ডিমের খোসা দিয়ে সার তৈরি

Spread the love

মোঃ মুন্না হুসাইন ,তাড়াশ :

আমরা ডিমের খোসা অপ্রয়োজনীয় মনে করে ফেলে দেই। কিন্তু এই ডিমের খোসা দিয়ে জৈব সার তৈরি করতে পারলে তা হতে পারে উৎকৃষ্টমানের সার। এজন্য সার তৈরির পদ্ধতি জেনে নিতে হবে।গাছের ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টস-এর চাহিদা পূরণ করে ডিমের খোসা। ডিমের খোসার মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম। গাছের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম কার্বনেট পাওয়া যায় এই উপকরণ থেকে। এ ছাড়া ডিমের খোসায় আছে আয়রন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, ফ্লোরিন, ক্রোমিয়াম ও মলিবডেনাম। ক্যালসিয়ামের অভাবে ফুল, কাণ্ড ও শিকড়ের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর অভাবে বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিকৃতি, পাতা ও ফলে কালো দাগ দেখা দেয়। পাতার ধার ঘেঁষে হলুদ রং দেখা দেয়।

এবার জেনে নিন ডিমের খোসা দিয়ে কম্পোস্ট সার বা জৈব সার তৈরি করার পদ্ধতি,-প্রথমেই ডিমের খোসাকে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে ডিমের খোসা সংগ্রহ করতে হবে, সংগ্রহকৃত ডিমের খোসা ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে।শুকনো ডিমের খোসাগুলকে গুঁড়ো করে পাউডারে রূপান্তর করতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্লেন্ডার, মিক্সচার ব্যবহার করা যেতে পারে বা পাটায় পিশেও তৈরি করা যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে খোসাগুলো যেন ভালোভাবে মিহি হয়, দানা দানা যেন না থেকে যায়।বড় দানার চেয়ে পাউডার দ্রুত মাটির সাথে মিশতে পারে, ফলে সহজেই তার মিনারেলসগুলো গাছের গ্রহণ উপযোগী হয়ে উঠে। দানা দানা থেকে গেলে এগুলো ব্যবহারে বা গাছে প্রয়োগের পর তা মাটির সাথে মিশতে অনেক সময় লাগে, পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। তাই এমন পাউডার তৈরি করতে হবে যাতে পিঁপড়ে বা পোকামাকড় তাতে আক্রমণ করে সেগুলোকে বহন করে নিয়ে যেতে না পারে।ডিমের খোসা থেকে তৈরিকৃত সার যেকোনো ধরনের গাছে ব্যবহার করা যায়।

গাছে বা টবে ডিমের খোসার প্রয়োগের পরিমাণ জেনে নিন,-

৮ ইঞ্চি টবে ১ টেবিল চামচ

১০ ইঞ্চি টবে ১ টেবিল চামচ

১২ ইঞ্চি টবে ১.৫ টেবিল চামচ

ডিমের খোসার গুঁড়া পানি দিয়ে পাতলা করে গাছের নিচে ব্যবহার করতে পারি। এই সার টমেটো এবং বেগুনের মতো শাক-সবজি পানিজনিত রোগ এবং পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করা- এরমতো রোগের চিকিৎসা করতে কার্যকর।এছাড়া এই কম্পোস্ট গোলাপ গাছে প্রয়োগ করলে ফুল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গাছ বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা যেতে পারে। টবে মাটির মিশ্রণ প্রস্তুত করার সময় ১-৪ ডিমের খোসার চূর্ণ দিয়ে একটি গাছ লাগানো যেতে পারে।টবের মাটিতে ডিমের খোসার সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমে টবের মাটিকে নিড়ানি দিয়ে বা খুঁচিয়ে আলগা করে দিতে হবে। তারপর পরিমাণমতো ডিমের খোসার সার টবের চারিদিকে খুঁচানো মাটির উপর ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।এগ শেল বা ডিমের খোসা সিদ্ধ পানি গাছের দ্রুত বর্ধনশীলতার জন্য পৃথিবীর অন্যতম এক সার। এক লিটার পানিতে ৫টি ডিমের খোসা সিদ্ধ করুন। এই পানি উষ্ণ আবহাওয়ায় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত রাখুন। পরের দিন মিশ্রণটি মাটিতে প্রয়োগ করুন অথবা গাছে স্প্রে করতে পারেন। এতে আরও বেশি ফল পাওয়া যায়। যদি ফুলের গাছ হয় তবে এর প্রয়োগে আরও বেশি ফুল পাবেন।ডিমের খোসার সার প্রয়োগের ফলে মাটিতে পিঁপড়ে ও পোকামাকড় আক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তাই খোসার সারের সাথে নিম বা খৈলের গুঁড়ো মিশিয়ে প্রয়োগ করুন যাতে ক্ষতিকর কীট পতঙ্গের আক্রমণ থেকে রক্ষা হয়।একটি মিক্সারে দুটি ডিম, একটি কলার খোসা এবং তিন চা চামচ চা বর্জ্য মিশ্রিত করুন। এই মিশ্রণটি বেশি ফলনের জন্য উদ্ভিদে প্রয়োগ করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে এটি করতে পারেন। কোনো সার প্রয়োগের আগে মাটিকে আর্দ্র রাখা উচিত। মনে রাখবেন, সান্ধ্যকালীন সময় সার প্রয়োগের জন্য সেরা সময়।ডিমের খোসা মিহি গুঁড়ো করে গাছে প্রয়োগ করুন। এতে শামুক, পোকামাকড় এবং অন্যান্য কীটপতঙ্গ থেকে উদ্ভিদ সুরক্ষিত থাকবে।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD