গুরুদাসপুরে পরকীয়ার জেরে খুন, ২২ মাস পর যুবকের মরদেহ উদ্ধার

Spread the love

পরকীয়া প্রেমের জেরে মাফিজুল ইসলাম (২৮) নামের এক যুবককে শ্বাসরোধে হত্যার পর প্লাস্টিকের বস্তায় ভড়ে টয়লেটের মেঝেতে পুঁতে রাখা হয়েছিল মরদেহ। দীর্ঘ ২২ মাস পর রোববার দুপুরে মরদেহটি উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

মরদেহটি উত্তোলনের আগে রবিবার বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে নেওয়া হয়েছিল তিন আসামীকে। আসামিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চার ঘন্টার প্রচেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় টাইলস এবং ঢালাই কাটার পর প্রায় দশ ফুট মাটি খুঁরে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।

এসময় গুরুদাসপুরের সহকারি কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান শাকিল, নাটোরের অর্থ ও প্রশাসন বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাইনুল ইসলাম, ক্রাইম এন্ড অবস বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরিফুল ইসলাম, ফায়ার সার্ভিসের রাজশাহী বিভাগের সহকারি পরিচালক খুরশেদ আলম, সিংড়াগুরুদাসপুর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার আক্তারুজ্জামান, চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান ও গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ উজ্জল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান জানান, নিহত ব্যাক্তির পুরো দেহ পাওয়া গেছে। তবে মাংস পচে হাড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এরআগে, শুক্রবার এজাহার নামীয় তিনজনসহ অজ্ঞাত আরো তিনজনকে অভিযুক্ত করে গুরুদাসপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের মা মাহিনুর বেগম। হত্যাকাণ্ডের শিকার মাফিজুল ইসলাম গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় খলিফা পাড়া মহল্লার আজাদ প্রামাণিকের ছেলে। তিনি পেশায় রঙ মিস্ত্রি ছিলেন।

নিহতের মায়ের দায়ের করা মামলায় এজাহার নামীয় আসামিদের মধ্যে নৈশ্যপ্রহুরী তাহের খলিফা (৬৫), আল-হাবিব (৩৯) ও আশরাফুলকে (৪৫) এবং অজ্ঞাত নামা আসামি হিসেবে গৃহবধূ তানজিলাকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। অধিকতর তদন্তের জন্য গ্রেপ্তারকৃত চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শনিবার বিকেল থেকে তিনদিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।  

পুলিশ ও স্থানসীয় সূত্র বলছে, আসামি তানজিলার পিতা তাহের খলিফা বাড়ির পাশের চাঁচকৈড় বালিকা মাদরাসার নৈশপ্রহুরী পদে চাকুরি করেন। গুরুদাসপুর পৌর শহরের চাঁচকৈড় পুড়ান পাড়া মহল্লায় তাদের বাড়ি। ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল তানজিলার মাধ্যমে পরকীয়া প্রেমিক মাফিজুলকে রাত ১১টার দিকে বাড়িতে ডেকে নেন তাহের খলিফা। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন মেয়ে জামাই আল-হাবিব ও আশরাফুল ইসলাম। একপর্যায়ে চারজন মিলে মাফিজুলকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি গোপন করতে রাতেই বাড়ির পাশের দাখিল মাদরাসার নির্মাণাধীন টয়লেটের মেঝের বালু খুঁড়ে মরদেহ পুঁতে রাখা হয়। এদিকে সন্তানকে খোঁজখুঁজি করে সন্ধান না পাওয়ায় ২০২২ সালের ৭ মে গুরুদাসপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন নিহত মাফিজুলের মা।

নাটোরের অর্থ ও প্রশাসন বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাইনুল ইসলাম বলেন, আল-হাবিব ছিলেন তানজিলার দ্বিতীয় স্বামী। স্বামীর অগোচরে নিহত মাফিজুলের সাথে তানজিলার পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে আল-হাবিব তানজিলা দম্পতির মধ্যে কলহ তৈরি হয়। একপর্যায়ে আসামিরা পরকীয়া প্রেমিক মাফিজুলকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন।

গুরুদাসপুর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার আক্তারুজ্জামান বলেন, ২০২২ সালে হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হওয়ার পর ২০২৩ সালে তানজিলার সাথে স্বামী আল-হাবিবের আবারো কলহ সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে তানজিলার দায়ের করা যৌতুকের মামলায় জেলহাজতে যান আল-হাবিব। জেলহাজতে থাকা অবস্থায় আল-হাবিব গুরুদাসপুরের জাকির মুন্সি নামের ব্যক্তির কাছে মাফিজুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। জাকির মুন্সি জামিনে বেরিয়ে এসে বিষয়টি প্রকাশ করলে থানায় হত্যা মামলা রুজু হয়। গ্রেপ্তারের পর আসামিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মরদেহ পুতে রাখার স্থানটি শনাক্ত করেন তারা। দুইদিন মাদরাসাটি পুলিশ প্রহরায় রাখা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চার বছর বয়সি শিশুকে বুকে জড়িয়ে ডুকরে কাঁদছেন নিহত মাফিজুলের স্ত্রী। ছেলের শোকে কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যাচ্ছেন মা-বাবা। তাদের কান্নায় আশপাশের বাতাশ ভারী হয়ে উঠে।

নিহতের চাচাতো ভাই স্থানীয় কাউন্সিলর শেখ ফরিদ বলেন, আসামি আশরাফুলের সাথে একাধিক নারীর সম্পর্ক রয়েছে। আশরাফুলের সাথে তানজিলার ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। পরিকল্পীতভাবে চাচাতো ভাই মাফিজুলকে খুন করেছেন আসামিরা।

মামলার বাদি মাহিনুর বেগম বলেন, দুই ছেলের মধ্যে মাফিজুল বড়। ছেলে নিখোঁজের পর থেকে পথ চেয়ে বসে থাকতেন তিনি। বিশ্বাস ছিল ছেলে ফিরে আসবে। তবে মরদেহ হয়ে ফিরবে এটি তিনি মানতে পারছেন না। তিনি আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD