ইসলামে বিজয় দিবসের গুরুত্ব

Spread the love
মাওলানা মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহঃ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ থেকে এই দিনে মুক্তি লাভ করেছিল বাংলার মানুষ। এই বিজয় শুধু আনন্দের নয়, এই বিজয় পরাধীনতার কবল থেকে মুক্তিলাভের বিজয়। স্বাধীনতার বিজয় নিয়েও রয়েছে ইসলামের ভাবনা। বিজয় দিবস উদযাপনে ইসলামে কোনো বিরোধিতা নেই। বরং দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও বিজয় উদযাপনে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা এবং তারই কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করাই ইসলামের নির্দেশ।
আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (স.) ইসলাম প্রচারের কারণে নিজের মাতৃভূমি ত্যাগ করে হিজরত করেছিলেন মদিনায়। দীর্ঘ ১০ বছর নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর সফলতার সঙ্গে নিজ মাতৃভূমি মক্কা নগরী স্বাধীন করেন। অর্জন করেন মহান স্বাধীনতা ও বিজয়। নবিজি দেশত্যাগের সময় বারবার অশ্রুসিক্ত নয়নে জন্মভূমির দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, ‘হে প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা! আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার অধিবাসীরা যদি আমাকে অত্যাচার-নির্যাতন করে বিতাড়িত না করত, আমি তোমাকে কখনো ছেড়ে যেতাম না।’
দশম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের পর তিনি আনন্দ উদযাপন করেছেন। বিজয়ের প্রথম আনন্দে তিনি আদায় করেছেন ৮ রাকায়াত নফল নামাজ। প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতায় তিনি এত বেশি খুশি হয়েছিলেন, যা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। বিজয়ের আনন্দে নবিজি সেদিন ঘোষণা করেছিলেন—যারা কাবা ঘরে আশ্রয় নেবে, তারা নিরাপদ। এভাবে মক্কার সম্ভান্ত কয়েকটি পরিবারের ঘরে যারা আশ্রয় নেবে, তারা যত অত্যাচার-নির্যাতনকারীই হোক, তারাও নিরাপদ। এই ছিল প্রিয় নবি (স.)-এর মক্কা বিজয়ের আনন্দ উৎসবের ঘোষণা।
বিজয় দিবস উদযাপনে প্রিয় নবি (স.)-এর একটি যুগোপযোগী হাদিস তুলে ধরছি। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর পথে এক দিন ও এক রাত (দেশের) সীমানা পাহারা দেওয়া এক মাসব্যাপী রোজা পালন ও মাসব্যাপী রাত জাগরণ করে নামাজ আদায়ের চেয়ে বেশি কল্যাণকর। এই অবস্থায় যদি ঐ ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে; তবে যে কাজ সে করে যাচ্ছিল, মৃত্যুর পরেও তা তার জন্য অব্যাহত থাকবে। তার রিজিক অব্যাহত থাকবে, কবর ও হাসরে ঐ ব্যক্তি ফেতনা থেকে মুক্ত থাকবে।’ (সহিহ্ মুসলিম)
দেশপ্রেম, দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রহরা ও বিজয় দিবসে তাসবিহ্, ক্ষমাপ্রার্থনা এবং আনন্দ উৎসবও দেশের প্রতিটি নাগরিকের আবশ্যকীয় কাজ। এ বিজয় দিবসে দেশের জন্য আত্মদানকারী সব শহিদের জন্য দোয়া করা ইমানের একান্ত দাবি। যেমনটি আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন—‘হে নবি! যখন আল্লাহর সাহাঘ্য ও বিজয় আসবে; আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দিনে প্রবেশ করতে দেখবেন। তখন আপনি আপনার পালনকর্তার তাসবিহ্ তথা পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন| নিশ্চয় তিনি ক্ষমা ও তাওবা কবুলকারী।’ (সুরা নসর)
রব্বুল আলামিন তিনটি কর্মসূচি এই সুরায় ঘোষণা করেছেন। সেগুলো হলো—১. ফাসাব্বিহ (আল্লাহর তাসবিহ পাঠ তথা পবিত্রতা বর্ণনা করা)। ২. বিহামদি রব্বিক (আল্লাহর হাম্দ তথা শুকরিয় আদায় করা)। ৩. ওয়াসতাগফির (যুদ্ধের সময় ভুলভ্রান্তি তথা সীমালঙ্ঘন থেকে রবের কাছে ক্ষমা চাওয়া)।
সুতরাং, বিজয় দিবসে মহান আল্লাহর প্রশংসা এবং দেশের জন্য আত্মদানকারী সব শহিদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা আমাদের ইমানি দায়িত্ব। মুসলমানদের উচিৎ ইসলামি সংস্কৃতি অনুসরণের মাধ্যমে বিজয় দিবস উদ্যাপন করা।
আল্লাহ্ আমাদেরকে বুঝতে ও মানতে সহজ করুন এবং পরকালে সম্মানিত করুন । মহান আল্লাহ্ আমাদের সকলকে কুরআন ও সুন্নাত মোতাবেক জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করুন ।আমীন ।
Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD