তাড়াশে করোনা মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন

Spread the love

দেশে করোনাকালের প্রায় দেড় বছর হতে চলল। সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলায় করোনার প্রকোপ প্রথম থেকেই সনাক্ত হয়েছে। এ যাবৎ আক্রান্তের সংখ্যা এখানে নেহায়েত কম নয়। করোনায় মৃত্যু হয়েছে উপজেলার বেশ কিছু মানুষের।ঢাকাসহ বিদেশে কর্মরত চলনবিলের মানুষের এখানে যাতায়াত স্বাভাবিক তথা অনিয়ন্ত্রিত থাকায় কোভিড-১৯ সংক্রমনের ঝুঁকি তাড়াশে সবসময়ই আশংকাজনক। তাই শুরু থেকেই আমরা তাড়াশে করোনার বিস্তার প্রতিরোধে সম্মিলিত তথা সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলেছিলাম। এক্ষেত্রে দলমত নির্বিশেষে সুশীল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ইউনিয়ন পরিষদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এনজিও, শিল্প-সাংস্কৃতিক সংগঠন, ব্যবসায়ী সমিতি, সরকারী-বেসরকারি দপ্তর সহ সর্বস্তরের প্রতিনিধিত্বশীল একটি ব্যাপক, বৃহত্তর শক্তিশালী ফোরাম গঠন করে করোনার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা অনিবার্য ছিল। সেটা করা গেলে এই উপজেলায় আজকের মত এত অবনতিশীল পরিস্থিতি না-ও হতে পারত। কিন্তু আমলা নির্ভর স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন সেই গণমুখি ধারণার ধারে-কাছেও যায় নি। তারা নিজস্ব ধারার সীমিত গন্ডির প্রচার-প্রচারনা, মাস্ক ও স্বাস্থ্য উপকরণ বিতরণ আর পৌর সদরে অস্থায়ী কিছু পানির জার বসানোর মাধ্যমে তাদের কৃতিত্ব স্থাপন করে মহাখুশি হয়ে বসে আছে। যদিও সেই ক্ষুদে পানির টাংকিগুলো বিভিন্ন স্থানে ইদানিং কাৎচিৎ হয়ে পরে আছে এবং হাত ধোয়ার ব্যবস্থা কবেই অচল হয়ে গেছে। পাশাপাশি যখন সরকারি লকডাউন ঘোষণার সাথে বিভিন্ন বিধিনিষেধ জারী থাকে তখন তারা দাপ্তরিক নির্দেশে এলাকা পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে। লক্ষ্যনীয় যে, তাদের এসব তৎপরতার সাথে জনসম্পৃক্ততা নেই বললেই চলে। এমনকি করোনাকালে বিভিন্ন প্রণোদনা ও ত্রাণ-সাহায্য বিতরণ কর্মসূচিতে স্থানীয় কোন সমন্বয় ও অংশীদারিত্ব অনুপস্থিত ছিল যা একপেশে বাস্তবায়নের প্রতিফলন।

এসব দৃষ্টান্ত থেকে বোঝা যায় করোনার মত অতিমারী মোকাবিলায় স্থানীয় সমাজের অংশগ্রহণ ও ভূমিকা রাখার সুযোগ নিশ্চিত করা হয়নি। অথচ দরকার ছিল উপজেলা পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং গ্রাম পাড়া মহল্লা পর্যন্ত কমিটি করে এগুলোকে করোনা সচেতনতায় স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালনে কাজে লাগানো। সরকার শত চেঁচামেচি করেও জনগণের মাস্ক পরিধানের বিষয়টি শতভাগ তো নয়ই সিংহভাগও অর্জন করতে পারে নি। অথচ খোদ জনতাকে যুক্ত করে তাদের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে এ কাজটি সহজেই করা যেত। যেমনটি করে বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশে^ রোল মডেল স্থাপন করেছে। অবশ্য অতি সম্প্রতি জাতীয় পর্যায়ে সরকারী মহলেও এই কৌশলের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে অতি সম্প্রতি পত্রপত্রিকার খবরে জানা গেল। কিন্তু প্রশ্ন হল, করোনা দুর্যোগের সূচনালগ্ন থেকেই এমনটি করা হল না কেন। এটা তো কোন কঠিন ও জটিল বুদ্ধি নয়। এ যেন “সহজ কাজটি যায় না করা সহজে”। আমরা সরকারী উদ্যোগে মুজিব জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনেও তাড়াশে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনন্য প্রশংসনীয় প্রস্তাব উপেক্ষিত হতে দেখেছি যার কোন জবাবদিহির গরজ নৈতিকভাবে কাউকে করতে দেখা যায়নি। এই হল আমাদের আজকে জনপ্রতিনিধিত্বহীন আমলা প্রভাবিত প্রশাসন। তারপরও আমরা আশা করব, তাড়াশ উপজেলা প্রশাসনের এমন বোধোদয় হবে যাতে তারা সবার স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ ও মূল্যবান অবদান নিশ্চিত করা সাপেক্ষে বিলম্বে হলেও উল্লেখিত পন্থা ও পদ্ধতিতে করোনা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেবে । কারণ টিকার শতভাগ কভারেজের বাইরে একমাত্র ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা ব্যতীত করোনা মহামারি রুখে দেয়া হাস্যকর ছাড়া আর কিছু নয়। সবাই ঈদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্কভাবে উৎসব পালন করবেন এই আহবান জানাই।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD