জাতীয় জাগরণের কবি ইসমাইল হোসেন সিরাজী

Spread the love

শাহজাহান সাংবাদিক

‘স্বাধীনতা লাভ করিতে না পারিলে মন কখনও সুস্থ ও সবল হইতে পারে না। জাতি স্বাধীন না হইলে তাহার চিন্তাশক্তিও স্বাধীন এবং বলবতী হইতে পারে না’- এ উক্তিটি বাঙালি জাতির জাগরণের কবি গাজি-এ-বলকান মৌলভী সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর (১৮৮০-১৯৩১খ্রি.)। ইসমাইল হোসেন সিরাজী ছিলেন জাতীয় জাগরণের কবি। সিরাজী ছিলেন পরাধীন ভারতের ঘোরবিরোধী। পরাধীন ভারতের করুণ দশা দেখে ব্যথিত হয়েছেন তিনি। জাতীয় জাগরণের পূর্বশর্ত হিসেবে তিনি পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা কামনা করেছেন। পরাধীনতার হীনতা থেকে তিনি জাতীয় মুক্তি চেয়েছেন। বিদেশি রাজশক্তিকে সমূলে উৎখাত করতে তিনি বাঙালি জাতিকে জাগ্রত করতে চেয়েছেন। এজন্য ঘুমন্ত মুসলিম জাতিকে জাগিয়ে তুলতে তিনি ব্যাকুল ছিলেন। আর এ ব্যাকুলতা থেকেই তিনি অতীত কাহিনী গেয়ে ঘুমন্ত মুসলিম জাতিকে জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন। তার ভাষায় ঃ
গাবো সে অতীত কথা, গৌরব কাহিনী
নাচাইতে মোসলেমের নিস্পন্দ ধমনী।
গাবো সে দুর্মদ-বীর্য দীপ্ত উন্মাদনা
কৃপা করি অগ্নিময়ী করো এ রসনা। (স্পেন বিজয় কাব্য)

 

শুধু অতীতচারিতা নয়, ভবিষ্যতের স্বপ্নও বুনেছেন তিনি। তাঁর আশা মুসলমানদের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার হবে, পরাধীন মুসলিম বিশ্বে আবার স্বাধীনতার পতাকা উড়বে। তাঁরা আবার বিশ্বনেতৃত্ব গ্রহণ করবে। তাঁর এ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়ন করতে তিনি আবেগোচ্ছ্বল কণ্ঠে বাঙালি তরুণ-নবীন মুসলিমদের আহবান করেছেন এভাবে ঃ
আবার উত্থান লক্ষে
বহাও জগৎ বক্ষে
নব-জীবনের খর প্রবাহ প¬বন।
আবার জাতীয় কেতু
উড়াও মুক্তির হেতু
উঠুক গগণে পুনঃ রক্তিম তপন। (অনল প্রবাহ)

বিপ্লব বা জাতীয় জাগরণে যুবক-তরুণদের ভূমিকাই বেশি। সিরাজী বুঝতে পেরেছিলেন ঘুমন্ত-অধঃপতিত জাতিকে জাগাতে হলে নবীন-তরুণদেরকেই অগ্রসর করতে হবে। তারাই জাতিকে পতন থেকে উত্থান, গ্ল-ানি থেকে গৌরবে উন্নীত করতে পারেন। এজন্য তিনি মুসলিম যুবক-তরুণদের আহ্বান করে বলেন ঃ

আশার তপন নব্য যুবগণ!
সমাজের ভাবী গৌরব কেতন।
তোমাদের ‘পরে জাতীয় জীবন
তোমাদের ‘পরে উত্থান-পতন
নির্ভর করিছে জানিও সবে। (অভিভাষণ)

স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজন অসীম সাহসিকতা। যারা মৃতভয় উপেক্ষা করে শহীদের তামান্না নিয়ে দেশ-মাতৃকার স্বাধীনতা সংগ্রাম-সাধনায় আত্মনিয়োগ করতে পারে বিজয়ের মালা তাদেরই গলায় পড়ে। তাই ইসমাইল হোসেন সিরাজী বাঙালি মুসলিমদের মৃতভয় উপেক্ষা করে তেজদীপ্ত হয়ে স্বাধীনতা-সংগ্রামে আত্মনিয়োগের আহবান জানিয়ে বলেন ঃ
শহীদের রক্তরাগ মাখি চোখে, মুখে-বুকে
উঠ বঙ্গ! নব রঙ্গ তেজঃভঙ্গ দেখাও সুখে।
শহীদের শাহাদৎ অমৃত করিয়া পান
যত মোর্দা লভ গোর্দা, লভ আজি দীপ্ত প্রাণ। (বজ্রবাণী)

ইংরেজ শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে উদ্দীপ্ত করার জন্য সুদানের কবি মেহেদী আরবি ভাষায় অগ্নিক্ষরা শব্দ-সম্ভারে ‘কাফিয়া’ রচনা করেছিলেন। ‘কাফিয়া’র অনলবর্ষী ভাষা সুদানের মুসলিম প্রাণে যে উদ্দীপনা জাগিয়েছিল তাতে ইংরেজ শোষকদের ভীত কেঁপে উঠেছিল। বাঙালি জাতির জাগরণের উদ্দেশ্যে ইসমাইল হোসেন সিরাজী সুদানি মেহেদীর ‘কাফিয়া’ অনুবাদ করে বাংলায় রচনা করেন ‘স্বাধীনতা বন্দনা’। এতে তিনি মেহেদীর সুরে কণ্ঠ মিলিয়ে নিদ্রামগ্ন বাঙালি জাতিকে জাগিয়ে তুলতে গাইলেন ঃ
পতিত জাতির উদ্ধার হেতু
উড়াও আকাশে রক্তিম কেতু
জাগুক মাতুক ছুটুক দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা
জয় জয় জয় স্বাধীনতা।

গোঁড়ামী-কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম-সাধনা করেছেন সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী। মুসলিম সমাজের পীর পূজা, কবর পূজা, এগোরই শরীফ পালন ইত্যাদি অনৈসলামিক আচার-অনুষ্ঠানের তিনি ছিলেন ঘোরবিরোধী। মূল ইসলামের বিশুদ্ধতা রক্ষায় ব্রত থাকায় তাঁর সাথে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মোল্ল¬া-মৌলবীদের বাদ-প্রতিবাদ লেগেই থাকত। জাতীয় জাগরণে তাই তিনি মুসলমানদেরকে ইসলামের মূল শিক্ষার দিকে ফিরে এসে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার আহ্বান জানিয়ে ‘তুরস্ক ভ্রমণ’ গ্রন্থে লিখেন, ‘মুসলমানগণকে দক্ষিণ হস্তে কোরাণ এবং বাম হস্তে বিজ্ঞান গ্রহণ করিতে হইবে।’ ধর্মকে তিনি শক্তিমত্তার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। ধার্মিক লোকদের জাগরণের মন্ত্রে দীক্ষিত করার লক্ষে ধর্মের অবস্থান তুলে ধরতে তিনি লিখেছেন,‘যেখানে শক্তি নাই, তেজ নাই, বিক্রম নাই, আধিপত্য নাই- সেখানে ধর্মও নাই।’ (শক্তির প্রতিযোগিতা)।
সিরাজী মুসলিম নারী জাগরণের নকীব। তিনি ইতিহাসের বিস্মৃত মুসলিম বীরাঙ্গনাদের শৌর্য-বীর্যের কাহিনী সাহিত্যে ও বক্তৃতায় আকষর্ণীয়ভাবে তুলে ধরেছেন। জাতীয় জাগরণে তিনি নারী জাগরণকে অপরিহার্য অভিহিত করেছেন। আর জাগরণের পূর্বশর্ত শিক্ষা ও স্বাধীনতা। তাই নারী জাগরণের জন্য শিক্ষার গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি রচনা করেছেন ‘স্ত্রীশিক্ষা’। এতে তিনি লিখেছেন, ‘নারীকে পিছনে রাখিয়া অন্ধ অন্তপুরের শতাধিক মুর্খতা ও কুসংস্কারের জটিল ও কুটিল বেষ্টনে বেষ্টিত রাখিয়া যাহারা জাতীয় জাগরণের কল্যাণ ও মুুক্তির কামনা করে, আমার বলিতে কুণ্ঠা নাই তাহারা মহামুর্খ। নারীশক্তি জাগাইতে না পারিলে সন্তানের শক্তি, সন্তানের প্রাণ আসিবে কোথা হইতে?’ (স্ত্রীশিক্ষা) । নারীশিক্ষার পাশাপাশি নারীদের সামাজিক সচেতনতা জাগরণেরও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। বাল্যবিবাহের ঘোরবিরোধী ছিলেন সিরাজী। বাল্যবিবাহ রহিত করণের নির্দেশনা দিয়ে তিনি লিখেন ঃ
স্ত্রী জাতির তরে শিক্ষা দাও
কোরাণের মর্ম বিদিত করাও
বাল্য পরিণয় উঠাইয়া দাও। (অনল প্রবাহ)

