সিরাজগঞ্জে বিএডিসি প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অভিযোগের পাহাড়,একাধিক তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলেও স্বপদে বহাল
মোঃ সৌরভ হোসাইন(সবুজ), সিরাজগঞ্জ:
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সহকারী প্রকৌশলী মোঃ জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে গভীর ও অগভীর সেচ সংযোগ দেবার নামে লক্ষ কোটি টাকা হাতিয়ে নেবার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে প্রতারিত কৃষকরা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর সহ দূর্নীতি দমন কমিশনে ( দূদক) অসংখ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে। ইতিমধ্যে এই কর্মকতার বিরুদ্ধে একাধিক তদন্তে অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ প্রমানিত হলেও তিনি স্বপদে বহাল রয়েছেন । এ নিয়ে অভিযোগকারী কৃষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা ইউনিয়নের তেলকুপি গ্রামের কৃষক আব্দুল আলিম লিখিত অভিযোগ করেন, তিনি তার জমিতে অগভীর সেচ সংযোগ প্রাপ্তির জন্য উপজেলা সেচ কমিটির কাছে আবেদন করেন। তাকে সংযোগ পাইয়ে দেবার জন্য উপজেলা কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের উপ সহকারী প্রকৌশলী ও সেচ কমিটির সদস্য সচিব মো.জাহিদ হাসান, তার নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহন করেন। কয়েক দফা তদন্তের নামে তাকে ঘোরানো হলেও সংযোগ দেয়া হয়নি। একই গ্রামের সাইদুর রহমান নিকট থেকে উল্টো মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে বিএডিসি সহকারী প্রকৌশলী নিজেই জমির দাগ নম্বর কেটে অন্য মাঠের সেচ সংযোগটি আব্দুল আলীমের ব্যক্তিগত সংযোগের পাশে অনুমোদন দেন। যা সেচ কমিটির কোন প্রকার অনুমোদন নেয়া হয়নি। এতে কৃষি জমিতে সেচ সংযোগের পানি দেয়া নিয়ে তীব্র বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় কৃষক আব্দুল আলিম ২০২২ সালের ১৬ আগষ্ট উপজেলা সেচ কমিটি,দূর্নীতি দমন কমিশন সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। প্রকৌশলী মোঃ জাহিদ, টাকা নেবার পর থেকে এই প্রকৌশলী আর ফোন রিসিভ করেন না। সেচ কমিটির সভাপতির নির্দেশে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকতা আসয়াদ বিন খলিল রাহাত বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা প্রমান সহ বিএডিসি সহকারী প্রকৌশলীর জালিয়াতি তুলে ধরে ২০ ডিসেম্বর ২০২২ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেচ সংযোগ প্রদানের নামে ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কৃষকদের হয়রানি, প্রতারনার এমন আরো প্রায় দুই ডজন অভিযোগ তদন্ত করছেন উল্লাপাড়া কৃষি বিভাগ। যার বেশ কয়েকটি তদন্ত প্রতিবেদন উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকতার কাছে জমা দেয়া হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগের আরেকটি তদন্তে সহকারী প্রকৌশলীর পার্সোনাল ড্রাইভার নাদিম মাহমুদ যাকে দিযয়ে প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহিদ লক্ষ লক্ষ টাকা অসহায় কৃষকদের কাছ থেকে হাতিযয়ে নিতেন, ইতিমধ্যে ওই প্রতারক ড্রাইভার চাকুরি থেকে বরখাস্থ হয়েছে। তবে অভিযুক্ত প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে এখনো কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমন অনিয়ম করে অসংখ্যা সেচ সংযোগ দেয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের মাঝে দন্ধ কলহ সহ ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলায় একইভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপের সংযোগ দেবার নামে অনিয়ম দূর্নীতির মাধ্যমে লক্ষ কোটি টাকা হাতিয়ে নেবার অভিযোগ উঠেছে বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী মোঃ জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে কৃষকদের অভিযোগ ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা আইন অমান্য করে এই প্রকৌশলী মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে একই মাঠে একাধিক নলকূপ সংযোগ প্রদান,জমির দাগ নম্বর কেটে এক মাঠের সংযোগ আরেক মাঠে দেয়া,নির্দিষ্ট দুরত্বের কাছে ও দুরে সংযোগ প্রদান করা, সংযোগ প্রদান ও আবেদন তদন্তে তিনি মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে থাকেন টাকা ছাড়া তিনি কোন তদন্তই করেন না । এই সংযোগ প্রদানে শুধু নিজেই টাকা নেন না তিনি। উপজেলা সেচ কমিটির সদস্যদের নাম করেও কৃষকদের কাছ থেকে ঘুষ নেন তিনি। বিভিন্ন খাল খনন সহ এই দপ্তরের প্রতিটি উন্নয়ন কাজেই তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েক বছরে বিএডিসি উল্লাপাড়া জোনে দায়িত্বপালন করে তিনি প্রতিটি কাজে অনিয়ম দূর্নীতির মাধ্যমে লক্ষ কোটি টাকা হাতিয়ে বিলাসবহুল বাড়ি করেছেন বিশেষ সূত্রে জানা যায় । এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। এদিকে ওই কর্মকতা নতুন করে উল্লাপাড়ায় শতাধিক সেচ সংযোগ প্রদানের জন্য সেচ কমিটির মিটিংয়ে তা পাশ করানোর চেষ্টা করছেন বলে একটি সুত্র জানিয়েছে। কৃষক আব্দুল আলীমের সেচ সংযোগ দেবার নামে ঘুষ নেবার বিষয়ে কথা হলে বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী মো. জাহিদ হাসান বলেন,কোন ঘুষ নেইনি। তবে তিনি তদন্তের সময় হালকা কিছু খরচ দিয়েছিলেন তাকে। তবে এ নিয়ে কোন সংবাদ প্রকাশ যেন না করা হয়,তিনি এ প্রতিবেদককে এবং অনুরোধ জানান সংবাদ প্রকাশ না করার। কৃষকদের অভিযোগ ও তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে উল্লাপাড়া উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকতা মো.উজ্জল হোসেন জানান,বিএডিসি সহকারী প্রকৌশলীর সেচ সংযোগ দেবার নামে অনিয়ম দূর্নীতির কয়েকটি তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। আমরা মিটিংয়ে সেগুলো রেজুলেশন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করবো। তবে নতুন করে তার দেয়া প্রতিবেদনে আর কোন সেচ সংযোগ প্রদান করা হবে না। এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মাজুদ আলম জানান, সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বিএডিসির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছেন। পাশাপাশি উল্লাপাড়ার অভিযোগের বিষয়গুলো উপজেলা সেচ কমিটি ব্যবস্থা নেবে। এখানে আমার কিছুই করার নেই।