সিরাজগঞ্জের তিনটি উপজেলার হাজার হাজার  একর জমি অনাবাদি

Spread the love

ফারুক আহমেদঃ পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না  রেখে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণ, পুকুর খনন ও দীর্ঘদিন যাবত খাল ও পানি প্রবাহের পথে সংস্কারের অভাবে জলাবদ্ধতার শিকার সিরাজগঞ্জের তিনটি উপজেলাসহ সলঙ্গা থানার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের আগরপুর, আমশড়া, লক্ষিপুর, বোয়ালিয়া ও শোলাপাড়া গ্রামের প্রায় দুইশত হেক্টর জমি রোপা আমন মৌসুমের চাষাবাদ অনুপোযোগী হয়ে পড়ে আছে। ফলে রোপা আমন মৌসুমে ফি-বছর প্রায় ১২শ’ মেট্রিক টান ধান উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ভুক্তভোগী কয়েকজন কৃষক বলেন, এক সময় রায়গঞ্জ, তাড়াশ ও উল্লপাড়া উপজেলার উপর দিয়ে করতোয়া নদী ও খাল হয়ে চলবিলে পানি পড়ত।  আজ সব খালের মুখ বন্ধ করে এলাকার প্রভাবশালিরা  জায়গা জায়গায় বাঁধ দিয়ে পুকুর তৈরি করায় খালের  পানি প্রবাহ বন্ধ  হয়ে গিয়েছে। সেই থেকে অদ্যাবধি উজান থেকে পানি আসলেও  নিস্কাশন  না হওয়ার কারণে ৩টি ইউনিয়নের মধ্যে আমশড়া, লক্ষিপুর ও আগরপুর ইত্যাকার গ্রামগুলির প্রায় ২শ’, হেক্টর দুই ফসলি জমি গত ২০ বছর ধরে এক ফসলিতে পরিণত হয়েছে। জমিগুলোতে শুধু বছরে ইরিবোরো এক মৌসুম ছাড়া আর কোন ফসল ফলানো যায় না।

 

আমশড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ খুলু বলেন, জমিতে বছরে মাত্র একটি ফসল হয়।  তার উপরে লাভজনক রোপা আমন না করতে পেরে আমরা কয়েক ইউনিয়নের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে আছি। স্থানীয় কৃষি বিভাগ এবং বিএডিসির পক্ষ থেকে অনাবাদি এ সব জমি সেচ সুবিধার আওতায় আনার জন্য বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও  উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় উপজেলাবাসী ২৫ বছর প্রায়  বাড়তি ১২ হাজার ২শ’মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে গত কয়েক বছর ধরে ধান কাটা-মাড়াই মওসুমে কৃষক ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আবাদ করে উৎপাদন খরচ না ওঠায় অনেক কৃষক ধানের আবাদ ছেড়ে বিকল্প আবাদের চিন্তাভাবনা করছিল। কিন্তু এ বছর ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় ধানের আবাদে আবার আগ্রহ বেড়েছে বলে কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে। রায়গঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড ইমরুল হাসান (ইমন) তালুকদার জানান, বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকার ইতিমধ্যে খাল খননের ব্যবস্থা নিয়েছেন। আশা করছি তিনটি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটিও খনন করা হবে।

বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা সাইফুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ  জানান, ৩টি উপজেলাধীন আমশড়া, আগরপুর,  লক্ষিপুর, বোয়ালিয়া ও শোলাপাড়া গ্রামের জমিগুলোতে পানি নিস্কাশনের সুব্যবস্থা  না থাকায় আমন মৌসুমে প্রায় ২শ একর জমি অনাবাদি পড়ে থাকছে। ফলে তাদের ভরসা একমাত্র ইরিবোরো ধানের আবাদ। এতে যে শুধু তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তা নয়, তিনটি উপজেলার সার্বিক খাদ্য উৎপাদন  এবং খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।এ দিকে গত আমন মৌসুমে তিনটি উপজেলায় ১২ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল বলে উপজেলা কৃষি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে।  তিনিও স্বীকার করেন যে, যদি অনাবাদি ওই ২ শ’  হেক্টর জমি নিস্কাশনের  আওতায় আনা যেত এবং আমন ধানের আবাদ করা যেতো তবে আরো কমপক্ষে ৬ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব হতো।  আর এ কারণেই মূলত. জমিগুলো অনাবাদি পড়ে থাকছে।

বর্তমান ইউপি সদস্য এনছাব আলী জানান, ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা মহারশী একটি খরস্রোতা পাহাড়ী নদীর ঢাল। প্রতিবছর বর্ষায় পাহড়ি ঢলের বালুতে মহারশী নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে। আর তলদেশের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায়  এবং প্রভাবশালীরা খালের মুখ বন্ধ করে পুকুর দিয়ে মাছ চাষ করায় খালের পানি ধারণ ক্ষমতা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে।  তাই সামান্য বৃষ্টির পানি হলে পানি বের না হতে পেরে জলাবদ্ধ হয়ে জমিই মনে হয় বিশাল সাগর। এলাকার প্রবিণ লোকজন জানান, গত দুই যুগ  আগেও তিনটি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া  নদী ও খালের গভীরতা ছিল অনেক। কৃষকরা জানান, করতোয় নদীর খালের দু’পাড়ের কয়েক হাজার একর জমির ফসল উৎপাদন মহারশী নদীর পানি সেচের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তুু পুকুর খনন, করার কারণে খালের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়া খালটি এখন প্রায় মৃত খালে পরিনত করে ফেলায় পানির অভাবে ফি-বছর মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে ইরি-বোরো চাষাবাদ। পানির নিস্কাশনের অভাবে রায়গঞ্জ,তাড়াশ ও উল্লাপাড়া  উপজেলারই ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকছে।। নদীর নাব্যতা বাড়ানোর ব্যাপারে বা রক্ষাকল্পে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেই কোন মাথা ব্যথা। ফলে ক্রমেই ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ কৃষকদের মাঝে। এদিকে এলাকার শীর্ষ নেতাদের ও সরকারী উর্ধতন মহলের বিশেষ জরুরী দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD