গাজী সৈয়দ শুকুর মাহমুদ
আদিকাল হতেই মানুষ ধর্মান্তরিত হয়ে আসছে পূর্ববর্তী ধর্ম ত্যাগ করে পরবর্তী ধর্ম বা নতুন ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন। কেউবা স্বধর্ম ছেড়ে পাশাপাশি অন্য ধর্মে নিজেকে বদলায়ে নিচ্ছেন। আদিকাল হতে মানুষের ধর্মান্তরিত হবার প্রবণতা আছে বলেই আমরা সর্বশেষ বা সর্বশ্রেষ্ঠ ইসলাম ধর্ম পেয়েছি। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই বলা যায় যে ধর্মান্তরিতরা উত্তম মানুষ।
মহান সৃষ্টিকর্তা মানুষ সৃষ্টি করার বহু আগে সৃষ্টি করেছে মানবের হেদায়েতের জন্য ধর্ম। মানুষের ইহকাল ও পরকালের কল্যাণই ধর্ম। বর্তমান সারাবিশ্বে বহু ধর্ম বহু জাতির মানুষ রয়েছে। এসকল ধর্ম আর জাতি সৃষ্টি হয়েছে আল্লাহর সৃষ্টি ধর্ম থেকেই। এই বিশ্ব জগতের সৃষ্টিকর্তা একজন। তার কোন অংশিদার বা বংশধর নেই। তিনি যত মাখলুখ সৃষ্টি করেছেন সবই তার বান্দা। বান্দার অর্থ হচ্ছে বন্দেগী করনেওয়ালা। বান্দার কাজ হচ্ছে মনিবের হুকুম পালন করা অর্থাৎ মনিবের গোলামি করা। অন্যান মাখলুখের প্রতি শুধুমাত্র হুকুম দিয়েছেন তোমরা আমাকে প্রভূ স্বীকার করো। আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি, তোমাদের বেঁচে থাকার সকল উপকরণ দিয়েছি, আয়ু বেধে দিয়েছি। আয়ু শেষ হলে তোমাদের মৃত্যু হবে। তার এ হুকুমের অনুসরণ করেই সকল মাখলুখ চলছে। তাদের উপর কোন ধর্ম নাজিল করা হয়নি, ধর্মীয় শাসন বিধান তাদের জন্য নেই। তাদের মৃত্যুর পর পরজগতে কোন হিসেব নেয়া হবে না। সৃষ্টির সকল মাখলুখের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষকে। মানুষের আছে নিজস্ব জ্ঞান বুদ্ধি হুশ আকল। স্বাধীনভাবে বিচরণ করার ক্ষমতা আর এ মানুষের জন্যই দেয়া হয়েছে ধর্ম। মানুষ সৃষ্টির বহু আগেই আল্লাহপাক সৃষ্টি করেছেন মানুষের ধর্ম, মানবের কল্যাণের জন্য দিক নির্দেশনা (গাইড লাইন) দিয়েছেন। ধর্মগ্রন্থের মাঝে তার সকল হুকুম নিষেধ ধর্মগ্রন্থাকারে মানুষের মাঝে দেয়া হয়েছে। সৃষ্টিকর্তা এক মানব জাতিও এক। সে সূত্রে মানবের ধর্মও এক। তবে বর্তমান বিশ্বে এতো ধর্ম এতো জাত ভেদ কেন? এতো রকমারি ধর্মের প্রয়োজনীয়তা কোথায়?
আল্লাহপাক তার পবিত্র বাণী মানুষের গাইড লাইন হিসেবে দিয়েছেন। এ ধর্ম নিজে নিজেই ছড়িয়ে দেননি। ফেরেস্তাদের মাধ্যমে মানবের শ্রেষ্ঠ মানুষ নবীগণের মাধ্যমে নাজিল করেছেন। প্রশ্ন আসতে পারে আল্লাহ এক যার জন্য ধর্ম দেয়া হয়েছে সে জাতিও এক। সে সূত্রে ধর্মও এক হবার কথা অথচ বর্তমান বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য ধর্ম- অসংখ্য জাতি কেন? আমরা জানতে পারি এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী বা রাসূলের আগমন ঘটেছে। এই পরিসংখ্যানও যথার্থ নয়। এর চেয়ে বেশিও থাকতে পারে। তবে প্রত্যেক নবীকে তার বংশধর বা মানব জাতির জন্য একটি করে ধর্ম দেয়া হয়েছে। পূর্ববর্তী নবীগণের ধর্ম ও ধর্মীও বাণী তাদের পরবর্তীকালে মানুষেরা বদলে নিয়েছেন, পরিবর্তন করেছে ধর্মীও বাণী। নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজন করেছে। ফলে ঐ ধর্ম হয়েছে কলুষিত। পরবর্তীকালে পূর্ববর্তী ঐ ধর্ম সংস্কার না করে নতুন করে আবার ধর্ম দেয়া হয়েছে পরবর্তী নবীর মাধ্যমে। নতুন ধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটেছে। নবীদের প্রচেষ্টায় বিশ্বাসীরা নতুন ধর্মে আকৃষ্ট হয়েছে। কেউ বা পূর্ববর্তী ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়েছে। বিভিন্ন তথ্য ও গবেষণায় উঠে এসেছে যখন নবীগণ ধর্ম নিয়ে এসেছেন বিশ্বাসীগণ তার ধর্ম গ্রহণ করেছে। অনেকেই ধর্মহীন অবস্থায় অটল রয়েছে। পূর্ববর্তী ধর্ম বাতিল করে যখন পরবর্তী ধর্ম প্রচারিত হয়েছে ধর্মহীনেরা অনেকেই সে ধর্ম গ্রহণ করে নিয়েছে। আর অনেকেই পূর্ববর্তী ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে নতুন ধর্ম গ্রহণ করে নিয়েছে। এভাবে আদিকাল থেকে পৃথিবীর মানুষ ধর্মান্তরিত হয়ে আসছে। তবে কোরআনের ভাষ্য অনুসারে, ধর্ম ও বর্ণের বৈচিত্র থেকে যেন মানুষ পরস্পরকে চিনতে পারে। মানুষের ধর্মান্তরের প্রবণতা আছে বলেই আজ আমরা নতুন ধর্ম বা সর্বশেষ শ্রেষ্ঠ ইসলাম ধর্ম পেয়েছি। সংশোধিত পরবর্তী ধর্মে না এসে যারা পূর্ববর্তী ধর্ম নিয়েই পড়ে আছে তারা ধোকার মধ্যে রয়েছে। যারা ধর্মান্তরিত হয়ে আসছে তারা নিজের জ্ঞান বিবেক বুদ্ধি পরামর্শেই ধর্মান্তরিত হয়েছে। তাই ধর্মান্তরিতরা উত্তম মানুষ।
ধর্মান্তরিত হবার প্রবণতা শুধু মানব জাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধতা নয়। মানুষ সৃষ্টির পূর্বে এই পৃথিবী জ্বীন জাতির আবাসস্থল ছিলো। তাদের মধ্যেও ছিলো ধর্ম এবং ধর্মান্তরিত হবার প্রবণতাও। পবিত্র কোরআন শরিফের বাণী অনুযায়ী জানা যায় যে জ্বীনদের মধ্য হতে উত্তম জ্বীনকে নবী হিসেবে প্রেরন করা হয়েছিলো। জাগতিক রাজত্বকালে তাদের মধ্য হতে পর্যায়ক্রমে মোট ১১জন নবী অবতরণ করা হয়েছিলো। একেকজন নবীর সময়ে একেকটি ধর্ম নাজিল হয়েছে। তারাও পূর্ববর্তী ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে পরবর্তী ধর্মের দীক্ষা নিয়েছেন। যার ফলে ধর্ম নিয়ে বিভ্রান্তি ও বিতর্ক জ্বীনদের মধ্যেও রয়েছে। কিন্তু শেষ কথা হল, কোরআনের বর্ণনা মতে আল্লাহ অন্য সব ধর্ম বাতিল ঘোষণা করে একমাত্র ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন তথা ধর্মরুপে প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন।
লেখক : কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট,শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ। মোবা: ০১৭৮২-৪৫৭৭৮৩।