বাঙালি নারীদের জাগরণে উদ্বুদ্ধ করতে তুরস্কযুদ্ধ শেষে দেশে এসে তুরস্কের প্রগতিশীল নারীদের জীবনাদর্শ তুলে ধরে তিনি ‘তুর্কীনারী জীবন’ লিখেছেন। এতে তিনি তুর্কী নারী জীবনের সাথে বাঙালি নারী জীবনের তুলনামূলক আলোচনা করে নারী জাগরণ ও প্রগতিবাদের কথা ব্যক্ত করেছেন।
ইসমাইল হোসেন সিরাজী নি:সন্দেহে অসাম্প্রদায়িক কবি। বঙ্গভঙ্গের সময় কট্টরবাদী হিন্দুদের সাথে স্বদেশী আন্দোলনও করেছেন তিনি। কিন্তু মুসলিম জাতীয়তাবাদ তিনি কখনও ভুলতে পারেননি। আর মুসলিম জাতীয়তাবাদের উপর আঘাতকে সহ্যও করেননি তিনি। বঙ্কিম চন্দ্র ‘আনন্দ মঠ’, ‘দুর্গেশ নন্দিনী’ ‘রাজসিংহ’ প্রভৃতি উপন্যাসে মুসলিম মনীষীদের চরিত্র বিকৃত করায় ইসমাইল হোসেন সিরাজী চরমভাবে ব্যথিত হয়েছেন। এ ব্যথা উপশম করতে এর প্রতিবাদে তিনি উপন্যাসবিরোধী হয়েও ‘রায়-নন্দিনী’, ‘ফিরোজা বেগম’, ‘তারাবাঈ’, ‘নূরউদ্দীন’ প্রভৃতি উপন্যাস লিখেছেন। এসব উপন্যাস লেখার কারণ সম্পর্কে তিনি ‘রায়-নন্দিনী’ উপন্যাসের ভূমিকায় লিখেছেন, ‘একই দেশের অধিবাসী হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সদ্ভাব থাকা সর্বদা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাঙ্গালী ভ্রাতারা কাল্পনিক আর্যামীর গৌরব-গানে বিভোর হইয়া কান্ডজ্ঞানহীন অবস্থায় লেখনী পরিচালনায় দারুণ অসদ্ভাবের বীজ রোপণ করিতেছেন। দেশমাতৃকার কল্যাণের নিমিত্ত তাঁহাদের সাবধানতার জন্য এবং মুসলমানদের আত্মবোধ জন্মাইবার জন্যই, উপন্যাসের ঘোর বিরোধী আমি, কর্তব্যের নিদারুণ তাড়নায় ‘রায় নন্দিনী’ রচনা করিয়াছি। ………..তাঁহাদের মোসলেম কুৎসাপূর্ণ জঘন্য উপন্যাসগুলির পরিবর্তন করিয়া সুমতির পরিচয় দিবেন এবং ভবিষ্যতে বীর্যপুষ্ট গৌরববিমন্ডিত আদর্শ চরিত্র অঙ্কিত করিতে চেষ্টিত হইবেন। নতুবা তাহাদের চৈতন্য উৎপাদনের জন্য আবার ঐসলামিক তেজঃদীপ্ত অপরাজেয় বজ্র্রমুখ লেখনী ধারণ করিতে বাধ্য হইব।’ প্রকৃতপক্ষে অসাম্প্রদায়িক হয়েও কতিপয় অমুসলিম লেখকের মুসলিম চরিত্র বিকৃত করার প্রতিবাদে তিনি বাধ্য হয়ে মুসলিম ঐতিহ্য-গৌরব বিষয়ক উপন্যাস রচনা করেছেন। আর খুব স্বাভাবিক কারণেই এগুলোতে ‘বজ্রমুখী লেখনী’ দ্বারা মুসলিম শৌর্য-বীর্যের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। এর পিছনেও ‘মুসলিম জাগরণ চেতনা’ ক্রিয়াশীল আছে।
ইসমাইল হোসেন সিরাজী কাব্য এবং সাহিত্য-সাধনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন নিছক সাহিত্যপ্রীতিতে নয়; বরং জাতীয় জাগরণ ও সমাজের কল্যাণে। বাংলার মুসলিম সমাজের কুসংস্কার দূর করে আধুনিক জীবন-জগতের সাথে যুক্ত করার সাধনায় তিনি ব্রতী হয়েছিলেন। তিনি বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে আত্মগৌরববোধ সঞ্চয়ের মাধ্যমে তাদের নিস্তব্ধতা ভাঙতে চেয়েছিলেন। মুসলিম নবজাগরণ কামনাই যে তাঁর সাহিত্যে ভাবনার মূল কেন্দ্রবিন্দু এবং তা শৈশবেই তাঁর মনে অঙ্কুরিত হয় তার প্রমাণ ‘অনল প্রবাহ’। ছাত্রাবস্থায় রচিত তাঁর এ গ্রন্থখানির অনল সহ্য করতে না পেরে তৎকালীন বৃটিশ সরকার তাঁকে দুই বছর কারাদন্ড দিয়েছিল। তাতেও তিনি দমিত হননি বরং অগ্নিতে ঘৃতাহুতির মতো আরও জ্বলে ওঠে বাঙালি মুসলিম সমাজকে জাগরিত করতে সারা জীবন সাহিত্য সাধনায় আত্মনিয়োগ করেছেন। অবহেলিত, উপেক্ষিত, বঞ্চিত ও পশ্চাৎপদ মুসলিম জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত করতে তিনি গাইলেন ঃ
আর ঘুমিও না নয়ন মেলিয়া
উঠরে মোসলেম উঠরে জাগিয়া
আলস্য জড়তা পায়েতে ঠেলিয়া
পূত বিভূ নাম স্মরণ করি।

সিরাজীর জাগরণ বাণী সেদিন ‘আসহাবে কাহাফের’ মতো নিদ্রায় আচ্ছন্ন বাংলার মুসলিম সমাজের কানে বাঁশির সুরের মতো ধ্বনিত হয়েছে। মুসলিম বঙ্গের দামাল কবি কাজী নজরুল ইসলামের আর্বিভাবের কিছু আগে সিরাজীর কণ্ঠে ‘সুবহি সাদিকের’ বাণী ঝংকৃত হয়েছে। ইসমাইল হোসেন সিরাজীর ‘অনল প্রবাহ’ই বিশ বছর পরে নজরুল ইসলামের ‘অগ্নি-বীণা’ রূপ ধারণ করেছিল। কাজী নজরুলের ভাষায়,‘তাঁহার (সিরাজী) সমগ্র জীবনই ছিল অনল প্রবাহ। আর আমার রচনা সেই অগ্নিস্ফুলিঙ্গের প্রকাশ।’ নজরুল ইসলাম ঘুমন্ত মুসলিম জাতিকে চাবুক মেরে জাগিয়ে দিতে চেয়েছেন আর তাঁর পূর্বসূরি মুসলিম জাগরণের কবি ইসমাইল হোসেন সিরাজী বলেছেন ঃ
ওরে মূর্খ মুসলমান !
আছিস রে কিভাবে মগন
বাঁচতে চাহিস যদি
জাগ তবে জাগরে এখন।’ (উন্মেষণা)

সিরাজীর সাহিত্য সাধনার প্রথম ও শেষ লক্ষ্য ছিল মুসলিম সমাজের জাগরণ ও উন্নয়ন। এ জাগরণ কামনায় তিনি লিখেছেন অজ¯্র গদ্য, পদ্য ও গান। ইসমাইল হোসেন সিরাজীর সব সাহিত্যই উদ্দীপনামূলক ও মুসলিম চেতনা জাগরক। তাঁর রচিত গদ্য-পদ্য সাহিত্যে জাতীয় জাগরণ সমভাবে বিবেচ্য। ‘অনল প্রবাহ’, ‘প্রেমাঞ্জলি’ ‘সঙ্গীত সঞ্জীবনী’, ‘উদ্বোধন’, ‘স্পেনবিজয় কাব্য’ সাহিত্যে যেমন মুসলিম ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরে বাঙালি মুসলিম সমাজকে জাগরণের চেষ্টা করেছেন। তেমনি তাঁর ঐতিহাসিক উপন্যাসগুলোতেও মুসলিম জাতীয় চেতনা ও শৌর্য-বীর্য স্থান পেয়েছে। এছাড়া বাঙালি মুসলিম সমাজকে ধর্ম-সংস্কৃতি, শিক্ষা-সাহিত্য, রাজনীতি-অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন-উদ্বুদ্ধ করতে তিনি প্রায় তিন‘শ প্রবন্ধ রচনা করেছেন। যেমন-‘এছলাম ও আত্মোৎসর্গ’ ‘এছলামের মূল শক্তি’ ‘এছলাম ও ঐক্যশক্তি’ ‘এছলাম ও জ্ঞানচর্চা’ ‘আত্মশক্তি ও প্রতিষ্ঠা’ ‘নবজাগরণ’ ‘জাতীয় ধনভান্ডার’ ‘নব্যযুবক ও ছাত্রগণের প্রতি’ ‘কেন স্বাধীনতা চাই’ ‘বজ্রবাণী’ ‘মাতৃভাষা ও মুসলমান’ ‘আত্মপরিচয়’ ‘আত্মবিশ্বাস’ প্রভৃতি। এসব প্রবন্ধের নামকরণ থেকেই চেতনার গভীরতা সহজেই বুঝা যায়। ‘স্পেনীয় মুসলমান সভ্যতা’ ‘তুর্কী নারীজীবন’ ‘তুরস্ক ভ্রমণ’ ‘আদব কায়দা শিক্ষা’ ‘স্ত্রীশিক্ষা’ প্রভৃতি গদ্য গ্রন্থে তিনি বাঙালি মুসলিম জাগরণের প্রয়োজনীয়তা ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্যান ইসলামে বিশ্বাসী এক সাহিত্যিক। বাঙালি মুসলিম জাতীয় জাগরণ তার সাহিত্যের মূল উদ্দেশ্য হলেও বিশ্বব্যাপী ইসলামী জাগরণ তার কাম্য। বাঙালি মুসলমানদের নিস্তব্ধতা ভাঙানোর জন্য তিনি বিশ্বমুসলিমের মধ্যে ঐক্যসূত্র অন্বেষণে সচেষ্ট হয়েছেন। তাই তিনি বিশ্বমুসলিম জাগরণে লিখেছেন ঃ
এস বজ্র, এস অগ্নি, এস বায়ু, এস ঝড়
জ্বলুক বিপ্লব বহ্নি বিশ্বব্যাপী ভয়ঙ্কর।
সপ্ত সিন্ধু একেবারে হোক আজি উচ্ছ্বসিত
বহুক উচ্চ- ঊর্মি ভাঙ্গি গিরি বন যত।
শত বজ্র ভীমনাদে গর্জুক অম্বর দেশে
জাগুক মোসলেমগণ সর্বস্থানে সর্বদেশে। (মরক্কো সঙ্কটে)।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD