চলনবিল বার্তা , সংখ্যা ১১, ২০২৩

Spread the love

সংখ্যা ১১ শুক্রবার ১৭ নভেম্বর ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ ৪ জমাদিউল আওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন 

ডেস্ক রিপোর্ট : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণা উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের এ তারিখ জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত বুধবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন সিইসি। সেখানে তিনি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে এ ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।ভাষণে সিইসি সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। এ সময় তিনি সংবিধান ও আইনের আলোকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।তফসিল ঘোষণাকালে সিইসি জানান, সংসদ নির্বাচনের জন্য ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন প্রয়োজন হবে। কেউ স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে চাইলে নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত প্রত্যয়নপত্র লাগবে। অবশ্য কেউ অতীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করে থাকলে এই বাধ্যবাধকতা থাকবে না। সূত্র : ঢাকা পোষ্ট অনলাইন।

তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ
ডেস্ক রিপোর্ট : তফসিল ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ এ দেশে গণতন্ত্রের নেতৃত্ব দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দীর্ঘ ৪৩ বছর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। আজকের দিন খুব আনন্দের দিন। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিলকে স্বাগত জানাই।
গত বুধবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয় প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী ১৭ তারিখ আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। একই সময়ে মনোনয়ন প্রত্যার্শীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ড. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সহ শীর্ষ নেতা পর্যায়ের আরো অনেকে। সূত্র : ঢাকা পোষ্ট অনলাইন ।
তফসিল প্রত্যাখ্যান বিএনপির
দেশকে গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে ইসি : রিজভী 

ডেস্ক রিপোর্ট : নির্বাচন কমিশন আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে দেশকে গভীর সংকটের দিকে ফেলে দিয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এই স্বৈরাচার সরকারের প্রধান দলদাস। গত বুধবার (১৫ নভেম্বর) রাতে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, গোটা বাংলাদেশের প্রত্যাশা, জনমত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর্যুপরি আহ্বান উপেক্ষা করে নিশিরাতের সরকারের তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনের তামাশার তফসিল ঘোষণা করেছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে অতীতের মতোই আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার হরণের জন্য মেরুদন্ডহীন ও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন যে তফসিল ঘোষণা করেছে, তা আমরা চরম ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। তিনি বলেন, দেশে একটি ভীতিকর যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে একতরফা নির্বাচনের এই তথাকথিত তফসিল-রঙ্গ জনগণ মানে না। এই নীলনকশার নির্বাচনের তফসিলে বাংলাদেশের মাটিতে কোনো নির্বাচন হবে না। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল- বিএনপির পক্ষ থেকে আমি সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আবারো হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, এই অবিমৃষ্যকারিতার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে যে ভয়াবহ অচলাবস্থা ও চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হবে তার পুরো দায়ভার তাদেরই বহন করতে হবে।এই সঙ্কটের জন্য আওয়ামী মাফিয়া চক্রকে চিরকাল দায়ী থাকতে হবে উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, জনগণের চলমান অগ্নিগর্ভ আন্দোলন আরও তীব্র, আরও কঠিন থেকে কঠিনতর হবে এবং অতি দ্রæতই আওয়ামী নাৎসী সরকারের পতন ঘটবে ইনশাআল্লাহ। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার পর এই সম্পূর্ণ অবৈধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সবার বিচার করবে জনগণ। রিজভী বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার ভাষণে বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করবেন। এ কথা ডাহা মিথ্যা, ভন্ডামিপূর্ণ এবং মেকি। শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন বিশ্বাস করা চোরাবালিতে পড়ার সামিল। সূত্র : ঢাকা পোষ্ট অনলাইন ।

ঐতিহাসিক নওগাঁ দিবস
তাড়াশে মুক্তিযোদ্ধাদের মিলন মেলা 

তাড়াশ প্রতিনিধিঃ অসা¤প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে মধ্য দিয়ে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ঐতিহাসিক নওগাঁ দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত শনিবার দিবসটি উপলক্ষে নওগাঁ বাজার এলাকায় বর্ণাঢ্য শোভা যাত্রা ও এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে ঐতিহাসিক নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজ মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা হয়। তাড়াশ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউলিন্সের প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপত্বিতে ওই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ।
অন্যানের মধ্যে বক্তব্য দেন, পলাশ ডাঙ্গা যুব শিবিরের কম্পানী কমান্ডার আব্দুর রহমান মিঞা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আরশেদুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান সাজু, বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম আব্দুর রাজ্জাক, তাড়াশ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ খন্দকার, সাবেক সভাপতি আব্দুল হক, যুগ্ম সম্পাদক শাহিনুর আলম লাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি খলিলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক জর্জিয়াস মিলন রুবেল প্রমুখ।
উলে¬খ্য, ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে ৭১’র যুদ্ধকালীন সংগঠন পলাশ ডাঙ্গা যুব শিবিরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এক সন্মুখ যুদ্ধে পাক বাহিনীর ১৩০ জন সৈন্য নিহত হয়। সেই সাথে ওই যুদ্ধ থেকে পাক বাহিনীর প্রচুর পরিমাণ সমরাস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে চলে আসে।

তাড়াশের আমবাড়িয়া গণহত্যা
দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবী

সাব্বির আহম্মেদ : ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নের আমবাড়িয়া গ্রামে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা এক নির্মম গণহত্যা চালায়। এ দিন ওই গ্রামের ১৩ জন মুক্তিকামী মানুষকে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে তারা।
শহীদগণ হলেন- আমবাড়িয়া গ্রামের শহিদ ইয়ার মোহাম্মাদ, শহিদ মেহের মন্ডল, শহিদ সুলতান সেখ, শহীদ সফিজ উদ্দিন, সেখ, শহীদ দেছের আলী, শহীদ ফয়েজ উদ্দিন, শহীদ মোক্তার হোসেন, শহীদ ওসমান আলী, শহীদ মজিবর রহমান, শহীদ কিয়ামত আলী, শহীদ জুব্বার ফকির, শহীদ আমিন উদ্দিন, শহীদ আব্দুর রহমান।
গত শনিবার সরেজমিনে আমবাড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শহিদদের স্মরণে তাড়াশ উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে গণকবর প্রাঙ্গনে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। তাড়াশের বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান সাজু জানান, ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ এলাকায় পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকবাহিনী সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হয়। ওই যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে তার দু’দিন পর পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা নওগাঁর পার্শ্ববর্তী আমবাড়িয়া গ্রামে হামলা চালিয়ে ১৩ জন মুক্তিকামী মানুষকে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে এবং আগুনে জ্বালিয়ে দেয় পুরো গ্রাম।
এ ব্যাপারে শহিদ ইয়ার মোহাম্মাদের বড় ছেলে অধ্যক্ষ লুৎফর রহমান বলেন, শুধু স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে আমবাড়িয়ার গণ কবরের ১৩ শহীদকে স্মরণ করা হয়। তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে আমবাড়িয়া গণহত্যা দিবসটি পালনের দাবী জনান। এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,তাড়াশে পাক-হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী আমবাড়িয়া গণকবর। এ দিন সরকারীভাবে (১৩ নভেম্বর) গণহত্যা দিবস পালনে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তাড়াশ-গুরুদাসপুর মৈত্রী সড়ক বেহাল 
জনদুর্ভোগ চরমে
গোলাম মোস্তফা, বিশেষ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের তাড়াশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তরের তাড়াশ-গুরুদাসপুর মৈত্রী সড়কের উপর থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর সড়ক ভেঙে খানাখন্দে বেহাল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, সড়কের একটি কালভার্ট একেবারে ভেঙে পড়ায় তাড়াশ ও গুরুদাসপুর উপজেলার বহু মানুষের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে আরো একটি কালভার্ট থেকে সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ভুক্তভোগী লোকজন পানির নিচ থেকে সড়কের ভাঙা টুকরো তুলে ও ইটের খোয়া ফেলে কালভার্টের একপাশ দিয়ে চলাচল করছেন বলে জানিয়েছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, তাড়াশ-গুরুদাসপুর মৈত্রি সড়ক পথের কুন্দইল গ্রামের পশ্চিমের কালভার্টটি ভেঙে চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে গেছে। ফলে উজানের বিস্তীর্ণ মাঠের অনাবাদী জমিতে পানি আটকে রয়েছে। কুন্দইল গ্রাম এলাকার আরেকটি কালভার্ট অংশের সেতুর মারাত্মক ভঙ্গুর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। লোকজন ভাঙা কালভার্টের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। কিন্তু ঝুঁকি নিয়ে চলছে সিএনজি, ভটভটিসহ ধীরগতির যানবাহন। দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে যে কোন সময়ে। সড়কের মাঝের ভাঙা যায়গাগুলোতে কচুরিপানা দিয়ে ভরাট করে যাতায়াত করছেন বাধ্য হয়ে।
উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক যুগ আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের আওতায় চলনবিলের মধ্য দিয়ে তাড়াশ-গুরুদাসপুর মৈত্রি সড়ক নির্মাণ করা হয়। এরই মধ্যে সড়কটির বেশ কিছু জায়গা ভেঙে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সংস্কার করা হয়নি। গুরুদাসপুর উপজেলার সিএনজি চালক রফিকুল ইসলাম, ভটভটি চালক আব্দুল কাদের, তাড়াশের সগুনা ইউনিয়নের কুন্দইল গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা শ্যামল হোসেন, শিপন আলী, জাকার হোসেন ও খাদিজাতুল কুবরাসহ ভুক্তভোগী অনেকে বলেন, চলনবিলের মধ্য দিয়ে তাড়াশ উপজেলা ও গুরুদাসপুর উপজেলার মানুষের সহজ চলাচলের মাধ্যম তাড়াশ-গুরুদাসপুর মৈত্রি সড়ক। সারা দিন ও রাতভর হাজারো মানুষ চলাচল করেন এ সড়কে। কিন্তু নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে পারছেননা ভাঙা সড়ক দিয়ে। এলাকার কৃষিপণ্য বেচায় অতিরিক্ত যানবাহন খরচ গুণতে হচ্ছে কৃষকদের। সগুনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্ট বলেন, গত বছর বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর তাড়াশ-গুরুদাসপুর মৈত্রি সড়কের কুন্দইল গ্রাম এলাকার দুইটি কালভার্টে ইট-সুরকী ফেলে লোকজন চলাচলের সুবিধা করে দিয়েছিলাম। এবারেও করে দেবেন। কিন্তু সড়ক জুড়ে সংস্কার কাজের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। উপজেলা প্রকৌশলী ফজলুল হক বলেন, জিওবি মেইনটেইন্যান্স প্রকল্পের আওতায় ২ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে তাড়াশ-গুরুদাসপুর মৈত্রি সড়কের সংস্কার কাজ করা হবে। টেন্ডার হয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ-৩ (তাড়াশ, রায়গঞ্জ, সলঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তাকে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে। লোকজনের নির্বিঘেœ চলাচল নিশ্চিত করতে এ বছর ডিসেম্বর মাসে তাড়াশ-গুরুদাসপুর মৈত্রি সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হবে।
তাড়াশে উড়াল সড়ক নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন 

তাড়াশ প্রতিনিধিঃ ৩০ লাখ টাকা ব্যায়ে সিরাজগঞ্জের তাড়াশের চৌবাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত শ্রী শ্রী মহেশ্বর মহাশ্মশানে যাতায়াতের জন্য উড়াল সড়ক নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকালে সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আব্দুল লতিফ বিশ্বাস প্রধান অতিথি হিসেবে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। মহাশশ্বান পরিচালনা কমিটির সভাপতি অশ্বিনী সরকারের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ খন্দকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত কর্মকার, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম তাজফুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রজত ঘোষ, বারুহাঁস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ময়নুল হক, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আনন্দ ঘোষ প্রমুখ।

তাড়াশ সাব রেজিস্ট্রি অফিস
‘স্যার চা খাচ্ছেন’
স্টাফ রিপোর্টার : তাড়াশ উপজেলা সদরে অবস্থিত একমাত্র সাব রেজিস্ট্রি অফিসটিতে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা এখন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। গত ১৩ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ সোমবার বিকাল ৪ টায় গিয়ে দেখা গেল, অনেক লোকজন জমির দলিল রেজিস্ট্রি কাজে এসে দীর্ঘ সময় প্রতীক্ষা করছেন। ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও সাব রেজিস্ট্রার তার এজলাসে বসেন নি। তিনি খাস কামরায় গিয়ে চা খাচ্ছেন আর মোবাইল ঘাটাঘাটি করছেন। ওদিকে সেবা প্রত্যাশী মানুষেরা ও দলিল লেখক মুহুরিগণ ঘন ঘন অফিস কক্ষের দরজার পর্দার ফাঁক দিয়ে উঁিক মারছেন কখন কর্মকর্তা চেম্বার ত্যাগ করে এজলাসে গিয়ে তার আসনে বসেন। এরপর এক ঘণ্টারও অধিক সময় পর সাব রেজিস্ট্রার কাজ শুরু করেন। এ সময় শতবর্ষী ও অশীতিপর বৃদ্ধা মহিলা-পুরুষকে সাব রেজিস্টার এর সামনে শুনাননির জন্য ডাকা হয়। বসার কোন জায়গা না থাকায় দাঁড়ানো অবস্থায় তাদের অতি ক্লান্ত দেখা যায়। পরিস্থিতি আঁচ করে এ সময় উপস্থিত জনৈক নারী জনপ্রতিনিধি ওই সাব রেজিস্ট্রারের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি নিজেকে তাড়াশ পৌরসভার কাউন্সিলর বলে পরিচয় দেন। উদ্দেশ্য প্রত্যাশিত সেবা সার্ভিস ত্বরান্বিত করে গণমানুষের কষ্ট লাঘব করা।
এছাড়া এই সাবরেজিস্ট্রি অফিসে গোটা প্রাঙ্গণ ধুলা ময়লায় আচ্ছন্ন, আবৃত। আগত লোকদের অপেক্ষা করার তথা বসার জন্য বাইরের বারান্দায় একটি তিন সিটের হেলনা বেঞ্চ ছাড়া কোন ব্যবস্থা নেই। বাইরে রাস্তার পাশের একমাত্র চা স্টল ও একটি স্বল্প পরিসরের সিমেন্টের তৈরী গোলাকার ুেবঞ্চ জনতার অপেক্ষা ও বসার স্থান। বিলম্বে কাজ শুরুর হেতু সন্ধ্যার পরও ওই সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কাজ চলতে দেখা গেল।উল্লেখ্য, সপ্তাহে দুদিন অর্থাৎ রবি ও সোমবার তাড়াশ সাব রেজিস্ট্রি অফিস খোলা থাকে। কর্মরত সাব রেজিস্ট্রার রায়গঞ্জ উপজেলারও কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত বলে জানা যায়। ফলে সপ্তাহের সব দিন এখানে অফিস চলে না। তাতে দু’লক্ষাধিক তাড়াশ উপজেলাবাসীর জন্য জমি রেজিস্ট্রিকরণ কাজে অসুবিধা হয়ে থাকে।অপরদিকে এখানকার কোন কোন দলিল লেখক মুহুরীর দলিল লেখায় সাব রেজিষ্ট্রার কর্তৃক মারাত্মক ভুল ধরা পড়ে যা পরবর্তীতে সংশোধনের জন্য বা এমনটি যেন পরবর্তীতে আর না হয় মর্মে সতর্ক করা হয়। এতে প্রমাণিত হয়, তাড়াশের দলিল লেখকদের সঠিক ও নিয়মসম্মত উপায়ে দলিল লেখার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দেয়া জরুরী প্রয়োজন। এছাড়া এই সাব রেজিস্ট্রি অফিসের রুম সংখ্যা ও আগত জনমানুষের তুলনায় এর অফিস স্পেস কম বলে মনে হয়েছে। বড় কথা এই অফিসটিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সময়ানুবর্তিতার অভাব রয়েছে যে দিকটায় কর্তৃপক্ষের আশু কার্যকরী দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
তাড়াশ উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরীর কবিতা আসর
আব্দুল কুদ্দুস তালুকদার ঃ গত শুক্রবার তাড়াশ উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরীর উদ্যোগে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় বিশিষ্ট কবি ও সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তার সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক রাজুর সভাপতিত্বে উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরীর হলরুমে শুরু হয় কবিতা আড্ডা।। সভায় স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন প্রবীণ কবি সৈয়দ সাইদুর রহমান সাজু, আবদুর রাজ্জাক রাজু, নীলুফার শবনম, নবীন কবি তাহমীলুর রহমান মাহিম, হাবিবুর রহমান হেলাল , জহির উদ্দীন, সনজু কাদের, শহিদুল ইসলাম মাস্টার, জয়নাল আবেদীন জয়, তাড়াশ মহিলা কলেজের অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, আব্দুল কুদ্দুস তালুকদার প্রমূখ। কবিতা আবৃত্তির পরে পঠিত কবিতার উপর পর্যালোচনা ও সমালোচনায় অংশ নেন উপস্থিত কবিগণ। সভায় সিদ্ধান্ত হয় প্রতি মাসের ১ম শুক্রবার সকাল ১০ টায় তাড়াশ উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরী অথবা পরবর্তী মিটিংয়ের আলোকে নির্ধারিত ভেন্যুতে কবিতা পাঠের আসর বসবে। কবিতাকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য কবিদের আসর বসানো দরকার যেমন: পাবলিক প্লেসে, হাটবাজারে, পৌর এলাকার বাইরেও নানা স্থানে এবং বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে – সভাপতির এমন বক্তব্যে সবাই একমত পোষণ করেন।

তাড়াশে পারিবারিক কলহের জেরে এক সন্তানের জননীর আত্মহত্যা

মোঃ মুন্না হুসাইনঃ সিরাজঞ্জের তাড়াশে পারিবারিক কলহের জেরে এক সন্তানের জননী আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার তালম ইউনিয়নের গোন্তা গ্রামে। নিহত মনোয়ারা খাতুন গোন্তা গ্রামের জহুরুল ইসলামের স্ত্রী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আরিফুল ইসলাম। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়,এক সন্তানের জননী মনোয়ারা খাতুন( ৩০) সঙ্গে তার শশুর বাড়ির লোকজনের সাথে নিয়মিত ঝোগড়া বিবাদ লেগেই থাকত। এরই জের ধরে গতকাল সন্ধ্যায় নিজ শয়ন কক্ষের দরজা বন্ধ করে গলায় রশি দিয়ে ফাঁস নেন। এ সময় পরিবারের লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘরের দরজা ভেঙ্গে রশি কেটে নামিয়ে বগুড়ার শেরপুর হাসপাতালের নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
এ ব্যাপারে তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে রাতেই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে গত রোববার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তাড়াশে শিক্ষিকা নির্যাতন : গ্রেফতার দুই 
তাড়াশ প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের তাড়াশে জমি-জমা সক্রান্ত বিরোধের জের ধরে শিক্ষিকা ভাবীকে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দেওয়ার ঘটনায় দুই ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করেছেন তাড়াশ থানা পুলিশ। গত সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের নওখাদা গ্রাম থেকে ওই শিক্ষিকার ভাশুড় আব্দুল ওয়াহাব (৬০) এবং ভাতিজা মনিরুল ইসলাম (৩২) কে গ্রেফতার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম। উল্লেখ্য, ধামাইচ হাট বিলচলন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ও নওখাদা গ্রামের মৃত বাহার উদ্দিনের ছেলে মজিবের সাথে সহোদর ভাই আব্দুল ওয়াহাব ও আব্দুর রবের জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এরই জের ধরে চলতি মাসের ৯ তারিখে আব্দুর রব ও আব্দুল ওয়াহাব এবং দুই ভাতিজা মিলে নওখাদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা মজিবরের স্ত্রী নাছিমা খাতুনকে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দেয়। ফলে শিক্ষিকার স্বামী গত ১০ নভেম্বর সহদর দুই ভাই ও দুই ভাতিজাকে আসামী করে তাড়াশ থানায় মামলা করেন।

তাড়াশে আবিস্কৃত হয়েছে বৌদ্ধ যুগীয়
দুর্লভ নিদর্শন “বৌদ্ধ মঠ ও ধাপ” 
মুত্তালিব শিশির

ইতিহাস-ঐতিহ্য ও প্রতœ সম্পদে সমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জ জেলার উত্তর-পশ্চিমের ঐতিহাসিক চলনবিলস্থ প্রাচীণ জনপদ তাড়াশ। প্রাচীণ যুগে এ অঞ্চল ছিল পুন্ড্রবর্ধন রাজ্যের একাংশ। যুগে যুগে এখানে ঘটেছে বহু রাজ পুরুষের আনাগোনা ও পরিব্রাজকদের পদচারণা। ইতিহাস মতে জানা যায়, খ্রীস্টপূর্ব ২৬১ অব্দে স¤্রাট অশোক বীরদর্পে কলিঙ্গ জয় করেন এবং এ যুদ্ধে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে ও দেড় লক্ষ লোক বাস্তহারা হয়ে পরে। এক পর্যায়ে যুদ্ধের নৃশংসতা তাকে তাড়িয়ে বেড়ায় এবং মানবিক বোধদয়ের ফলে তিনি বৈরাগ্য সাধনায় ব্রত হন। অবশেষে উপগুপ্তের নিকট বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হয়ে “যুদ্ধ নয় শান্তি“ মন্ত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজ্য পরিচালনায় তিনি স্বীয় ধর্মের বাণী প্রচার করতে থাকেন। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ এর বিবরণীতে জানা যায়, স¤্রাট অশোক তার রাজ্যে যে চুরাশি হাজার বৌদ্ধ মঠ,বিহার, চৈত্য এবং সংঘ্যারাম প্রতিষ্ঠা করেন তম্মধ্যে পুন্ড্রবর্ধন রাজ্যেই সহ¯্রাধিক বৌদ্ধ স্থাপনার অস্তিত্ব মেলে। সেন শাসনামলে বৌদ্ধগণ বিমাতা সুলভ আচরণের শিকার হয়ে এলাকা ত্যাগ করে এবং অনেকেই ধর্মান্তরিত হয়ে স্থায়ী বসতবাড়ী গড়ে তোলে।
এ সময় পরিত্যক্ত বৌদ্ধ স্থাপনা সমুহ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দু দেবালয়ে পরিণত হয়। তুর্কী, পাঠান ও মোগল আমলে কোন ক্ষতি সাধন না হলেও এই সকল বৌদ্ধ স্থাপনাসমুহ লোক চক্ষুর আড়ালে চলে যায় এবং দীর্ঘদিন অযতœ অবহেলায় পরিত্যক্ত ও জঙ্গলাকীর্ণ ভিটাবাড়ীতে পরিগণিত হয়। জমিদারী শাসনামলে অঞ্চল ভিত্তিক শাসকগন নিজ সম্পত্তি বিবেচনায় বৌদ্ধ যুগীয় এই অমুল্য নিদর্শন সমুহের অবকাঠামোগত পরিবর্তন করে জমিদার বাড়ী, রাজবাড়ী বা মন্দির-উপাসনালয়ে পরিণত করে। যেগুলো ব্যবহার অনুপযোগী বা ঝুকিপূর্ণ ছিল কালের গর্ভে সেই মঠ,বিহার, চৈত্য এবং সংঘ্যারামসমুহ স্তপে পরিণত হতে থাকে। সমতল ভুমি থেকে অনেকখানি উঁচু ভিটাবাড়ী সদৃশ এমন অনেক স্তপের সন্ধান পাওয়া যায় তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ও লোকালয়ে। এলাকাবাসী এসকল স্তপকে স্থানীয় ভাষায় “ধাপ” বলে আখ্যায়িত করে থাকে। তাড়াশ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে এরকম কম বেশী প্রায় ৭০-৮০টি ধাপ রয়েছে যেগুলো স¤্রাট অশোক কর্তৃক নির্মিত বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার তালম, দেশীগ্রাম, নওগাঁ, মাধাইনগর ও বারুহাস ইউনিয়নভূক্ত প্রত্যন্ত গ্রাম সমুহে বিদ্যমান স্তপ বা ধাপগুলো এখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। গুলটা ধাপ, গোলাপুর বুরুজ, জৈন্তাপুর শিববাটি, সুবল ভিটা, মেরুরভিটা, তালম শিববাটি, সন্ন্যাসি ভিটা, সিংড়াগাড়ি ভিটা, কুঞ্জবন ভিটা, কালীর ভিটা, খোলার ভিটা, ঝৈড়ার ভিটা, বড়বাইড়ার ভিটা,ভবানীর ধাপ, সিদ্ধেশ^রীর ভিটা, দেশীগ্রাম শিববাটি, বানিয়ার ভিটা, চৌপাকিয়া মঠ, সিলট মঠবাড়ী,কপিলেশ^র শিববাটি, ডাকাতের ভিটা, বেহুলার ঢিবি, বড় চৌকির ভিটা, গলপাড়া ভিটা, কুঞ্জবন জগন্নাথ মন্দির, বিবির বাংলা, চৈতন্য ভেরবী, নিশিবাড়ী ভিটা, সোনা চাপড়, মানিকচাপড়, সানকি চাপড়, চৈত্রহাটি কালীকাদেবীর ধাপ ইত্যাদি নামীয় স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ অরক্ষিত থাকার কারণে এখানকার মহামুল্যবান প্রতœ সম্পদ নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। প্রাচীণকালের প্রস্তর ও ইস্টক সামগ্রী বিনষ্ঠ হওয়ায় এগুলোর আদি চিহ্ন বিলিন হচ্ছে। কুচক্রী মহলের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় অবৈধ ভোগ দখলদারীদের দৌরাত্ব্যে চলনবিলস্থ অপরাপর বৌদ্ধযুগীয় অসংখ্য স্তপ বা ধাপসমুহের অস্তিত্ব এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। গুলটা গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি শ্রী গুরুদাস চন্দ্র জানান, দেশ স্বাধীনের পরও এই সকল ধাপসমুহে লোকজনের চলাফেরা ছিল এবং পূণ্যস্থান বিবেচনায় ভোগ-মানত করতো। বছরের বিশেষ বিশেষ দিবসে পূণ্যার্থীরা ভক্তিভরে কুপি বাতি জ¦ালিয়ে মনোস্কামনা প্রকাশ করতো। জৈন্তাপুর গ্রামের জনৈক মজিবর রহমান জানান, মেরুর ভিটা সংলগ্ন আবাদি জমিতে মাটির অল্প গভীরে বৃহদাকার সাতটি মাটির কলস (স্থানীয় ভাষায় ডাবর-কোলা), প্রাচীণ মুদ্রা (কড়ি), চৌকোনাকৃতির পোড়া ইট পাওয়া যায় যেগুলো হাজার বছর পূর্বের হতে পারে বলে মনে করা হয়।
কুঞ্জবন ভিটার অনতিদূরে বিনোদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজে মাটি খননকালে কিম্ভুতকিমাকার একটি কুপ আবিস্কৃত হয় যার বয়স সহশ্রাধিক বছরের হবে- এমনই মন্তব্য করেন এলাকার প্রাক্তন শিক্ষক বাবু নরেন্দ্রনাথ সরকার। এলাকার সুশীল সমাজ মনে করেন, সরকারী ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা যেতে পারলে প্রাচীণ এই সকল স্তপ বা ধাপসমুহ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। অধিকন্তু, সংশ্লিষ্ট দপ্তর, মন্ত্রণালয় অধিক আন্তরিক হলে তাড়াশের মাটির নীচে চাপা পড়ে থাকা মুল্যবান প্রতœ সম্পদ, নিদর্শন সমুহ উদ্ধার করা সম্ভব। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগ অধুনা এ অঞ্চলে জরিপকার্য পরিচালনা করেন এবং চলনবিলাঞ্চলের পরিত্যক্ত ভিটা-স্তপের নীচে অনাবিস্কৃত বহু প্রতœ সম্ভারের অমিত সম্ভাবনার কথা স্বীকার করেন।

লেখক : বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও গবেষক। তাড়াশ, সিরাজগঞ্জ। মোবাইল : ০১৭১৮-৯৪৫০১৮

 

ইসরাইল ও বনী ইসরাইলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মুফতি খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ
(শেষাংশ)
🔴 দাউদ আ. ইন্তেকালের পর সুলাইমান আ. নবী হন। পুরো দুনিয়ায় তারা হলেন সুপার পাওয়ার। তিনি জীনের মাধ্যমে পুনরায় বায়তুল মুকাদ্দাস এর ভিত্তি স্থাপন করলেন। সুলায়মানের মৃত্যুর পর তারা আবার নাফরমানী করতে লাগল। তারা তাওরাত-যাবুর কিতাব নষ্ট করে ফেলল। পরে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে আবার দাস দাসিতে পরিণত করলেন।
🔴 ইরাকের বাদশা “নেজবুত নেজার” ফিলিস্তিনে আক্রমণ করে বনী ইসরায়েলকে দাস দাসি বানিয়ে ইরাকে নিয়ে আসে। তারপর দুই হাজার বছর পর্যন্ত তারা আর মাথা তুলে দঁড়াতে পারে নি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের উপর নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে লাঞ্ছনা। তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন প্রতিশ্রæতি এবং মানুষের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রæতি থাকলে আলাদা কথা। আর তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে গযব নিয়ে ফিরে এসেছে। আর তাদের উপর দারিদ্র্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তা এ কারণে যে, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করত এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। এবং তা এ জন্য যে, তারা নাফরমানী করেছে, আর তারা সীমালঙ্ঘন করত। [আলে ইমরান ১১২] এজন্যই ইহুদিদের ‘পাওয়ার’ আছে বর্তমানে। কিন্তু তাদের সম্মান নেই। আজকের ইহুদিরা আমেরিকার রশি ও অন্যান্য কয়েকটি দেশের রশি ধরেই বেঁচে আছে। আমেরিকা রশি ছিন্ন করলে কি তারা বেশি শক্তিশালী ?
🔴 ১৯৩০ সালে পৃথিবীতে বসতিহীন বিচ্ছিন্ন বনী ইসরায়েলরা একসাথে সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করার প্লান করে ফিলিস্তিনের “কিদবুস” নামক জায়গায়। সেখানে কিছু লোক চাষাবাদ শুরু করে। ১৯৪৭ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করে। বাকিগুলোকে পিটিয়ে দেশ ছাড়া করে। ফলে তারা ট্রলার ভরে ভরে ফিলিস্তিনে আশ্রয়ের জন্য আসে। যেভাবে আমাদের দেশে রোহিঙ্গারা এসেছিল। তাদের ব্যানারে ব্যানারে লিখা ছিল আবেগময় কথাবার্তা। যেমন: “জার্মানিরা আমাদেরকে অপমান লাঞ্চিত করে আমাদেরকে পরিবারসহ দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। তোমরা আমাদের ফিরিয়ে দিও না ” ইত্যাদি। ১৯৪৮ সালে তারা আলাদা রাষ্ট্র ঘোষণা দেয় যার নাম “ইসরাইল। সবচেয়ে বড় ডাকাতি ও সন্ত্রাসী করে পরের ভুমিতে বসতি গেড়ে আজ তারাই ফিলিস্তির হামাসদের বলছে সন্ত্রাসী জঙ্গী। পশ্চিমের হলুদ মিডিয়া প্রকৃত হামাস বাহিনী ফিলিস্তিনিদের সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করছে যা সত্যের অপলাপ, বানোয়াট। কেননা হামাস স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধা।
🟥 ফিলিস্তিন ও আল-আকসার গুরুত্ব ও ফজিলত।
১। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (বনী ইসরাইল:১)
২। আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় ইরশাদ করেন-
‘হে আমার সম্প্রদায় ! তোমরা সেই পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ কর, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন এবং নিজেদের পিছনের দিকে ফিরে যেয়ো না, তা হলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়বে। (সুরা মায়েদা-২১)
৩। অন্য জায়গায় ইরশাদ করেন-
আর তাঁকে ও লূতকে উদ্ধার করে সেই ভূখন্ডের দিকে নিয়ে গেলাম, যেখানে বিশ্ববাসীদের জন্য বরকত রেখেছি। (সুরা আম্বিয়া-৭১)
৪। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে-
সাইয়েদুনা হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, শুধু তিনটি মসজিদ অভিমুখে ইবাদতের নিয়তে সফর করা যাবে। আল মাসজিদুল হারাম, মাসজিদুন নববী ও মাসজিদুল আকসা।(বুখারী শরিফ হাদিস নং ১৮৬৪)
৫। অন্য হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে-
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সুলাইমান ইবনু দাঊদ (আলাইহিস সালাম) বায়তুল মাকদিসের নির্মাণ কাজ শেষ করে আল্লাহ্র কাছে তিনটি বিষয় প্রার্থনা করেনঃ আল্লাহ্র হুকুমমত সুবিচার, এমন রাজত্ব যা তার পরে আর কাউকে দেয়া হবে না এবং যে ব্যক্তি বাইতুল মাকদিসে কেবলমাত্র সালাত (নামায) পড়ার জন্য আসবে, তার গুনাহ যেন তার থেকে বের হয়ে যায় তার মা তাকে প্রসব করার দিনের মত। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: প্রথম দুটি তাঁকে দান করা হযেছে এবং আমি আশা করি তৃতীয়টিও তাঁকে দান করা হবে। (ইবনে মাজাহ হাদিস নং ১৪০৮)
🟥 আকসার সাথে আমাদের সম্পর্ক কিসের?
কিসের সম্পর্ক আমাদের?
ঈমানী দায়িত্বের সম্পর্ক।
ঈমানী গায়রাতের সম্পর্ক।
মহাব্বত ও ভালোবাসার সম্পর্ক।
মুমিনের পারস্পরিক সম্পর্ক।
আরে ভাই! যে মাটির সাথে, যে ভূখন্ডের সাথে, ইসলাম ও মুসলমানের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে জড়িয়ে আছে। মুসলমানগণ যে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’আলার উপরে ঈমান এনেছে। সেই আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’আলার ওহীর ধারক বাহক, নবী ও রাসূলগণ যেই ভূখন্ডের মাঝে ঘুমিয়ে আছে। শুধু কি তাই! সাইয়্যেদুল মুরসালিন, রহমাতুল্লিল আলামিন, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার ইমামতিতে, ফিলিস্তিনের মাটিতে আল আকসায়, সমস্ত নবী ও রাসূলদেরকে নিয়ে নামাজ আদায় করা হয়েছে। বলুন সেই ভূখন্ডর উপরে মুসলমানদের হক আছে না নাই? -আছে…সে মাটির সাথে, সে ভূখন্ডের সাথে আমাদের সম্পর্ক আছে না নাই? -আছে…
🟥 আল-আকসার জন্য মুসলমানদের কুরবানী:
ফিলিস্তিনের জনগণ যুগে যুগে রক্তের নজরানা পেশ করেছে। যতবার ফিলিস্তিনের উপর আক্রমণ হয়েছে ততবারই জীবনকে উৎসর্গ করেছে। খৃষ্টানদের নিকটেও আল-আকসার গুরুত্ব রয়েছে। তাদের দাবি হলো- ঈসা আঃ এর কবর মাসজিদে আকসার আসেপাশে কোথাও আছে। অথচ সঠিক আকিদা হলো ঈসা আঃ এখনো মৃত্যুবরণ করেনি। জিন্দা আসমানে রয়েছেন। তো তারাও আল-আকসাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। ১০৯৫ সালে পোপ আরবান দ্বিতীয় এমন এক উস্কানিমূলক ভাষণ দেয়। গোটা ইউরোপ জুড়ে তাতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে যায়। সে আহবান জানায়, ঈসা মসিহের কবরকে এবং আল-কুদুসকে মুসলমানদের কবল থেকে রক্ষা করতে হবে।
তার সে ডাকে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। বিশাল এক বাহিনী তৈরি হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। যাকে “ক্রুসেড যুদ্ধ” বলে। এটা তাদের ধর্মীয় পরিভাষা। আমরা যেমন জিহাদ বলি, ওরা বলে ক্রুসেড। যাই হোক ১০৯৯ সালে বায়তুল মাকদিস ক্রুসেডারদের হাতে চলে যায়। তারা বায়তুল মুকাদ্দাসের আঙিনায় প্রবেশ করে পুরো আকসাজুড়ে তারা নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। সে সময় তাদের তরবারির সামনে শিশু মহিলা বয়স্ক যুবক যুবতীর কোন বাছবিচার ছিলনা। তাদের নিজেদের বর্ণনা অনুযায়ী- এত পরিমাণ মুসলমান হত্যা করেছিলো যে, রাস্তায় হাটু সমান রক্তের স্রোত বইতে থাকে। সে রক্তের স্রোতে অসংখ্য লাশ ও শরীরের বিভিন্ন কর্তিত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন কাটা হাত পা ভেসে যেতে থাকে। আহ! কী নির্মম ইতিহাস কল্পনা করতেও কল্পনা জগৎ কেঁপে ওঠে!
গণহত্যা করার পর খৃষ্টানরা মাসজিদে আকসাকে চার ভাগ করে। একভাগকে করে তাদের গির্জা। আরেক ভাগকে করে সৈন্যদের বসবাসের কোয়াটার। আরেক ভাগকে করে স্টোর রুম। আরেক ভাগকে করে ঘোড়ার আ¯াÍবল (নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক)। এরপর আসে সুলতান সালাহউদ্দিন আয়ুবী রহঃ এর যুগ। ক্রুসেডের হাত থেকে ১১৮৭ সালে আকসাকে উদ্ধার করেন। আয়ুবী রহঃ ও তার সৈন্যরা আকসায় ঢুকে নামায আদায় করেন। আয়ুবী রহঃ এর হাতে শোচনীয় পরাজয় বরণ করার পরও তাদের চক্রান্ত থেমে নেই। পর্যায়ক্রমে আবারও আকসা মুসলমানদের হাতছাড়া হয়ে যায়। এবার দখলে নিয়ে নেয় অভিশপ্ত যায়নবাদী ইয়াহুদীরা। অদ্যাবধি মুসলমানগণ রক্তের নজরানা পেশ করে আসছে। পৈশাচিক নির্যাতন চালাতেই থাকে মুসলমানদের উপর। যা এখনো চলছে।
🟥আমাদের অবস্থান থেকে আমাদের করণীয়:
প্রথমেই একটি হাদিস শুনুন!
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সকল মুসলিম একজন ব্যক্তির সমতুল্য। যদি তার চক্ষু পীড়িত হয় তবে তার সমগ্র দেহ পীড়িত হয়ে পড়ে। যদি তার মাথা আক্রান্ত হয় তাহলে সমগ্র শরীরই আক্রান্ত হয়ে পড়ে (সহিহ মুসলিম হাদিস নং ২৫৮৬)। তাহলে বলুন আমাদের ও আমাদের ভাইদের ব্যথায় ব্যথিত হওয়া দরকার আছে, না নাই? -আছে.. প্রথমত আমাদের করণীয় হলো তাদের সাথে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! কপাল পোড়া, অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হচ্ছে আমাদের জন্য সে সুযোগ নেই, সে রাস্তা বন্ধ! আমরা তাদের জন্য দোয়া করবো। তাহাজ্জুদ পড়ে মোনাজাতে রোনাজারি করবো। আল্লাহর কাছে সাহায্য ভিক্ষা চাইবো। প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করার সুযোগ আসলে হাত ছাড়া করবো না। জাতীয়-আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘ পর্যায়ে দৃঢ় সমর্থন জানাবো এবং সক্রিয় জোড়ালো পদক্ষেপ নেবো। সবশেষে সুলতান সালাহউদ্দিন আয়ুবী রহঃ এর একটি উক্তি দিয়ে শেষ করছি। তিনি বলতেন- “আমি কি করে হাসি, বায়তুল মাকদিস যখন ক্রুসেডারদের দখলে। আমার ভাইকে সেখানে বন্দি রেখে হাসতে আল্লাহর কাছে লজ্জিত হই।”মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সকল মুসলিম ও মুসলিম উম্মাহকে কোরআন ও হাদীসের আলোকে জীবন পরিচালনার জন্য তৌফিক দান করুন আমীন । (সমাপ্ত)

 লেখক তরণ আলোচক ও গবেষক । শেরপুর, বগুড়া। মোবাইল: ০১৭৩৪-৬০৮৪৮৯

বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতায় কবিতার জয় 
এ্যাডঃ মোঃ আব্দুল ওহাব (বীর মুক্তিযোদ্ধা)

আমার প্রিয় বাংলাদেশ
দেখ, পুব আকাশে সবুজের মাঝে লাল সূর্যের দেশ
কবি ও কবিতার দেশ বাংলাদেশ
কবিতার জয় বাংলার জয়
বাংলাদেশ কাব্য ও কবিতার দেশ।
হাজার বছরের কাব্য সাহিত্যের পদচারণা বিদ্যমান। বিশ^ সভ্যতার দিকে তাকালে দেখা যায় আরব্য সাহিত্যে ও কাব্য চর্চার ব্যাপক ভূমিকা ছিল। আমাদের দেশে ফারসি ভাষার প্রভাব আছে।পারস্যের শেখ সাদী,ওমর খৈয়ামের বহু কবিতা আমাদের কাব্য সাহিত্যে প্রবেশ করে আছে। অনেক ওয়াযিন বক্তাও মাওলানা রুমী, শেখ সাদীর কবিতায় মানুষকে মুগ্ধ করে থাকেন।
যুগ যুগে কবিরা মানুষের সংগ্রামী জীবন, প্রতিবাদ, প্রেম ভালবাসা তুলে ধরে কবিতা লিখেছেন। আমাদের পাক ভারতে রাজা-বাদশাহরা কাব্য চর্চাতে চরম উৎসাহ দিতেন। কবিরা রাজ দরবারে কবিতা আবৃত্তি করে ভাতা ভোগ করতেন। বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, গৌরব, সাগর, পাহার, নদ, নদী এবং সুস্বাদু মাছ নিয়ে অনেক কবিতা লেখা আছে।কবি রবীন্দ্রনাথ দেশ প্রেমিক অনেক গান ও কবিতা লিখেছেন। কবি নজরুল বিদ্যেহী কবিতা লিখে অমর হয়ে আছেন।পল্লী কবি জসীমউদ্দিন পল্লী গ্রামের প্রেম বিরহ ভালবাসা চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন।
বাংলার রাখাল রাজা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবি রবীন্দ্রনাথের অনেক কবিতা ও গান মুখস্ত করেছিলেন। কবি নজরুলের অনেক গান ও কবিতা অনর্গল আবৃত্তি করতে পারতেন। বঙ্গবন্ধু কবিতা ভালবাসতেন। সময় পেলেই তিনি কবিতা গান গাইতেন। বঙ্গবন্ধু নিজেই কবিতা আবৃত্তি করতে ভালবাসতেন। বঙ্গবন্ধু জীবনে মাঠে ময়দানে জনসভায় বক্তৃতায় কবিতার জয়গান গেয়েছেন। কবি গুরুর ‘সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি মাঝে মাঝে গাইতেন। সেই গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের মর্যাদা পেয়েছে। কবি নজরুলের ‘চল চল চল’ কবিতাটি জাতীয় রন সংগীতের মর্যদা পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, কবি নজরুল ইসলাম, কবি সুকান্ত, কবি জীবনান্দের বিভিন্ন কবিতার লাইন অনর্গল আবৃত্তি করতে পারতেন।
১৯৭১ সালের রক্তঝড়া মার্চে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে কবি নজরুলের কবিতা থেকে বলতেন, আমি নরকে বসিয়া হাসি-মৃত্যুর হাসি। আবার কবি গুরুর কবিতা থেকে বলতেন, চারিদিকে নাগিনীরা ফেলিতেছে বিষাক্ত নিশ^াস, শান্তির লালিত বানী শুনাইতে ব্যর্থ পরিহাস’। ১৯৭১ সালের অগ্নিঝড়া মার্চে টংগীতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গুলিতে বহু শ্রমিক হতাহত হয় তার প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ মিছিল ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে সমবেত হয়। বঙ্গবন্ধু শ্রমিকদের উদ্দেশ্য বক্তৃতাকালে কবি নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা থেকে উচ্চারন করেছিলেন।
বিদ্রোহী রনকান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না
অত্যাচারির খর্গ কৃপাণ ভীম রনভূমে রনিবে না।
বঙ্গবন্ধু মুজিব বিশেষ পরিস্থিতিতে আবেগের সংগে এই সব কাব্যংশ উচ্চারণ করে জনগনকে মুগ্ধ করতেন। আবার দেখা যায় ১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক জনসমুদ্রে বজ্রকন্ঠে এক সাহসি কবিতা উচ্চারন করেছিলেন:
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
তার ঐ আহবানে সারা দেশের বাঙ্গালীরা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্টের জন্ম হয়। চারিদিকে কবিতায় শ্লোগান উঠেছিলো
জেলের তালা ভাংবো
শেখ মুজিবকে আনবো।
অতপর বিশ^বাসীর চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। বীরের বিজয়ী বেশে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলার মাটিতে জনগনের মাঝে ফিরে আসেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের এক ঐতিহাসিক জনসভায় আবেগে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন :
সাতকোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী
রেখেছো বাঙ্গালি করে মানুষ করনি।
তিনি আবেগে আরো বলেছিলেন, তুমি এসে দেখ যাও, তোমার বাঙ্গালীরা আজ মানুষ হয়েছে, তুমি ভুল প্রমাণিত হয়েছো। আবার ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু বার্লিনে বিশ^ যুব উৎসবে সুন্দরভাবে প্রাঞ্জল ভাষায় কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন:
বাংলা কবির দেশ কবিতার দেশ
বাংলা বিপ্লবীদের দেশ বিপ্লবের দেশ
বাংলা শিল্পির দেশ বাংলা শিল্পের দেশ,
বাংলা সোনার দেশ বাংলা রুপার দেশ
বাংলা ঐতিহ্যের দেশ
বাংলা ইতিহাসের দেশ।
আমার মনে আছে ১৯৭৪ সালে পল্লীকবি জসিম উদ্দিন গনভবনে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে গেলে বঙ্গবন্ধু চেয়ার থেকে উঠে কবিতায় বলেছিলেন, ‘ঐ খানে তোর দাদির কবর ডালিম গাছের তলে, তিরিশ বছর ঘুমিয়ে রেখেছি দুনয়নের জলে’। পরে কবি জসীম উদ্দিন বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু মেয়ের কান্নায় থাকতে পারলাম না, ব্যারিস্টার মত্তদুদকে মুক্ত করে দিন। ইহাতে প্রমাণ হয় যে, বঙ্গবন্ধু কবি ও কবিতাকে খুব ভালবাসতেন। বঙ্গবন্ধু অনেক চেষ্টা করে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ থেকে বিদ্রোহী কবি নজরুলকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন। জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছিলেন। কবিকে ধানমন্ডি এলাকায় একটি বাসভবন বরাদ্দ দিয়েছিলেন। তার চিকিৎসা সেবা ও খাদ্যের ব্যবস্থা করেছিলেন।তাই দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু সকল বক্তৃতায় কবিতার জয় গান গেয়েছেন। তাই আমি লিখেছি:
তুমি নেই তোমার দেশ আছে
তোমার স্বাধীনতা আর লাল সবুজের পতাকা হাতে পথ চলি
স্বপ্ন দেখি ভবিষ্যতের।
ধানমন্ডির ৩২ নং এ যাদুঘরে গিয়ে দেখতে পাই পশ্চিমবঙ্গের এক কবির কবিতা :
‘যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা যমুনা সুরমা বহমান
ততদিন রবে র্কীর্তি তোমার শেখ মুজিবর রহমান।

 লেখক বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক , আইনজ্ঞ ও রাজনীতিবিদ। নাটোর জজকোর্ট।মোবা : ০১৭৭৩-৫১৩০১৪

অতিথি পাখির আগমনে মুখরিত চলনবিলের করতোয়া নদী 
মোঃ আনোয়ার হোসেন সাগর
সিরাজগঞ্জের তাড়াশের শাহ শরীফ জিন্দানি (রহ.) পুণ্যভূমি নওগাঁর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীটি পরিযায়ী বা অতিথি পাখির কলতানে এখন মুখর হয়ে উঠেছে। শীত প্রধান দেশ থেকে নিরাপদ মনে করে পাখিরা প্রতিবছর এ নদীতে এসে আশ্রয় নেয়। শীতের মৌসুমে করতোয়া নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। আর ভোর থেকে রাত পর্যন্ত পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখর হয়ে ওঠে নদী অঞ্চল। প্রতিদিন সকাল-বিকেলে পাখির জলকেলির দৃশ্য দেখার জন্য নদীপাড়ে ভিড় কওে বহু মানুষ।
সরেজমিন দেখা যায়, করতোয়া নদীতে হাজার হাজার বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ভেসে বেড়াচ্ছে। নীলশির, লালশির, কালোহাঁস, বালিহাঁস, লেঞ্জাহাঁস, খুদে গাঙচিল, বক ও পানকৌড়ি পাখিগুলো দলে দলে পানিতে সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে। আহারের বিরতি দিয়ে পানকৌড়ি বসছে গাছের ডালে। দিনভর নদীতে খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে সাদা বক, ধূসর বক ও মাছরাঙা। মাঝে মধ্যে গাঙচিল নদীতে মাছ ধরার জন্য ছোঁ দিলে ঝাঁক বেঁধে উড়ে উঠছে পরিযায়ী পাখির দল। সব মিলিয়ে করতোয়া নদী এখন পাখিদের কলতানে মুখর।
জানা গেছে, করতোয়া নদীর বিস্তৃতি একসময় অনেক বড় ছিল। কালের বিবর্তনে এর দুই পারে বসতি গড়ে ওঠায় নদীটি সরু হয়ে গেছে। অপর দিকে পাশ দিয়ে মহাসড়ক, সড়ক ও বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের ফলে নদীটি আরও সংকুচিত হয়েও পড়েছে দিন দিন। এ প্রেক্ষাপটে জীববৈচিত্র ইতিমধ্যে হুমকির মুখে পড়েছে। পাখি হারাচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়। কমছে অতিথি পাখির আনাগোনা। তারপরও প্রতিবছর শীত মৌসুমে এ নদীতে আসছে অতিথি পাখিসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখি।
তাড়াশ ডিগ্রি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মর্জিনা ইসলাম বলেন, পৃথিবীতে ১০ হাজারের বেশি প্রজাতির পাখি আছে। এদের মধ্যে প্রায় দুই হাজার প্রজাতি পরিযায়ী বা অতিথি পাখি। এরা নিজ দেশের তীব্র শীত থেকে বাঁচতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আসা-যাওয়া করে। সাইবেরিয়া, ইউরোপ, এশিয়া, হিমালয় থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি নভেম্বর-ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে আমাদের দেশে আসে। শীত মৌসুম শেষ হলে আবার তারা পাড়ি জমায় নিজ নিজ দেশে। অতিথি পাখি শুধু প্রকৃতির শোভা বর্ধনশীল পাখিই নয় এটি পাখি প্রেমীদের মনের তৃষ্ণা মেটানোর এক অপরাপর মাধ্যম। এগুলো আমাদের দেশের সৌন্দর্য আর জীব বৈচিত্রের শোভাবর্ধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফুল ও শস্যেও ক্ষেতে পোকা মাকড় এবং ইঁদুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনে এরা। পোকামাকড় খেয়ে খেয়ে যেমন তাদের ক্ষুধা নিবারণ হয় ঠিক তেমনই আমাদের ক্ষেত খামারের জন্যও তা বেশ উপকার। অতিথি পাখিরা আমাদের দেশে এসে যেমন জলজ উদ্ভিদ খেয়ে ফেলে ঠিক তেমনি এতে আমাদের জলজ পরিবেশেরও ভারসাম্য রক্ষা হয়।
তিনি আরো বলেন, অতিথি পাখির মল জলাশয়ে মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে শীতে এই দেশের জলাশয়গুলো অতিথি পাখিদের আবাসস্থল হিসেবে বিবেচিত হলেও দিন দিন অতিথি পাখিদের আত্মীয়তা গ্রহণের চাহিদা কমে যাচ্ছে যার ফলে পর্যায়ক্রমে প্রতি শীতে অতিথি পাখিদের আগমনও কমে যাচ্ছে। এর মুখ্য কারণ পাখি শিকার। জলাশয় অঞ্চলের কিছু অসাধু মানুষ শীতে একটা পরিকল্পনা নিয়ে থাকে যে এবার শীতে তাকে গত বছরের চেয়ে বেশি পাখি শিকার করতে হবে। এই অসাধু মানুষগুলো নির্বিচারে অতিথি পাখি শিকার করে বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে। এরা জাল কিংবা সুতার ফাঁদ পেতে কিংবা ছররা গুলি দিয়ে পাখিদের নির্মমভাবে শিকার এবং হত্যা করে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুসারে অতিথি পাখি শিকার ও বিক্রি করার প্রতি এক নীতিমালায় দন্ডনীয় অপরাধ বলে উল্লেখ রয়েছে। তারপরও দেশের এই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অতিথি পাখি শিকারের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে মানব নামের হিংসুটে পাখি শিকারী প্রাণীরা। শুধু শিকারীর অত্যাচার হলে কিছুটা নিস্তার পেত তাদের হ্রাস পাওয়া থেকে।
আরো বেশ কিছু কারণে অতিথি পাখিরা সংখ্যায় কমে যাচ্ছে। অতিথি পাখিদের আহারের বিচরণ ভূমি (নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড়, বন-জঙ্গল) কমে যাচ্ছে। বন জঙ্গল উজাড় করে ফসলি জমি কিংবা বসত বাড়ি করায় পাখিরা অতিষ্ঠ হচ্ছে তাদের নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পেতে। অপর দিকে কৃষক ফসলের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত পাওয়ার লক্ষ্যে ফসলী জমিতে কৃত্রিম সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করছে। যার কারণে অতিথি পাখিরা বিষে আক্রান্ত কীট পতঙ্গ খেয়ে মারা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আবহাওয়ার ভিত্তিতে শীতকালে ইট ভাটা চালু করায় এর মাত্রাতিরিক্ত শব্দ এবং বায়ু দূষণের ফলে অসংখ্য অতিথি পাখি এ দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে, এই সবুজের সমারহে ঘেরা সোনালী বাংলাদেশের জলবায়ুর ন্যায় অন্য এক দেশে। অথচ আমরা আজ বুঝি না এই অতিথি পাখির প্রতি কৃতজ্ঞতা। আসলে আমাদের দেশে সোনালী আভাস মাখা ফসল যখন ঘরে উঠে ঠিক তখনই দেশের রূপ ঐশ্বর্য পূর্ণ রাখতে অতিথি পাখি এসে হাজির হয়। কারণ শীতের সৌন্দর্যের অন্যতম প্রতীক অতিথি পাখি।

লেখক : তরুণ সাংবাদিক ও চলনবিল প্রতিনিধি, সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা। মোবাইল: ০১৩০৪-৯৪৭১৮৭

সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের নির্বাচনী হাওয়া
আওয়ামী লীগ চায় ধরে রাখতে- বিএনপি চায় পুনরুদ্ধার 
রাশিদুল হাসান, রায়গঞ্জ ঃ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো আর মাত্র দুই মাস বাকি। নির্বাাচনী এলাকায় বইতে শুরু করেছে ভোটের হাওয়া। চলনবিল অধ্যুষিত রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলা নিয়ে সিরাজগঞ্জ-৩ আসন। এই আসনে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে প্রতান্ত গ্রামের পথে প্রান্তরে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ভোটের মাঠ সরগরম করছে। সরকারের টানা তিনবারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে সভা-সমাবেশ করে নিজেদের সাফল্যের কথা তুলে ধরছেন তারা। সেই সাথে নেতাকর্মীদেরকে সংগঠিত করছেন। আওয়ামী লীগের দাবি,এত উন্নয়ন দেখে টানা চতুর্থবারের মতো জনগন শেখ হাছিনাকেই ক্ষমতায় বসাবে। অপরদিকে বিএনপি নির্দলীয় তত্তাধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না এবং নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তারা নির্দলীয় তত্তাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি জনগনের কাছে তুলে ধরছেন। হামলা- মামলা ও প্রশাসনিক চাপে কিছুটা কোণঠাসা থেকেও দলীয় কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন নেতা কর্মীরা। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্ততিও নিচ্ছে তারা।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবি, গত ১৫ বছরে এই নির্বাচনী এলাকার সার্বিক চিত্রও পাল্টে গেছে। উন্নয়নের ছোঁয়ায় এলাকার রাস্তা-ঘাট ও মানুষের জীবনমানও বদলে গেছে। এই আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতিয় পাটি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ দলীয় ব্যানারের বাইরেও জামায়াতে ইসলামের নেতা কর্মীরাও সক্রিয় রয়েছেন। আসন ভিত্তিক জাতিয় পাটি একক প্রার্থী এবং অওয়ামী লীগ-বিএনপির একাধিক প্রার্থীর ছড়াছড়ি। এর সাথে নতুন মুখের আনাগোনা পরীলক্ষিত হচ্ছে। রায়গঞ্জ উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং তাড়াশ উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই আসন। এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১৫ হাজার ৩৭১ জন। নির্বাচনের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এ আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের নির্বাচনে পর পর তিনবারই বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনেই পর পর আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে রয়েছে মনোনয়ন নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। আওয়ামী লীগ আগামী নিরৃবাচনে বিজয় ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করছে। তবে এর আগে তিনবার নির্বাচন বিজয়ী বিএনপিও বসে নেই। তারাও আসনটি পুনরুদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ফলে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠ আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে হতে পারে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই। এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের অধ্যাপক ডা:আবদুল আজিজ। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন রায়গঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান তালুকদার ইমন, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহ-সভাপতি কৃষিবিদ সাখাওয়াত হোসেন সুইট, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ড. হোসেন মনসুর,ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অবসরপ্রাপ্ত) নজরুল হাসান মানিক, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এ টি এম লুৎফর রহমান দিলু, রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ হৃদয়। এ দিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকার শীর্ষে রয়েছেন চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ আব্দুল মান্নান তালুকদার। এ ছাড়া ওরিয়েন্টাল গ্রæপ অব কোম্পানির পরিচালক ও সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রকিবুল করিম খাঁন পাপ্পু,রায়গঞ্জ উপজেলা পরিষদে সাবেক চেয়ারম্যান ভিপি আয়নুল হক, তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার সেলিম জাহাঙ্গীর, জার্মানি বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক এবং সমন্বয়ক, জিয়া সাইবার ফোর্স ইউরোপ, তরুণ উদীয়মান রাজনৈতিক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সাব্বির আহমেদ। সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রকিবুল করিম খাঁন পাপ্পু বলেন, আমি তৃনমূল থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জরিত।
বিএনপির নির্যাতিত ও আহত প্রতিটি নেতাকর্মীর পাশ্বে থেকে আর্থিকসহ সব বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছি। আমাকে মনোনয়ন দিলে তৃণমূলের সকল নেতাকর্মী আমার সাথে হাত মিলিয়ে আগামীতে এ আসনে বিএনপিকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন। এ বিষয়ে চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা আবদুল মান্নান তালুকদার বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বারবার এমপি নির্বাচিত হয়ে জনকল্যাণে যে কাজ করেছি, তার সাক্ষী এ অঞ্চলের জনগণ। আমি মনোনয়ন পেলে এ অঞ্চলের মানুষ আমাকেই জনপ্রতিনিধি হিসেবে বেছে নেবেন। বর্তমান সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা: আব্দুল আজিজ বলেন, বিগত নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার পর নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দলকে সুসংগঠিত করাতে কাজ করেছি। নির্বাচনে এলাকার উন্নয়নে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তার সব গুলোই বাস্তবায়নে কাজ করেছি। আগামীতে চলনবিলকে একটি পর্যটন এলাকা হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনাও হাতে রয়েছে। আমি আবারও নৌকার মনোনয়ন পেলে প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করব।

 

শেষ পাতার ফিচার
হারিয়ে যাচ্ছে ঝাঁকিজাল ফেলে মাছ ধরার ঐতিহ্য 

গোলাম মোস্তফা, বিশেষ প্রতিনিধি :কালের বিবর্তনে ঝাঁকিজাল ফেলে মাছ ধরার ঐতিহ্য বিলুপ্ত হতে চলেছে। কিন্তু এক সময় মাছ ধরার মূল উপকরণ ছিল ঝাঁকিজাল। বিশেষ করে খাল, ডোবা-নালা দখল নিয়ে ভরাট করায় মাছ ধরার সুযোগ একেবারে সংকুচিত হয়ে এসেছে। ফলে ঝাঁকিজাল দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য এখন তেমন চোখে পড়েনা। এদিকে উপজেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছেন, ঝাঁকিজালে মা মাছ ও পোনা মাছ তুলনামূলক কম আটকায়। পেশাদার জেলেরা ঝাঁকিজাল ব্যবহার করলে জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চলনবিলে উজানের পানি শুকিয়ে গেছে। বিলের মধ্যেকার কাটা গাংয়ে জেলেদের পাশাপাশি সখের বশে বেশকিছু লোকজন ঝাঁকিজাল ফেলে মাছ ধরছেন। অনেকের জালে সরপুঁটি, বেলে, টাকি, মিরকা, রুই, কাতল, কাকিলা, কই, বাইন, টেংরা, মাগুর, শিং, পাবদা, বোয়াল ও শোল মাছ ধরা পড়ছে। চলনবিল অধ্যূষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের কুন্দইল গ্রামের পেশাদার জেলে জাহাঙ্গীর হোসেন, শিহাব উদ্দীন, খয়বার হোসেন ও জাকির হোসেন বলেন, বিলের পানি কাটা গাংয়ে নেমে এসেছে। প্রচুর মাছ পাওয়া যাচ্ছে ঝাঁকিজাল ফেলে। চলনবিল এলাকার খাল, ডোবা-নালা দখলমুক্ত করা গেলে সারা বছর জলাশয়ে পানি থাকবে। সব সময় মাছ পাওয়া যাবে।
ইয়াকুব, এশারত ও জাব্বার হোসেন নামে তিন ব্যক্তি পার্শ¦বর্তী রায়গঞ্জ উপজেলার ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের চরব্রহ্মগাছা গ্রাম থেকে শখের বসে চলনবিলে ঝাঁকিজাল দিয়ে মাছ ধরছেন। তারা বলেন, রায়গঞ্জ উপজেলা তাড়াশ উপজেলার চেয়ে উঁচু এলাকা। বড় বন্যা হলে পানির দেখা মেলে। তাছাড়া রায়গঞ্জের জলাশয়গুলো দখল করে নিয়েছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। মাছ ধরতে ভালো লাগে। এজন্য চলনবিলে এসেছেন।
জেলেরা জানান, ঝাঁকিজাল বাংলাদেশের মাছ ধরার কৌশলগুলোর মধ্যে অন্যতম। ঝাঁকিজালের উপরের প্রান্তে সরু রশি বাঁধা থাকে। জালের নিচের দিকে লোহার ছোট ছোট কাঠি যুক্ত করা হয়। যাতে পানিতে জাল ফেললে তাড়াতাড়ি ডুবে যেতে পারে। মাছ ধরার সময় খালের পাড় থেকে রশিটি হাতে রেখে জাল পানিতে ছুড়ে মারা হয়। পরে রশি ধরে টেনে জাল তোলা হয়।
অপরদিকে তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভুয়াগাঁতী আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশের খাল, সলঙ্গা আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশের খাল, খালকুলা আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশের খাল, মহিষলুটি আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশের খাল, ওয়াপদা বাঁধের দুই পাশের খাল, কুন্দইল আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশের খাল, বারুহাস আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশের খাল, রানীহাট আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশের খাল, দেশীগ্রাম আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশের খাল, ভদ্রাবতী নদীর এক পাশের খাল, করতোয়া নদী ভরাটসহসহ অসংখ্য গ্রামীণ সড়কের দুই পাশের খালের দখল নিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। তারা সরকারি খালের জায়গা ভরাট করে বসবাস করছেন। অনেকে খালের মধ্যে পুকুর কেটে মাছ চাষ করছেন।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক বলেন, রানীহাট সড়কের দুই পাশের খাল পূনঃখনন করার জন্য প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে দখলমুক্ত করে খনন কাজ করা হবে। অন্যান্য খালগুলিও পর্যায়ক্রমে দখলমুক্ত করে খনন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মসগুল আজাদ সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তাকে বলেন, বর্ষা মৌসুম জুড়ে মা মাছ ও পোনা মাছ বাঁচাতে কারেন্ট জাল, চায়না দুয়ারী জাল ও বাদাই জাল ব্যবহারকারী জেলেদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এখন সুফল পাচ্ছেন জেলেরাই। ঝাঁকিজালের ব্যবহার বাড়ানো গেলে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। এজন্য জনসচেনতাই মূখ্য।
মাছের অভাবে চলনবিলে 
শুটকি উৎপাদন ব্যাহত
বিশেষ প্রতিনিধি: মৎস্যভান্ডার হিসাবে খ্যাত চলনবিলে ভরা মৌসুমে তেমন মাছের দেখা মিলছেনা। ফলে শুটকির উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শুটকির ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম, আব্দুল গফুর, দেলবার হোসেন, আলম ও নান্নু বলেন, চলনবিলের মহিষলুটি মৎস্য আড়তের আশপাশে ২৫টি শুটকির চাতাল ছিল। এ বছর মাত্র ৫টি চাতালে শুটকি প্রস্তুত করা হচ্ছে। মাছের অভাবে ব্যবসা গুটিয়ে চলে গেছেন ২০ জন ব্যবসায়ী। প্রতিদিন একটি শুটকির চাতালে ৩০০ মণ মাছের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় বাজার ও মৎস্য আড়ত ঘুরে ৩০ থেকে ৫০ মণের বেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছেনা। এদিকে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছেন, বিলের বিস্তীর্ণ মাঠের অনেক জায়গাতে এখনো পানি রয়ে গেছে। বিলের পানি একেবারে নেমে যাওয়ার সময় মাছের সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চলনবিল অধ্যূষিত তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটি এলাকার শুটকির চাতালের বেশিরভাগ চাটাই মাছ বিহীন খালি পড়ে আছে। একজন শুটকির ব্যবসায়ী শ্রমিকের সাথে শুটকি প্রস্তুত করছেন। সগুনা ইউনিয়নের কুন্দইল গ্রামের শ্যামল হোসেন, আব্দুল কাদের ও বারিক মন্ডল নামের তিনজন মৎস্যজীবী বলেন, বর্ষায় চলনবিলে মাছ ধরে সংসার তাদের। কিন্তু বিলের পানিতে তেমন মাছ নেই। জানা গেছে, চলনবিলের মিঠা পানির পূঁটি, খৈলসা, চান্দা, মলা, ইচা, টেংড়া, গুচি, ক্যাকিলা, টাকি, শোল ও বোয়াল মাছের শুটকির কদর রয়েছে দেশ জুড়ে।
আমেনা খাতুন, কমেলা খাতুন, জোসনা পারভিন, চম্পা পারভিন, সাজেদা বেগমসহ বেশ কয়েকজন নারী শ্রমিক বলেন, শুটকির চাতালের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। এ বছর মাছের অভাবে অনেকের কর্মহীন দিন কাটছে।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মসগুল আজাদ চলনবিল বার্তাকে বলেন, বর্ষা মৌসুমের কয়েক মাস মা মাছ ও পোনা মাছ নিধন বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে চলনবিলে। মাছ সুরক্ষিত রয়ে গেছে। বিলের পানি আরো কমে গেলে সুফল পাবেন মৎস্যজীবীরা।

গুরুদাসপুরে মালবাহী কাভার্ড ভ্যানে আগুন 

গুরুদাসপুর প্রতিনিধি:জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার প্রায় ঘন্টাখানেক আগে গুরুদাসপুরে একটি কাভার্ড ভ্যানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের গুরুদাসপুর অংশের নয়াবাজার আইড়মারী ব্রীজ এলাকায় ওই অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে বনপাড়া ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে কাভার্ড ভ্যানের আগুন নিয়ন্ত্র¿ণে আনে। ততক্ষণে কাভার্ড ভ্যানটির সামনের অংশ পুড়ে যায়। কাভার্ড ভ্যানের আগুনের ফলে মহাসড়কের দুই পাশে ঘন্টাখানেক যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে গুরুদাসপুর থানার পুলিশ গিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক করে।
কাভার্ড ভ্যানের চালকের সহকারি আশিক হোসেন (২৫) জানান, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া-শাহজাদপুর এলাকা থেকে প্রাণ কোম্পানির মাল বহনকারী একটি কাভার্ড ভ্যান (ঢাকা মেট্টো উ ১২-৩৬২৩) নিয়ে নাটোরে যাচ্ছিলেন তারা। পথে মহাসড়কের আইড়মারী ব্রীজের কাছে ২০ থেকে ২৫ জনের মতো দুর্বৃত্ত গাড়ির গতি রোধ করে ঢিল ছোড়ে। গাড়ি না থামালে গুলি ছোড়ার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে চালক ভয় পেয়ে কাভার্ড ভ্যানটি থামিয়ে দেন। গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, কাভার্ড ভ্যানে আগুনের ঘটনায় থানায় নাশকতার মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। দুর্বৃত্তদের অগ্নিকাÐের পূণরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সেজন্য মহাসড়কে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আগুন দেওয়া দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

সিংড়ায় অবরোধের সমর্থনে বিএনপির মশাল মিছিল 
সিংড়া প্রতিনিধি: বিএনপির ডাকা অবরোধের সমর্থনে নাটোরের সিংড়ায় মশাল মিছিল করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) রাত ৯টায় গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দাউদার মাহমুদের নির্দেশনায় নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের বালুয়া বাসুয়া-চয়েন মোড় এলাকায় এ মশাল মিছিল করে বিএনপি, সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সিংড়া পৌর বিএনপির সদস্য সচিব তায়েজুল ইসলাম, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক এড. নাজমুল হক, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানা, শিপন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আমিরুল মোমেনীন নিশান, ছাত্রদল নেতা মিলন হোসেন রাকিব, বাদশা আহমেদ প্রমুখ।

নৈরাজ্যের প্রতিবাদে পলকের শোভাযাত্রা 
সিংড়া প্রতিনিধি:বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য, সহিংসতা ও নাশকতার প্রতিবাদে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করেছেন নাটোর জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি, নাটোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী এড. জুনাইদ আহমেদ পলক।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় কোর্টমাঠ হতে দেড় হাজার মোটরসাইকেল নিয়ে এই শোভাযাত্রা করেন তিনি।শোভাযাত্রাটি সিংড়া শহর, শেরকোল, বন্দর, খেজুরতলা, হাতিয়ান্দহ, চামারী হয়ে বিলদহর মাঠে এসে শেষ হয়। সেখানে মরহুম ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট এর ফাইনাল খেলা উপভোগ ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।এসময় উপস্থিত ছিলেন নাটোর জেলা আ’লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক ও তাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন, সিংড়া উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফুল হাবিব রুবেল, পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক আনিছুর রহমান লিখন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহন আলী, উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম স্বপন প্রমুখ।

উল্লাপাড়ায় সাথী ফসলে একই জমিতে আখ ও আলু 
উল্লাপাড়া প্রতিনিধিঃ উল্লাপাড়ায় সাথী ফসলে আখ ও আলু সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় একই জমিতে আখ ও আলু ফসল এক সাথে আবাদ করা হচ্ছে । শিমলা মাঠে প্রায় চল্লিশ বিঘা জমিতে জনা দশেক কৃষক আখের সাথী ফসল হিসেবে আলু ফসল আবাদ করছেন উপজেলার বাঙ্গালা শিমলা চড়কতলা মাঠে এবারে প্রথম জনা দশেক কৃষক একই জমিতে আখ ও আলু ফসল আবাদ শুরু করেছেন। কৃষকদের ৩৯;জন হলেন – আকতার আলী, জাফর মিয়া, রোকন , রাসেল , আলিম , কুদ্দুস , সাখাওয়াত।
এরা জমিতে একই সময়ে আখের চারা ও বীজ আলু লাগিয়েছেন। সরেজমিনে মাঠটিতে গিয়ে দেখা গেছে , এরই মধ্যে লাগানো আখের চারা গজিয়েছে। এছাড়া আলু চারা সবে গজাচ্ছে। সারি করে দুফসলের চারা ও বীজ লাগানো হয়েছে।
কৃষক জাফর আলী প্রায় দেড় আর আকতার আলী এক বিঘা পরিমাণ জমিতে এর আবাদ করেছেন। গত বছর একজন কৃষক জাফর আলী সাথী ফসল হিসেবে আখ ও আলু আবাদ করেছিলেন। তিনি এর আবাদ করে বেশ টাকা আয় করেছিলেন। তার দেখাদেখি এবারে জনা দশেক কৃষক করেছেন। এর আবাদকারী কৃষক বলেন আলু ফসল কম সময়ের মধ্যে হয়। অনেক আগেই তোলা হয়। আর আখ ফসল সাত থেকে নয় মাসের মধ্যে কাটা হয়। বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা সরাসরি জমি থেকে আখ কিনে নিয়ে যান।

উল্লাপাড়ায় ২১ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ 
ডাঃ আমজাদ হোসেন উল্লাপাড়া প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় কৃষকেরা বছরের দ্বিতীয় প্রধান সরিষা ফসলের আবাদ শুরু করেছেন। কৃষকেরা আধুনিক প্রযুক্তির বড় ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারে জমিতে হালচাষ করে সরিষা বীজ বুনছেন। গত বছরের চেয়ে এবারে ২১ হাজার ২৩৫ হেক্টর বেশী পরিমাণ জমিতে সরিষা ফসল আবাদের সরকারী লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কৃষি প্রণোদনায় সরিষা বীজ পেয়েছেন প্রায় ১৩ হাজার কৃষক উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানানো তথ্যে এবারে গোটা উপজেলায় ২১ হাজার ১৩৫ হেক্টর পরিমাণ জমিতে সরিষা ফসল আবাদের সরকারী লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিলো ২০ হাজার ১২৫ হেক্টর পরিমাণ জমিতে।
উপজেলার পাথার প্রান্তরের উধুনিয়া , বড় পাঙ্গাসী ও মোহনপুর ইউনিয়ন এলাকায় সবচেয়ে বেশী পরিমাণ জমিতে সরিষা ফসলের আবাদ হয়। এছাড়া বাকী ১১ ইউনিয়নের প্রায় সব মাঠেই কম বেশী পরিমাণ জমিতে সরিষা ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। কৃষকেরা হলুদ সেতি বারী সরিষা -১৪ ও ১৭ এবং দেশীয় সেতি ও কালো মাঘি জাতের সরিষা ফসল আবাদ করেন। এর মধ্যে বারী -১৪ ও ১৭ জাতের সরিষার বেশী হারে ফলন মেলে বলে জানানো হয়।সরেজমিনে গত দিন তিনেক সময়ে উপজেলার সলঙ্গা ইউনিয়নের আঙ্গারু , শহরিয়ারপুর , বাঙ্গালা ইউনিয়নের ভয়নগর, চরপাড়া, ধরইল , মালিপাড়া , আফার , সিমলাসহ আরো বহু মাঠে সরিষা ফসলের আবাদ শুরু করেছেন কৃষকেরা। আবাদী মাঠগুলোয় কৃষকেরা বড় ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার মেশিনে হালচাষ করে সরিষা বীজ বুনছেন।

চাটমোহরে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের প্রস্তুতি 

চাটমোহর প্রতিনিধি: শস্যভান্ডার খ্যাত পাবনার চাটমোহর উপজেলার মাঠ প্রান্তে সোনালী ধানের শীষ দোল খাচ্ছে। শরতের সকালে ধানের শীষে জমে থাকা মুক্তার দানার মতো শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে নবান্নের আগমনী বার্তা। নতুন ধান ঘরে তোলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে কৃষকের ঘরে ঘরে। নতুন ধানের ঘ্রাণ একটু আগেভাগেই পাওয়ায় অন্য রকম আনন্দ বয়ে যাচ্ছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের কৃষকদের মাঝে। সমলয় পদ্ধতিতে ধান রোপণ করে সফল হওয়ায় এ গ্রামের ৭৫ জন কৃষক নতুন অভিজ্ঞতায় দান উচ্ছ্বসিত। সরেজমিনে মথুরাপুর গ্রামে গিয়ে চোখে পড়ে সমলয় ধান চাষের মনোরম দৃশ্য।
কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এ এলাকার কৃষক ১৫০ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন বিনা ধান-১৭ জাতের রোপা আমন। চাষ পদ্ধতিতে যান্ত্রিকীকরণের পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়েছে আধুনিক সকল প্রযুক্তি। সমলয় পদ্ধতিতে রোপণ করা ৫০ একর জমির ধান পাকতে শুরু করেছে একসাথে। এ সপ্তাহেই ধান কাটা শুরু হবে। সমলয় চাষের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে কৃষক মামুনুর রশীদ জানান, কৃষি বিভাগ বীজ সরবরাহ থেকে শুরু করে ধান রোপণ ও সার দিয়েছেন প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায়। আগামী সপ্তাহে ধান কাটা শুরু হবে। কৃষি অফিস কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারের মাধ্যমে ধান কেটে দেবেন সরকারি ব্যবস্থাপনায়। আমরা শুধুমাত্র নিজেদের জমিতে পরিচর্যা করে পাকা ধান ঘরে তুলতে পারছি। এজন্য তিনি সরকারের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।

চলনবিল বার্তার ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধি অসুস্থ : দোয়াপ্রার্থী
স্টাফ রিপোর্টারঃ সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তার ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধি মো. আকছেদ আলী বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে নিজ বাসায় অবস্থান করছেন। জানা গেছে, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদ আকছেদ আলী সম্প্রতি কিডনী জটিলতায় ভুগছেন। প্রয়োজনীয় অর্থাভাবে উপযুক্ত চিকিৎসাও নিতে পারছেন না। এ কারণে তার সমাজকর্ম ও লেখালেখি ঝিমিয়ে পড়েছে। তার প্রাইভেট টিউশনি পেশাও ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি আর কোন স্বাভাবিক কাজকর্ম ও চলাফেরা করতে পারছেন না। উল্লেখ্য, অবসরপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষক ও লেখক-সাংবাদিক আকছেদ আলী তাড়াশের মান্নাননগরের মূল অধিবাসী হলেও তিনি দীর্ঘকাল যাবত ভাঙ্গুড়ার মির্জাপুর বাজারে বসতি স্থাপন করে সেখানে থিতু হয়েছেন। তিনি “দৈনিক ভোরের কাগজ” ও “সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা” পত্রিকার নিয়মিত সাংবাদিক। তার অসুস্থতা হতে মুক্তির জন্য তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।

সিংড়ায় ৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন উদ্বোধন 
সিংড়া প্রতিনিধি: নাটোরের সিংড়ায় ৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন একাডেমিক ভবন উদ্বোধন করা হয়েছে। গত সোমবার (৬ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এসব ভবন উদ্বোধন করেন তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী এড. জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি।
জানা যায়, ২ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শালমারা-ধামাইচ ইসলামিয়া সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসা, ২ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ডাহিয়া পিজিডি উচ্চ বিদ্যালয়, ১ কোটি ২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সাঁতপুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিয়াশ টেকনিক্যাল স্কুল, ৮৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিয়াশ উচ্চ বিদ্যালয় এবং ২ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বনকুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের উদ্বোধন করা হয়। এছাড়া ২ কোটি টাকা ব্যয়ে তাজপুর সাব মার্সিবল রাস্তা ও ১ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মাগুরা সাব মার্সিবল রাস্তার উদ্বোধনও করেন পলক।এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় সিংড়া-বারুহাস-তাড়াশ ডুবন্ত সড়কের তাজপুরে সাবেক সংসদ সদস্য আশরাফুল ইসলামের ম্যুরালের উদ্বোধন করেন প্রতিমন্ত্রী। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আ’লীগের সভাপতি এড. ওহিদুর রহমান শেখ, যুগ্ম সম্পাদক ও ইটালী ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফ, যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমিন, ডাহিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল মজিদ মামুন, ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি এম এম আবুল কালাম প্রমুখ।
গুরুদাসপুরে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদন্ড

আবুল কালাম আজাদ : নাটোরের গুরুদাসপুরে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যার দায়ে স্বামী রনি মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানার রায় দিয়েছেন আদালত। নাটোর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুহাম্মদ-আব্দুর-রহিম বুধবার (১৫ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই রায় দিযেছেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মো. আনিসুর রহমান। ন্ডপ্রাপ্ত ৩২ বছরের রনি মোল্লা গুরুদাসপুর উপজেলার পুরুলিয়া গ্রামের মো. হাবিল মোল্লার ছেলে। মামলার সূত্রে আনিসুর বলেন, ২০১২ সালে রনি মোল্লার সঙ্গে নাটোর সদরের শিবদুর এলাকার মো. মফিজ উদ্দিনের মেয়ে রিনা খাতুনের বিয়ে হয়।
বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য রিনা খাতুনকে দৈহিক ও মানষিক নির্যাতন-অত্যাচার করতে থাকে রনি মোল্লা। বিষয়টি জেনে রিনার পরিবার এক লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্র উপহার দেয়। কিন্তু রনি আবারও দুই লাখ টাকা যৌতুকের দাবি করে স্ত্রীকে নির্যাতন করতে থাকেন।এরমধ্যে এই দম্পতির সংসারে একটি ছেলের জন্ম হয়।
২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রিনাকে দুই লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে আসতে বলে রনি।কিন্তু রিনা টাকা আনার কথা বলতে অসম্মতি জানালে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রনি কাঠের বাটাম দিয়ে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে ও ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে রিনাকে জখম করে। এ সময় স্থানীয়রা রিনাকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে তার পরিবারকে খবর দেয়।
খবর পেয়ে রিনার আত্মীয়-স্বজন ঘটনাস্থলে গিয়ে রিনাকে উদ্ধার করে প্রথমে নাটোরে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায় রিনা।

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD