তাওবার গুরুত্ব ও ফজিলত – মুফতি খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ ।

Spread the love

মুফতি খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ: আল্লাহ তাআলার দয়া-মায়ার কোনো সীমা নেই। বান্দার প্রতি আল্লাহ পাকের দয়া-মায়া, করুণা অনন্ত অসীম। আল্লাহ তাআলঅ নিজেই ঘোষণা করেছেন, নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অতিশয় দয়াময়। আল্লাহর করুণা, দয়া লাভের অনত্যম মাধ্যম হচ্ছে তাওবা। তাওবার প্রয়োজনীতা ও গুরুত্ব জানার পূর্বে তার পরিচয় জানা আবশ্যক। তাওবার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব তুলে ধরা হলো-তাওবা শব্দের অর্থ হলো- ফিরে আসা। যখন তাওবা শব্দটির সম্পর্ক মানুষের সঙ্গে হয় তখন তার তাৎপর্য দাঁড়ায়, বান্দার কৃত অন্যায়ের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া, সে অন্যায় সম্পূর্ণরূপে বর্জন করা, ভবিষ্যতে এমন অন্যায় না করার দৃঢ়-সংকল্প করা। এমন দৃঢ়-সংকল্প করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার নামই হচ্ছে তাওবা।প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বযে ব্যক্তি কৃত অন্যায়ের জন্য তওবা করবে, সে অবশ্যই আল্লাহর নাফরমানীর কাজ থেকে সর্বদা বিরত থাকতে সচেষ্ট হবে। আল্লাহ পাকের তরফ থেকে আরোপিত ফরজ সমূহকে যত্নসহকারে আদায় করবে।

বান্দার অধিকার খর্ব হলে যেমন- কাউকে গাল-মন্দ, গীবত-শেকায়াত, অত্যাচার-নির্যাতন করলে তার নিকট ক্ষমা চেয়ে নেয়া।তাই ইমাম রাজি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, বান্দার উচিত সর্বদা আল্লাহর দরবারে তাওবা করা। তিনি কয়েকটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়েছেন-ক. হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেছিল, এমন একজন ব্যক্তি সম্পর্কে, যে গোনাহ করে তাওবা করে; পুনরায় গোনাহ করে। আবার তাওবা করে আবার গোনাহ করে। আবার গোনাহের কাজে মশগুল হয় এবং আবার তাওবা-ইস্তিগফার করে।

এ রূপ করতে থাকা ব্যক্তির কি অবস্থা হবে? হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, তার কর্তব্য হলো সর্বদা তাওবা-ইস্তিগফার করতে থাকা। কেননা তাওবা-ইস্তিগফার অব্যাহত থাকলে শয়তান ব্যর্থ হয়ে যাবে। শয়তান বলবে, এ ব্যক্তিকে গোনাহর কাজে সর্বদা মশগুল রাখতে আমি অক্ষম।খ. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট তাওবা করতে থাক। কেননা আমি নিজে দৈনিক ১০০ বার তাওবা করি।গ. হজরত আবু আইউব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট একথা শ্রবণ করেছি, যা তোমাদের নিকট থেকে গোপন রেখেছিলাম তা এই, তিনি বলেছেন, যদি তোমরা গোনাহ করে আল্লাহ তাআলার মহান দরবারে তাওবা-ইস্তিগফার না করতে, তবে আল্লাহ তাআলা এমন এক মাখলুক সৃষ্টি করতেন, যারা গোনাহ করে আল্লাহ তাআলার দরবারে তাওবা করতো, তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ক্ষমা করতেন। (মুসলিম)সুতরাং বুঝা যায় যে, বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওবা-ইস্তিগফারের সুযোগদান এক মহা নিয়ামাত স্বরূপ। তাঁর এ নিয়ামাতের শুকরিয়া আদায় করা বিশ্ব মুসলিমের জন্য একান্ত অপরিহার্য বিষয়। তাই মুসলিম উম্মাহর ‍উচিত মহান আল্লাহর দরবারে প্রতিদিন তাওবা-ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রাথনা করা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের উপর আমল করা।

আসতাগফিরুল্লাহ্-ইস্তেগফারের ফজিলত:
১.গু’নাহ মা’ফ হয়ে যায়।
২. এর মাধ্যমে বালা-মুসিবত দূর হয়।
৩. রিজিক প্রশস্ত হয়।
৪. পরিবারে শান্তি আসে।
৫. শরীরে ঈ’মানি শ’ক্তি বৃদ্ধি পায়।
৬. হৃদয় স্বচ্ছ ও নির্মল হয়।
৭. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়।
৮. চিন্তা-পেরেশানি দূর হয়।
৯.রহমতের বৃষ্টি বর্ষিত হয়।
১০.সুসন্তান লাভ হয়।
১১.নদী-নালা প্রবাহিত হয়
১২.সম্মানিতদের সম্মান বৃদ্ধি হয়।
১৩.আ’জাব-গ’জব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
১৪.মুস্তজাবুদ দাওয়ার গুন অর্জন হয়।(অর্থাৎ, ইস্তেগফার পাঠকারী এমন হয়ে যাবেন,যখন তিনি কোনো দোয়া করবেন আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করবেন।
১৫.পরকালে জান্নাত লাভ হয়।

[সূরা হুদঃ৫২,সূরা আনফালঃ৩৩,সূরা নূহঃ১০-১২,সূরা হুদঃ৩]

আল্লাহ আমাদের বেশী বেশী ইস্তেগফার করার তাওফিক দান করুক।
মহান আল্লাহ তাআলা সবাইকে তাঁর মহান দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।(আমিন)
লেখক তরুণ আলোচক ও গবেষক

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD