তাড়াশে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌচাষিরা

Spread the love

মোঃ মুন্না হুসাইন তাড়াশ প্রতিনিধঃ বর্তমানে তাড়াশ উপজেলার মাঠ জুড়ে শোভা পাচ্ছে সরিষার হলুদ ফুলের বাহার। সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত উপজেলার প্রতিটি সরিষার মাঠ। শীতের শিশির ভেজা সকালে কুয়াশার চাদরে ঘেরা বিস্তীর্ন প্রতিটি মাঠ যেন কবির লেখা হলুদ গাঁদার একখানা চিঠি।

যতদুর দৃষ্টি যায় শুধু সরিষা ফুলের হলুদ রঙের চোখ ধাঁ-ধাঁনো বর্ণীল সমারোহ। সরিষা ক্ষেতের মৌমাছির গুনগুন শব্দ প্রকৃতিতে অন্যমাত্রা যোগ করেছে। সরিষার ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহ আর প্রজাপতির এক ফুল থেকে আরেক ফুলে ছোটাছুটি এক অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই যেন মনো মুগ্ধকর এক মূহুর্ত। দিগন্ত জোড়া সরিষার হলুদের সমারোহ দূরন্ত পথিকের  কিছুটা হলেও ছবি তোলার তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মামুন রশিদ জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১০হাজার ২শত ১০হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিলো। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উন্নত জাতের সরিষা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশির ভাগ জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। তবে আগাম জাতের সরিষায় ফুল আসাও শুরু করেছে। এমন লাভজনক তৈল জাতীয় ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে চলতি সরিষা চাষের মৌসুমে উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ের ১০ হাজার ২শত জন কৃষককে কৃষি প্রণোদনার অংশ হিসেবে বিনামূল্যে উন্নত জাতের সরিষার বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সব সময় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।   এবার সরিষার বাম্পার ফলনের সঙ্গে বাজারে দামও ভালো পাবেন সরিষা চাষীরা এমনটিই আশা করা হচ্ছে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫হাজার ৫শত বক্সের মাধ্যমে সংগ্রহ করছেন মৌয়ালরা। 
নাটর থেকে আসা মৌয়াল তোফায়েল  ইসলাম জানান, সরিষার জমিতে তারা প্রায় ৩ মাস থাকবেন। এরপর কালোজিরা ও ধনিয়ার জমিতে মধু সংগ্রহ করতে যাবেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। সেখান থেকে লিচুর মধু সংগ্রহে যাবেন পাবনার অথবা দিনাজপুরে। সবশেষে যাবেন সুন্দরবনে। এভাবেই তারা বছর অবধি বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে মৌবাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। তারা বছরে সাড়ে ৬মাস মধু সংগ্রহ করেন। এই সময় তাদের মৌমাছির আলাদা কোনো খরচ করতে হয় না। যেহেতু ফুল থেকেই মধু সংগ্রহ করে তারা নিজেদের খাবার সংগ্রহ করতে পারছে। কিন্তু বাকি সাড়ে ৬মাস মৌমাছিকে চিনি খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। কিন্তু চিনির দাম অনেক হওয়ার কারণে আগামী বর্ষা মৌসুমে মৌমাছি পালনে তাদের খরচ অনেক বেশি হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন মৌয়ালরা। 
আরেক মৌয়াল আকিজ রহমান বলেন, প্রতি সপ্তাহে এক একটি বক্স থেকে ৫ থেকে ৮ কেজি মধু পাওয়া যায়। এভাবে সকল বক্স থেকে সপ্তাহে ১০থেকে ১২মণ মধু সংগ্রহ করে থাকেন তারা। তবে বাজারে প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা বেশি দামে মধু বিক্রি করতে তাদের। বর্তমানে বাজারে ৪-৫হাজার টাকা মণ হিসেবে মধু বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি সরিষা ফুলের সব থেকে ভালো মানের মধু পাইকারি প্রতি কেজি ২৫০-৩০০ টাকা ও মধ্যম মানের ২০০ টাকা দরে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা  বলেন, সরিষা ফুলের পাশে মৌমাছির চাষ হলে সরিষার ফলন অনেকগুন বেড়ে যায়। তাই সরিষার ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সরিষা তে থেকে বিনা খরচে মধু সংগ্রহ লাভজনক একটি ব্যবসা। এতে মৌমাছি ব্যবসায়ী যেমন একদিকে মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে েেত মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মামুন জানান, ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং বিগত কয়েক বছর সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় চলতি মৌসুমে উপজেলায় রেকর্ড পরিমান জমিতে উন্নতজাতের সরিষার চাষ হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি সরিষার ক্ষেতেই ভালো ফুল এসেছে। বর্তমান সরিষার অনুক’লে থাকা আবহাওয়া সরিষা ঘরে তোলার পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে এবারও চাষীরা সরিষার বাম্পার ফলন পাওয়ার সঙ্গে বাজারে দামও ভালো পাবেন। পাশাপাশি সরিষার ফুল থেকে কয়েক টন মধু সংগ্রহ করার আশাও করা হচ্ছে। মৌয়ালদের পাশাপাশি কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও আগ্রহী চাষীদের মাঝে মধু সংগ্রহ করার লক্ষ্যে মৌ বাক্স প্রদান করা হয়েছে। সরিষার ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ একটি বাড়তি আয়। তাই কৃষি বিভাগের প থেকে চাষীদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা প্রদান কার্যক্রমও অব্যাহত রাখা হয়েছে।
Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD