সিংড়ায় ভাসমান হাঁসের খামারে স্বাবলম্বী শতাধিক পরিবার

Spread the love

মো. শহিদুল ইসলাম সুইট, সিংড়া (নাটোর): নাটোরের সিংড়ায় ভাসমান খামারে হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন শতাধিক পরিবার। অনেকেই এই উদ্যোগকে অনুসরণ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। বিল-জলাশয় ও নদীর উন্মুক্ত পানি থাকায় এ উপজেলায় হাঁস পালন বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। পাশাপাশি ডিম ও মাংসের চাহিদাও প‚রণ হচ্ছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে, চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলায় ছোট-বড় মিলে শতাধিক হাঁসের খামার রয়েছে। ক্যাম্বেল, ইন্ডিয়ান রানার ও চায়না জাতের ১০ লাখের বেশি হাঁস পালন করা হচ্ছে এসব খামারে। তবে রোগ প্রতিরোধ-ক্ষমতা ও বেশি ডিম দেওয়ার কারণে ক্যাম্বেল জাতের হাঁস বেশি পালন করা হচ্ছে। বর্ষায় চলনবিল ও শুকনো মৌসুমে উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নন্দকুঁজা, আত্রাইসহ নদ-নদীতে এসব হাঁস পালন করে থাকেন খামারিরা। হাঁস পালনে স্বাবলম্বী হওয়া এসব পরিবার বছরের পুরোটা সময় হাঁস পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।

ম‚লত হাঁসের ডিম বিক্রি করেই সংসারের খরচ মেটায় ওইসব পরিবার। তাছাড়া ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচের যোগান দেওয়া হয়। সিংড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের অনেক পরিবার নিজ উদ্যোগে উন্মুক্ত বিলে হাঁস পালন করে আসছেন। এর মধ্যে ডাহিয়া, আয়েশ, বিয়াশ, বলিয়াবাড়ী, কালিনগর, কৃষ্ণনগর, আনন্দনগর, সাতপুকুরিয়া, বড়িয়া, শহরবাড়ি, কয়রাবাড়ি, নিংগইন, হিজলী ও কান্তনগর গ্রামের অনেক পরিবার হাঁস পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।

খামারিরা জানায়, সকাল থেকে হাঁসগুলো বিলে ছেড়ে দেওয়া হয়। সারাদিন কখনো পানিতে কখনো ডাঙ্গায় চড়তে থাকে। দিনভর হাঁস দেখাশোনা করার জন্য রাখাল রাখা হয়। সন্ধ্যা নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিলের এক পাশে জাল দিয়ে ঘেরা এক জায়গায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে হাঁসগুলোর রাতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সকাল হলে আবার বিলে নেওয়া হয়। বিলে চড়ানো হচ্ছে বলে তেমন কোনো খরচ নেই। কেবলমাত্র একদিন বয়সের বাচ্চা কেনা, ওষুধপত্র, লোকবলের খরচ। কাজেই তাদের এই খামার অত্যন্ত লাভজনক। কোনো সহযোগিতা ছাড়াই এসব পরিবার স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে অনেকেই হাঁস পালনে আগ্রহী হয়ে উঠবে বলেও জানান তারা।

উপজেলার আনন্দনগর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম। দিনমজুরি করে চালাতেন ছয়জনের সংসার। সেই অবস্থায় বছর খানেক আগে প্রতিবেশীর কাছ থেকে ধার করা টাকায় শুরু করেন হাঁস পালন। সেই হাঁসে ভর করে তার সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। বছরজুড়ে হাঁস পালন করেন তিনি। এখন তার খামারে ক্যাম্বেল ও জিংডিং জাতের ৫৮২টি হাঁস রয়েছে। ডিম দিচ্ছে ৪৮০টি হাঁস। বছরে খরচ বাদে লাভ হচ্ছে তিন-চার লাখ টাকা।

কালিনগর গ্রামের মন্টু আলী বলেন, সমিতি থেকে লোন নিয়ে হাঁস পালন করছি। তিনি হাঁস পালন করে সংসার চালান। গত বছর কলেরা রোগে ২০০টির মতো হাঁস মরে যাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন। বর্তমানে নতুন ৭০০টি হাঁস কিনে পালন শুরু করেছেন। ডিম বিক্রি করে লোকসান পুষিয়ে নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

নিংগইন এলাকার খামারি সোহাগ আলী জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে হাঁস পালন করছি। হাঁস পালনে লাভ বেশি হওয়ায় আমরা স্বাবলম্বী হয়েছি। কয়রাবাড়ি গ্রামের খামারি রমজান আলী বলেন, ৩০০টি হাঁস রয়েছে তার খামারে, ডিম দিচ্ছে ২৩০-২৪০টি। সেখান থেকেই চলে পুরো সংসার। তিনি আরও বলেন, হাঁস পালনে খরচ কম, লাভ বেশি। সরকার আমাদের সহযোগিতা করলে খামার বড় করতে পারবো।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কে এম ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, সাধারণত একদিনের বাচ্চা থেকেই এসব হাঁস পালন শুরু করে থাকেন খামারিরা। ছয় মাস পর এসব হাঁস ডিম দিতে শুরু করে। প্রতিটি হাঁস বছরে ২০০ থেকে ৩০০টি ডিম দেয়। উন্মুক্ত জলাশয়ে বাড়তি খাবার কম লাগে। তাছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমও মেলে বেশি। তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের এসব মানুষ কম পুঁজি বিনিয়োগ করে লাভবান হচ্ছেন। ফলে বেকারত্ব দ‚র হচ্ছে। মিলছে আমিষের চাহিদাও। হাঁস পালনে খামারিদের সরকারিভাবে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD