সাব্বির আহম্মেদ :সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সদর ইউনিয়নের প্রায় ১০-১৫টি গ্রামের ফসলী মাঠে অবৈধভাবে পুকুর খনন, সরকারী খাল দখল করে ভরাট ও পানি নিষ্কাসনের ব্রীজ ও কালভার্ট মুখ বন্ধ করে মাছ চাষের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় অনাবাদী হয়ে পড়েছে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর ফসলী জমি।
এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ওই সকল ফসলী মাঠের ১৫-২০ হাজার কৃষক। তারা বলছেন , তাদেও জলাবদ্ধ জমির জলাবদ্ধতার আশু নিরোসন না হলে আগামী দিনে তারা চরম খাদ্য সংকটের পাশাপাশি অর্থনৈতিক দৈন্যতায় পরবেন। বিদিমাগুড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল গফুর (৬০) জানান, চলতি বছর তাড়াশ সদর ইউনিয়ন এলাকার শত শত কৃষক অব্যাহত জলাবদ্ধতার কারণে রবিশষ্য আবাদ করতে পারেন নি। আবার বোরো আবাদের জন্য প্রস্তুতি নিলেও জলাবদ্ধতার নিরোসন না হওয়ায় বোরো আবাদও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে । তিনি আরো জানান , সকল জমিতে এখনো হাটুঁপানি। অথচ বিগত ৩-৪ বছর পুর্বে এ সকল জমিতে কার্ত্তিক-অগ্রহায়ন মাসে রবি শষ্যে মাঠ ভরে থাকতো। আর রবিশষ্য তুলেই করা হতো বোরো আবাদ।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, গত ৩-৪ বছরে তিন ফসলী এলাকা তাড়াশের সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া, মাধবপুর , মথুরাপুর, শ্রীকৃষ্ণপুর, বিদি মাগুড়া, চালা মাগুড়া সহ আশেপাশের গ্রামের প্রায় ১০-১৫টি ফসলী মাঠে প্রায় দুই শতাধিক পুকুর খনন করা হয়েছে। যাতে করে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে অত্র এলাকা। অপরদিকে কৃষক নেতা মীর শহীদুল ইসলাম শহীদ বলেন, রাস্তা সংলগ্ন খাল দখল করে ও পানি নিষ্কাসনের ব্রীজ, কার্লভাটের মুখ বন্ধ করে পুকুর খননের ফলে কার্যত বৃষ্টির পানিও নিষ্কাসনের আর পথ নেই। প্রভাবশালীদের বেপড়োয়া পুকুর খনন বর্তমানে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ফসলী জমি নিয়ে। শুরু হয়েছে পুকুর খননকারী প্রভাবশালী ও জলাবদ্ধ জমির মালিকদের রেশারেশি। বর্তমান অবস্থায় ফসলী জমিতে ফসল উৎপাদন করতে না পেরে ফুঁসে উঠছেন হাজার হাজার কৃষক।
এরই প্রেক্ষিতে তাড়াশ ইউএনও মোঃ মেজবাউল করিম জলাবদ্ধতা নিরোসনে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি জলাবদ্ধতা নিরোসনে করণীয় ঠিক করতে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুলন্নাহার লুনাকে প্রধান করে দুই মাস পুর্বে একটি কমিটি করে দেন।
সে কমিটি কিছু সুপারিশ করলেও প্রভাবশালীদের খনন করা ওই পুকুর গুলোর কারণে সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করাও কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুলন্নাহার লুনা।এদিকে গত শুক্রবার ফসলী জমির জলাবদ্ধতা নিয়ে তাড়াশের শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে প্রভাবশালী পুকুর খননকারী ও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন, ওই এলাকার কৃষক জহরুল ইসলাম।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ ইউএনও মোঃ মেজবাউল করিম জানান, তাড়াশের সদর ইউনিয়ন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরোসনে তারা কাজ করছেন। পাশাপাশি উপজেলার সর্বত্র পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জেল জরিমানাও করা হচ্ছে যা অব্যাহত থাকবে।
অপরদিকে জলাবদ্ধতা নিরোসনে বাস্তবতার তাগিদে শুক্রবার শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামের স্কুল মাঠে ইউনুস তাড়াশীর সভাপতিত্বে এক কৃষক সমাবেশে সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল আজিজ বলেছেন, চলনবিল অঞ্চলের পানি দ্রত নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে। অবৈধ ভাবে সরকারী খাল দখল কারীদের সরকারী খাল ছেড়ে দিতে হবে । তিন ফসলী কৃষি জমি কেটে পুকুর খননের প্রবনতা বন্ধ করতে হবে। আর যেন একখন্ড জমিও পুকুরে পরিণত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । আর স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সরকারী খাল দখল করে ও অবৈধভাবে পুকুর খনন করে যারা ফসলী মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে ও পুকুর খননের তদবীরকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন তিনি।