চলনবিলের আলোর মশাল অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ

Spread the love

[চলনবিলের কৃতিসন্তান এম এ হামিদের ১৫ তম মৃত্যু দিবসে বিন¤্র শ্রদ্ধাঞ্জলী]

মোঃ আবুল কালাম আজাদ।।

প্রাক কথন :

আজ ২৪ শে আগষ্ট। ২০০৬ সালে আজকের এই দিনে ঐতিহাসিক চলনবিল বাসিকে অভিভাবকশুন্য করে না ফেরার দেশে চলে গেছেন চলনবিলের কৃতি সন্তান অধ্যক্ষ এম এ হামিদ। তিনি ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে যোগাযোগ ও উন্নয়ন থেকে সম্পুর্ন বিচ্ছিন্ন এক হাজার বর্গ মাইল আয়তনের বৃহত্তর চলনবিলের শিক্ষা, সংস্কৃতি,অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক উন্নয়নের একমাত্র যোদ্ধা। অধ্যক্ষ এম এ হামিদ ছিলেন বৃহত্তর চলনবিলের সার্বিক উন্নয়নের “ আলোর মশাল”। তাঁর আলোতেই আজ পিছিয়ে পড়া অখ্যাত চলনবিলের পরিচিতি বিশ^ব্যপী। বিশে^র কাছে তিনিই নিখুঁত ভাবে তুলে ধরেছেন চলনবিলের সমস্যা, সম্ভাবনা,ভবিষ্যৎ করনীয় এবং চলনবিলের বিশাল রতœভান্ডারের গুপ্তধনের তথ্য-উপাত্ত। যা নিয়ে চলছে আলোচনা, পর্যালোচনা,পরিকল্পনা ও গবেষনা।

চলনবিলের আলোর মশাল বলি,চলনবিলের আলোক বর্তিকা বলি, চলনবিলের আলোকিত মানুষ বলি, চলনবিলেন ইতিহাস বলি, চলনবিলের সাহিত্য বলি, চলনবিলের শিক্ষাবিদ বলি অথবা চলনবিলের আলোর দিশারী এবং চলনবিলের ধ্রুবতারা যাই বলিনা কেন সব মিলে একই ব্যাক্তির নাম সামনে আসে তিনি হচ্ছেন আমাদের চলনবিলের সন্তান সর্বজন শ্রদ্ধেয়জন প্রয়াত আলহাজ অধ্যক্ষ সরদার এম এ হামিদ। যিনি বহু গুনে গুনান্বিত। যার গুনকীর্তন গেয়ে শেষ করা যাবেনা।অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ ছিলেন সবসময় সৃষ্টিশীল মানুষ।তিনি সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অবহেলি, শিক্ষাহীন, সংস্কৃতি হীন ্উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তম চলমান ঐতিহাসিক চলনবিলের মানুষের আলোর মশাল হিসেবে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন।অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ শুধু চলনবিলে উন্নয়ন নিয়েই ভাবতেননা ।তাঁর কর্মময় জীবনে যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই আলোর মশাল জ¦ালিয়ে শিক্ষা, সাংস্কৃতি এবং উন্নয়নে আলোকিত করেছেন।

চলনবিলের পুর্নাঙ্গ ইতিহাস- ঐতিহ্য তারঁ অন্যতম সৃষ্টি “ চলনবিলের ইতিকথা” গবেষনামূলক বইয়ে তুলে ধরে দেশের মানচিত্র পেরিয়ে সারা বিশে^ খ্যাতি অর্জন করেছেন। বিশে^ পরিচিতি লাভ করেছে চলনবিল আর চলনবিলের প্রকৃত বাস্তবতা। তিনি ছিলেন চলনবিলের ধ্রুবতারা। তার দেখানো চলনবিলের পরিচিতি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে চলছে নানা আলোচনা, পর্যালোচনা এবং গবেষনা।

জন্ম কথা :

১৯৩০ সালে মহান স¦াধীনতার মাস মার্চের ১ তারিখে বৃহত্তর চলনবিলের মাঝখানে বর্তমান নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ( নৌকা, গরুর গাড়ি এবং পায়ে হেটে ছাড়া যাতায়াতের কোন উপায় ছিলনা) এক অখ্যাত খুবজিপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত কৃষকের ঘরে আলোর মশাল নিয়ে জন্মগ্রহন করেন অধ্যক্ষ সরদার আব্দুল হামিদ। পিতা আলহাজ দবির উদ্দিন সরদার ছিলেন চলনবিল অঞ্চলের একজন দানশীল ব্যবসায়্ ী। মাতা ডালিমজান ছিলেন গৃহিনী। দাদার নাম জহির উদ্দিন সরদার এবং নানার নাম লাল মন্ডল।এম এ হামিদ যখন পঞ্চম শ্রেনির ছাত্র তখন পিতা আলহাজ¦ দবির উদ্দিন সরদার শখ করে গ্রামের আলহাজ¦ মতি সরদারের কন্যা কুলছুম বেগমের সাথে বিয়ে দেন। অনেকেরই ধারনা ছিল বিবাহের কারনে তার পড়া -লেখার ক্ষতি হবে। কিন্ত হামিদ সাহেব সে ধারনাকে ভুল প্রমানিত করে সকলকে তাক লাগিয়ে শিক্ষা জীবন শেষ করেন। তিনি স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত আট কন্যা সন্তানের গর্বিত পিতা।তাঁর কোন পুত্র সন্তান নাই।

শিক্ষা জীবন :

বিশিস্ট ইতিহাসবিদ এবং শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ এম এ হামিদ বাড়ির পাশের গ্রাম যোগেন্দ্রনগর পাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেনি পর্যন্ত লেখা-পড়া করেন। অতঃপর তিনি গুরুদাসপুর জিসিএমই স্কুলে পঞ্চম শ্রেনিতে ভর্তি হন ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারী মাসে।গুরুদাসপুর জিসিএমই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেনি পর্যন্ত পড়ে ১৯৪১ সালে চাঁচকৈড় নাজিম উদ্দিন হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেনিতে ভর্তি হন। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে চাঁচকৈড় নাজিম উদ্দিন হাইস্কুল থেকে তৃতীয় বিভাগে এস এস সি পাশ করেন। এরপর ১৯৪৭ সালে রাজশাহী গভর্মেন্ট কলেজ থেকে এইচ এস সি ( বিজ্ঞান) দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন।১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রাজশাহী গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে কোলকাতা বিশ^বিদ্যালয়ের সিলেবাসে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ডিগ্রী পরিক্ষায় প্রথমস্থান অধিকার করে ডিষ্টিংশনসহ বিএসসি পাশ করেন এবং ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে এমএসসি পরিক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেনিতে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন।

বর্নাঢ্য কর্মময় জীবন :

এম এ হামিদ এমএসসি পরিক্ষার ফল প্রকাশের পুর্ব পর্যন্ত ১৯৫৩ সালের শুরু থেকে ঢাকা জেলার কেরানিগঞ্জ থানার কলাতিয়া হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। পরিক্ষার ফল প্রকাশের পর ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ আগষ্ট সাতক্ষিরা কলেজে রসায়নের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিন মাস পর ১৯৫৩ সালে ৫ নভেম্বর সাতক্ষিরা কলেজ ছেড়ে ৬ নভেম্বর গাইবান্ধা কলেজে যোগদান করেন।১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ নভেম্বর রংপুর কারমাইকেল কলেজে যোগদান করেন। পরের বছর ১৯৫৬ সালের ৩ জুলাই পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ নলিনীরঞ্জন রায় মহাশয়ের আহবানে রংপুর কারমাইকেল কলেজ ছেড়ে পরদিন ৪ জুলাই পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে রসায়নের প্রভাষক পদে যোগদান করেন।একটানা ১৪ বছর তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ সরকারিকরন হলে ঐদিন হতে এম এ হামিদ সরকারি কর্মচারি হিসেবে রসায়ন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যশোর মাইকেল মধুসুদন কলেজে রসায়ন বিভাগে সহকারি অধ্যাপক পদে যোগদান করেন।১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে ১৫ জুন যশোর মাইতেল মধুসুদন ( এম এম কলেজ) কলেজ ছেড়ে পরদিন সরকারি কারমাইকেল কলেজে যোগদান করেন।কারমাইকেল কলেজে যোগদানের ২০ দিন পর মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ধরে তাঁর প্রতিষ্ঠিত পাঁচবিবি থানার মহিপুর হাজী মহাসীন কলেজে সরকারি ডেপুটেড অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগপত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। মাওলানা ভাষানী নিজ হাতে এম এ হামিদকে চিঠি লিখেন তাঁর কলেজে যোগদানের জন্য। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জুলাই কারমাইকেল কলেজ থেকে বিদায় নিয়ে পরদিন ৮ জুলাই জয়পুরহাট মহীপুর হাজী মহসীন কলেজে যোগদান করেন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুলাই মহীপুর হাজী মহসীন কলেজ থেকে বিদায় নিয়ে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের রসায়ন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। একাধিক্রমে টানা দশ বছর এই কলেজে রসায়ন বিভাগীয় প্রধান, উপাধ্যক্ষ, ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মার্চ বগুড়া আযিজুল হক কলেজ থেকে বিদায় নিয়ে পরদিন বগুড়া সরকারি মজিবুর রহমান মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ফেব্রুয়ারী এই কলেজ থেকে এলপিআরে যান এবং ১৯৮৮খ্রিষ্টাব্দের ২৯ ফেব্রুয়ারী অধ্যক্ষ এম এ হামিদ চাকুরি জীবন থেকে পুর্ন অবসর গ্রহন করেন।

ইতিহাস , ঐতিহ্য ও সাহিত্যে অতুলনীয় :

চলনবিলের কৃতি সন্তান অধ্যক্ষ এম এ হামিদ শুধু শিক্ষাবিদ আর সমাজ কর্মীই নন একজন প্রতিথযশা সু সাহিত্যিক হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন ২৬ টি মুল্যবান তথ্যবহুল বই। তাঁর রচিত বইগুলি হচ্ছে-চলনবিলের ইতিকথা (ঐতিহাসিক গ্রন্থ),চলনবিলের লোক সাহিত্য ( সংকালন),জ্ঞানের মশাল ( সঙ্কলন গ্রন্থ), কর্মবীর সেরাজুল হক ( জীবনী গ্রন্থ),ওহঃবৎসবফরধঃব ঈযবসরংঃৎু,উবমৎবব ঢ়ৎধপঃরপধষ ঈযবসরংঃৎু,ওহঃবৎসবফরধঃব পঐবসরংঃৎু ( ওহড়ৎমধহরপ), আমাদের গ্রাম( গবেষনামূলক ইতিহাস গ্রন্থ), শিক্ষার মশালবাহী রবিউল করিম ( জীবনী গ্রন্থ),বঙ্গাব্দ সম্চার (বঙ্গাব্দ সংস্কার প্রস্তাব),দেখে এলাম অষ্ট্রেলিয়া (ভ্রমন কাহিনী), পাশ্চাত্যের বৈশিষ্ট (ভ্রমন কাহিনী), পশ্চিম পাকিস্তানের ডাইরী (ভ্রমন কাহিনী) পল্লীকবি কারামত আলী ( জীবনী গ্রন্থ), হজে¦র সফর, রসায়নের তেলেসমাতি ( বিজ্ঞানের যাদু), উচ্চমাধ্যমিক ব্যাবহারিক রসায়ন, ধাঁধাঁর জগত ও অঙ্কেও খেলা,স্বপ্নীল জীবনের কিছু কথা ( আত্মজীবনী গ্রন্থ),ইসলামের ছায়াতলে,আমার জীবন কাহিনী( সম্পাদিত), পল্লী শিক্ষক ( সম্পাদিত), অবিস্মরনীয় প্রান (সম্পাদিত),আদর্শ শিক্ষক (সম্পাদিত), অমর স্মৃতি ( সম্পাদিত),মনোহর চয়নিকা (সম্পাদিত) এবং ইসলামের ছয়াতলে।

বঙ্গাব্দ সংস্কারের প্রস্তাবক :

অধ্যক্ষ এম এ হামিদের অনেক কৃতিত্বের মধ্যে আরো একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব হচ্ছে“,বঙ্গাব্দ সংস্কার প্রস্তাব ”।বাংলা সনের বিভিন্ন মাসের দিন সংখ্যা নির্দিষ্ট না থাকায় বাংলা তারিখের হিসাব ঠিক রাখা; ডাইরী, ক্যালেন্ডার ও পঞ্জিকা তৈরিতে অত্যন্ত অসুবিধা দেখা যেত। এই অসবিধা দুর করার লক্ষ্যে শিক্ষাবিদ আব্দুল হামিদ ১৯৫৯ খ্যিষ্টাব্দে ২৩ অক্টোবর ঢাকাস্থ বাংলা একাডেমিতে ‘বাংলা বিভিন্ন মাসের দিন সংখ্যা’নির্দিষ্ট করার একটি প্রস্তাব পেশ করেন। ১৯৬২ খ্যিষ্টাব্দের ২২ অক্টোবর বাঙলা একাডেমীর ৪৯ তম সভায় ‘ বাঙলা সনের বিভিন্ন মানের তারিখ নির্ধারন উপসংঘ’ গঠিত হয়। এই উপসংঘের সম্মানীত সদস্য ছিলেন- ১) এম এ কাসেম, অধ্যক্ষ , বাংলা কলেজ ,ঢাকা এবং কাংলা একাডেমীর কার্যকরী কমিটির সদস্য ২) পন্ডিত তারাপদ ভট্রাচার্য, কাব্য-ব্যাকরন- পুরান- স্মৃতিতীর্থ, ভাগবতশাস্ত্রী, সাহিত্যপাধ্যায়,স্মৃতিপুরানরত,জ্যোতিশাস্ত্রী( বাংলা একাডেমীর সংকলন বিভাগীয় সহ অধ্যক্ষ) কমিটির আহবায়ক। পওে ১৯৬৩ খ্রিষ্টিাব্দে ১০ জুন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে সভাপতি, বাংলা একাডেমীর পরিচালক সৈয়দ আলী আহসান ও আরো ২ জন জ্যোতির্বিজ্ঞানী পন্ডিত শতীষচন্দ্র শিরোমনি ও পন্ডিত অবিনাশচন্দ্র কাব্য জ্যোতিস্তীর্থকে সদস্যরূপে উপসংঘে গ্রহন করা হয়। ১৯৬৩ হতে১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত উপসংঘের বিভিন্ন সভায় প্রস্তাবটি নিয়ে গভীরভাবে পরিক্ষা-নীরিক্ষা ও আলোচনা করা হয়। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ১৭ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সভায় প্রস্তাবক অধ্যাপক এম এ হামিদ আমন্ত্রিত অতিথিরূপে যোগদান করেন এবং প্রস্তাবটির ব্যাখ্যা প্রদান করেন। পরিশেষে তাঁর প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিতে হুবহু গৃহীত হয়। বর্তমানে এম এ হামিদ কর্তৃক প্রনীত নীকিমাল অনুযায়ী বঙ্গাব্দের তারিখের হিসাব , ডাইরী, ক্যালেন্ডারও পঞ্জিকা তৈরী করা হয়। অথচ একটি স্বার্থন্বেষী মহল এম এ হামিদের এই অনন্য অবদানকে তাদের পূর্ব পুরুষের কৃতিত্ব বলে চালাতে চাচ্ছেন যা অত্যন্ত লজ্জাস্কর।

চলনবিলের সাংবাদিক জগতের অভিভাবক :

অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ সাংবাদিকতাতেও বিশেষ অবদান রেখেছেন।তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭৮ সালে বৃহত্তর চলনবিলের উদিয়মান সাংবাদিকদের নিয়ে গুরুদাসপুরে “ চলনবিল প্রেসক্লাব” প্রতিষ্ঠা লাভ কর্ ে। সেই প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি আমি (এই প্রবন্ধ লেখক) আবুল কালাম আজাদ।আমার সাংবাদিকতারও হাতে খড়ি তাঁর হাত ধরেই। তাঁর সম্পাদনায় বেশ কয়েকটি পত্রিকা, সাময়িকী, ম্যাগাজিন ও সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ‘ মাসিক আমাদের দেশ পত্রিকার প্রকাশক ও কার্যকরী সম্পাদক,বার্ষিক অভিযান ও সোপান পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক। এতদ্ব্যাতীত চলনবিল, চলনবিলের ঢেউ, অভিযান ও সোপান পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের তিনি সভাপতি ছিলেন। পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েটা হতে প্রকাশিত ‘ বোলানের ডাক’,বড়াইগ্রাম থানা সমাজ সেবক সংঘের মুখপত্র ‘ নয়া জিন্দেগী’, নাটোর মৌলিক গনতন্ত্রের মাসিক ‘নবারুন’,লয়ালপুর হতে প্রকাশিত উর্দু মাসিক ‘ হামারা ওয়াতন’,লন্ডন হতে প্রকাশিত ইংরেজী মাসিক ‘ আওয়ার হোম’ প্রভৃতি পত্রিকার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এছাড়াও তিনি দৈনিক পয়গামের নিয়মিত সাংবাদিক ছিলেন।

বহু প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা :

শিক্ষবিদ অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ ছিলেন একজন নিভৃতচারি আপদমস্তক ক্লিন ইমেজের প্রকৃত সমাজসেবক। তিনি বহু প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তা। অধ্যক্ষ এম এ হামিদ দীর্ঘ শিক্ষকতা চাকরি থেকে অবসর গ্রহনের পর ১৯৮৭ খ্রিষ্টব্দে নিজ গ্রমে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ খুবজিপুর মোজাম্মেল হক কলেজ’। এছাড়া তিনি নাটোর নবাব সিরাজ- উদ- দৌলা কলেজের প্রথম উদ্যোক্তা এবং গুরুদাসপুর বিলচলন ডক্টর শহীদ শামসুজ্জোহা কলেজের (বর্তমানে সরকারি) প্রতিষ্ঠাতা- সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে নিজ গ্রামে খুবজিপুর হাই স্কুল, ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে খুবজিপুর পোষ্ট অফিস,১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে খুবজিপুর দারুল উলুম এবতেদায়ী মাদ্রাসা,১৯৭৬ খ্রিষ্টব্দে খুবজিপুর হাট,১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে খুবজিপুর নুরুন্নবী জামে মসজিদ ও চলনবিল যাদুঘর ( বর্তমানে সরকারি), ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে গুরুদাসপুর থানা শিক্ষা সংঘ,১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে খুবজিপুর ইউনিয়ন স্বাস্খ্য ও পরিবার কল্যানকেন্দ্র, ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে খুবজিপুর ইউনিয়ন,১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে খুবজিপুর দবিরুল দাখিল মাদ্রাসা,১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে মদিনাতুল উলুম ট্রাষ্ট এবং ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে বায়তুস সালাম জামে মসজিদ স্থাপন করেন। এছাড়াও তিনি এল্কাার বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ- কালভার্ট, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রষ্ঠিান প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভুকিা রেখেছেন।

বিভিন্ন কাজে অবদান রাখায় খেতাবে ভ’ষিতঃ

অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ শিক্ষা,সাহিত্য, সমাজসেবাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখায় বহু পুরস্কার খেতাব ও সনদ লাভ করেছেন। এরমধ্যে- ১৯৭৬ সালে জয়পুর হাট হিলফুল ফুজল হতে ‘ প্রাইড অব পারফরমেন্স’,গবেষনা ও সমাজসেবামুলক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তদানিন্তন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট তমঘায়ে খেদমত ( টি.কে) খেতাব ও স্বর্নপদক দিয়েছিলেন ( কিন্তু ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে ১৮ ফেব্রুয়ারী রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের রিডার ড. শামসুজ্জোহার হত্যার প্রতিবাদে তিনি টি. কে খেতাব বর্জন করেন)। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী বরেন্দ্র একাডেমি থেকে সাহিত্য সেবার স্বীকৃতি স্বরূপ সংবর্ধনা এবং সনদ লাভ করেন। ১৩৮৭ বঙ্গাব্দে সিরাজগঞ্জ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ হতে গবেষনামুলক ইতিহাস রচনার জন্য ‘ গবেষনা বিশারদ’ খেতাবে ভষিত হন।১৯৯২ সালে পাবনা জেলা পরিষদ হতে পল্লীরতœ পুরস্কার পান। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়ার সাপ্তাহিক জীবন পত্রিকার সাহিত্যিক গোষ্ঠ প্রদত্ত জীবন সাহিত্য পুরস্কার পান। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে পাবনার কাশিনাথপুর হতে সাহিত্য অঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য উত্তরন পুরস্কার ও সংবর্ধনা পান।১৯৯৪ সালে সিরাজগঞ্জ কবিতা ক্লাব হতে সিরাজী পুরস্কার পান। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ কবিতা ক্লাব , পাবনা জেলা শাখা হতে কবি বন্দে আলী পুরস্কার পান।১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে নাটোর ভিক্টোরিয়া পাবলিক লাইব্রেরি প্রদত্ত ভিক্টোরিয়া সাহিত্য পুরস্কার পান। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্যসেবার স্বীকৃতি স্বরূপ বগুড়া বারোয়ারী আসর কর্তৃক প্রদত্ত সংবর্ধনা, পদক ও পুরস্কার লাভ করেন এবং ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে সিরাজগঞ্জ যমুনা সাহিত্য সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত বিদ্যভুষন পুরস্কার লাভ করেন।

চলে গেলেন না ফেরার দেশে :

অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ তাঁর বর্নাঢ্য কর্মময় জীবনে সর্ব ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে এই মহান কর্মক্লান্ত সৈনিক ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ আগষ্ট চলনবিলবাসীকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন।মৃত্যুর পুর্বমুহুর্ত পর্যন্ত তিনি স্বপ্নের চলনবিল গড়ার কাজে আমৃত্যু যুদ্ধ করে গেছেন।শেষ নিঃশ^াস পর্যন্ত তিনি বিশ^াস করতেন তাঁর স্বপ্নের চলনবিল একদিন ‘ চলনবিল জেলা’ হিসেবে বাস্তবায়িত হবেই। সেই লক্ষ্যে তিনি প্রস্তাবিত চলনবিল জেলার ভৌগলিক ম্যাপ এবং বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরী করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দিনের পর দিন যুদ্ধ করেছেন। তাঁর রেখে যাওয়া প্রজন্ম আজও আন্দোলন করে যাচ্ছে। এম এ হামিদ প্রকৃতই ছিলেন চলনবিলের ‘ ধ্রুব তারা’। তাঁর দেখানো আলোর পথেই নতুন প্রজন্ম চলছে চলনবিলের কাঙ্খিত উন্নয়নের দিকে।

#মোঃ আবুল কালাম আজাদ# সভাপতি, চলনবিল প্রেসক্লাব, গুরুদাসপুর , নাটোর #০১৭২৪ ০৮৪৯৭৩# তারিখ-১/৩/২০২১ খ্রি.

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD