আবুল কালাম আজাদ: নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহি অফিসারের মধ্যস্থতায় দশ বছর পর অভিমানি কোটিপতি ব্যবসায়ী ছেলে দায়িত্ব নিলেন শতবর্ষী ‘মা’-এর। একমাত্র কোটিপতি ছেলে ওষুধ ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালেব (৭০) এর বিশাল অট্টালিকাতেও ঠাঁই হয়নি, বৃদ্ধা মা আমেনা বেগম (১১০) এর । বিয়ে করেই ছেলে গুরুদাসপুর পৌরসভার চঁচকৈর স্বশুড় বাড়ি পাড়ি জমান। ব্যবসা করে অট্রালিকা গড়ে তুললেও দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে মায়ের কোনো খোঁজ রাখেননি তিনি। পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের চর এনায়েতপুর গ্রামে আমেনা বেগমের বাড়ি । সংসার জীবনে তাদের ঘড়ে এক ছেলে ও এক মেয়ে জন্ম হয়। এক সন্তান আর এক মেয়ে নিয়ে ভালোই দিন কাটছিলো আমেনার। সন্তানদের নিয়ে ভালোই দিন কাটছিলো আমেনার। তার একমাত্র মেয়ে হাজেরা বিয়ের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হঠাৎ মারা যান। রেখে যান ছয় মাস বয়সি কন্যাসন্তান রমেছা খাতুনকে। নানা-নানির কাছেই বড় হতে থাকে নাতনি রমেছা খাতুন। প্রায় ১০ বছর আগে আমেনা বেগোমের স্বামি ওসমান মোল্লা মৃত্যুর আগে ১০ শতক বাড়ির জায়গা রেজিঃ করে দেন নাতনি রমেছা খাতুনকে। আর এতেই বাধে বিপত্তি!
এদিকে স্বামীকে হারিয়ে আশ্রয় নেন, মেয়ে হাজেরা খাতুনের কাছে, সেও মারা যায়,। নিরুপায় আমেনা আশ্রয় নেন নাতনি রমেছার (৪৫) গৃহে। এদিকে নাতনিরও অভাব অনটনের সংসার হওয়ায় সেখানে ঘরের বাইরের পলিথিনে ঘেরা একটি চিলেকোঠায়। সেখানে নেই কোনো চৌকি। নেই বিছানা বা বালিশ! শুয়ে থেকে একমাত্র ছেলেকে একনজর দেখার জন্য আহাজারি করেন বৃদ্ধা ওই মা। লোক মাধ্যমে মায়ের চিৎকার ছেলের কান পর্যন্ত পৌঁছালেও কোনো ভ্রুক্ষেপ করেননি আব্দুল মোতালেব।
নাতনিকে জমি দেওয়ায় তাঁর একমাত্র ছেলে মোতালেব অভিমান করে শতবর্ষী বৃদ্ধ ‘মা’কে ত্যাগ কর গুরুদাসপুর পৌর সদরে শ্বশুরালয়ে বাস করেন । গণ-মাধ্যম কর্মিদের মাধ্যমে এমন সংবাদ, জানার পর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবনী রায় গত সোমবার (১০জুলাই) ছেলে আব্দুল মোতালেবকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে নেন। পরে তাকে রাষ্ট্রীয় আইন, ও ধর্মীয় অনুশাসন এবং মানবিক বিষয়ে বুঝিয়ে মায়ের দায়িত্ব নেবার কথা বললে ছেলে মায়ের দায়িত্ব নিতে রাজি হন। নাতনি রমেছা বেগম বলেন, মামা নানির কাছে ফিরেছেন এতেই তিনি খুশি। মরার আগে নানি তার ছেলের মুখ দেখেছেন এখন তিনি মরে গেলেও শান্তি পাবেন।
আব্দুল মোতালেব জানান, দশ শতক জায়গা ভাগনিকে দেওয়ায় বাবার ওপর ক্ষুদ্ধ হয়ে তিনি গুরুদাসপুর পৌর এলাকার চাঁচকৈড় বিয়ে করে সেখানেই বসবাস শুরু করেন। একারনে মায়ের কোন খোঁজ খবর রাখেননি। মায়ের সাথে এমন আচরণের জন্য তিনি অনুতপ্ত। এখন থেকে মায়ের সকল দায়িত্ব তিনি পালন করবেন এবং দু একদিনের মধ্যেই পরিবারের সকল সদস্য নিয়ে মায়ের সাথে দেখা করবেন বলেও জানান তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ছাইকোলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরু। তিনি জানান,মায়ের প্রতি ছেলের এমন অমানবিক বিষয় তিনি জানতেন না। তিনি বিষয়টি পরে অবগত হয়েছেন। ইউএনও’র মধ্যাস্থতায় মায়ের কাছে ফেরা অনুষ্ঠানে তিনিসহ ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান,স্কুল শিক্ষক ইসাহাক আলী,ডাক্তার শফিকুল ইসলাম,প্রতিবেশী শহিদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।এ বিষয়টি গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) শ্রাবনী রায় বলেন, এমন অমানবিক বিষয় গণমাধ্যম থেকে জানার পর গত সোমবার ওই বৃদ্ধার ছেলে আব্দুল মোতালেব কে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে নেন। পরে তার কথামত ছেলে মায়ের দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন।