মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন সেপ্টেম্বর ২০২৩

Spread the love

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সেপ্টেম্বর ২০২৩ সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল আগের মতই উদ্বেগজনক। দেশে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক বন্দুকযুদ্ধ, তাদের পরিচয়ে অপহরণ, গ্রেফতার এড়াতে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে মৃত্যু, নির্যাতন এবং, অপতৎপরতার মতো  ঘটনা ঘটেই চলেছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, গায়েবি মামলা ও পুলিশি বলপ্রয়োগের ঘটনা নিদারুনভাবে অব্যাহত রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং মতামত প্রকাশের সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মতো ঘটনা ঘটছেই।। ধর্ষণসহ নারী ও শিশুদের উপর সহিংসতার ঘটনাও অব্যাহত রয়েছে যা উদ্বেগজনক। অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে। অপরদিকে গণপিটুনির মত আইন হাতে তুলে নেয়ার ঘটনা বেড়েছে। মানবাধিকার লংঘনের এই ঘটনাগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এসব ঘটনা রোধে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। একই সাথে প্রত্যেকটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তসহ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবী জানাচ্ছে। 

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বন্দুকযুদ্ধ

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বর, ২০২৩ এ বন্দুকযুদ্ধের ২টি ঘটনা ঘটেছে। কথিত গোলাগুলির দুটো ঘটনার মধ্যে একটিতে সেনাবাহিনী ও অপরটিতে পুলিশের সম্পৃক্ততা ছিল। দুটো ঘটনাতেই কোন হতাহতের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত না হলেও ১ জনকে সেনাবাহিনী ও ১ জনকে পুলিশ গুলিবিদ্ধ আহতাবস্থায় গ্রেফতার করেছে।

১৮ সেপ্টেম্বর বান্দরবানের রুমা উপজেলার জাইঅংপাড়া পাহাড়ি এলাকায় কেএনএফের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী সেনাবাহিনীর একটি টহল সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায় সেনাদের টহল দল। এতে ঘটনাস্থল থেকে আহত কেএনএফ সদস্য বয়রাম বমকে (২২) উদ্ধার করা করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন সেনাসদস্যরা।

১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার দেল্লা বামৈল এলাকায় ডাকাত সদস্যদের ধরতে অভিযান চলাকালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কথিত ডাকাত সদস্যরা পুলিশের উপর আক্রমণ করে। এসময় গুলির ঘটনা ঘটলে মিনহাজুন আবেদিন ফাহিম (২৭) নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। পুলিশের দাবি আহত যুবক ডাকাত দলের সদস্য।

আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ ও অপহরণের চেষ্টা

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বর, ২০২৩ মাসে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ১ জন প্রকৌশলীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বনানীতে কামরুল হাসান নামের এক প্রকৌশলীকে গাড়িতে তুলে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে ৮ নম্বর সড়কে আসার পর প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে তাঁকে একটি গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। সে সময় সহকর্মীকে বলা হয়েছিল, রাতে কামরুলকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এরপর থেকে তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে মৃত্যু, নির্যাতন, অপতৎপরতার অভিযোগ

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর, ২০২৩ মাসে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে পালানোর চেষ্টায় পানিতে ঝাঁপ দিয়ে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাছাড়া পুলিশের কিছু সদস্যের অনৈতিক কাজের পাশাপাশি তাঁদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, অশোভন আচরণ ও নির্যাতনের বেশ কয়েকটি অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

গ্রেফতার এড়াতে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে মৃত্যু

১ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের টেকনাফে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার সময় পুলিশের টহল দেখে সেতু থেকে খালে ঝাঁপ দিয়ে পালানোর চেষ্টাকালে ছাত্রলীগ নেতা কামরুল হাসান কাইয়ুম ছাত্রলীগের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন কমিটির দপ্তর সম্পাদক এর (২০) মৃত্যু হয়।

নির্যাতন, অপতৎপরতার অভিযোগ

২৭ সেপ্টেম্বর যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে যশোর পুলিশ লাইনসের সহকারী উপপরিদর্শক আশীষ অবৈধ টাকা লেনদেন করতে অস্বীকৃতি জানানোয় উজ্জ্বল বিশ্বাস (৩২) নামের ব্যবসায়ীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে নির্যাতন শুরু করেন। দোকানে ভাঙচুর করে সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক, পাসওয়ার্ডসহ দুটি ব্যাংকের কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে যান। পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকার একটি চেক ও ফাঁকা স্ট্যাম্পে জোর করে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। পরে আশীষ দাবি করেন, তিনি ২৫ লাখ টাকা পাবেন। টাকা না দিলে তাঁকে আটক ও গুম করা হবে।

৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরের সোনাপুর এলাকার নিজ বাড়ি থেকে আটকের পর মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে কামালকে আটক করে পুলিশ। মাদক ব্যবসায়ী কামাল হোসেনকে আটকের পর হাতকড়া পরিয়ে সোনারগাঁ থানার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার পথে পানাম নগর নামক স্থানে গাড়ি থামিয়ে কামাল হোসেনকে মারধর ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ২ লক্ষ টাকা দাবি করেন এসআই মোতালিব। একপর্যায় এক লক্ষ টাকা কামাল হোসেনের স্ত্রীর হাত থেকে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় কামাল হোসেনকে।

৮ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ধানখেতে হাঁস যাওয়ার ঘটনায় দুই পক্ষের মারামারির জেরে যুবলীগের কর্মী পারভেজ (২৫) ও তাঁর চাচাতো ভাই মো. সেলিমকে থানায় আটকে রেখে চর জব্বর থানার অফিসার ইনচার্য দেবপ্রিয় দাশ নির্যাতন করেন। নির্যাতনের ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে কালশিটে দাগ দেখা গেছে।

২৪ সেপ্টেম্বর যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গরুর খামারি ব্যবসায়ীর স্ত্রী বিলকিস খাতুন সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেন, যশোরের শার্শা উপজেলা বাগআঁচড়া সাতমাইল এলাকা থেকে তার স্বামী নাসির উদ্দীন (৪০) কে সাদাপোশাকে তুলে নিয়ে অস্ত্র ও গুলি দিয়ে ফাঁসিয়ে তাঁকে আটক করে র‌্যাব সদস্যরা। র‌্যাবের দাবি নাসির উদ্দিন একজন চোরাকারবারি।

কারা হেফাজতে মৃত্যু

এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বর ২০২৩ মাসে কারা হেফাজতে মোট ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এর সংখ্যা ছিল ২১ জন। এ মাসে ৫ জন কয়েদি ও ১ জন নারী ও ১ জন ভারতীয় নাগরিকসহ ৫ হাজতির মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) অভ্যান্তরে দুই হাজতির মারামারিতে জুনায়েদ (২৬) নামের এক হাজতি আহত হয়েছেন। তাকে ধারালো কিছু একটা দিয়ে আঘাত করে মারাত্মক জখম করা হয়েছে। বর্তমানে তাকে কারারক্ষীদের পাহারায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৩ জন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ২ জন, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে ১ জন, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, পটুয়াখালী ও শেরপুর জেলা কারাগারগলোতে ১ জন করে বন্দীর মৃত্যু হয়। উল্লেখ্য, সকল কারাবন্দিকে বাহিরের হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তৃব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এমএসএফ মনে করে, কারা অভ্যন্তরে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি, হেফাজতে মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে তদন্ত করে দায়ী ব্যাক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হলে এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

[রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহত, মামলা ও সমাবেশে যোগদানে বাধা

 আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজপথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর তৎপরতা অব্যহত রয়েছে। প্রায় সময়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ঘোষনা থাকছে। ফলে এসব রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে হামলা-মামলা ও সংঘাতের মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। সহিংসতা, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা ও গায়েবি মামলায়  অজ্ঞাতনামা হিসেবে বিরোধীদলীয় ব্যক্তিদের আসামি করা হচ্ছে, যার মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সংগঠকদের ভীত-সন্ত্রস্ত ও আতঙ্কের মধ্যে রাখা, যাতে তারা সভা-সমাবেশ করতে না পারে। কোনো সহিংসতা ঘটলে বা না ঘটলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে এবং অজ্ঞাতনামা অসংখ্য ব্যক্তিকে আসামি করা হচ্ছে। এতে করে সুষ্ঠূ রাজনীতি করার অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে এবং ক্রমাগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা কমছে। গত ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে, বিএনপি দেশব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করে। বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন, তাদের দলীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাধা দিয়েছে। এইসব কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে মানুষের রাজনীতি করার যে সাংবিধানিক অধিকার তা বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে, ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে যা রাজনীতি ও রাজনৈতিক অঙ্গনকে ক্রমাগত বিপন্ন করছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বর ২০২৩ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতা ও সভা সমাবেশে বাধার ২১ টি হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে ১৮ টি এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীরা ৩ টি মামলা করেছেন। রাজনৈতিক মামলা ২১টির মধ্যে  বিএনপি’র বিরুদ্ধে ১৬টি ও জামায়েত ইসলামী বাংলদেশ বিরুদ্ধে  ๫ টি মামলা হয়েছে।  এ সমস্ত হয়রানিমূলক রাজনৈতিক ১৬টি মামলায় বিএনপির ৬৯৭১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। যাদের মধ্যে নাম উল্লেখ করা হয়েছে  মাত্র ৮২১ জন কর্মীর এবং অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৬১৫০ জনকে। এ সকল মামলার মধ্যে সংবাদমাধ্যমে জামায়েত ইসলামী বাংলদেশ এর বিরুদ্ধে ৪ টি এবং বিএনপির বিরুদ্ধে করা ১টি , মোট ৫টি মামলার  সম্পুর্ণ  তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ ছাড়া সেপ্টেম্বর মাসে গণমাধ্যমে সূত্র অনুযায়ী, রাজনৈতিক সহিংসতা ও সভা সমাবেশে বাধার ৩৪ টি ঘটনায় সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৪২৮ জন। তাদের মধ্যে ৪২৫ জন আহত ও ৩ জন নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১৭ জন গুলিবিদ্ধ। বিএনপি’র উপর হামলায় ১ জন আওয়ামী লীগের কর্মী নিহত ও ক্ষমতাসীন দলের অন্তর্দ্বন্দে ২জন আওয়ামী লীগের কর্মী নিহত হয়েছেন।

সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের লংঘন

 সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নানাভাবে হুমকি, নিপীড়ন, হয়রানি, নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, যা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করার সামিল। শারীরিকভাবে আক্রমণ, হয়রানি, হুমকি ও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে তা শুধুমাত্র অনাকাঙ্খিতই নয় বরং তার মাধ্যমে সৎ সাংবাদিকতার কন্ঠরোধ করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ মাসেও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে মানবাধিকার লংঘনের চিত্র উদ্বেগজনক।

দেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বর মাসে ১৫ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে  গ্রেফতার হয়েছেন ১ জন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হন প্রথম আলোর সাংবাদিক মোশাররফ। ২ জন হয়রানির শিকার,   ১ জন সাংবাদিক নিথোঁজ হওযার পর  তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও  প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম (দণ্ডবিধি ও অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের মামলায়  পাসপোর্ট জিম্মা রাখা হয় ) পাসপোর্ট ফেরত না পাওয়ায় সুইডেনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের (জিআইজিএন) সম্মেলনে যোগ দিতে পারছেন না।

সেপ্টেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় লালমনিরহাট ও নেত্রকোনায় ২ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১১ জন সাংবাদিক। বুড়িমারীতে শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে ১ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।

এ সকল ঘটনায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও পুলিশ এর সম্পৃক্ততা লক্ষ্য করা যায়। যেভাবে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে তা শুধুমাত্র অনাকাঙ্খিতই নয় বরং বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতার কন্ঠরোধ করার পাশাপাশি স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন/ সাইবার নিরাপত্তা আইন ব্যবহার/অপব্যবহার

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি ছিল পুরোপুরি নিবর্তনমূলক আইন। সরকারের পক্ষ থেকে ডিজিটাল মাধ্যমে অপরাধ দমনের কথা বলা হলেও বাস্তবে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেই এটি বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। সরকার সকল পেশাজীবী সংগঠনের সাথে আলোচনা ও দাবি উপেক্ষা করে নিজেদের মতো করে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম পরিবর্তন ও কিছু ধারার সংশোধনী এনে জামিনযোগ্য ও কিছু সাজার মেয়াদ কমিয়ে সেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেরই আদলে  সংসদে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ পাস করেছে। অনেক ধারায় শাস্তির মেয়াদ ও মাত্রা কমানো হলেও বিনা পরোয়ানায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার, তাঁর বাড়ি বা স্থাপনায় তল্লাশি চালানো—সেগুলো অবিকল  একই রকম   রেখে দেওয়া হয়েছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এর মাধ্যমে পুলিশকে যথেচ্ছ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সুরক্ষার নামে যদি নাগরিক হয়রানি বৃদ্ধি পায় এবং সংবাদমাধ্যমের অধিকার ও কর্মপরিবেশ খর্ব হয় তাহলে সাইবার নিরাপত্তা আইন নেতিবাচক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট সকলে। মোট কথা এই আইনদ্বারা নাগরিকদের বাক স্বাধীনতা খর্ব করার উদ্দেশ্য তা পুরাপুরিই বহাল রাখা হয়েছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বর মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২ টি মামলা হয়েছে। ১টি লালমনিরহাট ও ১টি সিলেটে। ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তির অভিযোগে মামলা দুটি করেন লালমনিরহাটে পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাকিবুল হাসান খান এবং বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সিলেট জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফিজুর রহমান।

প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে এ মাসে ২ জন ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

১২ সেপ্টেম্বর ছাত্রদল নেতা কাইফি শিকদার প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে কটূক্তি করে পোস্ট দেন। এ ঘটনায় গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের ইসলাম বাদী হয়ে কাইফি শিকদার ও তাঁর বাবা গৌরনদী পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কালাম শিকদার (৬০) এবং বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অজ্ঞাতনামা ২০–২৫ নেতা-কর্মীকে আসামি করে মডেল থানায় দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ ছাত্রদল নেতা কাইফির বাবা আবুল কালাম শিকদারকে গ্রেপ্তার করে। পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহায়তায় রাজধানী থেকে কাইফি শিকদারকে গ্রেফতার করা হয়। কাইফি পোস্ট দিয়েছে কিন্তু গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর বাবাকে।

১৯ সেপ্টেম্বর, বগুড়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করে কটূক্তিপূর্ণ পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক হোসাইন ইসলাম হোসেন (২৬) কে দণ্ডবিধি ১৫৩ ও ৫০০ ধারায় গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে তার বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন ছাত্রলীগের এক নেতা।

সীমান্তে হত্যা ও পরিস্থিতি

সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ করতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না বরং বেড়েই চলেছে।

এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী এ মাসে সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক গুলিতে ৪ জন নিহত ও ভারতীয় নাগরিকদের গনপিটুনিতে ১ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

২ সেপ্টেম্বর রাতে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের বেহুলার চর আন্তর্জাতিক সীমানা এলাকায় পিলারের সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ছোঁড়া গুলিতে মানিক মিয়া (৩২) নামের এক গরু ব্যবসায়ী নিহত হন। মানিক মিয়ার বুকের ডানদিকে গুলিবিদ্ধ হয় এবং ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়।

৬ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঘাগড়া মোমিনপাড়া সীমান্তের বিএসএফের টহল দল কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। সকালে মেইন পিলার ৭৫২ এলাকা সীমান্ত থেকে নুর ইসলাম নামের এক গরু ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

১৪ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গার জীবননগর সীমান্তের ভারতের অভ্যন্তরে মিজানুর রহমান ওরফে কয়রা মিজানের (৫০) বাংলাদেশী এক গরু ব্যবসায়ী বিএসএফ সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মিজানুর। ২০ সেপ্টেম্বর বিএসএফ পুলিশের কাছে লাশ হস্তান্তর করে।

২৭ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গার ঠাকুরপুর সীমান্ত এলাকার ভারতীয় অংশে রবিউল ইসলাম (৪২) নামের বাংলাদেশী এক গরু ব্যবসায়ী ভারতী সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে নিহত হন।

৩ সেপ্টেম্বর রাতে জালাল উদ্দিন নামের এক বাংলাদেশী নাগরিক সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সোনাটিলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেন। ভারতীয়দের দাবি, সেখানে চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়লে স্থানীয় লোকজন তাকে গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ৬ সেপ্টেম্বর রাতে বিজিবির কাছে তার লাশ হস্তান্তর করে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী-বিএসএফ।

এমএসএফ মনে করে, সরকারের পক্ষ থেকে সীমান্তে অনাকাঙ্খিত ঘটনাসমূহের বন্ধে দৃশ্যমান কোনো প্রকার তৎপরতা এখন পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি। কথা ছিল প্রয়োজনে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী রাবার বুলেট ব্যবহার করবে। এখানে স তার ব্যতয় ঘটেছে। সীমান্তে এ ধরনের ঘটনা কখনোই কাম্য হতে পারে না।

সংখ্যালঘু নির্যাতন

গণমাধ্যমসূত্রে পাওয়া ও এমএসএফ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ মাসে বিভিন্ন পর্যায়ে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ৮ টি ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ৩টি ঘটনায় হিন্দু ধর্মাম্বলীদের উপাসনালয় ও মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে টিনের বেড়া কেটে মূর্তি, দান বাক্সসহ পূজার তৈজসপত্র চুরি, ফরিদপুর ও টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া ইউনিয়নের হিংগানগর কামান্না সরকারপাড়া সার্বজনীন কালী ও দুর্গামন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে।

তিনটি ঘটনায় শরীয়তপুর জেলা শহরের ধানুকা এলাকার ধানুকা মনসাবাড়ি মন্দিরের পুকুর বালু দিয়ে ভরাট করে দখলচেষ্টা এবং কুমিল্লার দেবীদ্বারে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এক সংখ্যালঘুর বাড়িতে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে হামলা ও মারধর করা হয়েছে। নীলফামারীর সোনারয় ধোনিপাড়া দারোয়ানি গ্রামের হরি (দলিত) সম্প্রদায়ের আটটি পরিবার তাদের পৈতৃক জমি থেকে উচ্ছেদের হুমকি দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

চট্টগ্রামের রাউজানে কলেজছাত্র সিবলী সাদিক অপহরণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি উমংচিং মারমাকে পুলিশের ভ্যান হতে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কে কলদপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের উপজাতি পুরুষশূন্য হয়ে পরেছে। 

জামালপুর জেলার উত্তর সীমান্তে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমানায় গারো পাহাড়। সেখানে বাস করে হাতেগোনা কিছু উপজাতি পরিবার। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের জমিতে জুমচাষ করে, লাকড়ি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু বর্তমানে গারো পাহাড়ের হাজারও জনগোষ্ঠী অবৈধভাবে পাহাড়ের উঁচু-নিচু টিলায় ঘরবাড়ি নির্মাণ করে উপজাতি পরিবারগুলোতে তাদের আবাষভূমি থেকে তুলে দেয়া দিচ্ছে।

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা

 নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতারোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে  সংশ্লিষ্টদের  কার্যকর ভূমিকা দেখা যায় না।  দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বর ২০২৩ মাসে দেশে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা যেমন: ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, হত্যা, আত্মহত্যা ও পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা বিগত মাসগুলোর মতই অব্যাহত রয়েছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী জুলাই মাসে ৩৩৯ টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ৪৯টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ২৬টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৩টি। এর মধ্যে ৭ জন প্রতিবন্ধি কিশোরী ও নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গণমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী গত মাসে ৩৬১টি নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল।

উল্লেখ্য যে ধর্ষণের শিকার ৪৯ জনের মধ্যে ১১ জন শিশু, ২২ জন কিশোরী রয়েছে, অপরদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬ জন কিশোরী এবং ধর্ষণ ও হত্যার শিকার ২ জন শিশু ও ১ জন নারী। ধর্ষণের চেষ্টা ১৯টি, যৌন হয়রানি ২৯টি ও শারীরিক নির্যাতনের ৫১টি ঘটনা ঘটেছে। এসময়ে ২জন শিশু, ১৬ জন কিশোরী ও ৩৮ জন নারীসহ মোট ৫৬ জন আত্মহত্যা করেছেন।

অ্যাসিড নিক্ষেপে আক্রান্ত হয়েছেন ২ জন নারী। এ মাসে ১০ নারী অপহরণের শিকার হয়েছেন। অপরদিকে ৬ জন কিশোরী ও ১ জন নারী নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়াও জুলাই মাসে ৯ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ মোট ৭৭ জন শিশু, কিশোরী ও নারী হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। যার মধ্যে ১২ জন শিশু ও কিশোরী রয়েছেন। গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিশোধ, পারিবারিক বিরোধ, যৌতুক, প্রেমঘটিত ইত্যাদি কারণে এ হত্যাকান্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে। এ মাসে ধর্ষণের ২টি ও ধর্ষণের চেষ্টার ১টি ঘটনার সমাজপতিরা আপোস করেছেন যা প্রচলিত আইনকে অবজ্ঞা করে বেআইনি ভাবে তারা সালিশে মীমাংসার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

এ মাসে ৬ জন মৃত ও ২জন জীবিত মোট ৮ জন নবজাতক শিশুকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে যা অমানবিক ও নিন্দনীয়। এ সমস্ত শিশুদেরকে কি কারণে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা নিরূপনের চেষ্টা করছে না।

অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার

সেপ্টেম্বর, ২০২৩ মাসের অত্যন্ত উদ্বেগ-আতঙ্কের বিষয় অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বর, ২০২৩  সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ২ জন কিশোর, ১ জন কিশোরী ও ৩ জন তরুনী ছাড়াও ৫ জন নারী ও ২৯ জন পুরুষ, মোট ৪১ জনের অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে যা অত্যন্ত ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক এবং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ। গত মাসে এর সংখ্যা ছিল ২৪ জন।  দুই-চারটি ঘটনা ছাড়া সব কয়টি লাশের পরিচয় অজ্ঞাতই থেকে যাচ্ছে।  এসব ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। এসব হত্যাকান্ভের জন্য দায়ী কারা এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দেয় এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানে সরকারের সদিচ্ছা, দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়েও সন্দেহ জাগে কেন না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে দৃশ্যত সম্পুর্ণ নির্বিকার। এসব অজ্ঞাতনামা লাশ বেশীর ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, ব্রীজের নীচে ও পরিত্যক্ত এলাকায়, হাত-পা বাধা, বস্তাবন্দী, গলায় ওড়না পেচানো, আঘাতের চিহ্ন সম্বলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ১৫ বছরের কিশোর দুইজন, কিশোরী ১ জন, তরুণী ৩ জন, যুবতী নারী ২ জন, যুবক ২৩ জন, ৪০-৫০ বয়সের ৫ জন ও ৫০ উর্দ্ধ ৫ জন রয়েছে।

এমএসএফ মনে করে, শুধুমাত্র অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়

না। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যত ক্ষমতাবানই হোক, সব অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের জন্য জরুরি কিন্তু পুলিশের সে বিষয়ে তেমন আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

গণপিটুনি

প্রচলিত আইন অবজ্ঞা করে গণপিটুনির ঘটনাগুলোকে বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড হিসেবেই গণ্য করা যায়। গণমাধ্যমসূত্রে পাওয়া এমএসএফ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী সেপ্টেম্বর, ২০২৩ মাসে একই ধারাবাহিকতায় উদ্বেগজনকভাবে গণপিটুনিতে হতাহতের ঘটনা ঘটে চলেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ মাসে অন্তত ১১টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ৭ জন যুবক নিহত ও ৫ জন যুবক গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৩ জনকে পুলিশে সপোর্দ করা হয়েছে। গত মাসে একজন কিশোরসহ ৬ জন নিহত ও একজন শিশুসহ ৮ জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন। সন্দেহজনক চুরি, ছিনতাই, শত্রুতার জের ও উত্তেজিত হয়ে এসব গণপিটুনির ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছে। এমএসএফ মনে করে, আইন অবজ্ঞা করে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা অবশ্যই ফৌজদারী অপরাধ। গণপিটুনির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব।

তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, দি ডেইলি ষ্টার, নিউএইজ, কালের কন্ঠ, যুগান্তর, সংবাদ, জনকন্ঠ, আমাদের সময়, বাংলাদেশ প্রতিদিন, দৈনিক মানবজমিন, সমকাল, ইত্তেফাক, আজকের পত্রিকা, ঢাকা ট্রিবিউন, বিডি নিউজ ২৪, বাংলাদেশ জার্নাল, যায়যায় দিন, জাগো নিউজ ও অন্যান্য জাতীয় দৈনিকসমূহে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে উপরোক্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়াও প্রায় প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই স্থানীয় হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারদের মাধ্যমে ভেরিফাই করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনার ভিত্তিতে এ রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD