আলেম সমাজের নানা মত কোন টা নবীর আসল পথ 

Spread the love
মুফতি খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ: আজ আমরা সাধারণ মানুষ দীনের ব্যাপারে তীক্ষ্ম নযর না থাকায় অনেকেই সুযোগ সন্ধানী কিছু গোড়া ও পথ ভ্রষ্ট আলেম ও ধর্ম ব্যবসায়ী দের কাছে জিম্মি হয়ে প্রকৃত ইসলামী শরিয়ত পালনে ব্যর্থ হচ্ছি  । তাই প্রকৃত আলেমগনের সঠিক পরিচয় তুলে ধরার জন্য  রাসুল সঃ এর কিছু হাদীসে পাঠকদের উদ্দেশ্য, তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি । মহান আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের কে কোরআন ও সুন্নাত মোতাবেক জীবন পরিচালনা করার জন্য হাদীস গুলো  আমল 
করার তৌফিক দান করুন  ।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, “আমার উম্মতের মাঝে এমন একটি দলের সৃষ্টি হবে, যারা শরীয়তের আইনে খুবই পারদর্শিতা অর্জন করবে। তারা কুরআন তিলাওয়াত করবে। অতঃপর তারা বলবে চল আমরা ক্ষমতাসীনদের নিকট গিয়ে তাদের পার্থিব কাজ-কর্মে অংশীদার হই। অবশ্য আমরা আমাদের দ্বীনদারী তাদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখব। প্রকৃত পক্ষে এমনটি কখনও সম্ভব হবে না। কাঁটা যুক্ত গাছ থেকে যেমন কাঁটা ছাড়া আর কিছু আশা করা যায় না, অনুরূপ ঐ সকল ক্ষমতাসীনদের নিকট থেকে পাপাচার ব্যতীত অন্য কিছু অর্জন করা সম্ভব হবে না”। [ইবনে মাজাহ]
.
অসংখ্য হাদিস ও আসারে উলামাদেরকে শাসকদের দরবারে গমন করা থেকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আমরা জানি আখিরুজ্জামানে (শেষ জামানায়) জাতির সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক হবে শাসকরা। তাহলে সহজেই অনুমেয় এই শাসকদের সহযোগী, শাসকদের বন্ধু উলামাগণ কতই না পথভ্রষ্ট হবেন। হযরত হাসান বসরী রহিমাহুল্লাহ বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “এই উম্মত তত সময় পর্যন্ত আল্লাহর অনুগ্রহ প্রাপ্ত হতে থাকবে, যত সময় পর্যন্ত এই উম্মতের ক্বারি ও আলেমরা শাসকবর্গের হাঁ এর সাথে হাঁ মিলানো থেকে বিরত থাকবে”। [কিতাবুর রাক্কায়িক, ইবনে মুবারক]
.
বর্তমানে ফকিহের চাইতে ক্বারির সংখ্যা বেশি। মানুষ হারাম হালাল বাছ-বিচার করার চাইতে তিলাওয়াতের দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে অর্থাৎ আয়াতের অর্থ জানা ও বাস্তবায়নের চাইতে আয়াত শুধু তিলাওয়াত করা এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। হাদিসে এসেছে “এমন একটি সময় আসবে যখন মানুষ কুরআন তিলাওয়াত করবে কিন্তু তা কণ্ঠনালীর নিচে প্রবেশ করবে না” (অর্থাৎ তা অন্তরে প্রবেশ করবে না)। [সহীহুল বুখারী]
.
হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, “আমার উম্মতের উপর এমন একটি সময় আসবে, যখন কারিদের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে, ফকীহদের সংখ্যা কমে যাবে এবং ইলমের আকাল সৃষ্টি হবে। সে যুগ ফিতনা-ফাসাদে সয়লাব হবে। তারপর এমন একটি সময় আসবে, যখন আমার উম্মতের ভিতর থেকে এমন কিছু লোকও কুরআন পড়বে, যাদের কণ্ঠনালীর নিচে কুরআন প্রবেশ করবে না (অর্থাৎ কুরআন পড়বে কিন্তু অনুধাবন ও উপদেশ লাভ করতে পারবে না)। তারপর এমন একটি যুগ আসবে, যখন কোন মুশরিক ব্যক্তি মুমিন ব্যক্তির সাথে তাওহীদের ব্যাপারে বিতর্কে লিপ্ত হবে”। [কানযুল উম্মাল]
.
বর্তমানে সমাজ থেকে একদিকে যেমন জ্ঞানী ও নির্ভীক আলেমরা আমাদের মাঝে থেকে চলে যাচ্ছেন এবং অপেক্ষাকৃত অল্প জ্ঞানীগণ কুরআনের ইলম প্রচার করছেন, অন্যদিকে আমরা আজ যত ক্বারিকে দেখতে পাই তত আলেমকে দেখছি না। কারীগণ যত জনপ্রিয় ফকিহগণ তত নন। অধিকাংশ ক্বারিরা কুরআন পড়বে কিন্তু তা অনুধাবন ও উপদেশ লাভ করতে পারবে না। এটাকেই বলা হচ্ছে তাদের কন্ঠনালীর নিচে কুরআন প্রবেশ করবে না। আফসোসের বিষয় আজ ফাসিক, ফাজির, এমনকি নিফাকে জড়িত ক্বারিরাও আমাদের মাঝে রয়েছে। এদের অধিকাংশ ফরজ ওয়াজিব তরককারী।
.
হযরত আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আখেরী যামানায় অনেক ইবাদাতকারী হবে মূর্খ। আর অনেক ক্বারিরা হবে ফাসিক” (অর্থাৎ কবীরা গোনাহে লিপ্ত)। [কানযুল উম্মাল]
.
এমনি ভাবে হাদিসের মাধ্যমে জানা যায়, এমন কিছু ক্বারির আবির্ভাব হবে যারা মানুষের মাঝে বিভিন্ন মজলিসে দুনিয়া কামানোর জন্য অর্থাৎ অর্থ ও টাকা উপার্জনের উদ্দেশ্যে সুমধুর কন্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করবে।
.
জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা আমরা কুরআন পাঠে লিপ্ত ছিলাম। আমাদের মধ্যে আরব ও অনারব উভয় ছিল। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়ে বললেন, “শ্রেষ্ঠ কাজ, পড়তে থাকো। অচিরেই একদল লোকের আবির্ভাব হবে, যারা সুমধুর কন্ঠে কুরআন পড়ার চেষ্টা করবে। আখিরাতের পরিবর্তে দুনিয়াতেই তারা এর বিনিময় আশা করবে”। [আবু দাউদ]
.
আমাদের মনে রাখতে হবে, আলিমগণ যদি মুস্তাহাব আমল ছেড়ে দেয় তাহলে সাধারণ মানুষ সুন্নাত ছেড়ে দেয়, আলেম সুন্নাত ছেড়ে দিলে সাধারণ মুসলিমরা ফরজ ছেড়ে দেয়, আলেম মাকরূহে জড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষরা হারামে লিপ্ত হয় আর আলেম হারামে লিপ্ত হলে সাধারণ মানুষরা কুফুরে জড়িয়ে পড়ে। মনে রাখতে হবে যে রাসুল সঃ  এর  আদর্শই উম্মাতের নাজাতের একমাত্র পথ  । মহান আল্লাহ্ আমাদের সকলকেই  হেফাজত করুন ।আমীন 
Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD