আজ থেকে চার বছর আগে সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা প্রথম প্রকাশ পায় । তখন থেকেই চলনবিলের ৮টি উপজেলার সংবাদ প্রতিনিধি ও লেখকগণ এ পত্রিকায় নিয়মিত সংবাদ পরিবেশন ও বিচিত্র রকম লেখাজোকা করে আসছেন । সে জন্য চলনবিল বার্তা পরিবার গভীর কৃতজ্ঞ এবং উৎসাহিত । তাদেরই মেধা ও মননে এই গ্রামীণ ক্ষুদে পত্রিকাটি আজো সক্রিয়ভাবে চলছে । তাই শ্রদ্ধাভাজন এ সব সাংবাদিক ,কবি ও লেখকদের অবদান আমাদের নিকট স্ম^রণীয়, বরণীয় বটে । আজ ২৪ সে্েটম্বর ২০২১ প্রেস কার্ড বিতরণ ও মতবিনিময় উপলক্ষে এসব কৃতি তারকাদের তাড়াশের মাটিতে স্বাগতম ,অভিনন্দন ।
আমরা জানি চলনবিলের সবগুলো উপজেলাতেই বর্তমানে সাহিত্যিক সাংবাদিকদের সরব পদচারণা বিদ্যমান । ইতিহাস খ্যাত এই বিলে প্রাচীনকাল থেকেই সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সংবাদসেবীদের গৌরবোজ্জল ভূমিকা ছিল বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় । তাদেরই উত্তবসূরী বর্তমান প্রজন্মের কলম সৈনিকেরা । আমরা তাই কথা সাহিত্যিক নজিবর রহমান সাহিত্যরতœ, ফজলুর রহমান খাঁ, অধ্যাপক এম এ হামিদ ,এম সেরাজুল হক , ডঃ মাযহারুল ইসলাম সহ চলনবিলের অনেক কীর্তিমান ও গুণীজনকে নিয়ে গর্ব করে থাকি । তাদের মহৎ সৃষ্টি ও কীর্তি আমাদের নিরন্তর অনুপ্রেরণার খোরাক ও চলার পথের পাথেয় । আমাদের পুর্বসূবীদের চেতনা দর্শন ও নীতি আদর্শের আলোকে আমরা কলুষমুক্ত সাহিত্য ও সাংবাদিকতা চর্চা করে যাবো তেমনটি প্রত্যাশা করাই শ্রেয় । আমরা যেন ভুলে না যাই, সমাজের অবহেলিত ,শোষিত বঞ্চিত মানুষের কথা তুলে ধরাই সাংবাদিকতার মূখ্য লক্ষ্য। মানুষের মৌলিক অধিকার ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠায় কলমের মাধ্যমে সহযোগীতা করা সাংবাদিকদের কর্তব্য। প্রতিবাদহীন ,চ্যালেঞ্জবিহিন, নিস্কন্টক এবং আপসকামী প্রতিবেদন লেখা আসলে কোন সাংবাদিকতা নয় । আরামে আয়েশে ঝুঁকিমুক্ত সাংবাদিকতা করে নিজের আয় উন্নতি বাড়ানো , সমৃদ্ধির আকাঙ্খা পোষন করা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কলংকজনক ও বেমানান কাজ । একমাত্র ইউনিয়ন ও ওয়েজবোর্ডভূক্ত বনেদী সাংবাদিকতা ছাড়া গ্রামীণ সাংবাদিকতা প্রকৃত অর্থে কোন পেশা নয়, এটা সখ ও নেশা,এটা মানব ও স্বেচ্ছা সমাজসেবার ব্রত ,এটা একটি আদর্র্শিক সংগ্রাম ও কৃচ্ছতার প্রতীক । তাই গ্রামের কোন সাংবাদিককে যখন এলইডি টিভি লাগানো সুসজ্জিত কক্ষে সাংবাদিক পদবীর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ব্যক্তিগত অভিজাত অফিস করা দেখে, তখন সমাজে ভুল বার্তা যায়, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের উদ্রেক করে। এটা কোন সৎ ও নিবেদিত সাংবাদিকের বৈশিষ্ট্যের সাথে শোভনীয় নয়, খাপ খায় না । এগুলো যুগীয় অবক্ষয়ের প্রতিফলন বলে মানুষ মনে করে এবং জনান্তিকে নানা গুঞ্জন ছড়ায়। আর সাংবাদিকতার সাথে সাথে প্রগতিশীল শিক্ষা ও জ্ঞান অনুশীলন থাকতে হবে। পড়াশোনা করতে হবে , যুক্ত হতে হবে এক ধরনের সাধনা ও অধ্যাবসায়। উচ্চ চিন্তা ও সরল জীবনযাপন হবে সাংবাদিকের জীবনাদর্শ। একজন সাংবাদিকের নিজস্ব আয়-উপার্জনের পেশা থাকা উচিৎ যাতে দুর্মুখেরা সমালোচনার সুযোগ না পায়।
অপরদিকে সাধারণ প্রতিবেদক থেকে সাংবাদিক, লেখক ,নিবন্ধকার, সম্পাদক, প্রাবন্ধিক,বিশ্লেষক ,কলামিষ্ট ও অতপর গ্রন্থকার, শিল্প-সাহিত্যের দিকে পর্যায়ক্রমে ধাবিত হয়ে ক্রমান্বয়ে সাংবাদিকতার মানোন্নয়ন ঘটাতে হবে । সারা জীবন চলতি নিউজ (কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স) লিখে ও অন্যের নিউজ কপি(নকল) করে নিজেকে তৃপ্ত রাখা কিংবা কৃতার্থ মনে করা শুধু সংকীর্ণতার গন্ডিতে আবদ্ধ থাকার শামিল।সস্তা খ্যাতি ও সুনাম কুড়ানো সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য নয়। আমাদের জাতীয় সাংবাদিকতার পর্যায়ে যেসব নক্ষত্র সাংবাদিক অমূল্য অবদান ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, আমাদেরকে তাদের পথ অনুসরণ করতে হবে। সাংবাদিকতায় রক্তক্ষরণ ও উৎকর্ষ সাধন-এ দুইয়ের মিলন না হলে সে সাংবাদিকতা স্বার্থকতার মুখ দেখা কঠিন ও মানুষের কল্যাণে স্মরণীয় হয়ে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ – তা বলাই বাহুল্য। সাংবাদিকতাও পরিশুদ্ধ ইবাদত-উপাসনার মতই দুরূহ কর্ম।তদুপরি সাম্প্রতিককালে নানাবিধ নিবর্তনমূলক কালাকানুন ও প্রতিকুলতার দরুন সাংবাদিকতা বর্তমানে এক কঠিন ক্রান্তিকালের সন্মুখিন। নীতি-শুদ্ধাচার, মানবতা, মূল্যবোধ, ত্যাগ ও উৎসর্গ বিবর্জিত কোন কলমবাজি সত্যকার সাংবাদিকতা হিসেবে আখ্যায়িত হতে পারে না। কাজেই যে কেউ ইচ্ছা করলেই তা অর্জন করতে পারবে এমনটি ভাবা ঠিক নয় । সেজন্য ওই মাপের সামাজিক অঙ্গীকার, জ্ঞান, মণীষা, সততা ও নৈতিকতা থাকা দরকার।