ভাঙ্গুড়া থেকে হাড়িয়ে যাচ্ছে বেত শিল্প

Spread the love

 বাঁশ-বেত কারুশিল্পের দুর্দিন

মোঃ:আকছেদ আলী,ভাঙ্গুড়া(পাবনা),প্রতিনিধি: আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রাচীন শিল্পগুলো বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। যান্ত্রিক যুগে হারিয়ে যাচ্ছে নানান শিল্প ও শিল্পকর্ম। এরই ধারাবাহিকতায় পাবনার ভাঙ্গুড়ায় সময়ের সঙ্গে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বেতশিল্প। বর্তমানে বেতের তৈরি পণ্যের আর কদর নেই বললেই চলে। ফলে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে বেতশিল্প। একসময় মাঠে চাষ হতো বেত গাছ। এছাড়াও যত্রতত্র হামেশাই চোখে পড়তো বেতগাছ। সে সময়গুলোতে গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থালি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বেত ও বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করতেন। বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত প্রায় সবখানেই চোখে পড়তো এর আসবাবপত্র। সময়ের বিবর্তনে বদলে গেছে এসব চিরচেনা চিত্র। বর্তমানে বেতশিল্প প্রায় বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।প্লাস্টিক ও অন্যান্য বিভিন্ন সামগ্রীর কদর বেড়ে যাওয়ায় এসব কুটির শিল্পের চাহিদা এখন আর নেই বললেই চলে। এছাড়াও পর্যাপ্তহারে বেতের চাষ না হওয়ায় কাঁচামালের ঘাটতির কারণেও দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ছে এসব কুটির শিল্প। বাজার দখল করেছে প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি নানা জাতের আসবাবপত্র। প্লাস্টিক পণ্য টেকসই ও স্বল্পমূল্যে পাওয়ায় সাধারণ মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কুটির শিল্প হতে।

বয়স্করা বলছেন, এক সময় দেশের বিস্তীর্ণ জনপদে চাষ হতো বাঁশ ও বেত, যা দিয়ে তৈরি হতো গৃহস্থালী ও সৌখিন আসবাব পত্র। বাড়ির পাশের ঝাড় থেকে তরতাজা বাঁশ-বেত কেটে গৃহিণীরা তৈরি করতেন হরেক রকমের পণ্য। এসব বিক্রি করেই চলত তাদের জীবনযাপন। তবে এখনো মাঝে মধ্যে গ্রামীণ উৎসব ও মেলাগুলোতে বাঁশ ও বেতজাত শিল্পীদের তৈরি খোল, চাটাই, খলুই, ধামা, টোনা, পাল্লা, মোড়া, বুক সেল্ফ, ঝাড়নি, চালন ইত্যাদি চোখে পড়ে।হস্তশিল্পের কদর কমে গেলেও বেড়েছে বাঁশের দাম। আর বেত তো চোখে পড়ে না বললেই চলে। যার ফলে বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসপত্রের দাম স্বভাবতই একটু বেশি হবার ফলে ক্রেতাবিমুখ সময় পার করছেন বিক্রেতারা। অপরদিকে প্লাস্টিক, সিলভার ও মেলামাইন জাতীয় হালকা টেকসই সামগ্রী নাগরিক জীবনে গ্রামীণ হস্তশিল্পের পণ্যকে হটিয়ে দিয়েছে।

উপজেলা সদরে কালীবাড়ী এলাকায় বাঁশের পণ্য কিনতে আসা একজন ক্রেতা বলেন, বাঁশ-বেতের জিনিস বর্তমানে তেমন কোনো কাজে আসে না। তবে একটি খইচালা কিনতে এসেছিলাম। এটির দাম শুনে তো এখন তা কেনার সাধ হারিয়ে গেছে।বাঁশ ও বেতের কারিগর নারান টপ্য বলছেন, বর্তমানে বেতের কাজ আর নেই বললেই চলে। তবে বাঁশের কিছু জিনিসপত্র বানাই। আর এগুলো বাজারে বিক্রি করতে আসলে ক্রেতা সংকটে পড়তে হয়। দাম বেশির কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, বর্তমানে আগের তুলনায় বাঁশের দাম বেশি হবার ফলে জিনিসের দাম একটু বাড়তির মুখে। আমরা কম দামে কাঁচামাল কিনতে পারলে আমাদের তৈরিকৃত জিনিসও কম দামে বেঁচতে পারবো।সবমিলিয়ে বাঁশ-বেতের জিনিপত্রের চাহিদা কমে যাওয়ায় একদিকে যেমন সংকটে পড়েছেন কারিগররা অপরদিকে মানুষ হারাতে বসেছে প্রাচীন ঐতিহ্য। এভাবে প্রাচীন ঐতিহ্যগুলো হারিয়ে গেলে আগামী প্রজন্ম এগুলোর সম্পর্কে জানতে পারবে না। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে বাঁশ-বেতের উৎপাদন বাড়িয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যগুলো টিকিয়ে রাখা হোক এমনটাই আশাবাদী সচেতন মহল।

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD