গুরুদাসপুর (নাটোর) সংবাদদাতাঃ পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয় লুৎফুন্নেছার। সে বছরই মারা যান মা রইছন বেওয়া। চুকে যায় লেখাপড়ার পাঠ। অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয় তাঁর উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু দমে যাননি লুৎফুন্নেছা। তার গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তানদের শিক্ষিত করার প্রতিজ্ঞা করেন মনে মনে। স্বপ্নদষ্টা মায়ের সেই লালিত স্বপ্ন ব্যার্থ হয়নি। অনেক ত্যাগ স্বীকার করে একে একে শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত করেছেন চৌদ্দজন ছেলেমেয়েকে। এখন সাফল্য তার হাতের মুঠোয়।শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রাখায় গুরুদাসপুর উপজেলা ও নাটোর জেলা পর্যায়েও শ্রেষ্ঠ জয়িতা (সফল জননী) নির্বাচিত হয়েছেন। চেষ্টা করলে অনেক কিছুই সম্ভব। লুৎফুন্নেছা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
নাটোর জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা গত শনিবার বেগম রোকেয়া দিবস উদযাপন উপলক্ষে লুৎফুন্নেছাকে আড়ম্বর এক অনুষ্ঠানে জেলার সফল মাতা নির্বাচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করায় অভিনন্দন জানিয়েছেন। সেই সাথে তাঁকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করেছেন।
লুৎফুন্নেছা নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা চরপাড়া গ্রামের মরহুম শিক্ষক আজিজুল হকের স্ত্রী এবং বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. একরামুল হক ও অধ্যাপক লুৎফুল হকের রতœাগর্ভা মা। তাঁর সপ্তম ছেলে শফিকুল হক রাজশাহী সরকারী সিটি কলেজের অধ্যাপক। ছোট ছেলে কামরুল হক মুক্তিযোদ্ধা মহসীন আলী কলেজের প্রভাষক। তাঁর প্রথম ছেলে এনামুল হক, দ্বিতীয় ছেলে রফিকুল হক ও ষষ্ঠতম ছেলে এমদাদুল হক শিক্ষক। তৃতীয় ছেলে জহুরুল হক সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের হেডক্লার্ক, চতুর্থ ছেলে মেসবাউল হক ফার্মাসিষ্ট, নবম ছেলে নাজমুল হক বুয়েট থেকে প্রকৌশলী পাশ করে বর্তমানে সিঙ্গাপুরে কর্মরত আছেন।
তাঁর চার কণ্যার মধ্যে মাহমুদা খাতুন ও রশিদা পারভীন গৃহিনী এবং শহিদা পারভীন ও মাসুদা পারভীন প্রাইমারী স্কুলের সহকারী শিক্ষক। চৌদ্দজন ছেলেমেয়েকে একে একে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা সহজ ছিলো না বেগম লুৎফুলনেছার। তাঁর মহৎ উদেশ্যকে সফল করতে বরাবর আর্থিক ও মানসিক সাপোর্ট দিয়েছেন স্বামী আজিজুল হক।
সংসারে হাড়ভাঙগা খাটুনি করে চৌদ্দজন ছেলে মেয়েকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে বেগম লুৎফুন্নেছাকে। প্রতিবেশীদের মুখ থেকেও অনেক গঞ্জনা শুনতে হয়েছে তাঁকে। ছোট ছেলে কামরুল হক জানান- নব্বয়ের কোটায় তার বয়স। বার্ধক্যজনিত কারনে তার মাজার হাড় ভেঙ্গে গেছে। বর্তমানে তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। তিনি এখন মৃত্যু পথযাত্রী।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম আকতার বলেন- বেগম রোকেয়ার এজেন্ডাই যেন বাস্তবায়ন করেছেন লুৎফুন্নেছা। তাঁর মত সকল নারী জেগে উঠলে নারী সমাজ আরো আলোকিত হবে।
তাঁর এই সাফল্যের কথা জানতে চাইলে অসুস্থ অবস্থায় উচ্ছ¡াস প্রকাশ করে লুৎফুন্নেছা বলেন- ইচ্ছা থাকলে স্বপ্নপূরণ হবেই।#