গ্রাম আদালত

Spread the love

মোহাম্মদ আবদুল করিম
রোজ হাশরে ন্যায় বিচারকের স্থান হবে আল্লাহপাকের আরশের ছায়ার নীচে (আল হাদিস )। মানুষের বিচারের অধিকার ¯্রষ্টার । সামাজিক শান্তি ,শৃংখলা ও সম্প্রীতি বাজায় রাখার স্বার্থে রাষ্ট্রীয় আইনের প্রয়োগ একটি অপরিহার্য বিষয় । রাষ্ট্রীয় বিচার ব্যবস্থায় যারা বিচারকের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন তারা পরম সৌভাগ্যবান ব্যক্তি । বিচারের ক্ষেত্রে তারা পৃথিবীতে ¯্রষ্টার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন । তাই বিচারকগনের দায়িত্ব অপরিসীম । সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রেেেখ ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা বিচারকগনের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য । সে কারণে গ্রাম আদালতের বিচারকগনের সংশ্লিষ্ট আইন বিধি ও নিয়ম সম্পর্কে সম্যক ধারনা থাকা অত্যাবশ্যক ।
গ্রাম আদালত ইউনিয়ন পরিষদের একটি গুরুত্বপূর্ন বিচারিক অংশ ।তাই ইউনিয়ন পরিষদের ক্রম বিকাশ সম্পর্কে আমাদের ধরনা থাকা দরকার । বাংলদেশে বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ নামে গ্রামীণ এই স্থানীয়া সংস্থা বিভিন্ন সময়ে বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ।
বৃটিশ শাসনের পূর্বে:
বৃটিশরা এদেশে আগমনের পূর্বে এদেশে স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল সে বিষয়ে তেমন কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না । তবে মনে করা হয়, গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে পঞ্চায়েত গঠিত হত । তারা গ্রামের শান্তি শৃংখলা রক্ষা ,বিচার ইত্যাদি পালন করতেন ।
বৃটিশ শাসন আমল :
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইন ১৭৯৩ ।
বৃটিশরা এদেশে আসার পর পূর্বের গ্রামীন শাসন সমূহ ধীরে ধীরে নিস্ক্রীয় হয়ে পরে । ১৭৯৩ সালে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে লর্ড কর্নওয়ালিসের সময় এদেশে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইন পাশ হয় এবং এর দ্¦ারা জমিদার শ্রেণীর সৃষ্টি হয় ।
গ্রাম চৌকিদারী আইন (ভিলেজ চৌকিদারী এ্যাকট ) ১৮৭০:
১৮৭০ সালে লর্ড মেয়োর আমলে গ্রাম চৌকিদারী আইন পাশ হয় । এই আইনে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট পঞ্চায়েত নিযুক্ত করা হয় । এই পঞ্চায়েতের সব সদস্যই জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক নিযুক্ত হতেন । যদি নিয়োগকৃত কোন পঞ্চায়েত সদস্য পদ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাতেন তবে তাকে ৫০.০০ টাকা জরিমানা দিতে হত । উল্লেখ্য যে –পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট পঞ্চায়েত শব্দটি পঞ্চ (৫/পাঁচ ) থেকে পঞ্চায়েত করা হয়েছে ।
বঙ্গীয় স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন আইন (ইবহমধষ ষড়পধষ ংবষভ মড়াবৎসবহঃ অপঃ) ১৮৮৫
স্থানীয় পর্যায়ে অধিক দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে লর্ড রিপনের রেজুলেশন সংশোধিত রুপে ১৮৮৫ সালে বেঙ্গল কাউন্সিলে বঙ্গীয় স্থানীড স্বায়ত্বশাসন আইন হিসেবে পাশ করা হয় । এই আইনে ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন কমিটি ,মহকুমা পর্যায়ে লোকাল বোর্ড এর্ব জেলা পর্য্যায়ে জেলা বোর্ড গঠন করা হয় ।

পল্লী স্বভয়ত্ব শাসন আইন  ১৯১৯ :
১৯১৯ সালের পল্লী স্বায়ত্ব শাসন আইনে চৌকিদারী ও ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত করে ইউনিয়ন বোর্ড ,নামে একটি মাত্র স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান রাখা হয় ।

পকিস্তান আমল :
মৌলিক গইতন্ত্র আদেশ,১৯৫৯
পাকিস্তান আমলে ১৯৫৯ সালে মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ জারী করা হয় । এ আদেশ ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন কাউন্সিল ,থানা পর্যায়ে থানা কাউন্সিল, জেলা পর্যায়ে জেলা কাউন্সিল এবং বিভাগ পর্যায়ে বিভাগীয় কাউন্সিল গঠন করা হয় ।
বাংলাদেশ আমল :
১৯৭২ সালে রাষ্ঠ্রপতির আদেশ নং -৭ বলে মৌলিক গণতন্ত্রে সব কয়টি সংস্থাকে ভেঙ্গে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করা হয় । ইউনিয়ন কাউন্সিল নাম পরিবর্তন করে এর নাম রাখা হয় ”ইউনিয়ন পঞ্চায়েত । ১৯৭৩ সালের ২২ শে মার্চ আদেশ নং ২২ জারী করেন এবং এ আদেশে ইউনিয়ন পঞ্চয়েত নাম পরিবর্তন করে এর নাম দেয়া হয় ইউনিয়ন পরিষদ ।
পটভূমি :
গ্রামীণ বিচার শালিশ এদেশে নতুন কোন বিষয় নয় । প্রাচীনকাল থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রথা প্রচলিত ছিল।্ পঞ্চায়েত গ্রামের শান্তি শৃংখলা বিচার কার্য পরিচালনা করত । বর্তমানে প্রচলিত স্থানীয় বিচার ব্যবস্থার প্রচলন শুরু হয ব্রিটিশ সময় থেকে। ১৯০২ সালে ‘ফেজার কমিশন’ এর মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে বিচার ব্যবস্থা স্থাপনের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। পরর্বতী পয্যায়ে ১৯০৭ -১৯০৯ সালে ‘হব হাউজ কমিশন ’ এবং ১৯১৩ সালে ‘‘ লেডি কমিশন ’’ ছোটখাট বিচার নিষ্পত্তির জন্য গ্রাম পর্যায়ে বিচারালয় স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। উক্ত প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯১৯ সনে “বেঙ্গল ভিলেজ সেলফ গভর্নমেন্ট এ্যাকট ’’ পাশ করা হয় । এবং তৎকালীন ইউনিয়ন বোর্ড দ্বারা ছোট খাট বিচার নিষ্পত্তির জন্য ইউনিয়ন কোচট ও ইউনিয়ন বেঞ্চ প্রবর্তন করা হয় । ইউনিয়ন কোর্টকে ফৌজদারী এবং ইউনিয়ন বেঞ্চকে দেওয়ানী সংক্রান্ত বিচার করার ক্ষমতা দেয়া হয় ।
১৯৬১ সালে “মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১” এবং কনসিলিয়েশন কোর্ট অধ্যাদেশ ১৯৬১ জারী করা হয় । মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশে ১৯৬১ এর মাধ্যমে বিবাহ ,তালাক খোরপোষ সম্পত্তিতে সম্ভানের অধিকার ইত্যাদি বিচার করার ক্ষমতা দেয়া হয় ।ঈড়হপরষরধঃরড়হ ঈড়ঁৎঃকে ছোট খাট দেওয়ানউ ও ফৌজদারী মামলাগুলো নিস্পত্তি করার জন্য ক্ষমতা দেয়া হয় । আমাদের দেশের দরিদ্র সাধারইের অধিকাংশই গ্রামে বাস করে।এ দরিদ্র জনসাধারণের পক্ষে শহরে গিয়ে দীর্ঘদিন মামলা মোক্দ্দমা চালানো অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। সুতরাং গ্রাম পর্যায়ে যদি ঝগড়া বিবাদের মীমাংসা ও মামলা মোকদ্দমার নিষ্পত্তির ব্যবস্থা থাকে তাহলে তারা অনেক বিড়স্বনা ও খরচের হাত থেকে অব্যাহতি লাভ করতে পারে । দ্রুত বিচার কার্যের ফলে ঝগড়া বিবাদের তীব্রতা ও ব্যাপকতা বহুলাংশে কমে যায় এবং তা গ্রামের শাস্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সাহায্য করে ।বাংলাদেশ স¦াধীন হওয়ার পর প্রথম কয়েক বছর ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় সংস্থাগুলোর বিচার কার্য পরিচালনার তেমন কোন ক্ষমতা ছিলনা । সরকার গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ ,১৯৭৬ এবং গ্রাম আদালত বিধিমালা ,১৯৭৬ জারী করেন । অধ্যাদেশ ও বিধিমালার মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে ফৌজদারী ও দেওয়ানী উভয় ধরনের বিষয়গুলো নিষ্পত্তির দায়িত্ব দেয়া হয় । পরর্বতীতে গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ রহিত করে এবং এর ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করে সরকার গ্রাম আদালত আইন ,২০০৬ প্রণয়ন করেছে । বর্তমানে বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থার সর্বনি¤œ স্তর হচ্ছে গ্রাম আদালত । ‘‘ গ্রাম আদালত” বলতে গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬ অনুযায়ী গঠিত আদালতকে বুঝায়, যা মূলত: বিচারিক ক্ষমতা সম্পন্ন সর্বনি¤œ আদালত ।
গ্রাম আদালত গঠনের আবেদন :
যে ক্ষেত্রে এ আইনের অধীন কোন মামলা গ্রাম আদালত কর্তৃক বিচার যোগ্য হয় সে ক্ষেত্রে বিরোধের যে কোন পক্ষ উক্ত মামলা বিচারের নিমিত্ত গ্রাম আদালত গঠনের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানেন নিকট নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদন করতে পারবেন এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লিখিত কারণ দর্শিয়ে উক্ত আবেদনটি নাকচ না করলে নির্ধারিত পদ্ধতিতে গ্রাম আদালত গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন । উক্ত আইনের অধীনে না মাঞ্জুরের আদেশ দ্বারা সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি আদেশের বিরুদ্ধে নির্ধারিত পদ্ধতিতে ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এখতিয়ার সম্পন্ন সহকারী জজ আদালতে রিভিশন করতে পারবেন ।

আবেদনের ফিস :
ফৌজদারী মামলার ১০ /= (দশ টাকা) এবং দেওয়ানী আমলার জন্য ২০/= (কুড়ি ) টাকা ফিস জমা দিতে হবে ।
নাকচ আবেদন না-মঞ্জুরের আদেশসহ আবেদনকারীকে প্রদান ঃ
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক যে ক্ষেত্রে আবেদন নাকচ হয় সেক্ষেত্রে তা উক্ত না মঞ্জুরের আদেশ সমেত অর্থাৎ কি জন্য নাকচ কারা হইল তা লিখিত কারণ দর্শাইয়া আবেদনকারীর নিকট ফেরৎ দিতে হবে ।
আবেদন না মঞ্জুরের আদেশ সহ আবেদন কারীকে ফেরত প্রদান ঃ
আবেদন না মঞ্জুর হওয়ার তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে পুনঃ বিচারের জন্য তা যথাযথ এখতিয়ার সম্পন্ন সহকারী জজের নিকট দাখিল করতে হবে। সহকারী জজ যদি মনে করেন আবেদন নাকচ করা সঠিক হয়নি সেক্ষেত্রে আবেদনটি বিচারের জন্য চেয়ারম্যানের নিকট প্রেরণ করবেন।
আবেদনে কী কী তথ্য থাকতে হবে :
আবেদনে নি¤œ লিখিত তথ্য থাকতে হবে ঃ
১.যে ইউনিয়নে পরিষদে আবেদন করা হয়েছে তার নাম ও ঠিকানা
২.আবেদনকারীর নাম,ঠিকানা ও পরিচয়
৩.প্রতিবাদীর নাম ঠিকানা ও পরিচয়
৪.যে ইউনিয়নে অপরাধ সংঘঠিত হয়েছে অথবা মামলার কারণ সৃষ্টি হয়েছে তার নাম
৫.ঘটনা সৃষ্টির কারণ. ঘটনার স্থান. ইউনিয়নের নাম ,ঘটনার তারিখ ও সময়
৬.অভিযোগ বা দাবীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ ,প্রকৃতি ও বিবরন
৭.প্রার্থিত প্রতিকার।
আবেদন পত্র পাবার পর চেয়ারম্যান কী করবেন?
আবেদন পত্রটি পাবার পর ইউপি চেয়ারম্যান তা পরীক্ষা করে গ্রহণ করবেন। আবেদন পত্র গ্রহণ করা হলে ইউপি চেয়ারম্যান নির্দিষ্ট তারিখে প্রতিবাদীকে হাজির হতে সময় দেবেন।মামলার পরবর্তী কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন । আবেদনটি অসম্পূর্ণ হলে অর্থাৎ প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকলে অথবা এখতিয়ার বহির্ভূত হলে তিনি তা নাকচ করতে পারবেন ।তবে কী কারণে নাকচ করা হলো তা অবশ্যই আবেদন পত্রের উপর লিখতে হবে।
প্রতিবাদী দাবী বা বিবাদ স্বীকার করলে গ্রাম আদালত গঠন করা যাবেনা ঃ
সমন অনুযায়ী বা প্রকারান্তরে প্রতিবাদী হাজির হলে এবং দাবী বা বিবাদ স্বীকার করলে এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে উক্ত দাবী পুরণ করলে গ্রাম আদালত গঠন করা হবে না।
কী কী কারণে আবেদন নাকচ করা যাবে ?
১.আবেদন ফিস জমা না দিলে ,
২.এখতিয়ার বহির্ভূত হলে ;
৩.অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আবেদন হলে ;
৪.আবেদন অসম্পূর্ণ হলে অর্থাৎ আবেদনকারী প্রতিবাদী সাক্ষীর নাম ঠিকানা ও পরিচয় না থাকলে ;
৫.ঘটনা ,ঘটনার সৃষ্টির কারণ, ঘটনার-স্থান-সময় তারিখ, ক্ষতির পরিমাণ, প্রাথীত প্রতিকার ইত্যাদি উল্লেখ না থাকলে ;
৬.ব্যক্তি আদালত অগ্রাহ্য কারণে পূর্বে দোষী সাব্যস্ত হলে ;
৭.নাবালকের স্বার্থের পরিপন্থী হলে ;
৮.বিবোধটি নিয়ে শালিশের চুক্তি হলে ;
৯.সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা কর্তব্য পালনরত কোন সরকারী কর্মচারী যদি দেওয়ানী মামলার কোন পক্ষ হয় ।
গ্রাম আদালত গঠনঃ
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রত্যেক পক্ষের দুইজন করে প্রতিনিধি এই পাঁচজন সদস্যের সমস্বয়ে গ্রাম আদালত গঠিত হয়।পক্ষদ্বয়ের মনোনীত বিচারকের মধ্যে একজনকে ইউপি সদস্য হতে হবে । ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান হবেন । যদি কোন কারণে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান হতে অপারগ হন বা তার নিরপেক্ষতা সম্বন্ধে কোন পক্ষ আপত্তি করে তাহলে বিধিমতে যে কোন পক্ষের আবেদন ক্রমে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তা নির্ধারন করে দিবেন ।
গ্রাম আদালতের বিচারযোগ্য মামলাসমূহ ঃ
ফৌজদারী মামলাঃ
ধারা ১৪৩: বেআইনী সমাবেশে যোগদানের শান্তি ;
 ১৪৭ দাঙ্গা করার শস্তি ;
 ১৬০ মারামারি করার শস্তি ;
 ৩২৩ ইচ্ছাপূর্বক আঘাত করার শাস্তি ;
 ৩৪২ অন্যকে আটকের শাস্তি ;
 ৩৫২ মারাত্বক প্ররোচনা ব্যতীত আক্রমন কিংবা অপরাধজনক বল প্রয়োগের শাস্তি;
 ৩৫৮ মারাত্বক প্ররোচনার ফলে আক্রমন কিংবা অপরাধজনক বল প্রয়োগ ;
 ৪২৬ অনিষ্ট করার শাস্তি ;
 ৪৪৭ অপরাধজনক অধিকার প্রেেয়াগের শাস্তি ;
 ৫০৬ অপরাধজনক ভীতি প্রদর্শনের শাস্তি ;
 ৫০৯ নারীর শ্লীলতাহানী করার শাস্তি ;
 ৫১০ মাতাল ব্যক্তি কর্তৃক প্রকাশ্যে অসদাচরনের শাস্তি ;
 ৩৭৯ চুরির শাস্তি ;
 ৩৮১ চাকর বা কর্মচারী কর্তৃক চুরির শাস্তি ;
 ৪০৬ অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গের শাস্তি ;
 ৪১৭ প্রতারনার শাস্তি ;
 ৪২৮ কোন দত্তককে হত্যা বা বিকলাঙ্গঁ করার শাস্তি ।
দেওয়ানী মামলা সমূহ :
ক) কোন চুক্তি মোতাবেক পাওনা টাকা বা দলিল দস্তাবেজ আদায়ের মামলা ;
খ) অস্থাাবর সম্পত্তি উদ্ধার বা এর মূল্য আদায়জনিত ;
গ) গবাদি পশুর দ্বারা ক্ষতি সাধনের মামলা ;
ঘ) এক বছর কালের মধ্যে কোন স্থাবর সম্পত্তি দখল হলে তা পুনর্দখলের মোকদ্দমা;
ঙ) অন্যায়ভাবে অস্থাবর সম্পত্তির দখল বা ক্ষতি সাধরের জন্য ক্ষতিপূরণের মামলা;
চ) কৃষি শ্রমিকদের পরিশোধযোগ্য মজুরী ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের মোকাদ্দমা ইত্যাদি ।
উল্লেখ্য যে উপরোল্লেখিত মামলা সমূহের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির মূল্যমান ৭৫.০০০/= টাকা ও তার কম হবে ।
যে সমস্ত ক্ষেত্রে গ্রাম আদালত বিচার করতে পারবে না ঃ
ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে :
১. অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি পূর্বে অন্য কোন আদালতগ্রাহ্য অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে থাকেন ;
২.রক্তপাতের ঘটনা ঘটলে ;
৩.বিষয়টি উচ্চতর আদালতে বিচারাধীন থাকলে।
দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে :
১) যখন কোন অপ্রাপ্ত বয়ষ্কের স্বার্থ জড়িত থাকলে ।
২) বিবাদের পক্ষগণের মধ্যে বিদ্যামান কলহের ব্যাপারে কোন শালিশের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকলে।
৩) মামলার সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা কার্যরত কোন সরকারী কর্মচারী পক্ষ হয়ে থাকলে।
গ্রাম আদালতের এখতিয়ার :
১.যে ইউনিয়নে অপরাধ সংগঠিত হবে বা মামলার কারণ উদ্ভব হবে ,বিবাদের পক্ষগণ সাধারণত সেই ইউনিয়নের বাসিন্দা হলে সে ইউনিয়নে গ্রামআদালত গঠিত হবে এবং অনুরুপ মামলার বিচারের এখতিয়ার গ্রাম আদালতের থাকবে ।
২.যে ইউনিয়নে অপরাধ সংগঠিত হবে বা মামলার কারণ উদ্ভব হবে , বিবাদের এক পক্ষ সেই ইউনিয়নের বাসিন্দা হলে এবং অপর পক্ষ ভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দা হলে যে ইউনিয়নে অপরাধ সংঘঠিত হবে বা মামলার কারণ উদ্ভব হবে সেই ইউনিয়নে গ্রাম আদালত গঠিত হবে। তবে ইচ্ছা করলে নিজ ইউনিয়ন হতে প্রতিনিধি মনোনীত করতে পারবে।
গ্রাম আদালতের ক্ষমতা :
গ্রাম আদালতের শাস্তি বিধানের পদ্ধতি অন্যান্য আদালত অপেক্ষা ভিন্ন ।অন্যান্য আদালত জেল জরিমানা করতে পারে । কিন্ত গ্রাম আদালত জেল দিতে পারে না বা জরিমানাও করতে পারে না শুধুমাত্র ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষের অনুকুলে বাদী বা বিবাদী পক্ষকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ দিতে পারে ।তবে এ ক্ষতি পূরণের পরিমাণ কোনভাবেই ৭৫.০০০/= টাকার অধিক হবে না ।আবার গ্রাম আদালত কর্তৃক ইস্যুকৃত সমন গ্রহণ না করা এবং আদালত অবমাননার জন্য যথাক্রমে ৫০০/= ও ১০০০/= টাকা জরিমানা করতে পারে।
জরিমানার টাকা আদায় না হলে উপজেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মহোদয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত পদ্ধতিতে আদায় করা যাবে এবং তা বকেয়া ট্যাক্রা আদায় হিসেবে গন্য হবে।
গ্রাম আদালত অবমাননা :
গ্রাম আদালত চলার সময় কেউ যদি আদালতকে বা এর কোন সদস্যকে অবজ্ঞা করে থাকে ,আদালত এলাকায় কেউ যদি বাধার সৃষ্টি করে ;আদালত কর্তৃক দাবীকৃত কাগজ পত্র প্রদান না করে,জিজ্ঞাসিত উত্তর দিতে অস্বীকার করে এবং শপথ গ্রহণে অস্বীকৃত হলে বা কোন জবানবন্দীতে স্বাক্ষর করতে না চাইলে গ্রাম আদালত সংশ্লিষ্ট পক্ষকে আদালত অবমাননার জন্য জরিমানা করতে পারে। জরিমানার টাকা আদায় না হলে চেয়ারম্যান ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখবেন । ম্যাজিষ্টেট অপবাধীকে শাস্তি স্বরুপ কারাদন্ড দিতে পারবেন ।এভাবে শান্তি প্রদানের মাধ্যমে গ্রাম আদালত তাঁর বিচার বিষয়ক দায়িত্ব পালন করবে ।
মামলা স্থানান্তর :
মামলার গুরুত্ব অনুযায়ী গ্রাম আদলতের চেয়ারম্যান যদি মনে করেন যে আসামীর সাজা হওয়া উচিৎ তবে উক্ত চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট ম্যাজিষ্টেট কোর্টে এরুপ মামলা প্রেরণ করতে (বিচারের জন্য) পারেন ।
আইনজীবি নিয়োগ করা যাবে না ঃ
গ্রাম আদালতে বিরোধের কোন পক্ষের সমর্থনে আইনজীবি নিয়োগ করার অনুমতি নাই । তবে পর্দানশীল মহিলার ক্ষেত্রে ক্ষমতপ্রাপ্ত প্রতিনিধিকে গ্রাম আদালতের প্রতিনিধিত্ব করার অনুমতি দিতে পারে । কিন্তু প্রতিনিধি কোন পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারবে না।
পুলিশের তদন্ত :
তফমীলের প্রথম খন্ডে বর্ণিত (ফৌজদারী অপরাধ) অপরাধ হিসেবে পুলিশ ঐ সমস্ত মামলার তদন্ত কাজ করবে । ফৌজদারী আদালতে অনুরুপ মামলা দায়ের হলে , আদালত উপযুক্ত মনে করলে গ্রাম আদালতে মামলাটি বিচারের জন্য প্রেরণ করতে পারে ।
আদালতের রায় :
যে সব ক্ষেত্রে গ্রাম আদালতে রায় ৫-০ বা ৪/১ ভোটে গৃহীত হয় তখন তা বিবাদমান পক্ষের জন্য অবশ্যই পালনীয় । কোন আপীল করা যাবে না । আবার যে ক্ষেত্রে আদালতের রায় ৩/২ ভোটে গৃহীত হয় সে ক্ষেত্রে যে কোন পক্ষ ৩০ দিনের মধ্যে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করতে পারবে । এরুপ আপীল ফৌজদারী বা অপরাধ সংক্রান্ত হলে উপজেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এবং দেওয়ানী হলে সংশ্লিষ্ট সহকারী জজের কাছে করতে হবে । উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং সহকারী জজ যদি মরে করেন যে, গ্রাম আদালতের রায় ত্রুটিপূর্ণ ,তাহলে সে রায় বাতিল বা সংশোধন করতে পারবেন কিংবা গ্রাম আদালতে পুনরায় বিচারের জন্য পাঠাতে পারবেন । উল্লেখ্য, উপজেলা ম্যাজিষ্টেট বা সহকারী জজের আদেশই চুড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে । অন্য কোন আদলত তা আর গৃহীত হবে না । স্রাদেশে সকল ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত সক্রিয় থাকলে পল্লীর জনগন হয়রানি ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে না । সর্বোপরি উচ্চতর আদালত সমূহে মামলার জট বা চাপ কমবে। ২৩.০৮.২০২১

লেখক: সাবেক ইউপি সচিবন (অব:), তাড়াশ, সিরাজগঞ্জ।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD