অভিযোগ করব কোথায়, বিচার করবে কে?

Spread the love

অভিযোগ করব কোথায়, বিচার করবে কে?
বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শুকুর মাহমুদ

প্রত্যেক জাতির সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র চলে, রাষ্ট্রের নাগরিকগণ সংবিধান মেনে চলে। আমাদের দেশের সংবিধান আমাদের কাছে পবিত্র, এটিকে আমরা সম্মান করি- মেনে চলি। দেশের নির্বাচিত সাংসদগণ জাতীয় সংসদে বসে সংবিধান প্রনয়ণ করেন, সংবিধানের সংশোধন-সংযোজন, সংস্কার বা বিয়োজন করেন। যারা সংবিধানে আইন প্রনয়ন করেন, তারা অনেকেই আইন লঙ্ঘন করে থাকেন। সংবিধানের আইনে ঘুষের আদান-প্রদান দন্ডনীয় অপরাধ অথচ আমাদের অনেক সাংসদরা’ই ঘুষ বানিজ্যে ব্যস্ত। অবশ্য তাদের ভাষায় এটি ঘুষ নয়, কমিশন, পিসি বা পার্সেন্টেস। স্যারেরা কমিশন নিজের হাতে নেন না, সরকারি আমলা-কামলা, চামচাদের মাধ্যমে কমিশনের আদান-প্রদান হয়। কেউ কেউ বেটা-ভাতিজা অথবা জামাতার মাধ্যমে করে থাকেন।

যারা আমাদের সংবিধানে আইন প্রণয়ন করেন তারাই যদি আইন লঙ্ঘন করেন। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা কি হতে পারে? সুযোগ বুঝে আইন শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বাধাহীন ভাবে ঘুষ-দূর্নীতি করার সুযোগ খুঁজে বের করতে পারে।

পূর্বে আমার একটি লেখায় উল্লেখ করেছিলাম দেশ ও জাতির উন্নয়ন করতে প্রতিটি সংসদীয় এলাকার একজন সাংসদ সৎ হলে এলাকায় দূর্নীতি ও অপরাধ হবে না। তাঁর সংসদীয় এলাকার ইউএনওগণ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। একটি নির্বাচনী এলাকার সাংসদ ও ইউএনও সৎ হলে ওই এলাকার পুলিশ প্রশাসন অপরাধ করার সাহস পাবে না। এভাবে দেশের প্রতিটি সংসদীয় এলাকার সাংসদগণের সদিচ্ছা পোষন করলে, পুরো দেশ ও জাতি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। তাতে এক মাসের বেশি সময় লাগবে না, পুরো দেশ ভালো হতে। তা না করে যদি আইন প্রণয়নকারী কর্তৃপক্ষই আইন লঙ্ঘন করেন, তবে অভিযোগ করার জায়গা কোথায়, বিচার করবে কে?

দেশের সংবিধানে একটি অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে হাট-বাজার, শপিংমল, যানবাহনে, লোকালয়ের গনজমায়েত স্থানে প্রকাশ্যে ধুমপান করা দন্ডনীয় অপরাধ। নিশ্চয়ই ওই আইনটির মৃত্যু হয়নি, প্রতি পক্ষের মামলায় কারাবরণও করেনি, আইনটিকে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীর অপবাদ দিয়ে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। যার ফলে আইন প্রণয়নকারী কর্তৃপক্ষ আর আইন প্রয়োগকারী সদস্যরাই মুক্তভাবে ওই অপরাধে জড়িয়ে পরছে। দোহায় আপনাদের নিজেরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে অভ্যাস করুন, নইলে আমরা অভিযোগ করব কোথায়, বিচার করবে কে?

দেশের মৎস সম্পদ রক্ষার জন্য শুধু মৎস অধিদপ্তরই নয়, একটি মন্ত্রণালয়ও বিদ্যমান। অথচ দেশের অভ্যন্তরে মৎস নিরাপদ আইন লঙ্ঘন করে যে ভাবে ঘনবাদাই জাল, চায়না করেন্ট জাল দিয়ে রেনু পোনাসহ মাছের ডিম নষ্ট করা হচ্ছে, তার কোন প্রতিকার নেই। এ বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মৎস অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শুধু মাসোয়ারা গুনে নিচ্ছে। প্রতিদিন বাজারে রেনু পোনা সহ নিষিদ্ধ মাছের ছড়াছরি, কোন প্রতিকার নেই। ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসন যখন অভিযানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, তখনই বার্তা পৌছে যায় মৎসজীবিদের কাছে, অভিযোগ করব কোথায়, বিচার করবে কে?

দেশের পবিত্র সংবিধানে আরও একটি অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে শব্দ দুষণ প্রতিরোধ এ আইনটিও কখনোই প্রয়োগ হয় না। এর প্রতিকূলে কোন অভিযোগ করেও লাভ হয় না। গান পিপাসুদের বিনোদনের জন্য নাচগানের আয়োজন করতে প্রশাসন অনুমতি দিয়ে থাকে সেখানে কোন শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দেয়া হয় কি না? তারও কোন তথ্য জানা নেই, গান পিপাসু-নাচ দর্শনার্থীরা গানের মঞ্চেই উপস্থিত থাকে। অথচ উচুতে মাইক লাগিয়ে উচ্চ আওয়াজে শব্দ দূষণ করা হয়, চলে রাত ভর। শান্তি প্রিয় মানুষের শান্তির ব্যঘাত ঘটে, তা নিয়ে প্রশাসনের কোন মাথা ব্যথা নেই। শব্দ দুষন আইন কোথায় থাকে?

শহরের বাইরে ধর্ম সভা অনুষ্ঠিত হয় অথচ অর্ধ কিলোমিটার দুরে শহরের ভিতরে বিক্ষিপ্ত ভাবে মাইক লাগিয়ে বাধ্য করা হয় সভা শুনতে, এ অপরাধের দায়ে শব্দ দুষণ আইনে কেন মামলা করা হবে না? হক্কানী আলেম-উলামাগণ ধর্মসভা করেন রাত মধ্যভাগের আগেই শেষ হয়। অথচ কিছু পীর সাহেবদের নামীক ওরশে বিক্ষিপ্তভাবে মাইক লাগিয়ে বিরতিহীন রাতভর গজল ও বয়ান চলে, এতে শান্তি প্রিয় মানুষের শান্তি বিঘিœত হয়। অসুস্থ্য রোগি ও শিশুরা মানষিক নির্যাতনের শিকাড়। একই ধারায় সোনাতন ধর্মাবলম্বীরাও কীর্তনানুষ্ঠানে উচুতে মাইক লাগিয়ে বিরতিহীনভাবে দিবারাত্র শব্দ দূষণ করতে থাকে। সূত্র মতে এটিও শব্দ দূষণ আইন লঙ্ঘনের শামিল। কারণ কীর্তন পিপাসুরা কীর্তনানুষ্ঠানেই উপস্থিত থাকে তবুও উচ্চস্বরে মাইকের শব্দ প্রচার করা হয়। অভিযোগ করব কোথায়, বিচার করবে কে?

কথায় বলে, বিড়াল যদি বিড়ালের বাচ্চা না খেত তবে দেশে বিড়ালের উন্নয়ন বাধা গ্রস্থ্য হত না। তেমনই আইনের জনকরা আর আইনের রক্ষাকারীরা যদি আইন লঙ্ঘন না করতেন, তবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন হতে স্বাধীনতা পরবর্তী ১০ বছরের বেশি সময় লাগত না।

আসুন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই, নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করি, দেশ ও জাতির উন্নয়নে অংশিদার হই।

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD