ভাঙ্গুড়া(পাবনা) প্রতিনিধি: আবহকাল থেকে বাংলায় নবান্নের উৎসব পালনে খেজুর গুড়ের কদর বেশি। তাই শীতের আমেজ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলনবিল অঞ্চলের ভাঙ্গুড়া উপজেলায় গাছিরা খেজুরের রস আহরণের জন্য গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। গাছ পরিষ্কার করার জন্য দা, দড়ি তৈরি, মাটির ঠিলে ক্রয় ও রস জ্বালানো জায়গা ঠিক করাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রয়েছেন গাছিরা। সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
দুপুরের সূর্য মাথার উপর থেকে পশ্চিমে হেলতে শুরু করেছে। হালকা বাতাসে খেজুর গাছের লম্বা পাতা দোল খাচ্ছে। সেই ফাঁকে সোনালি সূর্যের রঙিন আভা রসের হাঁড়িতে পড়ে চিকচিক করছে। খেজুর গাছের মাথায় উঠে দড়ি পেঁচিয়ে গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য গাছের মাতি ও ময়লা পরিষ্কার করছেন গাছিরা। কোমরের ডান পাশে পেঁচানো দড়িতে ছোট্ট বাঁশের খাঁচিতে কিছু ধারাল বাটাল আর পেছনে রসের হাঁড়ি ঝোলানো তাদের। দৃশ্যটি উপজেলার অষ্টমনিষা থেকে শাহনগর সড়কের।
এ সময় কয়েকজন গাছির সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, শীত চলে আসছে। এখন খেজুর গাছ তোলার সময়। খেজুর রসের গুড়-পাটালি তৈরি করে শরৎনগর বাজার, চাচকৈড়, ময়দানদিঘী তেবাড়িয়া, তাড়াশ বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয়। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। এতে তারা লাভবান হন।
উপজেলার ময়দানদিঘী গ্রামের এনাত আলী বলেন, ‘বাড়িতে কয়েকটা খেজুর গাছ রয়েছে, নিজেই রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করে বিক্রি করি।’
উপজেলার শাহনগর গ্রামের গাছি মজিবর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছর ৫০ থেকে ৭০টি খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করি। এজন্য গাছের মালিককে ৩-৪কেজি করে গুড় দিতে হয়।’
পৌর শহরের জামাল নামের একজন গাছি বলেন, ‘কয়েকটা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করছি। গুড়ের দাম বেশি পাব, তবে অন্যান্য খরচও বেশি।’
স্থানীয় গাছি ছাড়াও রাজশাহীর বাঘা উপজেলা থেকে প্রতি বছর গাছিরা এসে এ অঞ্চলে খেজুর গাছ ভাড়া নিয়ে রস থেকে গুড় তৈরি করে থাকেন। উপজেলার শাহনগর,অষ্টমনিষাসহ বিভিন্ন এলাকায় টাকা ও গুড়ের বিনিময়ে গাছ ভাড়া নিয়ে শত শত খেজুর রস সংগ্রহ করে সুমিষ্ট গুড় তৈরি করে বাজারজাত করছেন তারা।
উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা স্বস্তির কুমার বলেন, ‘খেজুর গাছ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। উত্তরাঞ্চলের খেজুর গুড়ের চাহিদা দেশজুড়েই। খেজুর গুড়ের মধ্যে পাটালি ও লালিই বেশি প্রসিদ্ধ। এ বছর গুড়ের দাম বেশি হওয়ায় গাছিরা লাভবান হবে বলে আশা করছি।’