ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহের গুরুত্ব?

Spread the love
 
খোন্দকার আমিনুল  ইসলাম আবদুল্লাহ
ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে বিয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। যদি আসে ইসলামধর্মের কথা তো আমরা সবাই জানি যে হজরত আদম (আ:), আল্লাহযখন তাকে দুনিয়ায় প্রেরণ করেন আমাদের আদি পিতা হিসেবে তখনতিনি খুবই একা ছিলেন, তার একাকীত্ব দূর করতে এবং আরো অনেককারনেই বিবি হওয়া (আ:) কে দুনিয়ায় প্রেরণ করা হয় আর হজরতআদম (আ:) এবং বিবি হওয়া (আ:) কে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দেয়াহয়। একজন নারীই পারে মৃত মনে প্রাণ সঞ্চার করতে। বন্ধুত্ব, প্রেমসতীত্ব, সামাজিকতা, পবিত্রতা এগুলো রক্ষা হয়ে থাকে বিবাহ বন্ধনে। ইসলাম ধর্ম, নারী ও পুরুষের মাঝে সুন্দর এবং পবিত্র সম্পর্কের জীবনযাপনের জন্য বিবাহের মত সুন্দর ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
ইসলাম রীতিতে বিবাহ গুরুত্ব?
ইসলাম ও লাইফ ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। মানুষের অগাধও উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরা সত্যিকার অর্থে অভিশাপ। এই অভিশাপ ধ্বংসেরপথে নিয়ে যেতে পারে, তাই ইসলাম জোর তাগিদ দিয়ে বিবাহ বন্ধনেআবদ্ধ হওয়ার কথা বলে দিয়েছে। শরীরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যেমনখাদ্য প্রয়োজন তেমনি মনের পবিত্রতা, চরিত্র ও সতিত্ব এগুলো বাঁচিয়েরাখে বিবাহ। অন্য ভাবে বলা যায়, ইসলামের রীতি অনুযায়ী বিবাহবন্ধনে স্বামী স্ত্রী একে অপরকে বাঁচিয়ে রাখে। ইসলাম যেমন স্বামী কেস্ত্রীর জন্য করে দিয়েছেন তেমনি স্ত্রী কে করেছেন স্বামীর জন্য।
জেনে নিন ইসলামে বিয়ের ৩ টি রুকন ও কিছু শর্ত?
মুসলমানরা সবাই জানি বিয়ের রুকন তিনটি, সেগুলো হলো –বিয়ে সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে সমূহ প্রতিবন্ধকতা হতে বর-কনে উভয়েমুক্ত হওয়া। যেমন- বর-কনে পরস্পর মোহরেম হওয়া; ঔরশগত কারণেহোক অথবা দুগ্ধপানের কারণে হোক। বর কাফের কিন্তু কনে মুসলিমহওয়া, ইত্যাদি।
ইজাব বা প্রস্তাবনা: এটি মেয়ের অভিভাবক বা তার প্রতিনিধির পক্ষথেকে পেশকৃত প্রস্তাবনামূলক বাক্য। যেমন- বরকে লক্ষ্য করে বলা যেতেপারে “আমি অমুককে তোমার কাছে বিয়ে দিলাম” অথবা এ ধরনেরঅন্য কোন কথা।
কবুল বা গ্রহণ: এটি বর বা বরের প্রতিনিধির পক্ষ থেকে সম্মতিসূচকবাক্য। যেমন- বর বলতে পারেন “আমি গ্রহণ করলাম” অথবা এধরনের অন্য কোন কথা।এছাড়াও রয়েছে কিছু শর্ত, শর্তগুলো –
• ইশারা করে দেখিয়ে দেয়া কিংবা নামোল্লেখ করে সনাক্ত করা অথবাগুণাবলী উল্লেখ অথবা অন্য কোন মাধ্যমে বর-কনে উভয়কেসুনির্দিষ্ট করে নেয়া
• বর-কনে প্রত্যেকে একে অপরের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া।
• বিয়ের আকদ (চুক্তি) করানোর দায়িত্ব মেয়ের অভিভাবককে পালনকরতে হবে।
• বিয়ের আকদের সময় সাক্ষী রাখতে হবে।
• বিয়ের প্রচারণা নিশ্চিত করতে হবে
• অভিভাবককে কনের ধর্মের অনুসারী হওয়া
• আদেল বা ন্যায়বান হওয়া।
• বুদ্ধিমত্তার পরিপক্কতা থাকা।
মানুষের জীবনে বিয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা?
উপরের কিছু তথ্য আর ইসলামের নিয়ম, রুকন, শর্ত এসব জানার পরআমরা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছি মানব জীবনে বিয়ে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তা’লা যেমন মানুষের মধ্যে বিভিন্ন্য চাহিদা দিয়েছেন, তেমনিএসব চাহিদা পূরণের উপায় ও বলে দিয়েছেন। তন্মধ্যে বিয়ে নিয়েইসলামে সকল কিছু বিস্তারিত বর্ণনা করা আছে। কোনো প্রকারপাপাচার, চরিত্র নষ্ট হয় এমন কাজ কিংবা সতিত্ব হারিয়ে হেলার আগেবিয়ে করে নেয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে পাপ কিংবা এইসব কোনোসর্বনাশ হয়ে যাওয়ার আগে ইসলাম আমাদেরকে বিয়ের মাধ্যমে সুন্দরজীবন-যাপনের পথ দেখিয়ে দিয়েছে।
বিয়ের ইহকালীন ও পরকালীন গুরুত্ব এবং উপকারিতা?
• বিবাহ একটি অসম্পূর্ণ মানুষকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলে।
• বিয়ে পরিবার গঠনের জন্য।
• বিয়ে শান্তি এবং নিরাপত্তা প্রদান করে।
• বিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের বন্ধন।
• বিয়ে ভালবাসা এবং সুখের অন্যতম একটি উৎস।
• বিয়ে আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রেখেযাওয়া সুন্নাহ।
• বিয়ে প্রশান্তি বা পার্থিব চিন্তামুক্ত রাখে।
• বিয়ে আল্লাহর বিশেষ দান বা উপহার।
• মন্দ চিন্তা, অস্থিরতা ও পাপ থেকে দূরে রাখে।
• বিয়ে পুণ্য অর্জন, দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেয়।
• স্বামী ও স্ত্রী একে অপরের কল্যাণকামী হয়।
• সন্তান, বংশ ও মুসলমান বৃদ্ধির মাধ্যমে ইবাদাত বৃদ্ধি।
ইসলামে বিয়ের জন্য নির্ধারিত মাস, দিন বা সময়?
বিয়ে হচ্ছে আল্লাহর অশেষ নেয়ামত এবং রাসূল (সা:) ও গুরুত্বপূর্ণসুন্নত। তারপর ও মানুষের মনে এ প্রশ্ন আসতেই পারে, এমন কি কোনোদিন মাস বা সময় আছে যখন বিয়ে করা উচিত হবে না? একটু ভাবলেউত্তর টাকা আপনি নিজেই দিতে পারবেন। হ্যা, ইসলাম বিয়ে কে জায়েজকরে দিয়েছে। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ এবং শান্তির ধর্ম, যেখানে কোনোকুসংস্কার বলতে কিছু নেই। তাই ইসলামে, বিয়ের জন্য নির্দিষ্ট কোনোদিন, মাস, বা সময় কিছু নেই, আল্লাহ এর নির্দেশিত যেকোনো দিন এবংযেকোনো সময়ই বিয়ে করা যাবে। বিবাহের জন্য জুমার দিন হচ্ছে উত্তমদিন।
ইসলামে বিবাহের সামাজিক গুরুত্ব?
মানুষ হিসেবে আমরা একটা সমাজে বসবাস করি। তাই যেনো সামাজিকবিশৃঙ্খলা না ঘটে এজন্য ইসলামের কিছু নিয়ম আছে যা মেনে চললেসুস্থ সমাজ ব্যাবস্থা রক্ষা পায়। তার জন্যই বিয়ে নির্ধারণ করে দেয়াহয়েছে অবিবাহিত নর-নারীর জন্য। বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন ওবটে। বিয়ের মাধ্যমে সমাজে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন পাপ থেকে সমাজ কেরক্ষা করা যায়। একই সমাজে বসবাসরত নারীরাও নিজেদেরকে সুরক্ষিতঅনুভব করে থাকে। অপরদিকে সুন্দর সমাজে পুরুষের দ্বারা কোনোখারাপ কাজ হবার সম্ভাবনা থাকে না।
ইসলামী শরীয়তে বিয়ের উপকারিতা?
বিয়ে ইসলামী শরিয়তের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। বিয়েচারিত্রিক অবক্ষয় রোধের একমাত্র হাতিয়ার। আদর্শ পরিবার গঠন, মানুষের জৈবিক চাহিদাপূরণ ও মানবিক প্রশান্তি লাভের একমাত্র ওপ্রধান উপকরণ বিয়ে । ইবাদাত বাড়ানো, ঈমান বাড়ানো, দ্বীন-দ্বারব্যক্তি হওয়া, দায়িত্ব পালন সহ নিজের ব্যক্তিত্ব বিকাশে বিয়ে অনেকগুরুত্বপূর্ণ ।ইসলামে, বিয়ে কি করতেই হবে নাকি না করলেও হবে?কি বলে ইসলাম? বিয়ে কি করতেই হবে নাকি না করলেও হবে? বিয়ে কিফরজ নাকি ওয়াজিব? বিয়ে করার জন্য কি সামর্থ থাকতে হবে নাকিচাইলে এ বিয়ে করে নেয়া যাবে?ইসলামী শরীয়তে বিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের গুরুত্ব এতটাই যে, ব্যাভিচার এর মতো পাপকর্ম সহ নিজের চরিত্র রক্ষার জন্য আল্লাহ বিয়েকরার পরামর্শ দিয়েছেন। যেসকল নর-নারীর বিয়ে করার প্রয়োজনতাদের বিয়ে দিয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
তবে, শুধু বয়স হয়েছে অথবা বিয়ে করতে চাইলেই বিয়ে দেয়া যাবে না। শুধু বিয়ের যোগ্য নারী-পুরুষই বিয়ে করতে পারবেন। কোনো কোনোক্ষেত্রে বিয়ে করা ওয়াজিব। আবার স্ত্রীর হক আদায় করতে না পারারব্যাপারে যে- ব্যক্তি স্থির নিশ্চিত, তার পক্ষে বিয়ে করা হারাম।
মহান আল্লাহ্ আমাদের সকলকে কুরআন ও সুন্নাত মোতাবেক জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করুন  ।
লেখক : তরুণ আলোচক ও গবেষক ।
পরিচালক : মারকাযুদ্ দাওয়াহ উচ্চতর গবেষনা ও সেবা কেন্দ্র।
সচিব দাওয়াহ : কুরআন মজলিস বাংলাদেশ বগুড়া জেলা । 
সদস্য : জাতীয় মুফাসসির পরিষদ বগুড়া জেলা  ও
সাবেক সম্পাদক : অন লাইন নিউজ পোর্টাল   বিডি নিউজ ২৬
01511-995925
Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD