মহান মে দিবস : প্রাসঙ্গিক কথোপকথন

Spread the love
 
সুজন কুমার মাল
প্রতি বছরেই মে দিবস আসে যায় কিন্ত মে দিবস কিসের জন্য? কাদের জন্য?  কেন পালন করা হয় তা হয়তো জানেন না অনেক শ্রমিকই। এ কথাটি মানতে অনেকেই দ্বিমত করবেন না। তৎকালীন ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের শ্রমিকেরা ৮ ঘণ্টা কর্ম দিবসের দাবিতে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন। 
আজ বাংলাদেশের শ্রম পরিবেশ অতীতের তুলনায় যতটা এগিয়েছে, তার পেছনেও রয়েছে শ্রমিকদের ত্যাগ ও সংগ্রাম। যেমনঃ কর্মজীবি নারীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি, ছোট্র শিশুদের লালণ পালনের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের দুর্ঘটনা জনিত কারনে ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি। 
দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির লক্ষ্যে শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রনালয় প্রশিক্ষন প্রদান, বিভিন্ন বিষয়ে ট্রেড ভিক্তিক কোর্স চালু করা সহ নানামুখী উদ্দ্যোগ নিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলা ভাষাভাষী শ্রমিকদের প্রেরিত অর্থে রেমিট্যান্স আজকে দৃড় অবস্থানে। 
মে দিবসের অনুপ্রেরণা বিশ্বের শ্রমিকদের সংহতি যেমন বাড়িয়েছে, তেমনি তাদের ওপর শোষণের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে শিখিয়েছে।  মে দিবসের পথ ধরেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিকদের অধিকার, বিশেষ করে মজুরি, কাজের পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা—এসব ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। 
বাংলাদেশ শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রনালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্বে আছেন চলনবিলের তথা তাড়াশ উপজেলার বারুহাঁস ইউনিয়নের লাঙ্গলমোড়া গ্রামের কৃতি সন্তান আব্দুস সালাম। এটাও আমাদের জন্য একটা বিশেষ গর্ব।
 বাংলাদেশের শ্রমিকদের, বিশেষ করে পোশাকশিল্প, জাহাজশিল্প, ইমারত নির্মাণ শিল্প সহ অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে কর্মরত লাখো শ্রমিক উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও অন্যান্য অধিকার পাচ্ছেন। এতে করে তাদের জীবন মানের উন্নয়ন হচ্ছে ধীরগতিতে। 
মৌলিক চাহিদা পূরণ করে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন জাতীয়ভাবে ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা। 
রানা প্লাজা, তাজনিন গার্মেন্টস সহ পোশাকশিল্পে হাজারো শ্রমিকের মৃত্যুর যথাযথ ক্ষতিপূরণ দান এবং দোষী ব্যক্তিদের বিচারও এখনো হয়নি। দেশে এখনো দক্ষ শিল্প শ্রমিকের সংখ্যা বাড়েনি কাংখিত হারে। দক্ষ জনশক্তি বৃদ্ধি পাওয়া শিল্প ক্ষেত্রই হোক বা যে ক্ষেত্রই হোক সেটি উন্নতির লক্ষণ।
এদিকে  বিপুলসংখ্যক খেটে খাওয়া মানুষ শ্রমিকের স্বীকৃতি পান না। কৃষি খাতে বা গৃহস্থালি কাজে  সহকারীদের জীবন এখনো তেমন উন্নত হয়নি। 
আজও যখন শ্রমিকের সরলতার সুযোগে শ্রমিককে মজুরি প্রদানে ফাঁকি দেয়া,  হয়রানি করা, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি সহ নানা শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয় যা একধরনের ভীতিকর ও মানসিক উদ্বেগের কারন। 
 এ ছাড়া রিকশা,অটো, কুটির শিল্প ও এ ধরনের স্বনিয়োজিত শ্রমিকদের জীবিকার বেলায় নেই কোনো নিশ্চয়তা। দুস্থদের মধ্যে আরও দুস্থ হলো নারী ও শিশু শ্রমিক।শ্রমিকেরাই সমাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ। শ্রমিকের স্বার্থ ও কল্যাণের দিকটি অবহেলা করে তাই কোনো সত্যিকার উন্নতি সম্ভব নয়।
এছাড়াও প্রবাসের শ্রমিকদের অধিকার, উন্নত জীবন মান নিশ্চিত করার জন্য নিতে হবে  সরকারি উদ্যোগ। 
শুধু কি তাই দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কারিগরি শাখার খোলা ও তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এমন মহতি উদ্দ্যোগ নিঃ সন্দেহে প্রশংসাজনক। 
Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD