মোঃ মুন্না হুসাইন ,তাড়াশ :‘চায়না দুয়ারি’ নামের এক ধরনের ফাঁদ পেতে তাড়াশে চলন-বিলে ব্যাপক হারে দেশি জাতের মাছ শিকার করছে জেলেরা। গত কয়েক মাস ধরে তাড়াশে চলন বিলে এই ফাঁদ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে বিভিন্ন প্রজাতির ও দেশি মাছ বিলুপ্তির শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মৎস্য কর্মকর্তারা। লোহার রডের গোলাকার বা চতুর্ভুজ আকৃতির কাঠোমোর চারপাশে ‘চায়না জাল’ দিয়ে ঘিরে এই ফাঁদ তৈরি করা হয়। ক্ষেত্রভেদে ‘চায়না দুয়ারি’ ৫২ হাত আবার ৭০ হাত পর্যন্ত লম্বা হয়। এই ফাঁদ দিয়ে তাড়াশে চলনবিলে ও হাওয়ারে বাওরে মাছ শিকার করছে এক শ্রেণির জেলে।
সরেজমিনে তাড়াশ উপজেলার মান্নান নগরে বাজারে গিয়ে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ বিক্রি করতে দেখা গেছে; যেগুলো ‘চায়না দুয়ারি’ দিয়ে ধরা বলে স্থানীয়দের ভাষ্য। থানীয়রা জানান, এই ফাঁদ বসালে বিলের পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয়; এর জালের ছিদ্র ছোট হওয়ায় ছোট-বড় কোনো মাছ বের হওয়ার সুযোগ পায় না। নাওগাঁ ইউনিয়নের মহেশরৌহালী গ্রামের আনছার আলী নামের এক মাছ শিকারি বলেন, চায়না দুয়ারি বিলের তলদেশে বসানো হয়। উভয় দিক থেকে ছুটে চলা যে কোনো মাছ সহজেই এতে আটকা পড়ে। একবার মাছ ঢুকে পড়লে বের হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। মহেশরৌহালী গ্রামের নুরইসলাম মাছ শিকারি বলেন, যে জায়গায় এই ফাঁদ পাতা হয় ওপর থেকে তার চিহ্ন রাখতে বাঁশের খুঁটি গাড়া হয় যা দেখে সহজে বোঝা যায় সেখানে চায়না দুয়ারি পাতা হয়েছে। দিনে দুই বার সকাল ও বিকালে ফাঁদগুলো তোলা হয় বলে তিনি জানান।
উপজেলার তাড়াশ চলন বিলে মাছ ধরে এমন কয়েক জন জেলে বলেন, প্রকার ভেদে চায়না দুয়ারির দাম ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। তবে আগে একটু কম ছিল। প্রশাসনের তৎপরতার কারণে এখন একটু বেশি দামে কিনতে হয়। তাড়াশ উপজেলার মেম্বার আফজাল হোসেন বলেন, “বাজারের দেশীয় মাছে পোনা দেখে মনটা খারাপ হয়। নিষিদ্ধ এই ফাঁদ ব্যবহারকারীদের ধরতে আমরা স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে মাঝে মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি। তারপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লুকিয়ে ওই মাছের বংশ ধ্বংশের ফাঁদ অধিক মূল্যে বিক্রয় করে।” তাড়াশ উপজেলার ব্যবাসয়ী ও সংবাদকর্মী মুন্না হুসাইন বলেন, “এই বর্ষা মৌসুমে চলন বিলের পাড়ে সকালে মাছ কিনতে গেলে দেখা যায় দেশীয় সুস্বাদু বাইম,টেংড়া মাছের বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে। অথচ মাছগুলো এক দেড় মাস পানিতে থাকতে পারলে বেশ বড় হতো।”
তিনি বলেন, “এই ‘চায়না দুয়ারি’ এসে আমাদের দেশীয় মাছের বংশ শেষ করে দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো একদিন দেশীয় মাছ আমরা সহজে পাব না।” চায়না দুয়ারি’ আমাদের দেশীয় জাতের মাছ ধ্বংস করছে। ব্যাপক হারে এই ফাঁদ ব্যবহার করলে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই ফাঁদ প্রতিরোধ করতে এবং জেলেদের নিরুসাহিত করতে আইন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
|