অতি সম্প্রতি তাড়াশ রানীর হাট আঞ্চলিক সড়কের ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ১৮টি প্রাচীণতম বট গাছ কেটে সাবার করা হয়েছে । এসব বট গাছের বয়স শত বছর বা তারও বেশি। এর সবগুলোই ছিল তরতাজা প্রাণবন্ত এবং ছায়া সুশীতল বৃক্ষ । এগুলো যেমন মানুষ ও জীবজন্তুকে আরামদায়ক ছায়া দিত, একই সাথে বিভিন œপ্রাণী ও পশুপাখীর খাবার ও যোগাত এর ফলফুল ও শাখা-পল্ববের মাধ্যমে । অনেক দরিদ্র মানুষ খড়ি, লাকরিও সংগ্রহ করতো এসব গাছ থেকে। সবচেয়ে বড় কথা, এ বিশাল আকৃতির পুরোনো বটগাছ সমুহ জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিরাট গুরত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করত। পরিবেশ সুস্থ ও সুন্দর রাখতে গাছগুলোর অবদান অনস্বীকার্য। তাছাড়া শতবর্ষী বয়স হওয়ায় এগুলো স্থানীয়ভাবে ইতিহাস- ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে গন্য। এমনকি এর নাম জড়িয়ে আছে এলাকার লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী ও সরেজমিন পরিদর্শক বলেছেন, মাত্র ৪-৫টি বটগাছের কিছু ডালপালা ছেটে দিলেই সড়কে এর কোন অসুবিধা হত না। সবগুলো পুরনো বটবৃক্ষ নির্দয় ও নির্মমভাবে কেটে ফেলা অযৌক্তিক ও পরিবেশ বিরোধী কর্মের শামিল।
পরিবেশ, বৃক্ষ ও জীবন কোনটাকেই আলাদা করে দেখার উপায় নেই। আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে বৃক্ষ “লাগান-পরিবেশ বাঁচান” এ শ্লোগান আজ সদা সর্বদা সর্বত্র ধ্বনিত। দেশে ব্ক্ষৃ রোপণের অভিযান ইদানিং সামাজিক আন্দোলনে রুপ নিয়েছে। ঠিক এমনি মুহুর্তে তাড়াশ রানীর হাট সড়কে এমন নির্বিচারে প্রাচীন বটবৃক্ষ কর্তন সম্ভবত শুধু বৃক্ষ প্রেমিকদের নয়; সাধারণ মানুষের মনেও আঘাত লেগেছে, প্রশ্ন জেগেছে। খোঁড়া যুক্তি দিয়ে আর সামান্য স্বার্থের আকর্ষণে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের এই কাজ করা আদৌ ঠিক হয়নি।
জানা যায়, সড়ক জনপথের রাজশাহী বিভাগের তরফ থেকে টেন্ডারে বিক্রির মাধ্যমে ঠিকাদারদের দিয়ে গাছগুলো কাটা হয়েছে। অথচ সওজের সিরাজগঞ্জ অফিস, তাড়াশ উপজেলা প্রসাশন ও তাড়াশ উপজেলা বন বিভাগ কেউই এই বৃক্ষ নিধন সম্পর্কে অবগত নয়। তাদের জানানো হয়নি, নেয়া হয়নি কোন সম্মতি বা অনুমোদন। মানে এই কর্মকান্ডে সংশিষ্টø দফতরগুলোর মধ্যে কোন সমন্বয় নেই। আমাদের দেশে উন্নয়ন পরিকল্পনায় যেমন জনমত যাচাই করা হয় না অথবা তাদের অংশগ্রহণ থাকে না, তেমনি যে কোন জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে বা পরিবেশ সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডেও জনগনের সাথে পরামর্শের বিধান কিংবা রেওয়াজ নেই। উক্ত সড়কের এলাকাভুক্ত স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদেরও কোন মতামত নেয়া হয় নি। তাহলে এটা রামরাজত্ব বা মগের মুল্লকের ব্যাপার বলে মনে হয়। এখানে আইনের শাসন বা সুশাসনের ঘাটতি বললে তা অপ্রযোজ্য হবে না। কেননা, সরকারি বেসরকারি যেই হোক আইনের উর্দ্ধে কেউ নয়। যে গাছগুলো কাটা হয়েছে তা ফিরিয়ে দেয়ার শক্তি বা ক্ষমতা কারো নেই। এই অন্যায় ও অকল্যাণ সহজে মিটে যাবার নয়। পরিবর্তে এখন গাছ লাগালেও তার সুফল পেতে অনেক বছর লেগে যাবে। কিন্তু তা শতবর্ষী বৃক্ষের মত স্বার্থক ও ফলদায়ক হবে না। তাই আগামিতে এ ধরনের অর্বাচীনের মত অপরিকল্পিত কার্যকলাপ এড়িয়ে সুষ্ঠু ও বিবেক বিচার সম্মত উপায়ে সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে বনবৃক্ষ কাটতে হবে। আমরা আশা করি যারা আইন ও নিয়ম পরিপন্থিভাবে এই কাজটি করেছে তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার। এবং ভবিষ্যতে কখনই কোথাও যেন এমনটি না করা হয় সেদিকে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ নিয়মিত তীক্ষè নজরদারী রাখবে। এই বৃক্ষ নিধন মানেই পরিবেশ নিধন, পরিবেশের ক্ষতি। এটা গুরতর অপরাধের শামিল। যারা এর জন্য দায়ী আমরা তাদের ন্যায্য বিচার দেখতে চাই। তাহলে ভবিষ্যতে কেউ অপরিণামদর্শীর মত এ কাজ করতে পারবে না।