চলনবিলের বাঁকে

Spread the love

চলনবিলের বাঁকে
মুহাম্মদ হানিফ

চিরায়ত এই বাংলার সবুজ গ্রামে-গ্রামে
শীতের আবেশ মেখে হেমন্তনামে।
মাঠে ধান,হাওড়-বিলে অজানা ভাটার টান-
আছে নৈসর্গিক ভাঙ্গা গড়ার নীরব আহবান।

চলনবিল;
শতনদী-খাল-বিলে মধুর মিলনে এক মহাবিল।
বর্ষায় বিস্তর জলরাশি, নীড় ভাঙ্গা ঢেউ আর
বান ডাকা অবাধ্য জোয়ার।
হেমন্ত আনে ফসলের সমাহার, নদীর দু’কূল
আর বালু চরে পাতিহাঁস, বকে’রযুগল।

মাঝে ছেঁড়া দ্বীপ গ্রাম দিগন্ত ছোঁয়া বিল,
শস্যক্ষেত আর জলাভূমি।
অসম মেঠোপথে বাউরি বাতাসে,
লাজুক ডানা মেলে উড়ে মন প্রেয়সী-প্রেমী
মুক্ত বলাকা যেমন আকাশে;
উড়ে অচীন বনের অভুক্ত দুপুরের চিল।

চলন বিলের মায়াবী গোধূলি বেলায় আবছা ধোঁয়ায়,
কুয়াশার মেঘ বলেযায় আগাম শীতের র্বাতা।
গাঁয়ের কর্মঠ পুরুষেরা মাছ ধরে, মাঠে যায়
জোয়াল কাঁধে; রমণীরা গাঁথে স্বপ্ন বুনেনক শিকাঁথা।

সন্ধ্যার আঁধারে শত কোটি জোনাক
আলোর মশাল হয়ে মিটিমিটি জ্বলে।
মাঝ রাতে ক্ষণেক্ষণে শেয়ালের হাক-ডাক;
বেতশ্লতার ঝোঁপে ডাহুকেরা
ঘর বাঁধে যে বিলে।

এমনই বিস্তীর্ণ বিলে নিরবতার কুয়াশায় ভেসে,
দূর গাঁয়ের নিশুতিমাইকের আওয়াজ আসে।
জারি-সারি-মরমী, ভাটিয়ালি-পল্লী গীতি’রসুর
বিরহী মন ছুঁয়ে যায়; ভাবায় অমধুর।

এমননি ঝুম রাত ও পাখির কথাই বলেছেন,
এই বাংলার প্রিয় রেনেসার কবি ফররুখ।
কতোপাখি;
বাংলার খালে-বিলে, বনে-বাদাড়ে
করে উকি ঝুকি।
আরো আছে দূর ঐ গাঁয়ে বহুদূরে,
কবিতাওজানতেন।
তবু লিখেছেন নিরীহ এক পাখি;
নামতার‘ডাহুক’।

চলনবিল;
অনাবিল সৌন্দর্যের আধারইনও তুমি,
জীবন ও জীবিকার অভয়াশ্রম।
কালে কালে তোমার গড়ছে বসতি জাগছেন তুনভূমি;
প্রকৃতি বদলায় আর বদলায় মানুষ আদম।

তোমার মাটিতে পদচিহ্ন এঁকে ধন্য বহু গুণী পুন্যবান,
বহতা নদীর বাঁকে বাঁকে দেখি কতো জনপদ-হাট-বন্দর।
কিংবদন্তির বেহুলার বাসরে আজও ঘুমায় লখিন্দর,
মহুয়ার বনে জমা আছে যত দস্যুতা, রূপকথার উপাখ্যান।

বেঁচে থাকো চিরকাল তোমাকে বড়ই প্রয়োজন।
আমাদের আছো তুমি ঐশ্বর্যময়ী অনন্য বিল;
নামটি তোমার‘চলন’।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD