আবুল কালাম আজাদ।।
নাটোরে করোনা ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের আশা জাগিয়েছে পুলিশ অক্সিজেন ব্যাংক। পুলিশ আইনশৃংখলা রক্ষার পাশাপাশি চলমান করোনা মহামারিতে নানাবিধ মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।ঙ্গতিমারি করোনা আক্রান্ত রোগীদের জরুরী সেবা দানের জন্য অক্সিজেন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা সেসব কাজের অন্যতম। বাড়িতে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, এমন রোগীরা দিন কিংবা রাতে শুধু একটি মোবাইল কল দিলেই কোন প্রকার অর্থ ছাড়াই পৌঁছে যাচ্ছে অক্সিজেনের সিলিন্ডার। যতটা লাগবে ততটা সরবরাহ করবে। অক্সিজেন সরবরাহ ও রোগী বহনের জন্য পুলিশ লাইনসে সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্সসহ চারটি গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠার ১২ দিনে আজ পর্যন্ত নাটোরের তিন শতাধিক মানুষ ঘরে বসে অক্সিজেন ব্যাংকের সেবা নিয়েছেন । অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্টে মানুষ মারা যাবে এমন কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহের উদ্যোগ নেন মানবিক পুলিশ সুপার হিসেবে পরিচিত লিটন কুমার সাহা । সেখান থেকে নাটোরে পুলিশ অক্সিজেন ব্যাংকের যাত্রা।
নাটোর শহরের বড় হরিশপুর এলাকায় গত ২৩ জুন জেলা পুলিশ লাইন্সের ড্রিল শেডে এ অক্সিজেন ব্যাংকের উদ্বোধন করেন রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আব্দুল বাতেন। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেড, পাকিজা গ্রুপ ও নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরীর সহযোগিতায় এই অক্সিজেন ব্যাংক চালু করেছে। শুরুতে ৫১টি সিলিন্ডার নিয়ে ব্যাংকের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।কোন প্রকার অর্থ ছাড়াই পুলিশ অক্সিজেন ব্যাংক থেকে রোগীদের সিলিন্ডার সরবরাহ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে নাটোর পৌরসভার তিন শতাধিক মানুষ পুলিশের এ সেবা গ্রহণ করেছে ।
করোনা মহামারীসহ সার্বিক প্রয়োজনে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি যেকোনো নাগরিকের প্রয়োজনে সরবরাহ নিশ্চিতে এ সেবা চালু করল জেলা পুলিশ। ০১৩২০-১২৪৫০২ এ নম্বরে কল করলেই হাসপাতাল কিংবা বাসায় অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছে নাটোর জেলা পুলিশ।
পুলিশ অক্সিজেন ব্যাংকের সেবা গ্রহণকারী শহরের কানাইখালী মহল্লার রাসেদুল ইসলাম রাসু জানান,নাটোরে পুলিশের পুলিশের এই অক্সিজেন ব্যাংক যদি প্রতিষ্ঠা না হতো তাহলে আমার বাবা ও মা অক্সিজেনের অভাবে হয়তো দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হতো। আমার বাবামার শ্বাসকষ্ট দেখে পরিবারের সবাই যখন দিশেহারা হয়ে পড়ি। তখনই নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহাকে কল দিলে গভীর রাতে অক্সিজেন নিয়ে আমার ও আমার পরিবারের পাশে দাঁড়ান। এরপর অক্সিজেনের জন্য যখনই টেলিফোন করেছি ১০ মিনিটের মধ্যে পুলিশ সদস্যরা অক্সিজেন নিয়ে আমার বাসায় হাজির হয়েছেন। পুলিশের এটি একটি মহতী উদ্যোগ।
নাটোর জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু জানান, আমার স্ত্রী অসুস্থ হলে আমি পুলিশের অক্সিজেন ব্যাংকের সেবা নিয়েছি ।পুলিশ সদস্যরা যেভাবে এই কাজে এগিয়ে এসেছেন, সহযোগিতা করে যাচ্ছেন, তা অনেকেই করতে পারেন না। এ রকম কাজে সমাজের সবারই এগিয়ে আসা উচিত।শহরের আলাইপুরের গৃহবধু নাজমা খাতুন জানান, আমার স্বামী শ্বাসকষ্টের রোগী । কয়েকদিন মধ্যরাতে তার শ্বাস কষ্ট বেড়ে গেলে আমি সরাসরি নাটোরের পুলিশ সুপারকে কল দেয় । তিনি শোনার পর মাত্র ১০ মিনিটে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে উপস্থিত হোন পুলিশ সদস্যরা । সেদিন অক্সিজেন নিয়ে পুলিশ ভাইয়েরা উপস্থিত না হলে বিপদের শেষ হতো না ।
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, অক্সিজেনের অভাবে অনেকেই মারা যায়। এটা আমাদের পীড়া দেয়।অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হয় এই চিন্তা থেকে নাটোরে পুলিশ অক্সিজেন ব্যাংকের যাত্রা শুরু। রোগীর অবস্থান যদি নাটোর শহরে হয়, তাহলে ১০ মিনিটের মধ্যে তাঁর কাছে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়া হবে। পৌর শহরের বাইরে সময় কিছুটা বেশি লাগতে পারে। হাসপাতালেও যদি অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে সেখানেও পৌঁছে দেওয়া হবে। বিনা মূল্যে ২৪ ঘণ্টা এই সেবা চালু থাকবে। এ ছাড়া রোগী পরিবহনেও দুটি অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিনা মূল্যে সিলিন্ডার সেট, টেকনোলজিস্ট সাপোর্ট ও প্রয়োজন শেষে সিলিন্ডার ফেরত নিয়ে আসার সেবা দেবে জেলা পুলিশ।
|