মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন জুলাই ২০২৩

Spread the love

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) ,৩১ জুলাই, ২০২৩

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী জুলাই, ২০২৩ সময়ে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড অব্যাহত রয়েছে। দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন, তাদের পরিচয়ে অপহরণের মতো ঘটনা বন্ধ হয় নাই। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, গায়েবি মামলা ও পুলিশি বলপ্রয়োগের ঘটনা নিদারুনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে । ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং মতামত প্রকাশের সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মতো ঘটনা অব্যহত রয়েছে। কারা-হেফাজতে মৃত্যু, সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে যা উদ্বেগজনক, সীমান্তে হতাহতের মতো ঘটনা বন্ধ হয়নি। ধর্ষণসহ নারী ও শিশুদের উপর সহিংসতার ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটেই চলেছে। অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে। অপরদিকে গণপিটুনির মত আইন হাতে তুলে নেয়ার ঘটনা অনেকাংশে বেড়েছে। মানবাধিকার লংঘনের এই ঘটনাগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এসব ঘটনা রোধে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। একই সাথে প্রত্যেকটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তসহ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবী জানাচ্ছে।

 আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কথিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড/ গোলাগুলি

 দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী জুলাই ২০২৩ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন ২ (দুই)জন তাছাড়া ১ (এক)জন শিশুও একজন নারী গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলের আস্তানায় সেনাবাহিনীর রাঙামাটি রিজিয়ন কর্তৃক একটি বিশেষ অভিযানে  গোলাগুলির পর ১ (এক)জন ইউপিডিএফের সশস্ত্র সদস্য সেনাবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেন। অপরদিকে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার আলুটিলা জার্মপ্লাজম এলাকা থেকে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফের সাবেক ২ (দুই) সদস্যের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

১০ জুলাই কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-১৪ এর বিশেষ অভিযানে ১৭ নম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নূর হোসেন মাঝি (৪০) নামের কথিত সন্দেহভাজন সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন আরসার অন্যতম শীর্ষ নেতা নিহত হন। অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুন অর রশীদ বলেন, নিহত নূর হোসেন মাঝি (৪০) সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন আরসার অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন। ১৭ নম্বর ক্যাম্পে পুলিশের একটি দল অপরাধীদের মুখোমুখি হলে সশস্ত্রীদের সাথে দুই ঘণ্টা ধরে গোলাগুলি চলতে থাকে। সকাল ৭টার দিকে দুর্বৃত্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থল থেকে নূর হোসেন মাঝির লাশ উদ্ধার করা হয়।

১৯ জুলাই দিবাগত রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে আসামিকে গ্রেফতার করাকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে আইয়ুব নূর (৬০) নিহত হন ও অপর একজন নারী ও শিশু গুলিবিদ্ধ হন। পুলিশের দাবি গ্রেফতারকৃত আসামিকে ছিনিয়ে নিতে তাদের ওপর হামলা চালালে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়। পুলিশ আরো জানায়, নিহত আইয়ুব একজন মাদক ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক মামলাসহ পাঁচটি মামলা রয়েছে। তবে এলাকাবাসী জানান, পুলিশের গুলিতে আইয়ুব মারা গেছেন, তিনি মাদক ব্যবসায়ী নন এবং তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই। মধ্যরাতে বাড়িতে ঢুকে নারীদের মারধর করে পুলিশ গুলিবর্ষণ করেছে।

২৬ জুলাই ভোরে রাঙামাটি জেলার শুভলং ইউনিয়নের শুকুরছড়ি এলাকায় ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলের আস্তানায় সেনাবাহিনীর রাঙামাটি রিজিয়ন কর্তৃক একটি বিশেষ অভিযান চলাকালে গুলিবিনিময় হয়। দলের সবাই পালিয়ে যেতে পারলেও দলটির একজন সশস্ত্র সদস্য তরিত চাকমা (৩৫) একটি এইচকে-৩৩ (জার্মান) অ্যাসল্ট রাইফেল, একটি ম্যাগাজিন এবং ২২ রাউন্ড অ্যামুনিশনসহ সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

 পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়া 

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী জুলাই মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তিনজন বিরোধী দলীয় কর্মীকে তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে, অপর একটি ঘটনায় জানা যায় একই পরিবারের শিশুসহ তিন সদস্যকে তুলে নিয়ে যাওয়ার একমাস পর মামলা দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

১৮ জুলাই দিবাগত রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে বগুড়ার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক মাজেদুর রহমান জুয়েলকে নিজ নিজ বাসা থেকে তুলে নেয়া হয়। স্বজনেরা জানান, আটক করে কোথায় রাখা হয়েছে তা জানানো হয়নি। মামলা হলে আইন অনুযায়ী অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা আইনসম্মত। তবে আটকের পরও স্বীকার না করা ভয়াবহ। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে পরিবার শঙ্কায় রয়েছে।

১৯ জুলাই ১১টার দিকে উত্তরার বিনস অ্যান্ড অ্যারোমা থেকে সাদা পোশাকধারী পুলিশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সদস্য কবির আহমেদ ভূঁইয়াকে তুলে নিয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী স্বীকার করছিল না বা তার কোনো হদিস দিচ্ছিল না। পরবর্তীতে হাত ও চোখ বাঁধা মুমূর্ষু অবস্থায় রাজধানীর মাতুয়াইল এলাকায় তাঁকে পাওয়া যায়।

৩০ জুলাই রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর শান্তিনগর মোড় থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের সদস্যসচিব মুন্সী বদরুল আলম সবুজকে একটি মাইক্রোবাসে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যায়।

৩০ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ময়মনসিংহের নয়নমনি বাজারের সামনে রিকশায় ইকরামুল হক মিলন (২৮), ফারিয়া আফরিন আনিকা (২১) ও তাদের শিশুসন্তানকে নিয়ে যাওয়ার সময় একটি টয়োটা হাইয়েস গাড়ি তাদের পথরোধ করে এবং সাদা পোশাকে দুই পুরুষ ও এক নারী তাঁদের জোর করে তুলে নেয়। গাড়িটিতে পুলিশের স্টিকার লাগানো ছিল। নিখোঁজ তিন জনের সন্ধান পেতে স্বজনেরা সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করছিল। পরে সাধারণ ডায়েরি করার চেষ্টা করলেও থানা সেটি নেয়নি। ৩০ মে বিকেলে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার-আল-ইসলামের সদস্য হওয়ার অভিযোগে ঢাকার সবুজবাগ থানার মামলা করে গ্রেফতার দেখিয়ে ৩১ মে আদালতে তিন জনকে হাজির করা হলে আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন।

এমএসএফ মনে করে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া ও অপহরণের অপতৎপরতাগুলো গুরুতর অপরাধ ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।  অপরাধ দমনে আইনসিদ্ধ পথ অবলম্বন না করে  আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ হেন আচরণ নাগরিক জীবনে চরম উৎকন্ঠা সৃষ্টি করেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি ক্রমাগত আস্থাহীনতা বেড়ে চলেছে যা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে নির্যাতন ও অপতৎপরতার অভিযোগ

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী, মে ২০২৩ মাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি নির্যাতন ও নানাবিধ অপতৎপরতার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

৯ ও ১০ জুলাই রাতে নাটোরের লালপুর থানা পুলিশ অটোরিকশা ছিনতাই মামলায় সোহাগ হোসেন, শামীম মোল্লা, সালাম ও রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। চার অভিযুক্তদের মধ্যে রাকিবুল ইসলাম রাকিব বাদে তিনজনই আদালতের কাছে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ করেন।

মো. সোহাগ হোসেনকে গত ৯ জুলাই রাতে পুলিশ  গ্রেফতার করে লালপুর থানায় নিয়ে যায়। সেখানে অফিসার ইনচার্জ মো. উজ্জ্বল হোসেন তাকে চোখ বেঁধে মারধর শুরু করেন। পায়ের তালুতে লাঠি দিয়ে মারেন ও অণ্ডকোষে লাথি দেন।

অভিযুক্ত সালামকে পুলিশ ৯ জুলাই রাতে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তাঁকে বিভিন্ন জায়গাতে ঘোরানোর পর ভোর ৫টার দিকে থানায় নিয়ে আসে। পর দিন ১০ জুলাই ওসি থানায় ঢুকেই সালামের গালে থাপ্পড় মারতে থাকেন। থানার উপর তলায় নিয়ে এসআই জাহিদ হাসান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ওমর ফারুক শিমুল তার কনিষ্ঠ আঙ্গুলের উপরে টেবিলের পায়া রেখে চাপ দিতে থাকে। এতে সেলিমের কনিষ্ঠ আঙ্গুলের উপরে, মধ্যমা আঙ্গুল ও অনামিকা আঙ্গুলে মারাত্মক ক্ষত হয়। তারপর সালামের বাম পায়ের হাঁটুর নিচে থেকে পায়ের টাখনুর উপর পর্যন্ত লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। ১২ জুলাই দুপুরে এসআই ওমর ফারুক শিমুল সেলিমের পাছায় স্টিলের জিআই পাইপ দিয়ে পেটায়। পুলিশ তাঁকে হুমকি দেয় যদি ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট নির্যাতনের কথা বলে তাহলে বিভিন্ন থানায় তার নামে মামলা দিবে এবং জামিন হলেই জেলগেট থেকে তুলে নিয়ে যাবে।

মো. শামীম মোল্লাকে পুলিশ ১০ জুলাই রাত সাড়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে। তারপর থানায় নিয়ে আসার সময় রাস্তায় মারতে মারতে নিয়ে আসে। ১১ জুলাই সকালে থানার উপর তলায় নিয়ে গিয়ে একজন কনস্টেবল, এসআই জাহিদ হাসান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা ওমর ফারুক শিমুল চোখ বেঁধে টেবিলের নিচে তার মাথা রেখে পাছায় মোটা বাঁশের লাঠি দিয়ে প্রচণ্ড রকমের মারপিট করেন। তারপর দুই পা বেঁধে পায়ের তালুতে পেটায় ও বুকে বারবার লাথি দিতে থাকে।

২৪ জুলাই সন্ধ্যায় রাজধারীর পল্লবী থানার উপপরিদর্শক জহির তার কয়েকজন সোর্স ও এক নারী কনস্টেবলসহ লাভলী বেগমের বাসায় মাদক আছে বলে অভিযান চালায়। মাদক দ্রব্যাদী না পেয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে রাজি না হলে উপপরিদর্শক জহির লাভলী বেগমকে ধরে নিয়ে যেতে চায়। এ সময় মেয়ে বৈশাখী আক্তার (১৬) এসে বাধা দেয়। এরপরেও তারা লাভলী বেগমকে নিয়ে যেতে চায়। এ পর্যায়ে লাভলী বেগমকে পাশের বাসায় আটকে রাখে। এরপরই মেয়ে বৈশাখী গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। স্বজনরা অভিযোগ, বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের উদ্ধার করা মাদক বিক্রি করতে অস্বীকার করায় রাতে তাদের মারধর ও নির্যাতন করেন। বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয় বৈশাখীর মা ও বোনকে। পুলিশের উপস্থিতিতে বৈশাখী আক্তারের আত্মহত্যা করা কোনভাবেই গ্রহণীয় নয়। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর নিরপেক্ষভাবে তদন্ত হওয়া আবশ্যক।

এমএসএফ মনে করে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে নির্যাতন ও অপতৎপরতা যে সমস্ত অভিযোগ পত্রিকাগুলোতে আসছে তা অন্যায়, ক্ষমতার অপব্যবহার, মানবাধিকারের চরম লংঘন ও ন্যায়বিচারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনেরই নামান্তর, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং যা নাগরিক জীবনে চরম উৎকন্ঠা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি ক্রমাগত অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতার জন্ম দিচ্ছে। যদিও কিছু ঘটনার বিভাগীয় শাস্তির কথা গণমাধ্যমে দেখা যায়। কিন্তু তার বাস্তবায়ন নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে।

কারা হেফাজতে মৃত্যু

এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী জুলাই ২০২৩ মাসে কারা হেফাজতে মোট ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ মাসে ৫ জন হাজতি ও ৫ জন কয়েদির মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ৬ জুলাই মধ্যরাতে নীলফামারী জেলা কারাগারে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে হাজতি দুলাল হোসেন আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। এসময় আহত হাজতিকে কারা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ হেফাজতে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেও ব্লেড দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৪ জন হাজতি ও ৩ জন কয়েদি, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ২ জন কয়েদি, সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে ১জন কয়েদি ও লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগারে ১জন হাজতির  মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারা অভ্যন্তর থেকে আমিরুল ইসলাম ওরফে রাশেদ উদ্দীন নামের এক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কারাগারের একটি টয়লেটে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। অপরদিকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এক কয়েদি গোলাম মোস্তফা (৩১)’র মৃত্যুর প্রায় এক বছর পর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে জানা যায়, তাঁকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়েছিল। এমএসএফ মনে করে, কারা অভ্যন্তরে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি, হেফাজতে সকল মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে তদন্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।

৮ জুলাই গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারা অভ্যন্তর থেকে আমিরুল ইসলাম ওরফে রাশেদউদ্দীন নামের এক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কারাগারের একটি টয়লেটে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর স্বজনদের সন্দেহ, তাঁকে কারাগারের ভেতরে হত্যা করা হয়েছে। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মাজহারুল হক বলেন, আমিরুল ইসলামের গলায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। যেহেতু বন্দী এবং কারা কর্তৃপক্ষ বলছে আত্মহত্যা করেছে, তাই নিহতের গলার চামড়া এবং ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেগুলোর প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ বলা সম্ভব হবে।

গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এক কয়েদি গোলাম মোস্তফা (৩১)’র মৃত্যুর প্রায় এক বছর পর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে জানা যায়, তাঁকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়েছিল। কারা কর্তৃপক্ষ সে সময় আত্মহত্যা বলে গাজীপুর মহানগরের সদর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করে। সুরতহাল প্রদানকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিবেদনে লিখেছিলেন, আত্মহত্যার জন্য যেসব নমুনা থাকার কথা, তা নেই। এ ছাড়া নিহত ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম আশরাফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন,  এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এখন মামলার তদন্তের কাজ চলছে।

রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহত, মামলা ও সমাবেশে যোগদানে বাধা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে সরকার দলীয় ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহিংসতা, হানাহানি ও হতাহতের ঘটনায় নাগরিক জীবনে উৎকন্ঠা বেড়েছে।

বিরোধী দল বিএনপি যেহেতু মনে করে– বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভবপর নহে; তাই দলটির সমাবেশে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, অর্থাৎ তাদের ভাষায়, তাঁরা এক দফার আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দও তাদের সমাবেশ হতে এক দফার ঘোষণা দিয়েছেন এবং দাবি করছেন আগামী নির্বাচন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই হতে হবে। বিরোধী দলীয় কর্মকান্ডকে চলমান রাখতে দেশব্যাপি বিভাগীয় ও জেলাগুলোতে পদযাত্রার ও পরবর্তীতে ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে। অপরদিকে আওয়ামী লীগও প্রতিহতের কর্মসূচি দিয়েছে। এটা কেবল অগণতান্ত্রিক নয় বরং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।

ক্ষমতাসীন দলের সংঘাত-হিংস্রতা নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্বিকার ভূমিকার বিপরীতে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণে অতি উৎসাহি অপতৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। এতে করে সুষ্ঠূ রাজনীতি করার অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে এবং ক্রমাগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা কমছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী জুলাই ২০২৩ মাসে রাজনৈতিক, নির্বাচনী সহিংসতা ও সভা সমাবেশে বাধার ৪৬ টি ঘটনায় বিএনপির বিরুদ্ধে ৪১টি রাজনৈতিক মামলা হয়েছে । এ সমস্ত মামলায় ১২৭০২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে যাদের মধ্যে ২১৭৪ জন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। ১১৯ জনের রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ মামলাগুলোতে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১০৫২৮ জনকে।

এ মাসে ৪১টি রাজনৈতিক মামলার মধ্যে ৩৭টি বিএনপির বিরুদ্ধে, ২টি জামায়েত ইসলামী বাংলদেশের বিরুদ্ধে, ২টি মামলা করা হয়েছে বিএনপি ও জামায়েত ইসলামী বাংলদেশ যুক্তভাবে। মামলাগুলোর মধ্যে পুলিশ ৩৩ টি, আওয়ামী লীগ ৫টি, আইনজীবী ২টি এবং সরকারি বাঙলা কলেজের অফিস সহকারী করেছেন বিএনপির বিরুদ্ধে একটি মামলা।

জুলাই মাসে ৪১টি রাজনৈতিক মামলায় মোট ১৩৬৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১১০৭ জন বিএনপি, ৯১ জন জামায়েত ইসলামী কর্মী, ৩ জন যুবক যারা ঢাকা যাচ্ছিলেন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিদেশ যাবে বলে, এবং ১৬৩ জনের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।

অপরদিকে বিএনপির ১৩ জন কর্মীকে ভবঘুরে হিসেবে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিএনপির দাবি, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৫ ধারায় ভবঘুরে, অভ্যাসগত ইত্যাদি অপরাধে জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারবে পুলিশ। কিন্তু পুলিশ যাঁদের গ্রেফতার করেছে, তাঁদের প্রত্যেকের নাম, ঠিকানা রয়েছে। রাজনৈতিক কর্মীদের ভবঘুরে হিসেবে গ্রেফতার এক নুতন আলামত।

এ মাসে সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৭৬৯ জন। জুলাই মাসে গণমাধ্যমে সূত্র অনুযায়ী নির্বাচনী, রাজনৈতিক সহিংসতা ও সভা সমাবেশে বাধার ঘটনায় মোট ৭৬৫ জন আহত ও ৪ জন নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১০৯ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১ জন পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে কৃষক দলের কর্মী এবং ৩ জন যুবলীগের কর্মী ।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার/অপব্যবহার

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রবলভাবে সমালোচিত হওয়া সত্বেও এ আইনে মামলার নামে হয়রানি অব্যাহত রয়েছে ও এর যথেচ্ছ অপব্যবহারের মাধ্যমে মানুষকে তাঁর মতামত প্রকাশে বাঁধাগ্রস্ত করা ও ভয় দেখানোর বিষয়টি ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি করে চলেছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী জুলাই ২০২৩ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৫ টি মামলায় ৫ জন গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১ জন বিএনপি কর্মী এবং ১ জন সাধারণ যুবক রয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তির অভিযোগ রয়েছে । অপর ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রতারণার অভিযোগে। এ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাভার থানায় দুইজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। জুন মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৭টি মামলায় ২ জন গ্রেফতার হয়েছেন।

১৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে নোয়াখালীতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ইব্রাহিম খলিল (৪৫) কে গ্রেফতার করা হয়। ২১ জুলাই ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটূক্তি করার অভিযোগে আমানুল্লাহ আমান (২৮) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ ছাড়া ১০ জুলাই বেসরকারি টেলিভিশন আরটিভির স্টাফ রিপোর্টার অধরা ইয়াসমিন জানতে পারেন তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৩ মে চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়েছে। সাংবাদিক অধরা ইয়াসমিন জানান, দু’মাস আগে রাজারবাগ দরবার শরিফের পীরদিল্লুর রহমান ও তাঁর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মামলাবাজি, সারা দেশে অসংখ্য মানুষকে হয়রানি, জমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেন। রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর দিল্লুর রহমানের অন্যতম সহযোগী শাকেরুল কবির বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ২৪,২৫ ও ২৯ ধারায় মামলাটি করেন।

অপরদিকে সরকারবিরোধী প্রচারণা ও কটূক্তির অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা পৃথক দুই মামলায় মাসের পর মাস জামিন না দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই মামলায় কারাবন্দী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার জামিন প্রশ্নে আবেদন শুনানি আপিল বিভাগ চার মাসের জন্য মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করেছেন। জামিন পাওয়া তার অধিকার কিন্তু তাকে জামিন না দিয়ে আটক রাখা  চরম অমানবিক এবং আইন ও নীতি বিরুদ্ধ, যা নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব ও বিচারবিভাগের স্বাধীনতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের লংঘন

স্বাধীন সাংবাদিকতা ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় এ মাসে অন্তত ১২ জন সাংবাদিক নানাভাবে হুমকি, নিপীড়ন, হয়রানি, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যা মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করছে। শারীরিকভাবে আক্রমণ, হয়রানি, হুমকি ও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে তা শুধুমাত্র অনাকাঙ্খিতই নয় বরং তার মাধ্যমে সৎ সাংবাদিকতার কন্ঠরোধ করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ ছাড়া এ মাসে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে মানবাধিকার লংঘনের চিত্র উদ্বেগজনক।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী জুলাই মাসে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় অন্তত ১২ জন সাংবাদিক নানাভাবে হুমকি, নিপীড়ন, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ।

এ মাসে প্রকাশিত সংবাদের জন্য ১ জন মহিলা সাংবাদিকের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ও আর ১ জন সাংবাদিককে গায়েবি মামলার আসামি করা হয়েছে, ২ জন সাংবাদিক হয়রানি, ১ জন সাংবাদিককে হত্যার হুমকি,১ জন সাংবাদিককে আক্রমন এবং ৬ জন সাংবাদিক স্বার্থান্বেসী মহলের দ্বারা নানাভাবে আক্রান্তের শিকার হয়েছেন।

এছাড়াও ১৮ জুলাই বিএনপির পূর্বঘোষিত পদযাত্রা ও ক্ষমতাসীন দলের শান্তি সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহ করার সময় সংঘর্ষের ঘটনায় ফেনী, কিশোরগঞ্জ, পিরোজপুর এবং রাজবাড়িতে ১৪ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন ।

১ জুলাই সন্ধ্যায় যশোরের শার্শার উপজেলার নাভারন মোড়ে যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক গ্রামের কণ্ঠ পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক আসাদুর রহমান আসাদকে নাভারন হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট রফিকুল ইসলাম পিটিয়ে জখম করেছেন।

১৫ জুলাই কুষ্টিয়া পৌর এলাকার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের জুগিয়া এলাকায় সন্ধ্যায় দৈনিক দিনের শেষে পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি এবং জেলা প্রেস ক্লাবের ক্রীড়া ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সাংবাদিক নিজাম উদ্দিনের ওপর হামলা করে একদল মাদক কারবারি। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিজামের মাথায় ও হাতে গুরুতর জখম করা হয়েছে।

২৩ জুলাই পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দৈনিক নয়া শতাব্দীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম-আহ্বায়ক সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল মামুনকে পিটিয়ে আহত করেছে। আহত সাংবাদিককে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

২৭ জুলাই দৈনিক ফুলকি পত্রিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করে একটি বানোয়াট, ভিত্তিহীন, ষড়যন্ত্রমূলক সংবাদ প্রকাশ করার জেরে দৈনিক ফুলকি পত্রিকার সম্পাদক নাজমুস সাকিব ও আমাদের নতুন সময় পত্রিকার সাভার প্রতিনিধি মো. ইমদাদুল হকের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।

এমএসএফ মনে করে, যেভাবে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে তা শুধুমাত্র অনাকাঙ্খিতই নয় বরং এভাবে বাঁধার সৃষ্টি করে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার ও বাকস্বাধীনতাকে সংকুচিত করা হচ্ছে।

অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার

জুলাই, ২০২৩ মাসের অত্যন্ত উদ্বেগ-আতঙ্কের বিষয় অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী জুলাই, ২০২৩ সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১ জন কিশোর, ১০ জন নারী, ২০ জন যুবক ও ৩ জন বৃদ্ধসহ মোট ৩৪ জনের অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে যা ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত এবং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ, গত মাসে এর সংখ্যা ছিল ২৭ জন। সুতরাং এটা বলার অপেক্ষার রাখে না যে, দিন দিন এর অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধাররের ঘটনা বেড়েই চলেছে। বেশীর ভাগ লাশের হাত-পা বাঁধা, অপর দিকে দেখা গেছে বেশীর ভাগ লাশের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।  দুই-একটি ঘটনা ছাড়া সব কয়টি লাশের পরিচয় অজ্ঞাতই থেকে যাচ্ছে। যা অত্যন্ত ভয়ংকর, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ। কাজেই এসব ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। সরকারকেই এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে দৃশ্যত সম্পুর্ণ নির্বিকার। এসব অজ্ঞাতনামা লাশ বেশীর ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, ব্রীজের নীচে, ও পরিত্যক্ত এলাকায়, বিল বা ফসলী ক্ষেতে গলায় ওড়না পেচানো, আঘাতের চিহ্ন সম্বলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ১৫ বছরের একজন কিশোর, নারীদের বয়স ২৫ থেকে ৪৫ বৎসরের মধ্যে, যুবকদের সকলের বয়স ২২ থেকে ৪৫ বৎসরের মধ্যে ও চার জন বৃদ্ধার বয়স ৫৫ এর উর্ধ্বে।

এমএসএফ মনে করে, শুধুমাত্র অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যত ক্ষমতাবানই হোক, সব অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের জন্য জরুরি কিন্তু পুলিশের সে বিষয়ে তেমন আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

সীমান্তে হত্যা ও পরিস্থিতি

সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ করতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে সীমান্তে হতাহত ও নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী এ মাসে সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক গুলিতে ১ জন নিহত, সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনায় ২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ও ২জন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়া  জাহাঙ্গীর আলম ও হৃদয় শেখ নামের দুই যুবককে ‍ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক গণুপিটুনিসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী কর্তৃক আরো দুইদফা  নির্যাতনের পর  বিএসএফ সদস্যরা মৌলভীবাজারের জুড়ীর লাঠিটিলা সীমান্তে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ফেলে যায়। এরা সকলেই বাংলাদেশী নাগরিক।

৭ জুলাই সন্ধ্যায় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর সীমান্তের ধরলা নদী থেকে এক বাংলাদেশির লাশ উদ্ধার করেছে বিজিবি ও পুলিশ। সীমান্তের ওপারে হত্যার পর কলাগাছের ভেলায় লাশ বাংলাদেশের দিকে ভাসিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান স্থানীয়রা। তবে কারা তাঁকে হত্যা করেছে, তা জানা যায়নি। নিহত রফিকুল ইসলাম (৩০) ওরফে টেরের শরীরে গুলি ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ বলেন, এই ঘটনা সম্পর্কে বিএসএফের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা গুলি চালিয়ে কাউকে হত্যা করেনি বলে দাবি করেছে।

২১ জুলাই জাহাঙ্গীর আলম ও হৃদয় শেখ খাগড়াছড়ির রামগড় এলাকা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে ট্রেনে আগরতলা যাওয়ার পথে টিকিট না থাকায় কাঞ্চন কর্নার নামক স্টেশনে নামিয়ে বাংলাদেশি জেনে গণপিটুনি দেওয়া হয়। তারপর স্থানীয় থানায় হস্তান্তর করা হয়, সেখানে দুই রাত রেখে আরেক দফা পিটুনির পর গতকাল রোববার বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে ভারতীয় পুলিশ। এরপর বিএসএফ তাঁদের ক্যাম্পে আটকে রেখে তৃতীয় দফা পিটুনির পর ২৩ জুলাই ভোরে মৌলভীবাজারের জুড়ীর লাঠিটিলা সীমান্তের ১৮০০ থেকে ১৮০১ নম্বর পিলার দাগ নালাপুঞ্জি নামক গেট দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে ফেলে যায়। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।

এমএসএফ মনে করে, সরকার সীমান্ত হতাহতের প্রতিবাদ ও প্রতিকারে যে ব্যর্থতা দেখাচ্ছে তা জনমনে ক্রমাগত প্রশ্নের সৃষ্টি করছে। অপরদিকে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সীমানা আইনের লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। সীমান্তে এ ধরনের ঘটনা কখনোই কাম্য হতে পারে না।

সংখ্যালঘু নির্যাতন

গণমাধ্যমসূত্রে পাওয়া ও এমএসএফ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ মাসে বিভিন্ন পর্যায়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ৪ টি ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ৪ টি ঘটনা একটিতে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং শ্রাবস্তি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ধর্মজ্যোতি ভিক্ষুর ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। পরদিন সকালে গুরুতর আহত ধর্মজ্যোতিকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অপর একটি ঘটনায় শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা অবহেলাজনিত কারণে হরিজন সম্প্রদায়ের পরিবারবর্গ মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদিকে লালমনিরহাট ও শরিয়তপরে দুর্বৃত্তরা প্রতিমা ভাংচর করে মন্দিরের স্বর্ণালঙ্কার ও দানবাক্স থেকে নগদ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে।

২ জুলাই গভীর রাতে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের মরিচ্যা শ্রাবস্তি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ধর্মজ্যোতি ভিক্ষুর ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। পরদিন সকালে বৌদ্ধ বিহারের একটি কক্ষ থেকে ধর্মজ্যোতিকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। গুরুতর আহত ধর্মজ্যোতি ৫ জুলাই রাত ৩টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

শায়েস্তাগঞ্জে হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষেরা তাদের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে। পৌরসভায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় কাজ করেন ৪২ জন। শায়েস্তাগঞ্জ নিজগাঁও ৩নং ওয়ার্ড রেল কলোনিতে তাদের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অতিকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করলেও শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা হয়েছে প্রায় ২৫ বছর কিন্তু তারা পৌরসভার কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে তাদের কোন আবাসন ব্যবস্থাও নেই।

১২ জুলাই লালমনিরহাট সদর উপজেলার একটি মন্দিরে লোহার গ্রিল কেটে দুর্বৃত্তরা ভেতরে প্রবেশ করে। মন্দির ভাঙচুর ও কালী প্রতিমার স্বর্ণালঙ্কার ও দানবাক্স থেকে নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।

১৭ জুলাই শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে’র পারিবারিক মন্দিরে ঢুকে প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এসময় পূর্জা–অর্চনায় ব্যবহৃত মন্দিরের কিছু তৈজসপত্রও নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ভেদরগঞ্জ থানার ওসি ওবায়দুল হক বলেন, প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়নি।

ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমন, নির্যাতন, হয়রানি ও অমানবিক অচরণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে আজ অবধি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হিন্দু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা বিধানে সরকারের ব্যর্থতাতেই দুর্বৃত্তরা একের পর এক সাম্প্রদায়িক তান্ডব চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। 

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা

নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতারোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভুমিকা লক্ষ্যণীয় নয়। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী জুলাই ২০২৩ মাসে দেশে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা যেমন: ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, হত্যা, আত্মহত্যা ও পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা বিগত মাসগুলোর মতই অব্যাহত রয়েছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী জুলাই মাসে ৩২৪ টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ৬৪টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ২১টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৭টি। এর মধ্যে ৯ জন প্রতিবন্ধি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গণমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী গত মাসে ৩১১টি নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

উল্লেখ্য যে ধর্ষণের শিকার ৬৪ জনের মধ্যে ১৩ জন শিশু, ২৬ জন কিশোরী রয়েছে, অপরদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১জন শিশু ও ৫ জন কিশোরী এবং ধর্ষণ ও হত্যার শিকার ২ জন শিশু, ৪ জন কিশোরী ও ১ জন নারী। ধর্ষণের চেষ্টা ২১টি, যৌন হয়রানি ২২টি ও শারীরিক নির্যাতনের ৩১টি ঘটনা ঘটেছে। এসময়ে ১জন শিশু, ১১ জন কিশোরী ও ৪১জন নারীসহ মোট ৫৩ জন আত্মহত্যা করেছেন।

অ্যাসিড নিক্ষেপে আক্রান্ত হয়েছেন ১ জন শিশু ও ১ জন নারী। এ মাসে ২জন শিশু ও ২জন কিশোরী অপহরণের শিকার হয়েছেন। অপরদিকে ১জন শিশু ও ৪জন কিশোরী নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়াও জুলাই মাসে ৯ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ মোট ৮২ জন শিশু, কিশোরী ও নারী হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। যার মধ্যে ২২ জন শিশু ও কিশোরী রয়েছেন। গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিশোধ, পারিবারিক বিরোধ, যৌতুক, প্রেমঘটিত ইত্যাদি কারণে এ হত্যাকান্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে। এ মাসে ধর্ষণের ২টি ঘটনা সমাজপতিরা আপোস করেছেন যা প্রচলিত আইনকে অবজ্ঞা করে বেআইনি ভাবে সালিশে মীমাংসার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

এ মাসে ৮জন মৃত ও ২জন জীবিত মোট ১০জন নবজাতক শিশুকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে যা অমানবিক ও নিন্দনীয়। এ সমস্ত শিশুদেরকে কি কারণে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা নিরূপনের চেষ্টা করছে না।

গণপিটুনি

গণমাধ্যমসূত্রে পাওয়া এমএসএফ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী জুলাই, ২০২৩ মাসের উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে গণপিটুনিতে হতাহতের ঘটনা। প্রচলিত আইন অবজ্ঞা করে গণপিটুনির ঘটনাগুলোকে বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড হিসেবেই গণ্য করা যায়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ মাসে অন্তত ১৮টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ১৩জন নিহত ও ৬জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। সন্দেহজনক চুরি বা ডাকাতির বা পূর্ব শত্রুতার জেরে সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছে। এমএসএফ মনে করে, আইন অবজ্ঞা করে গণপিটুনি দিয়ে মানুষ হত্যা করা অবশ্যই ফৌজদারী অপরাধ। গণপিটুনির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব।

১০ জুলাই কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নে গোলচক্কর এলাকা অটোরিকশার ব্যাটারি চুরির অপবাদে মো. আরমান (২৩) নামের অটোরিকশা চালক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

১০ জুলাই কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার ঢুলিপাড়া চৌমুহনী এলাকায় মোবাইল চুরির সন্দেহে সাদ্দাম হোসেন (২৭) নামের তরুণকে স্থানীয়রা গণপিটুনি দিলে পরদিন হাসপাতালে তিনি মারা যান।

৩ জুলাই সন্ধ্যায় নড়াইলের লোহাগড়া নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের রায়গ্রামে কথাকাটাকাটি সিরাজুল ইসলাম (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে ৮–১০ জন লোক রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। স্থানীয় লোকজন তাকে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

১৭ জুলাই কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টৈটং ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড় গুদিকাটা পাহাড়ি এলাকায় দাওয়াত দিয়ে ডেকে নিয়ে আবদুল মালেক মাঝি (৩২) নামের এক যুবককে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পেকুয়া থানার ওসি ওমর হায়দার জানান, এজাহার দিলে মামলা রুজু করা হবে।

২২ জুলাই ভোরে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নের চকখানেপুর এলাকায় ডাকাত সন্দেহে এলাকাবাসী সংঘবদ্ধ হয়ে তিনজনকে গণপিটুনি দেন। এতে রিয়াজুল ওরফে রিজু (২৮) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। অপর দুজন গুরুতর আহত হন। পুলিশ আহত কোরবান ও হাসানকে উদ্ধার করে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। 

তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, দি ডেইলি ষ্টার, নিউএইজ, কালের কন্ঠ, যুগান্তর, সংবাদ, জনকন্ঠ, আমাদের সময়, বাংলাদেশ প্রতিদিন, দৈনিক মানবজমিন, সমকাল, ইত্তেফাক, আজকের পত্রিকা, ঢাকা ট্রিবিউন, বিডি নিউজ ২৪, বাংলাদেশ জার্নাল, যায়যায় দিন, জাগো নিউজ ও অন্যান্য জাতীয় দৈনিকসমূহে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে উপরোক্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়াও প্রায় প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই স্থানীয় হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারদের মাধ্যমে ভেরিফাই করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে ১ জুলাই ২০২৩ থেকে ৩১ জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনার ভিত্তিতে এ রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD