তাড়াশে সোঁতি জালে পানির প্রবাহে বাঁধা, নৌ চলাচল বন্ধ

Spread the love
লুৎফর রহমানঃ চল‌নবিল অধ্যু‌ষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত গুমানী নদীতে বাঁশের ঘের  তৈরি করে অবৈধ সোঁতিজাল দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। এতে করে পানি প্রবাহের বাধা সহ নৌ চলাচল বিঘ্ন‌িত হচ্ছে। 
চলনবিলের পানি এ নদী দিয়ে নিষ্কাশন না হওয়ায় শত শত বিঘা জমিতে বোরো চাষেও সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ দিলেও প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
অভিযোগ সূত্রে প্রকাশ, আত্রাই নদীর শাখা নদী গুমানী। বৃহত্তর চলনবিল অঞ্চলের মানুষ এ নৌপথে তাড়াশ উপজেলার ধামাইচ হাট,  গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় হাট, সিংড়া উপজেলার সিংড়ার হাট ও আত্রাই উপজেলার আত্রাই ও আহসানগঞ্জ হাট থেকে বিভিন্ন পণ্য আনা নেয়া করে থাকেন। এ ছাড়াও তাড়াশ ও গুরুদাসপুর  উপজেলার চলনবিল অংশের বিভিন্ন মাঠ থেকে দ্রুতবেগে পানি নিষ্কাশন হয় এ নদী দিয়েই। 
সম্প্রতি নদীতে পানি কমে যাওয়ায় মাসখানেক আগে তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের নাদোসৈয়দপুর এলাকার আক্কেলের ঘাট অংশে স্থানীয় প্রভাবশালী বিন্নাবাড়ি গ্রামে কোবাদ আলীর ছেলে মো: বকুল ও বাদশা মিয়ার ছেলে খায়রুল ইসলাম বাঁশ, চাটাই,পলেথিন ও লাইলনের জালের সাহায্যে মাটি সহযোগে বাঁধ নির্মাণ করে সোঁতিজাল দিয়ে অবাধে মাছ ধরছে। এর ফলে একদিকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ যেমন ধ্বংস হচ্ছে,তেমনি বন্ধ হয়ে গেছে নৌ চলাচল। 
অপরদিকে চলনবিলের তাড়াশ ও গুরুদাসপুর উপজেলার প্রায় চারটি ইউনিয়নের বোরোর জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায়  খেত প্রস্তুত করতে কৃষকদের সমস্যা হচ্ছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে।
তাড়াশ উপজেলার নাদোসৈয়দপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আলী আক্কাস বলেন, নদীতে বাঁধ দিয়ে সোঁতিজাল পাতায় নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সোঁতিজালের কারণে ভাটিতে ঘুর্ণির সৃষ্টি হয়ে নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে। এতে করে নদী তীরবর্তী বিভিন্নস্থানে ভাঙন দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সড়কপথে পণ্য আমদানী করতেও তাদের কে দ্বিগুণ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এতে করে তারা ক্ষতিরমুখে পড়েছেন।
সগুনা এলাকার মো. গ‌হের আলী অভিযোগ করে বলেন, বিলের পানি নামে গুমানী নদী দিয়ে। কিন্তু সেখানে সোঁতিজাল দিয়ে মাছ ধরার কারণে বিল থেকে পানি নামছে ধীর গতিতে । 
এ কারণে বোরো আবাদ করতে তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যারফলে বোরো চাষ দেরীতে হলে ধান পাকার সময় উত্তরের ঢলগড়ার পানিতে ডুবে যাওয়ার আশংকা থেকেই যায়। এ বিষয়ে তারা প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগে অভিযোগ দিলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। প্রশাসনও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
সরেজমিনে গুমানী নদীর আক্কেলের ঘাট এলাকায় গিয়ে অভিযোগের বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায়। দেখা যায় নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে সোঁতিজাল পাতা হয়েছে। এ সোঁতিজালে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীর বিভিন্ন অংশে যেটুকু গভীরতা থাকে তা থেকেই মা মাছ বংশ বিস্তার করে থাকে। কিন্তু সোঁতিজালের কারণে মাছের বিভিন্ন প্রজাতি অবাধে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। নৌ চলাচল করতে না পারায় পণ্য আনা নেয় করতে হচ্ছে সড়ক পথে। ফলে এ অঞ্চলে ব্যবসায়ীরা সড়কপথে অধিক খরচে মালামাল আনা নেয়া করছেন।
এ প্রসঙ্গে সোঁতিজালের মালিক বকুল ও খায়রুলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। পরে বকুলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন বন্ধ করে দেয়।
তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: মসগুল আজাদ বলেন, এখন পর্যন্ত তিনি কোনো অভিযোগ পাননি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 
এ প্রসঙ্গ‌ে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, আমাকে এ উপজেলা থেকে বদলী করা হয়েছে। পরবর্তীতে যিনি আসবেন তিনি আইনগতভাবে দেখবেন।
Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD