চলনবিলের শুটকি যাচ্ছে ১২টি দেশে    

Spread the love

আবুল কালাম আজাদ :

#  ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন,চলনবিলের মাছ যদি সংরক্ষণ করা যেতো- তবে শুটকি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটতো চলনবিল থেকেই।

#   শুটকির উতপাদন বাড়াতে চলনবিলে কাঁচা মাছ সংরক্ষণাগার তৈরি জরুরি।

চলনবিলের মাছের কথা মনে হলে কিংবা কারো কাছে চলনবিলের মাছের কথা শুনলেই মুখে রস না এসে পারেনে। চলনবিলের মানুষ যদি রাজধানী বা কোন এলাকায়  চলনবিলের মাছ উপঢৌকন হিসেবে নিয়ে গেলে তার আদর আপ্যায়নই হয়  অন্যরকম। সেই চলনবিলের মিঠা পানির শুটকিমাছের চাহিদা দিন দিন বাড়ছই । দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের প্রায় ১২ টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে এ শুটকিমাছ । ক্রমবর্ধমান এ চাহিদাকে সামনে রেখে অনেক ব্যবসায়ীরা  আকৃষ্ট হচ্ছেন। দাম চড়া হলেও বাড়ছে চাহিদা।বিলের পানি দীর্ঘায়িত হওয়ায়এবং অবৈধ জাল দিয়ে বিলে ও নদীতে মাছ ধরা বন্ধে প্রসাসনের কঠোর পদক্ষেপে পোনা মাছ ধরা বন্ধ হওয়ায় মাছের উতপাদন বাড়বে।যার প্রেক্ষিতে  মৌসুমের এক মাস বাকি থাকতেই বিগত বছরের তুলনায় এ বছর শুটকি মাছের  উৎপাদন প্রায়  ১০০  মেট্রিক টন বাড়বে বলে শুটকি উতপাদনকারিরা আশা করছেন । মাছ সংরক্ষণাগার থাকলে শুটকির উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন  শুটকি উতপাদনে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা।
নাটোর – হাটিকুমরুল মহাসড়কের মান্নান নগর, মহিস্লুটি, চরনবিন, হান্ডিয়াল, চাট্মোহরের খলিসাগারি, নিমাইচড়া এবং নাটোর- বগুড়া মহাসড়কে নিংগইন , ডাহিয়া  বাঁশের ছাউনিতে বসানো হয়েছে শুঁটকির অস্থায়ী চাতাল। সেখানে মিঠা পানির বিভিন্ন ধরনের  সুস্বাদু বিভিন্ন প্রজাতের মাছের শুঁটকি উৎপাদন করতে দেখা যায়।

নাটোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিংড়ায় ৪/৫ টি  চাতাল ও ৩০টি এলাকায় বিলের মাছ সংগ্রহ করে শুটকি তৈরির কাজ করছেন প্রায় ৪ শতাধিক নারী-পুরুষ। ২০২০ সালে সিংড়ায় ৩১৯ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদন হয়। চলতি বছর বন্যা  দির্ঘস্থায়ী  হওয়ায় জানুয়ারি পর্যন্ত মিঠা পানির মাছের  উৎপাদন বেড়ে  ৫শত মেট্রিক ট্রন হওয়ার আশাবাদী । নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের ধারে নিংগইন , তাড়াশের মহিশলুটি এলাকায় গড়ে উঠেছে চলনবিলের সর্বববৃহৎ শুটকি মাছের  চাতাল।  সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ কাটা, বাছাই, ধোয়া, রোদে শুকানো, তোলার কাজে শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করেন। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ব্যবসায়ী নান্নু মিয়া বলেন, চলনবিলের শুঁটকি আমেরিকা, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, দুবাইসহ ১০-১২টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। চলতি মৌসুমে এখানে ১৫০-২০০ মেট্রিক টন শুঁটকি বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। যার আর্থিক মূল্য হবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি বছর চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২৫০টি অস্থায়ী চাতাল বসেছে। এসব চাতালে শোল, বোয়াল, পুঁটি, খলশে, চেলা, টেংরা, বাতাসি, চিংড়ি, নলা, টাকি, বাইমসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে।
মানভেদে এই শুঁটকি মাছকে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডে বাছাই করা হয়। এর মধ্যে ‘এ’ গ্রেডের বা ভালো মানের শুঁটকি মাছ রপ্তানি হয় আমেরিকা, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, দুবাইসহ ১০-১২টি দেশে। মূলত ঢাকার ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরেই এখানকার শুঁটকি বিদেশে যায়। আর ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডের শুঁটকি মাছ বিক্রি হচ্ছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, নীলফামারী, রংপুর, রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। শুঁটকির আকারভেদে দাম হয় ভিন্ন ভিন্ন। ছোট আকারের মাছের শুঁটকি প্রতিমণ ১৬ থেকে ২৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বড় আকৃতির মাছের শুঁটকি ৩০ থেকে ৭০ হাজার টাকা মণ।
শুটকি ব্যবসায়ীরা আরো জানান, চলনবিলে এখন থইথই পানি নেই। এখন প্রায় শুকিয়ে এসেছে। ফলে বিস্তীর্ণ বিলজুড়ে চলছে ধান কাটা কিংবা অন্য ফসল রোপণের কাজ। তবে বিলের নিচু জায়গা বা বড় খালগুলো থেকে মাছ ধরা হচ্ছে। মাছের ভরা মৌসুমে ভেসাল, বাদাই,সুতিজাল, বেড়জাল, খেয়া জাল, পলো দিয়ে মাছ ধরছেন জেলেরা। আর পাশেই বাঁশের ছাউনিতে বসানো হয় মাছশুঁটকির অস্থায়ী চাতাল। সেখানে মিঠা পানির বিভিন্ন ধরনের মাছের শুঁটকি উৎপাদিত হয়।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে কম দামে বিলের মাছ কিনে বাইরের বাজারে চড়া দামে বিক্রি করে। যেসব মাছ অবিক্রিত থাকে সেগুলো কিনে নেন শুটকি উৎপাদকরা। চলনবিলে এবারে সেপ্টেম্বরের  দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই পানি কমতে শুরু করায় শুকিয়ে যাচ্ছে খাল ও বিলগুলো। ধরা পড়ছে  টাকি, শোল, পাতাসি, চান্দা, পুঁটি, টেংরা, গজার, মাগুর,শিং, কই চিংড়িসহ হরেক প্রজাতির দেশি মাছ। এসব মাছের কিছুটা বিক্রি হয় বিল সংলগ্ন হাট-বাজার এবং আরত গুলোতে আর কিছুটা সরাসরি আসে শুটকি চাতালে।
তাড়াশের মান্নান নগর, মহিষলুটি  শুটকি চাতালে গিয়ে দেখা যায়, নারী শ্রমিকরা বিলের তাজা টাকি মাছ কেটে নাড়িভুঁড়ি বের করে ধোয়ার পর লবণ মাখিয়ে মাচায় মেলে দিচ্ছেন। সকালে রোদে ভেজা মাছগুলোও এপিঠ-ওপিঠ উল্টে রাখছেন। পুরুষ শ্রমিকরা চাতাল ঘরে রাখা শুটকি আবারো রোদে শুকাতে দিচ্ছেন। রাস্তার পাশে মাচার উপর শুটকির পসরা সাজিয়ে বিক্রিও করছেন কেউ কেউ। মহাসড়কের পাশে গাড়ি থামিয়ে অনেকেই কিনে নিচ্ছেন শুটকি।
জানা যায়, শৈল মাছের শুটকির কেজি আকারভেদে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা, পুঁটি ৩০০ টাকা, টাকি ৩৫০ টাকা, চেলা ৬০০ টাকা, পাতাসি ৮০০ টাকা, গুচি আকারভেদে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা, কাঁচকি ৭০০ টাকা, বোয়াল ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাপিলা ৪০০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা ও বাইম ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বছরের শুরুতে প্রতিকেজি ১ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এ বছর মাছের স্বল্পতার কারণে বিলের চিংড়ি মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। দেশি চিংড়ি মাছ খুবই সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে নেয়ার পর আর অপেক্ষা করতে হয় না। শুটকি তৈরির জন্য চাতাল পর্যন্ত চিংড়ি আর আসে না। চলনবিল থেকে মওসুমে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মণ শুটকি বিক্রি হয়। তবে সিংড়ার শুটকিগুলো চলে যায় নীলফামারীর সৈয়দপুরে। এছাড়া

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD