চলনবিল জেলার দাবি সংসদে তুলে ধরুন

Spread the love

আবদুর রাজ্জাক রাজু
চলনবিলের সার্বিক উন্নয়নের সবগুলো দাবির সার সমন্বয়ে এখন একটাই মূল দাবি উঠেছে- তাহল নতুন চলনবিল জেলা গঠনের ঐতিহাসিক প্রস্তাব। প্রকৃতপক্ষে সমগ্র চলনবিলের সত্যকার ভবিষ্যত উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির একমাত্র সহায়ক ও যৌক্তিক পন্থা হল এটাকে একটি প্রশাসনিক জেলায় দ্রুত উন্নীতকরণ। চলনবিলের অন্তর্গত বর্তমান ৯টি উপজেলার প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের প্রাণের দাবীতে পরিণত হয়েছে চলনবিল জেলা নামে স্বতন্ত্র জেলা গঠনের প্রস্তাবনা। বর্তমানে দেশে মাত্র ৫-৬টি উপজেলা এবং চলনবিলের চেয়ে কম জনসংখ্যা নিয়েও কোনো কোনো জেলা বিদ্যমান আছে। সেদিক থেকে আয়তন, জনসংখ্যা, অভিন্ন আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, ইতিহাস-ঐতিহ্য, কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও হাল আমলের যোগাযোগ ও অন্যান্য অবকাঠামোগত ব্যবস্থার উতকর্ষের গতি-বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিলে চলনবিলকে দেশের যে কোন বৃহত্তর জেলার সমান মনে হবে। চলনবিল জেলা করার প্রস্তাব আশির দশকে সর্বপ্রথম উত্থাপিত হয় গুরুদাসপুর উপজেলা হতে। সেই থেকে চলনবিলের সর্বত্র এযাবত এই দাবি অকুণ্ঠভাবে সমর্থিত হয়ে বর্তমানে তা চলনবিলবাসীর সর্বজনীন গণদাবিতে রুপ লাভ করেছে। দীর্ঘদিন যাবত এবং আজো প্রায় সদাসর্বদা চলনবিলের আনাচে-কানাচে আলাপ-আলোচনা ও লেখালেখি চলছে এই গণমুখী ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে “টক অব দ্যা চলনবিল” হিসেবে।এখন পর্যন্ত চলনবিলের লেখক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবিরাই প্রধানত এই মত ও পথের চর্চা-অনুশীলনে মূখ্য ভূমিকা রেখে চলেছেন। তাই এখন সময় এসেছে বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আন্দোলন গড়ে তোলা, সরকারের কাছে তুলে ধরা তথা কণ্ঠ উচ্চকিত করা। অর্থাৎ চলনবিল জেলা এখন সময়ের দাবি যা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া পিছুবার কোনো পথ নেই। কেননা চলনবিলের ভবিষ্যত উন্নতি ও সমৃদ্ধি নির্ভর করছে চলনবিল জেলা সত্যকার বাস্তবায়নের ওপর।চলনবিল জেলার স্বপ্ন সুদূর প্রসারী এবং এলাকার জনজীবনে এর প্রভাব ও প্রতিফল হবে অতি কল্যাণকর এবং সুদীর্ঘস্থায়ী। যারা সর্বপ্রথম এই জনহিতকর ও গণকল্যাণমূলক চিন্তার সূত্রপাত করেছিলেন তারা ছিলেন কত দূরদর্শী স্বপ্নদ্রষ্টা তা ভাবলে আজ মুগ্ধ আপ্লুত হতে হয়। গত বছর ইশ^রদি-সাঁড়া রেলপথ ছাড়াও চলনবিলের মাঝ দিয়ে নাটোর-গুরুদাসপুর-তাড়াশ-সিরাজগঞ্জ হয়ে আর একটি রেলপথের সঙ্গত দাবি উঠেছে গুরুদাসপুর থেকেই। প্রস্তাবিত উক্ত রেলপথ রাজধানী ঢাকাসহ সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথের সাথে যুক্ত হলে এর বিশাল ভবিষ্যত কার্যকারীতা চলনবিলবাসীর ভাগ্যাকাশে নতুন উন্নয়নের দ্বার খুলে দিতে পারে। অতি সম্প্রতি সরকারী তরফে চলনবিল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়েছে মর্মে গণমাধ্যমে ও লোকমুখে খবর চাউর হয়েছে। এসবই ঐতিহাসিক এ বিলের আগামী দিনের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে অপরিহার্য বটে। তবে মনে রাখতে হবে, চলনবিলের যত উন্নয়নের কথা বলি না কেন এলাকাটিকে সর্বপ্রথম জেলায় উন্নীত করা না গেলে কোনো উন্নয়ন উদ্যোগই টেকসই বা সফল হবে না দূর ভবিষ্যতের জন্য। সেজন্যই এখন প্রশাসনিক জোন হিসেবে চলনবিল জেলা গঠন জরুরী আবশ্যক।চলনবিল জেলা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কেবল চলনবিলবাসীর সুদীর্ঘ লালিত আশা-আকাঙ্খা পূরণ এবং তাদের জীবনমানের যুগোপযোগী পরিবর্তন সম্ভব। চলনবিলের দারিদ্র, পশ্চাৎপদতা ও অনগ্রসরতা দূর করে এটিকে উন্নত, সভ্য ও বিশ^ায়নের যুগোপযোগী জনপদ হিসেবে গড়ে তোলার এটাই মোক্ষ উপায়। এক্ষেত্রে চলনবিলের প্রাণ, প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ অক্ষুন্ন রেখেই সুপরিকল্পিতভাবে জেলা স্থাপন করা যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্তসহ এর প্রাসঙ্গিকতা , সময়োপযোগীতা এবং যৌক্তিকতা তুলে ধরে চলনবিল এলাকার সকল সংসদ সদস্যকে সংসদে বিষয়টির জরুরী আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়ে তা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রয়োজনীয় অনুমোদনের উদ্দেশ্যে জোড়,তদবির, লবি ও প্রচেষ্টা এমনকি প্রয়োজনে এনিয়ে সংগ্রামে-আন্দোলনে অবতীর্ণ হতে হবে। চলনবিল জেলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাইলে এর কোন বিকল্প নাই। এটা তাদের নৈতিক, সামাজিক, মানবিক ও রাজনৈতিক পবিত্র দায়িত্ব। এ দায় চলনবিলের রাজনৈতিক নেতৃবর্গ অস্বীকার বা উপেক্ষা করতে পারবেন না। চলনবিলকে বিশে^র বুকে পরিচিত করানোর তথা উদ্ভাসিত করার এটাই একমাত্র সুযোগ ও উপায়। ঐতিহাসিক বিলের সুশীল সমাজও এ ব্যাপারে যুগপৎ কাজ করে যেতে পারে। একমাত্র চলনবিল জেলা বাস্তবায়নের মধ্যেই চলনবিলবাসীর প্রকৃত মুক্তি ও অগ্রগতি ও চিরস্থায়ী মঙ্গল নিহিত। চলনবিল রক্ষার যত দাবিদাওয়া , যত আন্দোলন তা অর্জনের এবং সফলতার মূল মন্ত্র বা চাবিকাঠি হল চলনবিলকে জেলায় রূপান্তরিত করা। এর কোন বিকল্প নেই তা জ্ঞান-প্রজ্ঞাসহ গভীরভাবে চিন্তা উপলব্ধি করলে বুঝা যাবে। সে জন্য প্রথমে এই প্রত্যয় ও বিশ^াসকে ধারণ এবং লালন করতে হবে সুদূরপ্রসারী চিন্তা চেতনা দিয়ে।আমরা আশা করবো, চলনবিল অঞ্চলের সাংসদগণ অবিলম্বে এ বিষয়ে প্রথমে নিজেদের মধ্যে আলোচনাপূর্বক নিরংকুশ ঐকমত্য, সমঝোতা , সংহতি ও অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী তৈরী করে চলনবিল জেলা প্রস্তাবনার সপক্ষে একটা জোড়ালো ইশতেহার বা উপস্থাপনা প্রণয়ন করে তা এমনভাবে পার্লামেন্টে উত্থাপন করবেন যাতে গোটা সংসদ এ প্রস্তাবে আকর্ষিত ও মুগ্ধ হয়। সরকার এই প্রস্তাবের গভীরতা,গুরুত্ব এবং তাৎপর্য উপলব্ধি করে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করে। উল্লেখ্য, চলনবিলের বর্তমান সংসদ সদস্যগণ একই দল ও মতাদর্শের অনুসারী হওয়ার ফলে তাদের পক্ষে এ ব্যাপারে অভিন্ন অবস্থান নেয়া বোধ করি কঠিন হবে না। এটা করতে গিয়ে চলনবিলের এমপিগণ যদি খসড়া প্রস্তাব প্রণয়নের জন্য চলনবিলের বিভিন্ন উপজেলার লেখক, বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক , রাজনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটা প্রস্তাবনা তৈরী কমিটি গঠন করেন সেটা আরো কার্যকর ও অনুকুল হতে পারে। এ কাজে এমনকি সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা পরিবারসহ চলনবিলের বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রকাশিত পত্রপত্রিকাও অন্তর্ভূক্ত হয়ে প্রচার-প্রকাশনায় স্বেচ্ছাশ্রম আর মেধাগত মেহনতে অংশ নিতে এবং সাধ্যমতো অবদান রাখতে আগ্রহের সাথে এগিয়ে আসবে বলে আমাদের বিশ^াস। চলনবিলবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চলনবিল জেলা গঠনের পদক্ষেপ সার্থক ও সাফল্যমন্ডিত হোক – এই আমাদের একান্ত প্রত্যাশা। অধিকন্ত আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য চলনবিল জেলা রেখে যেতে পারলে তা ওদের জন্য নতুন স্বর্ণ যুগের সূচনা করবে। তাছাড়া অনাগত দিনে দেশীয় এবং বৈশি^ক উন্নয়ন প্রতিযোগীতায় চলনবিলের স্থান হবে অনেক উঁচুতে তা অকল্পনীয় নয়। পাশাপাশি আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে চলনবিল একটা উচ্চ মাত্রায় পৌছে যাবে সেটাও খুবই প্রত্যাশিত। মোট কথা চলনবিলের যাবতীয় ভবিষ্যত কল্যাণ , প্রগতি ও আমুল পরিবর্তন নির্ভর করছে চলনবিল জেলা বাস্তবায়নের ওপর। চলনবিল জেলা হওয়া মানেই এই অবহেলিত জনপদ দেশের বর্তমান উন্নয়ন মহাসড়কের সাথে যুক্ত হওয়া।একই সাথে দেশে ও বিশে^ এর নানামুখি সীমাহীন প্রাচুর্য ও সম্ভাবনা বিকাশের দ্বার খুলে যাওয়া। এর ফলে চলনবিলের আপামর জনতার ভাগ্য বদলে তারা আধুনিক নাগরিক সেবা ও উন্নত জীবন ব্যবস্থার সাথে স্পৃক্ত হবে।
সবশেষে আমরা চলনবিলবাসী মনে করি, বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দূরদর্শী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত দিয়েই চলনবিল জেলা গঠনের মহান ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী কাজটি হওয়া সম্ভব।এমন মহতী কর্মের জন্য এটাই মাহেন্দ্র ক্ষণ। এলক্ষ্যে দেরি না করে এখুনি অদম্য উৎসাহ নিয়ে অব্যাহত সক্রিয় তৎপরতা শুরু করার জন্য আমরা চলনবিল এলাকার সিংড়ার মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ও বিলাঞ্চলের অন্যান্য সংসদ সদস্যদের ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের বিশেষ জরুরী মনোযোগ আকর্ষণ করে তাদের সবাইকে একযোগে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ ও এক্ষেত্রে যতটা সম্ভব অগ্রবর্তী নেতৃত্ব প্রদানের জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি যাতে তারা এই মহতী অবদানের কারণে চিরদিন চলনবিলের ইতিহাসে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে থাকেন এবং একই কারণে চলনবিলের আপামর গণমানুষের চির শ্রদ্ধা ও আশীর্বাদসিক্ত হতে পারেন। তাই এখনি সময় চলনবিল জেলার প্রাসঙ্গিক গুরুত্ব,তাৎপর্য, চেতনা ও দর্শনকে সামনে এগিয়ে নেয়ার যেন এটা দীর্ঘ বিলম্বিত না হয়ে যথাসময়ে আলোর মুখ দেখে। এ প্রত্যাশা অবশ্যই পূরণযোগ্য এবং এ স্বপ্ন বহু কারণেই বাস্তবভিত্তিক ও যৌক্তিক। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলনবিল জেলা বাস্তবায়নের সে উদ্দীপনা, প্রেরণা ছড়িয়ে যাক- গতি সঞ্চারিত হোক আন্দোলনে, উজ্জীবনে- এটাই এ মুহুর্তের একান্ত কামনা।

লেখক: সম্পাদক, সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা, তাড়াশ , সিরাজগঞ্জ।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD