ইসলামে নতুন মাত্রা যোগ – বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শুকুর মাহমুদ

Spread the love

বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শুকুর মাহমুদ: সকল সৃষ্টির নবী মানবের মুক্তির জিম্মাদার, সাইয়্যেদুল আম্বিয়া, রহমাতুল্লিল আল-আমিন হযরত মুহাম্মদ (স) এর মাধ্যমে আল্লাহ পাক শ্রেষ্ঠ ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে তাঁর পবিত্র কালামুল্লাহ শরিফে তিনি এটির পরিপূর্ণতাও ঘোষণা করেছেন। নবীজির ইন্তেকালের পূর্ব মুহূর্তে একদিন সাহাবিদের উপস্থিতিতে বললেন, আজ হতে ইসলাম ধর্ম পরিপূর্ণতা লাভ করল। পবিত্র কালামুল্লাহ শরিফের বাণী অনুযায়ী প্রমাণিত হয় যে, ইসলামে আর কোন কিছু সংশোধন-সংযোজন বা বিয়োজনের সুযোগ নেই। তারপরও নবীজির ইন্তেকালের পর অনেকেই ইসলামে নতুন নতুন মাত্রা যোগ করার চেষ্টা করেছে। অনেকে নতুন মাত্রা যোগ করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। যারা সংশোধন-সংযোজন বা বিয়োজনের চেষ্টা করেছে তারা বিপথগামী হয়েছে।

মুসলিম পরিচয়ের কিছু মানুষ শিয়া সম্প্রদায়ে প্রবর্তন হয়েছে, তারা ইসলাম থেকে খারিজ হয়েছে। গোলাম আহমেদ কাদিয়ানি নিজেকে নবী দাবি করে তার অনুসারিসহ মুসলিমদের কাছে অবাঞ্চিত হয়েছে। অন্য এক ফেরকা ফকিরি দাবি করে ইসলামে ফেৎনা সৃষ্টি করছে, তারা চিহ্নিত ফেৎনাবাজ। মুসলিম সমাজে তাদের অংশিদারত্ব নেই। এরকম বহু ফেরকাবাজরা নতুন নতুন ফেরকা সৃষ্টি করে ফেৎনা সৃষ্টি করে নিজেরাই ইসলাম থেকে পৃথক হয়ে গেছে।

অন্য ফেরকা, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী ও জুলুস। তারা ইসলামের অভ্যন্তরেই অবস্থান করছে, এক বৈঠকে খাওয়া-দাওয়া, এক জামাতে নামাজ, একই কোরআন ও হাদীসের আলোচনা করছে অথচ আমলে ভিন্ন। তারা নবীজির ইন্তেকাল স্বীকার করে না, নবীর ইন্তেকালের দিনে খুশি (ঈদ) উদযাপন করছে। তারা নিজেদেরকে সুন্নি বলে দাবী করে, তাদের একটি সংগঠন আছে, আহলে সুন্নাত অল জামাত। তাদের দাবীর পিছনে যৌক্তিকতা কতটুক আছে, তার হিসেব কারও কাছে নেই। মৃত্যুর পর কবরে রাখার সময় যখন বলা হবে ওয়ালা মিল্লাতি রাসূল্লিলাহ, তখন যদি রাসূল (স) বলেন সে আমার মিল্লাত ভুক্ত নয়, আমি তাকে চিনি না। তখন নিজে নিজে লওয়া সুন্নি খেতাব ছুড়ে ফেলে দেয়া হবে। নিজের কপালে সুন্নি লিখে ঘুরে লাভ হবে না, রাসূল (স) সুন্নাতের আমল করে প্রকৃত সুন্নি হও। যার উপর সাফায়াতের দায়িত্ব, তিনি’ই বিচার করবেন, কে ওহাবী, কে খারিজী, কে সুন্নি আর কে আহলে হাদিস।

নবীজির ইন্তেকালের ৫৯৩ বছর পর ইরাকের তৎকালিন শাসক মুজাফ্ফর উদ্দিন আবু সাঈদ কুকড়ি ৬০৪ হিজরিতে ইসলামে নতুন এক মাত্রা যোগ করেন, ‘ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী’। নবীজি ইন্তেকাল করেন ১১ হিজরিতে, আর ঈদ-ই মিলাদুন্নবী সৃষ্টি করা হয় ৬০৪ হিজরিতে, ৫৯৩ বছর পর এই নতুন মাত্রা যোগ করা হয়। যারা এটি বিশ্বাস করে মুসলিমদের বিভাজন সৃষ্টি করছে তাদের বুঝের অভাব, এটি ইসলামের আরেক ফেরকা।
হে ইমানদার মুসলিমগণ নবীজির উম্মতের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করিও না, জগতের খেতাবের কোন মূল্য নেই। নিজের গলায় সুন্নি খেতাব নিয়ে অপর ভাইকে ওহাবি, খারিজি খেতাব দিয়ে বিভাজন সৃষ্টি করছ। নিজের আমলের হিসেব মিলাও, যে এবাদৎ আল্লাহ কবুল করবেন রাসূল (স) খুশি হবেন।

নবী করিম (স) বলেছেন বনী ইসরাইলের নবীদের উম্মত হয়েছে ৭২ ফেরকা (৭২ দল) আর আমার উম্মতেরা হবে ৭৩ ফেরকা। তার মধ্যে এক ফেরকা হবে জান্নাতি।

নবীজির ইন্তেকালের ৫৯৩ বছর পর নবীর জন্ম দিনের আনন্দ উৎসব ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী’ পালন করা, ১২শ হিজরিতে ১১৮৯ বৎসর পর নতুন আরো একটি মাত্রা যোগ করা হয়। লাহরের হাজি এনায়েত উল্লা ও মুন্সি আব্দুল মজিদ, নবীজির জন্ম দিন ঈদ-ই মিলাদুন্নবীর সাথে আনন্দ মিছিল জুলুস সৃষ্টি করে, এগুলো বিদআত সৃষ্টি করেছেন।

নবী করিম (স) জন্ম দিনের খুশি বা কোন অনুষ্ঠান করেননি। সাহাবা আজমাইনরা, অনুষ্ঠান করেননি। খোলাফায়ে রাশেদিনের সময়েও নবীর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করা হয়নি, তাবেইনরাও করেননি, তাবে তাবেইনদের সময়েও করেননি। চার মাযহাবের ইমামগণও করেননি। নবীজি ১১ হিজরি সনের ১২ই রবিউল আউয়ালে ইন্তেকাল করেছেন এটি সর্বজন স্বীকৃত।

৬০৪ হিজরীতে ইসলামে নতুন মাত্রা যোগ ঈদ-ই মিলাদুন্নবী ১২শ হিজরীতে ইসলামে আর এক মাত্রা, জুলুস যোগ করা হয়। একই ধারায় বর্তমানে চলছে বাড়াবাড়ি। নবীর জন্মদিনের উৎসব পালন মুসলিম জাতি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। জন্মদিনের উৎসব ইসলাম পরিপন্থি, গ্রহণ যোগ্য নয়। তারপরও কিছুক্ষণের জন্য মেনে নিলাম, নবীর জন্মদিনের উৎসব মিছিল। তবে ঐ মিছিলের অগ্রভাগে বিশেষ বাহনে পুষ্পমাল্য গলায় নিয়ে সম্মাননা গ্রহণ করছেন, উনি কে? তিনি কী নবীর আসেক-পাগলদের বুঝাচ্ছেন আমি নবীজির বিশেষ প্রতিনিধি তার অনুজ। তিনি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে কী ধরে নেয়া যায় নবীর জন্ম দিনের উৎসবে তাকে সম্মাননা দিলেই নবী খুশি হবেন? নবীর মিলাদ পড়া প্রতিটি ঈমান্দার মুমিন মুসলমানের জন্য জরুরী হুকুম রয়েছে। তবে আবু সাঈদ কুকড়ির প্রবর্তিত মিলাদ নয়, সকল হাদিস গ্রন্থের শুরুতেই রয়েছে নবীর মিলাদ। হাদিস সংগ্রহকারীগণ নবীর সিরাত লিখতে নবীর জন্ম বৃত্তান্ত (মিলাদ) লিখেছেন। ঐ মিলাদ পড়ে তাঁর সিরাত (জীবনাদর্শ) পড়–ন। ইসলামে নতুন মাত্রা যোগ করার কোন সুযোগ নেই।

প্রিয় মুসলিম ভাই রাসূল (স) উম্মত সকলের কাছে আহ্বান, মুসলিম ভ্রাতৃত্বে ফাটল সৃষ্টি করিও না। রাসূল (স) বলেছেন সমগ্র মুসলিম এক অঙ্গ, তাই নিজের অঙ্গে আঘাত করলে ক্ষতিগ্রস্থ্য হবে নিজেই।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD