এলজিইডি’র সাথে ঠিকাদারের রশি টানটানি

Spread the love

তাড়াশ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় ¯’ানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) প্রায় ১০ কিলোমিটার জিসি সড়ক সংষ্কার প্রকল্পের বেশ কিছু অংশে কাজ না করেই সব বিল কৌশলে তুলে নেয়ার চেষ্টা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসের সাথে চলছে রশি টানাটানি।
তাড়াশ প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ¯’ানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় বন্যা ও দূর্যোগে ক্ষতিগ্র¯’ পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন (এফ ডি ডি আর আই আর পি) প্রকল্পের আওতায় সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার পৌর সদরের খুঁটিগাছা আরএইচডি হতে নওগাঁ বাজার পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার জিসি সড়ক সংষ্কারের কার্যাদেশ পায় মেসার্স সরোয়ার জাহান এন্টারপ্রাইজ। যার চুক্তি মূল্য ধরা হয় ৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
এ দিকে অসমাপ্ত কাজের মূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা। কিš‘ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের সিডিউলে থাকা ৯৬ মিটার প্যালাসাইডিং, ২টি গাইডওয়াল, ১০টি গাইড পোস্ট ও প্রায় আধা কিলোমিটার রাস্তা কার্পের্টিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়নি। তবুও কৌশলে চুক্তি মূল্যের ৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা বিল তুলে নেয়ার পাঁয়তারা করছেন।
মূল প্রাক্কলনের সিডিউলে থাকা কিছু আইটেম বাস্তবতার নিরিখে প্রয়োজন না থাকায়, সরকারি অর্থ অপচয় রোধে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ সে গুলো বাস্তবায়ন করা অপ্রয়োজনীয় মনে করেন। এ নিয়ে এলজিইডির ঢাকা ও পাবনা অফিসের দুটি তদন্ত কমিটি প্রকল্প পরিদর্শন করে সত্যতা খুঁজে পেয়েছেন। এ কারণে তারা কাজের অতিরিক্ত বিল পেতে পারেন না। এতে সমুদয় বিল তুলে নিলে সরকারের লোকসান হবে প্রায় ২০ লাখ টাকা।
জানা গেছে, রাস্তাটি সংষ্কারের জন্য ২০২০-২১ অর্থ বছরে ¯’ানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে বন্যা ও দূর্যোগে ক্ষতিগ্র¯’ পল্লি সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন (এফ ডি ডি আর আই আর পি) প্রকল্পের আওতায় একটি দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ প্রকাশ করলে কার্যাদেশ পায় ঢাকার মেসার্স ডলি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। দরপত্রে উল্লেখ ছিল মূল রাস্তা ১২ ফিট সংষ্কারের পাশাপাশি দুপাশে প্রশস্ত করণ হবে ০.৯ ও ০.৯ ফিট। কার্যাদেশ পাওয়ার পর সে সময়কার ডলি কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ঠিকাদার হার্ডসোল্ডালের কাজ গায়েব করে। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হলে ঠিকাদার কাজ ফেলে চলে যায়। পরবর্তীতে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ¯’ানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বন্যা ও দূর্যোগে ক্ষতিগ্র¯’ পল্লি সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন (এফ ডি ডি আর আই আর পি) প্রকল্পের আওতায় পুণরায় ওই রাস্তার সংষ্কারের জন্য আবারও দরপত্র আহবান করা হয়। প্রকল্প গ্রহণ করে ৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা প্রাক্কলন তৈরি করা হয়। সে মোতাবেক ৬ কোটি ২৩ লাখ টাকার সর্বোনি¤œœ দরদাতা হিসেবে কার্যাদেশ পান নেত্রকোনার মদন উপজেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সরোয়ার জাহান এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রæয়ারি কার্যাদেশ দেয়া হয়। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর তারা প্রকল্পের কাজ শেষ করেন। পরবর্তীতে বিলের আবেদন করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। তবে ওই প্রকল্পের যাবতীয় তদারকি, মালামাল সরবরাহ ও বিল প্র¯‘তের সমস্ত কাজ করেছেন মাহবুব আলম খাঁন। এবং এলজিইডি কর্র্তৃপক্ষকে তার পেশা সহ বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করছেন বিল ছেড়ে দেয়ার জন্য।
তবে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলছেন, ঠিকাদারের লোকজন কাজ না করেই অতিরিক্ত বিলের জন্য বিভিন্নভাবে হয়রানি ও চাপ সৃষ্টি করে চলেছেন। কিন্ত তারা এ চাপের কাছে নতী স্বীকার না করে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষ কে জানালে, তাঁরা দুটি টিম তদন্ত করে ঘটনা সত্যতা পেয়ে স্কিম রিভাইজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
উপজেলার নওগাঁ বাজারের বাসিন্দা জাকির হোসেন রনি বলেন, কাজের ব্যবহৃত উপকরণও ছিল নি¤œমানের। যারফলে কিছু দিন যেতে না যেতেই দেখা যাবে দুপাশে দেবে যা”েছ।
বিরোইল গ্রামের বাসিন্দা মো. রুবেল বলেন, নওগাঁ বাজার এলাকায় কোনো ইউ ড্রেন নির্মাণ হয়নি। কাজ না করেই বিল তুলে নিলে সরকারের টাকা লোকসান হবে।
মেসার্স সরোয়ার জাহান এন্টারপ্রাইজের সত্ত¡াধিকারী মো: সরোয়ার জাহান মুঠোফোনে বলেন, তাঁর লাইসেন্স হলেও ব্যবহার করেছেন সিরাজগঞ্জের ঠিকাদার মো: মাহবুব আলম খাঁন। এ কারণে কাজের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
অপর দিকে সিরাজগঞ্জের ঠিকাদার মো: মাহবুব আলম খাঁনের কাছে প্রকল্পের কিছু অংশের কাজ না করে অতিরিক্ত বিলের দাবি প্রসঙ্গে জানতে চওয়া হলে তিনিও বলেন, এ প্রকল্পে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ কারণে এ বিষয়ে তিনি কিছু বলবেন না।
তাড়াশ ¯’ানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক, তাড়াশ উপজেলায় তিনি সদ্য যোগদান করেছেন। তবে প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে ঢাকা ও পাবনার এলজিইডির দুটি টিম তদন্ত করেছেন। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক বিল দেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম বলেন, মূল প্রাক্কলনে ভুলবশত: খোয়ার পরিমান কম ছিল। পরবর্তীতে সরেজমিনে পরিদর্শন করে একটি রি-কাস্ট প্রাক্কলন প্র¯‘ত করা হয়। যা মূল প্রাক্কলনের ৩.৪৪% নি¤œ। মূল প্রক্কলনে দুটি ইউ ড্রেন ধরা ছিল। পরিদর্শন করে দেখা যায় তা ভাল রয়েছে। এ কারণে নতুন করে আর নির্মাণ করার প্রয়োজন নেই। একইভাবে ৯৬ মিটার প্যালাসাইডিং মূল প্রাক্কলনে ধরা থাকলেও রি-কাস্ট প্রাক্কলে তা বাদ দেয়া হয়েছে। কিš‘ বর্ণিত কাজ গুলো না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিল তোলা অপচেষ্টা করে চলেছেন।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD