নবাবী আর কত দিন? বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শুকুর মাহমুদ

Spread the love

বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শুকুর মাহমুদ: ভারত উপ-মহাদেশের মানুষ ছোট-বড়, কম-বেশি সকলেই জানে নবাবী আমলের গল্প। নবাব-রা এতটাই বিলাস ভোগী ছিলেন যার তুলনা করার মত আজও কোন বিত্তশালী, শিল্পপতি বা কোন ধণাঢ্য ব্যক্তি আলোচনায় আসে না। নবাবদের মধ্যে বিশেষ করে বাংলা, বিহার, উরিষ্যার অধিপতি নবাব সিরাজ উদ্দ দৌলা ছিলেন আরও একধাপ এগিয়ে। নবাব সিরাজ উদ্দ দৌলা নিজেকে বিলাসীতার সাগরে ডুবিয়ে নিজের প্রভূত্বে বলিয়ান ছিলেন। যার উদাহরণ আজও মানুষের মুখে মুখে জানা যায়। কেউ একটু বিলাসীতা বেশি করলে তাকে বলা হয়, নবাব সিরাজ উদ্দ দৌলা হয়েছ নাকি? বিলাসভোগীদের বলা হয় একেবারে নবাবী পেয়েছ।

নবাব সিরাজ উদ্দ দৌলার জীবন-যাত্রা ছিল তখনকার সময়ের সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ব্যতিক্রম। তার ব্যবহারিক কোন পোষাক একবারের অধিক ব্যবহার করেননি। নিজের পাদুকা নিজের হাতে কখনো পরেননি এবং নিজের পাদুকা নিজের হাতে খোলেননি। তার খাদ্য তালিকায় যা ছিল তা হচ্ছে, সকালের নাস্তায় তিনটি পরোটা, প্রতিটি পরোটা নতুন ১ সের ঘিয়ে ভেজে পরিবেশন করা হত। কখনো ১ সের ঘিয়ে একের অধিক পরোটা ভাজা হয়নি। সে পরোটা খেতে সদ্য জবেহ করা খাসির কলিজার কাবাব দিয়ে নবাবের নাস্তা হত।

একদা নবাবের খানসামা খাদক পরীক্ষা করতে ১ সের ঘিয়ে ১টি পরোটা ভেজে অপর আর ১ সের ঘিয়ে দু’টো পরোটা ভেজে ২য় বারে ভাজা পরোটাটি মাঝখানে দিয়ে নবাবকে খেতে দেয়া হয়েছে। নবাব ১ম পরোটা খেয়ে ২য় পরোটায় এক কামড় দিয়ে রেখে উঠে গেছেন, কারণ ওটা রুচি সম্মত হয়নি। নবাব সিরাজ উদ্দ দৌলা প্রতিনিয়ত মৃগনাভী কস্তুরি দিয়ে পান খেতেন, যার মুল্য তখনকার সময়ে লক্ষাধিক টাকা ভড়ি ছিল।

পলাশী যুদ্ধে পরাজয় বরণ করার পর মুশিদাবাদের সিংহাসন ছেড়ে পালানোর সময় নবাবী পোষাক খুলে সাধারণ মানুষের মত পালিয়ে যেতে হবে, কিন্তু বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব, নবাবী পাদুকা ছেড়ে খালি পায়ে রাস্তায় বেড় হবেন এটি তিনি মেনে নিতে পারলেন না। তাছাড়া তিনি নিজের পাদুকা কখনোই নিজের হাতে পরেননি এবং খোলেননি। তাই পাদুকা নিজের হাতে খুললে নবাবী থাকে না, এটিও ছিলো একটি সমস্যা। অবশেষে নবাব পাদুকা পরেই বেড়িয়ে পরলেন।

নদী পথে নৌকায় যাত্রাকালে ভগবান গোলায় যখন নবাবের নৌকা আটকানো হল, তখনো নবাবের বিদ্রোহীরা নবাবকে চিনত না। নবাবী পাদুকা পরনে দেখে শত্রæরা নবাবকে চিনে ফেললো। ওই সূত্রধরে আজও বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, পাদুকার জন্য ধরা পরলেন বাংলার শেষ নবাব।

নবাব নেই, নবাবী আমলও নেই, তবে আমাদের দেশে আধুনিকা কিছু মেয়েদের আচার-আচরনে মনে ওরা নবাব পরিবার থেকে সদ্য এসেছে। মাটিতে পা রাখলে ওদের নবাবী থাকে না, ওরা কুমারি কালে মায়ের ঘরে মেয়ের কাজ ও ঝিয়ের কাজ সবই করত। পরবর্তীতে স্বামীর ঘরে এসে আধুনিকা সেজেছে। হয় যৌতুকের অহংকারে নয় তো স্বামীর আদরে অদিক্ষেতায় নবাবের ঝি হয়ে বসেছে। শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির সেবা-যতœ তো দুরের কথা ওরা স্বামীর নিকট থেকে সেবা গ্রহণ করে।

হে আধুনিকারা নবাবী আর কতদিন খুব বেশি দুরে যেতে পারবে না, সামনের দিকে তাকাও। শীগ্রই মা হবে-শ্বাশুড়িও তখনই তোমার নবাবীর পাওনা-গন্ডা বুঝে পাবে।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD