বিশেষ প্রতিবেদক
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে রানীহাট আঞ্চলিক সড়কের ১৮টি বিশাল আকৃতির বটগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গত রবিবার সকালে সরজমিনে দেখা যায়, ৫টি গাছ সড়কের পাকা সীমানার সাথে ছিলো। বাকি গাছগুলো সড়কের দুই থেকে আড়াই ফুট দূরে ছিলো। বিশেষ করে এসব গাছ প্রকৃতিগতভাবেই এমনভাবে বেড়ে উঠেছিলো যে, গাছের ডালপালার কারণেও নিরাপদ চলাচলে কোনো বিঘœ ছিলোনা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগের দাবি, এ সড়ক দিয়ে নির্বিঘেœ যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে বটগাছগুলো কাটা হয়েছে। জানা গেছে, রাজশাহী সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কার্যালয় অপারেশন ডিভিশন (পশ্চিমাঞ্চল) থেকে এসব গাছ কাটার ওয়ার্ক ওর্ডার দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গাছ কাটার বিষয়ে অবগত নন সিরাজগঞ্জর সড়ক ও জনপথ বিভাগ, তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিস ও উপজেলা বন বিভাগ। সিরাজগঞ্জের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবাউল করিম ও উপজেলা বন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, আমরা গাছ কাটার কোনো নোটিস পাইনি।
তাড়াশ পৌর এলাকার কহিত গ্রামের ইসলাম উদ্দীন বলেন, আমার বাবা জামাত আলী কিশোর বয়সে রানীহাট আঞ্চলিক সড়কের দুপাশের বিস্তীর্ণ মাঠে গরু চড়াতেন। সেসময় সড়কের দুপাশে অল্পসংখ্যক বাবলা গাছ ও বড়ই গাছ ছিলো। এরপর আমার বাবা রানীহাট সড়কের কহিত সেতুর পাশে একটি বটগাছ রোপন করেন। সেই থেকে ঐ স্থানটির নাম হয়ে ওঠে জামাতের বটগাছ এলাকা। তারপর তিনি ১৬ কিলোমিটার রানীহাট সড়কে বেশকিছু বটগাছ রোপন করেন।
জামাতের বটগাছ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা রহমান আলী (৭০) বলেন, রানীহাট সড়ক হেরিং বোন ছিলো। তখনকার দিনে অধিকাংশ মানুষ এ সড়ক দিয়ে হেঁটে চলাচল করতেন। বর্ষা মৌসুমে সেসব মানুষজন রানীহাট আঞ্চলিক সড়কের সাইট খাল দিয়ে নৌকায় চলাচল করতেন। জামাতের বটগাছতলায় ছিলো নৌকার ঘাট। পথচারী ও নৌকার যাত্রীরা প্রখর রোদ থেকে বাঁচতে জামাতের বটগাছের নিচে বসে থাকতেন। এ গাছটির কারণে নির্বিঘেœ চলাচলে কোনো বাধা ছিলোনা। এরপরও গাছটি কেটে ফেলা হলো!
সরজমিনে দেখা যায়, রানীহাট আঞ্চলিক সড়কের বিনসাড়া সেতু এলাকাতে, ধোপাগাড়ি পাগলা বাজার, গুল্টা সেতু এলাকাতে, পারিল সেতু এলাকাতে ও জন্তিপুর গ্রামের প্রবেশ পথের বটগাছগুলো সড়কের সামান্য করে পাকা সীমানার সাথে ছিলো। বাকি ১৩টি গাছ সড়কের পাকা সীমানার দুই থেকে আড়াই ফুট দূর থেকে কাটা হয়েছে।
স্থানীয় স্বাধীন জীবন নামের একটি পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক নাসিম বলেন, জলবায়ূ পরিবর্তন রোধকল্পে বৃক্ষের ভূমিকা অপরিসীম। এরপরও সেই গাছ নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে। প্রকৃতি সুরক্ষায় আমি এর সুষ্ঠ তদন্ত দাবি করছি।ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজিপুর স মিলের স্বত্তাধিকারী জহুরুল ইসলাম বলেন, রানীহাট আঞ্চলিক সড়কের উন্নয়নের জন্য বটগাছ কাটার টেন্ডার দেওয়া হয়েছিলো।
রাজশাহী সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কার্যালয় অপারেশন ডিভিশন (পশ্চিমাঞ্চল) এর নির্বাহী বৃক্ষপালনবিদ ডা. মো. জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, রানীহাট আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে নির্বিঘেœ চলাচল নিশ্চিত করতে বটগাছগুলো কাটা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাজশাহী সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) এর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাদেকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।