এইতো মানব সভ্যতার মানুষ!!!
বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শুকুর মাহমুদ
মানব সভ্যতার মানুষের মাঝে আলোচনায় উঠে আসে আদিম যুগের মানুষের কথা, তারা বসবাসের জন্য ঘর বাঁধতে জানত না। তাদের পরনের কাপড় ছিলো না, তারা খাদ্য-খাবার রান্না করে খেতে জানত না। পাহাড়ের গুহায় কিংবা বড় গাছের আড়ালে আশ্রয় নিয়ে থাকত। যখন বুঝতে শিখলো ইজ্জতের আবরণ করতে হবে, তখন গাছের ছাল-পাতা দিয়ে ইজ্জত আবরন করত। তাদের বুঝে ছিলো না কোনটা মানুষের খাবার, কোনটা পশুর খাবার তারা পশুর মত খাবার খেয়ে জীবন-যাপন করত।
বৈবাহিক সূত্রে জীবন-যাপন করনের কোনো নিয়ম ছিলো না, তারপরও তারা একে অপরের খাবার কেঁড়ে খায়নি, একে অপরের ভোগ্য নারী ভোগ করেনি। মানুষ ব্যতিত তারা পশুর সাথে যৌন মিলন করেনি, তাদের যুগে কোন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়নি। আদিম যুগের মানুষেরা, মানুষ হত্যা করেনি, মানুষে-মানুষ ধোকা দেয়নি, তারা ছিলো আদিম যুগের অসভ্য মানুষ। আজ সভ্য যুগের মানুষেরা, মানুষ ছাড়াও পশুর সাথে যৌন মিলনের প্রমাণ উঠে আসছে। আজ অবদি কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি এক জাতের পশু অন্য জাতের পশুর সাথে যৌন মিলন ঘটাচ্ছে। পশুরা অপ্রাপ্ত কোনো পশুর সাথে যৌন মিলন করতে দেখা যায় না।
প্রবন্ধটির প্রথমাংশ ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক হলেও আদিকালে পৃথিবীর অনেক স্থানেই মানুষ ওই রূপ জীবন-যাপন করেছে, এখনো পৃথিবীর কোনো কোনো অঞ্চলের মানুষ আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে বঞ্ছিত রয়েছে।
এখন মানুষের ইতিহাস সৃষ্টি হচ্ছে, রাষ্ট্র গঠন হচ্ছে মানুষ অনেক কিছুই আবিষ্কার করছে, আমাদের সভ্য যুগে মানুষের হাতের মুঠোয় বিশ্ব জগৎ ঘুরছে। মুহুর্তের মধ্যে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের সাদৃশ্য খবর পাচ্ছে। মানব সভ্যতার সভ্য মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে মানুষ। একটু হিসেব মিলিয়ে দেখুন আদিম যুগের অসভ্য মানুষেরা যা করেনি এখন মানব সভ্যতার মানুষেরা তার কোনটাই বাদ রাখছে না। এই সভ্য যুগের মানুষেরা অনায়াসে মানুষ হত্যা করছে, মানুষেরা সহজেই মানুষকে ধোকা দিচ্ছে। মানুষের সমাজ থেকে প্রতিদিন খবরের কাগজে উঠে আসছে নারী-শিশু ধর্ষণ হচ্ছে। ঔরশজাত কন্যাকে ধর্ষণ করছে পিতা নামক আজকের সভ্য মানুষটি, প্রতিদিন বহুসংখক শিশু ধর্ষিতা হচ্ছে এই সভ্য যুগে। আজকের সভ্য সমাজে পিতা-পুত্রকে হত্যা করছে। পুত্র-কন্যা, পিতা-মাতাকে নির্মমভাবে হত্যা করছে, স্বামীকে হত্যা করে উধাও হচ্ছে স্ত্রী পরকীয়ার হাত ধরে। গর্ভজাত সন্তানকে হত্যা করে অন্যের হাত ধরে চলে যাচ্ছে মা, এই তো মানব সভ্যতার মানুষ।
মানব সভ্যতার এই সভ্য যুগে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে যা চলছে, তা কলমে লিখতেই উঁচু মাথা নিচু হয়ে যাচ্ছে। নেশাপান করে মানুষ বেহুশ হয়ে যাচ্ছে। ওলি-আউলিয়াদের সমাধি চত্বরে মদ-গাজার দূর্গন্ধ আর ধোয়া দিয়ে পবিত্র সমাধি চত্বর অপবিত্র করছে, তারপরও এটি নাকি তাদের ফকিরি। জ্ঞান তাপন যুগের শ্রেষ্ঠ কবি ফকির লালন শাহ এর সমাধি চত্বরে প্রকাশ্যে তথাকথিত লালন ভক্তরা গাজা-মদ পান করছে, এটিকে তারা সিদ্ধি সেবন বলে চালিয়ে দিচ্ছে। তাদের উক্তি ফকির লালন শাহ সিদ্ধি সেবন করেছেন, তাই যদি হবে। তবে লালন শাহ এর একটি গানের দু’কলি আলোকপাত করা হলো লালন বলে..
শুকনা মধু রসে ভরা, ও মধু খাসনে তোরা।
খেলে ওই মধু পরবি ধরা, অকালে যাবি মারা।
এ গানের সূত্র ধরে বলা যায় যে, ওরা পবিত্র এই জ্ঞান তাপসকে অপবিত্রতার অপবাদ দিয়ে নেশার স্বর্গ রাজ্য গড়ে তুলেছে। আসলে ফকির লালন শাহ এটিকে ঘৃণা করেছেন। এই হচ্ছে মানব সভ্যতার মানুষ !!!