নাম – অসিত কুমার আকাশ । প্রসংশনীয় তাঁর উদ্যোগ। করোনার দ্বিতীয় প্রবাহের অপ্রতিরোধ্য বৈশ্বক মহামারির এ সময়ে স্ব- উদ্যোগে ক্রোনা জীবানুনাশক শহরের মহল্লায় যানবাহনে , প্রতিষ্ঠানে স্প্রে ক্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষার শিক্ষনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নাটোরবাসীর বাহবা অর্জন ক্রেছেন। স্যালুট স্প্রে আকাশকে।
প্রথমে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার ভাবনা থেকে গত ১ মার্চ জীবাণুনাশক ছিটানোর যন্ত্র কিনেন । এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার নেয়া ভাঙ্গা সাইকেল,ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম পিপিই,সাউন্ড বক্স এবং স্প্রে মেশিন কিনে ব্যক্তি উদ্যোগে তিনি এই সেবা প্রদান শুরু করেন।পাশাপাশি চলতে থাকে পথচারীদের হাতে হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করার কাজ । শহরের সচেতনমহল আকাশের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান । শহরবাসীর কাছে পরিচিতি পায়,জীবানুনাশকের ফেরিওয়ালা বলে ।
আকাশ বলেন, সংকটের সময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো তো সবার কর্তব্য। আমি আমার দায়িত্বটুকু পালন করেছি মাত্র।মানুষের উৎসাহে উদয়াস্ত স্প্রে করা শুরু করেন আকাশ ।ফলে ব্যবসার যেটুকু পূঁজি ছিল সেটাও শেষ হয়ে যায় জীবানুনাশক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনতে গিয়ে ।একই দিন নিজের ঘর ও আশপাশের রাস্তায় জীবাণুনাশক ছিটাই। পরে এলাকার অন্যদের কথা চিন্তা করে শুরু করি স্প্রে কার্যক্রম। সেই থেকে আজ অবধি স্প্রে করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নাগরিক দায়িত্ববোধ থেকেই জীবাণুনাশক ছিটানোর এই উদ্যোগ গ্রহণ করি। চারপাশের পরিবেশ, রাস্তাঘাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস, পাড়া-মহল্লা, হাসপাতাল-ক্লিনিক, ধর্মীয়স্থান, রিকশা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ সব জায়গাই যেন জীবাণুমুক্ত থাকে সেজন্যই আমি এই কাজ করে যাচ্ছি।
এখন বলা যায়, স্প্রে করাটা আমার নেশায় পরিণত হয়েছে। এক সময়ের অচেনা প্রতিবেশীরাও আমাকে এখন “স্প্রে আকাশ ” নামে চিনেন, বলেন তিনি।স্বেচ্ছাসেবক আকাশ জানান,দ্বিতীয় দফায় করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার সাথে সাথে বেলজিয়ামের একটি কোম্পানির কাছ থেকে জীবানুনাশক ক্রয় করে ¯েপ্র ও সচেতনতামূলক প্রচারনার কাজ শুরু করেন। প্রতিদিন ৮০-১০০ লিটার জীবানুনাশক তিনি শহরের বিভিন্ন স্থানে ছিটিয়ে থাকেন। তবে তার এই সেবার পথ সহজ ছিলো না কখনোই। করোনার প্রথম দিকে একজনের কাছ থেকে ধার করা সাইকেলে সাউন্ডবক্স লাগিয়ে পুরো শহরে সেবা দিতেন। কিন্তু বর্তমানে সাইকেল না থাকায় হেঁটেই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া স্প্রে করার সময় অনেকে বিরক্ত হয়ে তাকে গালিগালাজও করেছেন। আবার উৎসাহও দিয়েছেন অনেকে। মানুষকে করোনা-১৯ ভাইরাস নিয়ে সচেতন করতে গিয়ে মানুষের তিরস্কার আর কটু কথার মুখোমুখি হতে হয় আকাশকে ।অনেকে জিজ্ঞেস করে কে অর্ডার করেছে স্প্রে করতে , বেতন কত পায়।যখন শুনে তিনি স্বেচ্ছাসেবক তখন কেউ বিশ্বাস করে না। বলে এটা অসম্ভব নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো।
আকাশ জানান ,অনেকেই বিশ্বাস করেননা আমি নিজের পকেটের টাকা দিয়ে এসব করছি । এটা হচ্ছে এমন এক ব্যাপার আপনি ভাল কাজ করলে এমন সমালোচনার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। তাই এটার দিকে আমি দৃষ্টি দিই না।”আকাশের মা অঞ্জনা রানী সরকার বলেন,আর্থিক অনটনের কারণে ছেলের এই স্বেচ্ছাসেবী কাজে সম্মতি ছিলোনা পরিবারের। আকাশের প্রতি পরিবারের সদস্যদের একটা ক্ষোভ ছিলো যে আমাদের ভবিষ্যতটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসার পূঁজি বলতে যা ছিল সবই শেষ করেছে জীবানুনাশক আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনে ।যখন দেখলো যে এটা তার নেশা, তখন তারা এ সংকটের ভেতর দিয়ে স্বসম্মানে গড়ে উঠেছে।
গণমাধ্যমকর্মী খান মামুন বলেন,আকাশকে করোনার শুরু থেকে দেখছি শহরের আনাচে কানাচে জীবানুনাশক ছিটিয়ে যাচ্ছে । পথচারীদের হাতে হাতে হ্যান্ডস্যানিটাইজার ¯েপ্র করছে । আর সাইকেলের সামনে বাঁধা সাউন্ডবক্সে বিরামহীন বাজছে…স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন… মাস্ক ব্যবহার করুন সহ করোনা ভাইরাসের নানা সতর্কতার শ্লোগান ।লকডাউনে ব্যবসা বন্ধ থাকায় তিনি বর্তমানে এই সেবা প্রদানে হিমশিম খাচ্ছেন। তবুও থেমে যায়নি তার সেবা। তার এই সেবা সচল রাখতে তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন। কেউ যদি একটি সাইকেল আরজীবানুনাশক নাশক,হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে আকাশ আবারো নামতে পারতেন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ।
এ বিষয়ে নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। আমরা এই সমাজ সেবা মূলক কাজে তাকে সহযোগিতার উদ্যোগ নিচ্ছি। নাটোর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদুজ্জামান বলেন, এটা আকাশের একটি মহান উদ্যোগ । আমরা তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আসুন আমরা সবাই স্প্রে আকশের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে যার যার অবস্থান থেকে করোনার মহামারি থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতনামূলক উদ্যোগ গ্রহন করি।
#আবুল কালাম আজাদ, ০১৭২৪ ০৮৪৯৭৩ #
|