তাড়াশে রহস্যজনক দুধর্ষ হত্যাকান্ড

Spread the love

গোলাম মোস্তফা :
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে একই পরিবারের স্বামী, স্ত্রী ও তাদের একমাত্র কন্যা সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। (২৯ জানুয়ারি) সোমবার দিবাগত রাত আটটার দিকে এ ঘটনার জানাজানি হয়। তাড়াশ থানা পুলিশ, সিআইডি, ডিবি ও পিবিআই কর্মকর্তারা তদন্ত শেষে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে লাশ উদ্ধার করেছেন। নিহতরা হলেন- তাড়াশ পৌর শহরের তাড়াশ সদর গ্রামের প্রফেসর পাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা কালিচরণ সরকারের ছেলে বিকাশ চন্দ্র সরকার (৪৫), তার স্ত্রী অর্ণা সরকার (৪০) ও তাদের একমাত্র মেয়ে তুষি সরকার (১৫)। নির্মম এ হত্যাকান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উল্লাপাড়া সার্কেলের (উল্লাপাড়া-তাড়াশ) সহকারী পুলিশ সুপার অমৃত কুমার সূত্রধর।
নিহতের বড় ভাই প্রকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, জমিজমা নিয়ে ছোট ভায়ের সাথে তার বিভেদ ছিলো। যে কারণে একই ভবনের পাশাপাশি ফ্লাটে দুই ভাইয়ের পরিবার থাকলেও কখনো কারো সাথে কথা হত না। বিশেষ করে বিকাশ পরিবার নিয়ে কোথাও গেলে তাকে কিছুই বলে যেতেন না। তিনি গত শনিবার থেকে খেয়াল করেন বিকাশের ফ্লাটে তালা ঝুলছে। এ কয় দিনের মধ্যে আত্মীয়-স্বজনরা বিকাশকে ফোনে না পেয়ে তাকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। তখন তিনিও বিকাশের দরজার পাশে দাড়িয়ে ফোন করেন ও ঘরের ভেতর থেকে রিংটন বাজার শব্দ শুনতে পান। তখন তিনি প্রথমে তার ভাগ্নেদের জানায়। এক ভাগ্নের বাড়ি শেরপুর। তার নাম লিপন সরকার। আরেক ভাগ্নে উল্লাপাড়ার তেলি পাড়া গ্রামের রাজিব সরকার। এরপর সবাই মিলে প্রতিবেশীদের ডাকেন। পরে দরজার তালা ভেঙে দেখেন ঘরের মধ্যে তিনজনকে গলা কেটে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়েছে। তখন পুলিশকে জানায় এ মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের বিষয়টি। প্রকাশ চন্দ্র সরকার আরো বলেন, তার ধারনা এ হত্যাকান্ড গত শনিবার দিবাগত রাতের।
প্রকাশ চন্দ্র সরকারে স্ত্রী বিকাশের ভাবি আলপনা রানী বলেন, আমি রবিবারের দিন ভবনের ছাদে গিয়েছিলাম। আগের দিন শনিবারে সন্ধ্যার দিকে আমার ভাগ্নে রাজিব আসেন আমাদের বাসায়। এরই মধ্যে আমাদের ভবনের নীচতলার দুইজন ভাড়াটিয়া বলেন প্রকাশ দা ও দিদিকে তো দেখতে পাইনা। মেয়ে তুষিও তো বিদ্যালয়ে যাচ্ছেনা। তুষি তাড়াশ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণিতে পড়ে। এরপর ভাড়াটিয়ারাও তাদের ফোনে খুঁজতে শুরু করেন। কিন্তু তারা সবার ফোনে কল দিয়ে বন্ধ পায়। পরে আমরা ভেবে নিয়েছি বাহিরে ঘুরতে গেছে।
প্রকাশ চন্দ্র সরকারের ছেলে বিকাশের ভাতিজা রাতুল চন্দ্র সরকার বলেন, আমি তাড়াশে থাকিনা। এমবিত্র ডিগ্রি সম্পূর্ণ করে বিগত দুই মাস আগে বাসায় আসছি ঢাকা থেকে।
এদিকে নিহত বিকাশ চন্দ্র সরকারের মা তুলসী (৯৫) বিলাপ করতে করতে বলেন, “ কোথায় আমার বিকাশ। আমাকে তার কাছে নিয়ে চলো। আমি আমার ছেলের মুখখানি একবার দেখতে চাই।”জানা গেছে, প্রকাশ ও বিকাশ চন্দ্রের তিন তলা ভবনে ৫টি পরিবার ভাড়া থাকেন। দুই তলায় পাশাপাশি ফ্লাটে দুই ভাই বসবাস করতেন।দেখা গেছে ঘটনা স্থলে তদন্তের কাজ করছেন আইন শৃঙ্খলা বাহীনীর বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তারা। নিহতের আত্মীয়-স্বজনরা আহাজারী করে মাটিতে গড়াগড়ি যাচ্ছেন। দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ এসেছেন নিহতদের দেখতে।লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাক্ষ মো. মনিরুজ্জামান, পৌর মেয়র আব্দুর রাজ্জাক, মহিলা কাউন্সিলর প্রভাষক রোখসানা খাতুনসহ আরো অনেকে।এ প্রসঙ্গে তাড়াশ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। #

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD