সলঙ্গা (সিরাজগঞ্জ) থেকে ফারুক আহমেদঃ
বোরো ক্ষতে নেকব্লাস্টসহ বিভিন্ন রোগ বালাই ও শিলাবৃষ্টির সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে সিরাজগঞ্জ সলঙ্গায় আগাম জাতের বোরো ধান কাটা – মাড়াই শুরু হলেও করোনাভাইরাস ও আবওহায়া অফিস থেকে বলা ০১ মে আবারও বৃষ্টি পাতের সম্ভাবনা পরিস্থিতি নিয়ে বোরো ধান ঘরে তুলতে পারবে কি না সেই শঙ্কায় রয়েছেন সিরাজগঞ্জের সলঙ্গার কৃষকরা। আগাম জাতের ধান কাটা ৩৫০০ হতে ৪০০০ হাজার টাকা বিঘা ধরে শ্রমিক মিলেও নাবি জাতের ধান কাটা নিয়ে শ্রমিক সংকটের কারণে সময় মতো ধান কাটা নিয়ে তাদের মনে রয়েছে দুঃশ্চিন্তা মাঠে ধান মনে ভয়। ফলে মাঠে বাম্পার ফলন হলেও দিন দিন ধানের দাম কমে যাওয়ায় আনন্দ নেই কৃষকের মনে।
কৃষকরা বলছেন- ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আগাম জাতের ধান কাটা প্রতি বছর বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটার জন্য শ্রমিক আসে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গাসহ তাড়াশ, রায়গঞ্জে কিন্তু এরপরও শ্রমিক সঙ্কট দেখা দেয়। খরচ বেড়ে যায় শ্রমিকের আর এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে শ্রমিকরা আসতে চাচ্ছে না। ফলে শ্রমিক সঙ্কটের কারণে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।সলঙ্গা থানার ৩নং ধুবিল ইউনিয়নের কৃষক ইয়াকুব আলী বলেন, ভাই কি আর কমু (বলব), খেতে (জমিতে) ধান পাইক্কা আছে, লোক পাচ্ছি না। পাহা (পাকা) ধানে হিল(শিল) পড়লে ত সর্বনাশ। কিভাবে ধান কাইট্রা বাড়ি আনব সেই চিন্তায় এখন অস্থির। ধান ঘরে তুলতে না পারলে বউ-বাচ্চা নিয়া খামু কি। ভাই বেশি করে লেহেন (লিখেন) আর ফডো কইরা নেন, যাতে কামলা (শ্রমিক) পাওয়া যায়।
সলঙ্গা থানার রামকৃষ্ণপর ইউনিয়নের কৃষক সুলতান মাহমুদ জানান, অন্য বছর বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রচুর শ্রমিক আসত। কিন্তু এরপরও শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। কিন্তু এ বছর থানায় বিভিন্ন ভাটায় শ্রমিক কাজ করায় তাড়াছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমিক কম থাকায় আমরা শ্রমিক সংকটে পরেছি। কি করে ধান ঘরে নিব বুঝতে পারছি না।একই থানার আমশড়া গ্রামের কৃষক ফারুক আহমেদ বলেন, আমি সোয়া চার বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। ক্ষেতের ধান পাকতে শুরু করেছে।গত সাপ্তাহে শ্রমিকের জন্য বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে অবশেষে ৩০০০ টাকা ধরে কয়েক জন শ্রমিকে ধরে আগাম জাতের কিছু ধান কাটিয়েছি।বাদ বাকি টুকু জমি সামনের সপ্তাহ থেকে কাটা শুরু হবে। লকডাউন রোমজানের কারণে চায়ের দোকান দিনের বেলায় বেচা – কেনা না হওয়ার কারণে ৩ – ৪ জন চায়ের দোকানদারেরা ধান আমাকে কেটে দিবে বলে তারা মাঠে নামবেন ওয়াদা দিয়েছেন। তারা না কেটে দিলে আমি নিজেই কাটা শুরু করবো। এছাড়া পুলাপান নিয়ে যতটুকু পারি এগিয়ে নিবো ।
তাড়াশ উপজেলার রানি দিঘি গ্রামের কৃষক শিপোন সরকার বলেন, ‘বোরো মৌসুমে জেলার বিভিন্ন উপজেলাগুলো হতে কয়েক হাজার শ্রমিক এসে ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়ে যায়। কিন্তু এবার কী হবে? ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস লকডাউন খুললেও আবারও লকডাউন পরার শস্কায় ভুগছেন শ্রমিকেরা এর মধ্যে অন্য উপজেলা থেকে কীভাবে শ্রমিকরা আসবেন। ঝড়-ঝাপটার ভয় তো আছেই আর যদি শ্রমিকরা লকডাউনের মধ্যে সময় মতো আসতে না পারেন, তাহলে কীভাবে ধান ঘরে উঠবে? এখন দুশ্চিন্তাই আছি।রায়গঞ্জ উপজেলার ৩নং ধুবিল ইউনিয়নের কৃষিকর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আমরা খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। বিশেষ করে মাঠের পাকা সোনালী ধান যাতে কৃষক নির্বিঘ্নে ঘরে তুলতে পারেন সেজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে শ্রমিকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।চলতি বোরো মৌসুমে রায়গঞ্জ উপজেলায় ধানের ফলন এবার রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উপজেলায় এবার জমিতে লক্যমাত্রার চেয়ে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলনেরও সম্ভাবনা রয়েছে।