেগম, সমাজ উন্নয়নে সফুরা বেগম ও নতুনউদ্যোমে জীবন শুরুতে শাকিলা খাতুন। উল্লেখ্য যে- উপজেলার সেরা চার জয়িতার মধ্যে বেগম লুৎফুন্নেছা, ফিরোজা বেগম ও সফুরা বেগম জেলা পর্যায়েও শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন।

গুরুদাসপুরে ‘গোধুলী ডায়াগনষ্টিক’
চলছে অনুমোদন ছাড়াই

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি ঃ নাটোরের গুরুদাসপুরের কাছিকাটা বাজারে অনুমোদন ছাড়াই চলছে ‘গোধুলী ডায়াগনষ্টিক সেন্টার’ নামে একটি বেসরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্র। সেখানে চিকিৎসক বসিয়ে রোগ নির্ণয়ের নামে চলছে বানিজ্য। গত শুক্রবার (০৮ ডিসেম্বর) বিকালে সরোজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিনের মতো রোগী টানতে মাইকিং এ চলছে চটকদার বিজ্ঞাপন, ডিপ্লোমা চিকিৎসক দিয়ে করানো হচ্ছে আল্ট্রাসনোগ্রাম। প্যাথলোজীতে নেই পর্যাপ্ত উপকরণ, নেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রন কক্ষ। এমন নানা অব্যবস্থাপনায় কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে দেদার চলছে ‘গোধুলী ডায়াগনষ্টিক সেন্টার’ নামে একটি বে-সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্র।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মশিন্দা এলাকার এক নারী রোগী অভিযোগ করে বলেন, নভেম্বর মাসের শেষ দিকে তিনি পেট ব্যথা নিয়ে গোধুলী ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে যান। কর্তৃপক্ষ তাকে বেশ ক’টি পরিক্ষা নিরিক্ষার সাথে আল্ট্রাসনোগ্রাম করান। পরীক্ষা শেষে পিত্তথলিতে টিউমার হয়েছে জানিয়ে অপারেশানের কথা বলেন। তাদের রিপোর্টে রোগীর সন্দেহ হলে অন্যত্র পরীক্ষা করে জানতে পারেন পিত্তথলিতে পাথর নয় তিনি গ্যাষ্টিক রোগে ভুগছেন।
প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদন নেই স্বীকার করে ব্যবস্থাপক রনি আহম্মেদ বলেন- সরকারি অনুমোদন পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করেছেন। ডিপ্লোমা চিকিৎসক দিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো অভিযোগ স্বীকার করেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের লিখিত নির্দেশনা পেলে তিনি তা মেনে প্রতিষ্ঠান চালাবেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন ছাড়া কেউ প্যাথলোজিক্যাল পরীক্ষা করতে পারবেন না। প্যাথলোজিক্যাল পরীক্ষা করতে গোধুলী ডায়াগনষ্টিক সেন্টারকে ইতিপুর্বে নিষেধ করা হয়েছে।

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD