যে গাঁয়ে জন্ম নিয়েছেন কথাসাহিত্যিক ও কলামিষ্ট বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শুকুর মাহমুদ

Spread the love

একটি পল্লিগাঁয়ের নাম চর বেলতৈল, শহর থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। বিল-বাওর, জোলা-খালের সমন্বয়ে হালক আর মেঠোপথ। গাঁয়ের একটি খবর শহরে পৌছাতে অথবা শহরের কোন খবর গাঁয়ে পৌছাতে তখনকার সময়ে ৩ ঘন্টা সময় লাগতো। সে গাঁয়েই জন্ম হয়েছে বাংলা সাহিত্যের অমর কথা শিল্পী কালজয়ী ঔপন্যাসিক। ব্রিটিশ হটাও আন্দোলনের মষিযোদ্ধা ও সম্মুখ যুদ্ধের সৈনিক, মোহাম্মাহ নজিবর রহমান সাহিত্যরতœ। যার লেখা ‘বিলাতীবর্জন’ রহস্য বইয়ে ব্রিটিশ হটাও আন্দোলন বেগবান হয়েছিল। সেই গাঁয়ের সন্তান রহমতুল্লাহ সরকার ব্রিটিশ শাসন আমলে জেলা রেজিষ্টার ছিলেন।

চর বেলতৈল গাঁয়ের আরেক সন্তান মালে মোহাম্মদ সরকার ব্রিটিশ শাসনামলে জজের জুড়ি ছিলেন, একই সময়ে তিনি পঞ্চায়েত ছিলেন। চর বেলতৈল গ্রামে জন্ম গ্রহন করেছেন ইঞ্জিনিয়ার আজগর আলী, যিনি পাকিস্তান সরকারের অধীনে পূর্ব পাকিস্তানের সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন। নজিবর রহমান সাহিত্যরতেœ বড় ভাইয়ের নাতি শওকত আলী, পাকিস্তান শাসন আমলে পাইলট ছিলেন।তিনি করাচিতে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যবরন করেন। চরবেলতৈল গ্রামে জন্ম অধ্যাপক মতিউর রহমান তিনি পাকিস্তান শাসন আমলে সিদ্ধেস্বরী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি নজিবর রহমান সাহিত্য রতœ এর গবেষণামূলক জীবনী গ্রন্থ সহ ৬৫ খানা গ্রন্থ রচনা করেছেন। চর বেলতৈল গাঁয়ের তৈয়ব আলী সরকার প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ বোর্ডের বিভাগীয় কর্মকর্তা ছিলেন। একই পরিবারের সন্তান আব্দুল লতিফ জিন্নাহ প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষনের সুপারিনন্টেড ছিলেন।

অন্য আরেক কৃতি সন্তান ইঞ্জিনিয়ার নওশের আলী তিনি বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগের সুপারেনন্টেড প্রকৌলশী ছিলেন, চর বেলতৈল গ্রামের আরেক কৃতি সন্তান ডক্তার হাসান শহিদ, এশিয়া মহাদেশের চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একজন শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক, তিনি চর বেলতৈল গ্রামে মানবতা সেবার জন্য একটি প্রবীন কল্যান কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার নিকটতম অগ্রজ-আব্দুস সোবাহান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুর’র পরিচালক ছিলেন। চর বেলতৈল গ্রামের অপর এক সন্তান মোহাম্মদ রইচ উদ্দিন সরকার বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন। নজিবর রহমান সাহিত্যরতœ এর অগ্রজ ডাক্তার আয়নুল্লাহ’র নাতী শাহজাদপুর সাহিত্য মেলার প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি, যুগের নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও কলামিষ্ট বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শুকুর মাহমুদ বংশের সাহিত্য ধারা অব্যহত রাখতে বহু গ্রন্থ্য রচনা করেছেন এবং নিয়মিত কলাম লিখে যাচ্ছেন। অধ্যপক মতিউর রহমানের চাচাতো ভাই, ফজলুল করিম দুলাল, বাংলাদেশ সচিবালয়ের শিক্ষা সচিব সহ বেশ কিছু দপ্তরের সচিব হয়েছেন। চর বেলতৈল গ্রামের সন্তান ইঞ্জিনিয়ার নাঈম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) পদে বর্তমানে আছেন। অত্র এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে ইঞ্জিনিয়ার নাঈমের সাথে তুলনা করার মত কোন জুরিদার নেই। আগের দিনের সেই পল্লি গাঁ চর বেলতৈল এখন আর পল্লি বলার সুযোগ নেই।

চর বেলতৈল গাঁয়ের সাতজন সাহসী বীর প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিনে যারা তারা হলেন সকল বীরমুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌস হোসেন ফুল, মিজানুর রহমান মজিবর, রবিউল হাসান জামাত, আব্দুর রাজ্জাক রাজা, আব্দুল হাকিম সরকার, আব্দুল হামিদ হামিদুল ও সৈয়দ শুকুর মাহমুদ।

বৃহত্তর পাবনা বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার অন্তর্গত ৮নং বেলতৈল ইউনিয়নের চর বেলতৈল গাঁ, এক

সময়ের তকব্বারী উত্তাল তরঙ্গবাহী খর¯্রােতা হুড়াসাগর নদীর ¯্রােতে ভেসে আসা কোন শ্রীফলের বহু সংখ্যক বীচি গজিয়ে নদীর কূলে জন্ম হয়েছিল অনেক বেল গাছ, অথবা কেউ বা কারা নদীর পাড়ে বসে বেল খেয়ে বীচি ফেলে চলে গেছে তা থেকেই গজিয়েছিল বহুসংখ্যক বেলগাছের,আর ঐ বেলগাছই সে স্থানের পূর্বনাম বদলে দিয়ে হয়েছে বেলতলা। আর সৌখিন কেউ শখের বসে বসতি স্থাপন করেছিলেন হুড়াসাগর নদীর পারে বেলতলা। তাতেই স্থানটির নতুন পরিচয় হয়েছে বেলতলা/বেলতলি সর্বশেষ বেলতৈল। সেই বেলতৈলের নামেই ইউনিয়ন পরিষদ ও ডাকঘর স্থাপিত হয়েছে।

কালের বিবর্তনে হুড়াসাগর নদী বিলুপ্তির পর তার বুকে জেগে ওঠা চরে বসতি গড়ে উঠে আরেকটি জনপদ সৃষ্টি হয়, যার নাম চর বেলতৈল। বিলুপ্ত হুড়াসাগরের চর-চাচরা, আঁরি, জোলা, খাল, খারি, বিল, বাওর, হাওরের সৃষ্টি হয়। এতে ছিল না কোন রাস্তাঘাট। তখনকার সময়ে শুষ্কো মৌসুমে যাতায়াতের মাধ্যম ছিল পায়ে হাটা মেঠো পথ। আর জোলা হালট দিয়ে চলতো গরু মহিষের গাড়ি। বর্ষায় চলত নৌকা। গ্রাম থেকে গ্রাম গুলোর দূরত্ব ছিল অনেক। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামের মাঝে ফাঁকা মাঠ, বিল ঝিল মরা নদী আর কৃষি খামার। বর্ষার টলটলে জলে দেখা যেত আমন ধানের সমাহার, শাপলা শালুকের পাতা আর ফুটন্ত ফুলের হাসি, কচুরি পানার মুক্ত বিচরণ আর রঙিন পাখা মেলে পাল উড়ানো নায়ের বাহার।

হুড়াসাগর নদীর বুকে জেগে ওঠা বেলতৈল চরে প্রথম বসতি কিছু ব্যক্তিদের মধ্যে একজন মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্যরতœ এর উর্ধ্বতন তৃতীয় পুরুষ (দাদা) মৌলভী মুল্লুক চাঁদ, মেলু মৌলভী। আরও একজন বাসিন্দা ভেদু প্রামানিক। যাদের নামানুসারে জনপদটির নাম বলা হতো ভেইদার চর। কেউ বলতো মেইলার চর। অবশেষে ‘চর বেলতৈল’ নামেই পরিচিতি লাভ করে।

নজিবর রহমান সাহিত্যরতœ এর দাদা, মৌলভী মুল্লুক চাঁদ শিক্ষিত আলেম ছিলেন। তিনি গ্রামের মসজিদে ইমামতি করতেন ও মক্তবে পড়াতেন। তিনি বহু কবিতা, গজল রচনা করেছেন। তার ছোট ছেলে জায়েদ উদ্দিন যিনি মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্যরতœ এর চাচা, তিনিও লেখক ছিলেন কবিতা ও গজল রচনা করেছেন। একই পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী ঔপন্যাসিক ভারত উপমহাদেশের প্রথম সারির মুসলিম সাহিত্যিক মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্যরতœ।

পাবনা জেলার জনৈক ইতিহাস গবেষক বৃহত্তর পাবনা জেলার ভৌগলিক দিক আলোচনা করে পাবনা জেলার ভূগোলে লিখেছিলেন পাবনা জেলার মধ্যে নারী শিক্ষায় চর বেলতৈল এর তুলনা নেই। যার প্রশংসার দাবিদার পুরোটাই মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্যরতœ। গাঁটিতে বর্তমানে ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ১টি দাখিল মাদরাসা ও ১টি হাফিজিয়া মাদরাসা রয়েছে। ৩টি জামে মসজিদসহ ৬টি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা সদর থেকে চর বেলতৈলের নিকট দিয়ে একটি পাকা রাস্তা অতিক্রম করেছে এবং গ্রামের উত্তর দিক হতে আড়াআড়িভাবে দক্ষিণ দিতে আরও একটি পাকা সড়ক অতিক্রম করেছে। এ দুটি পাকা সড়কের মোহনায় নজিবর রহমান সাহিত্বরতœ স্মৃতি পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যে উন্নয়নে সকল প্রশংসার দাবিদার ইঞ্জিনিয়ার নাঈম সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে দেখা যায় যে, অত্র সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যে চর বেলতৈল গ্রামটি একটি আদর্শ গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। গাঁয়ের নাম চর বেলতৈল।

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD