শাহজাদপুর সাহিত্যমেলার সভাপতি কথা সাহিত্যিক,কলামিষ্ট বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শুকুর মাহমুদ এর ৭২তম জন্মদিন

Spread the love

বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী, কালজয়ী ঔপনাসিক মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন এর নাতী শাহজাদপুর সাহিত্য মেলার সভাপতি কথাসাহিত্যিক ও কলামিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শুকুর মাহমুদ ১৯৫২ সালের ০৯ নভেম্বর বৃহত্তর পাবনা বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলাধীন চরবেলতৈল গ্রামে সৈয়দ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সৈয়দ মকবুল হোসেন, মাতা সৈয়দা পরশতোলা বেগম। পিতামহ ডাক্তার আয়েনল্লাহ, (মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন এর জেষ্ঠভ্রাতা) মাতামহ খন্দকার ইসমাইল হোসেন। তাঁরা চার ভাই দুই বোন। তাদের মধ্যে সৈয়দ শুকুর মাহমুদ, পিতামাতার চতুর্থ সন্তান। তিনি বংশানুক্রমে সাহিত্যিক।

বংশ পরিচয়:
বিভিন্ন তথ্য ও গবেষণার ভিত্তিতে জানা যায় মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্যরত্নের পূর্ব পুরুষের আদি বাসস্থান ইরাকের বাগদাদে। সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালের শেষ দিকে ইরাক থেকে কিছুসংখ্যক মুসলিম ইসলাম ধর্ম প্রচারের মিশন নিয়ে ভারতবর্ষে আসেন। নজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন এর পূর্ব পুরুষ তাদেরই একজন। তারা ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য আজমীর শরিফ আগমন করেন। সেখান হতে জনৈক পূর্ব পুরুষ মুর্শিদাবাদ নবাবের আমন্ত্রণে লাখেরাজ লাভ করে মুর্শিদাবাদ আসেন। শুধু তাই নয়, একই সময়ে জনৈক পূর্ব পুরুষ মুর্শিদাবাদ নবাবের স্টেট ম্যানেজার হিসেবে চাকরিতে নিযুক্ত হন।

পরবর্তীকালে নবাব আলীওয়ার্দী খাঁর শাসনামলে পরিবার-পরিজন নিয়ে পাবনা জেলার শাহজাদপুর থানার পাড়কোলা গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেন। এবং ঐ এলাকায় জমিদারী ক্রয় করে সস্ত্রীক বসবাস করতে থাকেন। পরবর্তীকালে এখান থেকে (পাড়কোলা) উক্ত পরিবারের একদল সদস্য বেলতৈল ইউনিয়নের আগনুকালী বসতি স্থাপন করেন। এই আগনুকালীকে ডক্টর গোলাম সাকলায়েন ভুলবশত: মালতীডাঙ্গা উল্লেখ করেছিলেন। আগনুকালী হতে মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্যরতœ এর উর্দ্ধতন তৃতীয় পুরুষ (দাদা) মৌলভী মুল্লুক চাঁদ হুড়াসাগর নদীর বুকে জেগে উঠা চর অর্থাৎ চর বেলতৈল গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। উত্তরকালে হুড়াসাগর নদী মারা গেলে ধীরে ধীরে অনেক বসতি গড়ে ওঠে। আজকের সময়ে যেমন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন রাস্তা-ঘাট হয়েছে, তখনকার সময়ে ছিল না তেমন রাস্তা-ঘাট। যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল একবারেই অনুন্নত। মরা নদীর বিভিন্ন চর-আড়ির ফাঁকে ফাঁকে বিল-ঝিল, হাওর-বাওর, খাল-জোলা হয়ে থাকতো। সেথায় কচুরিপানা আর শাপলা-শালুকের মধ্য দিয়ে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল বর্ষা মৌসুমে নৌকা,শুষ্ক মৌসুমে চলতো গরুর গাড়ি। সেই গ্রামেই জন্ম হয়েছিল বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী কালজয়ী উপন্যাসিক মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন। অর্থাৎ সৈয়দ শুকুর মাহমুদ-এর উর্ধতন তৃতীয় পুরুষ দাদা।
মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন পাঁচ ভাই এক বোন। যথাক্রমে ১। ডাক্তার আয়েন উল্লাহ, ২। দেলবার রহমান, ৩। মোহাম্মদ নজিবর রহমান (সাহিত্যরত্ন), নজিবর রহমান এর ডাকনাম ‘নীলবর রহমান’, ৪ ও ৫ যথাক্রমে আব্দুর রহিম ও কাবিল উদ্দিন। অকালে মৃত্যুবরণ করেন। বোন নূরজাহান চরবেলতৈল গ্রামেই মুন্সি জহির উদ্দিন পন্ডিত এর সাহিত্যিক হবেন। তখন থেকেই তার সাহিত্য চর্চা ও সাহিত্য রচনা শুরু হয়, এখান থেকেই সাহিত্যে অনুপ্রেরণা পান।

সাহিত্য সমাচার:
এ যাবৎকাল তার লেখা সামাজিক উন্যাসগুলোর মধ্যে “কে দায়ী?”, দু:সাহসী নারী, সত্যই তুমি নারী, ক্ষণিকের স্মৃতি, ধৈর্যই সতীত্বের অলংকার উল্লেখযোগ্য; কাব্যগ্রন্থের মধ্যে এ কান্নার শেষ কোথায়, গোধূলি বেলায় দুটি কাব্য গ্রন্থ; ঘুণে খাচ্ছে সভ্য সমাজ, সামাজিকতার উৎসবে মুসলিম সমাজ কোথায়?, সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার মূলক বই, সাহিত্যচর্চায় কবিতা, গল্প ও উপন্যাস লেখায় তিনি খ্যাতিমান লেখক হিসেবে পরিচিতি, সুনাম ও জশ অর্জন করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই “কে দায়ী ?” সামাজিক উপন্যাস যা ২০০২ সালে প্রকাশিত। চৌষট্টি পৃষ্ঠার এই বই ৩০ টাকা মূল্য দেখা যায়। উপন্যাসটিতে সমাজের বঞ্চিত অবহেলিত একজন পতিতা নারীর কথা এমনভাবে উল্লেখ করেছেন যা পাঠ করে সমাজের স্বার্থান্বেষী মহলের বিবেকে যদি একটু নাড়া দেয় তাতে সমাজ সংস্কারে পাথেয় হবে। পিতামাতাহীন সুন্দরী একটি বালিকা স্বার্থান্বেষী মানুষদের স্বার্থপরতা ও উদাসীনতা সমাজ থেকে বিতাড়িত হয়ে অন্ধকার সমাজে চলে যাচ্ছে।

একটি নারী অসামাজিক কাজে ধরা পরে যখন তার জন্ম ও বংশ পরিচয় নিয়ে কথা উঠেছিল তখন সে নারী বলেছিলÑ আমি খারাপ, যত পারেন আপনারা আমাকে বলুন, আমার বংশ নিয়ে কথা বলবেন না, আমি কোন খারাপ বংশে জন্ম নেইনি, খারাপ হয়েও আমার জন্ম হয়নি। তবে আমার এ খারাপের জন্য কে দায়ী? আদর্শ এক ভদ্র পরিবারে আদরের দুলালী হয়ে আমার জন্ম। পিতা-মাতাকে হারিয়ে যখন আপনজনের কাছে আশ্রয় নিয়েছিলাম, আমার সম্পদ আর স্বার্থের জন্য অসামাজি ও অমানসিক নির্যাতন করে তাড়িয়ে দিয়েছে সেই নামিক আপনজনেরা। তারপর ঠাঁইহীন অবস্থায় ঘুরে কোথাও আশ্রয় পাইনি কোন আপনদের কাছে। পেটের ক্ষুধায় একমুঠো ভাত চেয়ে পাইনি কারও কাছে। আমাকে আহার্য-পানীয় দিলে তাদের ঐ থালা আর পানপত্র ফেলে দিতে হবে। আশ্রয় দিলে বাড়িঘর অপবিত্র হবে। অনাহারে ঠাঁইহীন অনাশ্রয়ে ভাঙ্গা এক স্কুল ঘরে অবস্থান নিয়েছি। মাটির উপরে করেছি বিছানা, বালিশ করেছি ইট। দিনের বেলায় আমাকে সমাজ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল আবার রাতের বেলায় তাদেরই সন্তানেরা আদর করে বুকে তুলে নেয়। সাথে নিয়ে এক থালায় খায়, তাতে কি সমাজপতিরা ঐ সন্তানদের ফেলে দিয়েছে? বইটিতে লেখকের ভূমিকায় লিখেছেন, দেশ, জাতি, সমাজ, ধর্ম চারিটি শব্দের পৃথক পৃথক ব্যাখ্যা ও বর্ণনা আছে। দেশ রক্ষায় দেশ প্রেম, মাতৃভূমির ভালবাসা তেমনি জাতিকে রক্ষা করতে দরকার জাতীয়তাবোধ জাতির ভাষা জাতির নিজস্ব আচার আচরণ। সমাজ ও ধর্ম পাশাপাশি চলে। সমাজ বাদ দিরে যেমন ধর্ম থাকে না,তেমনি ধর্মবাদ দিয়ে সমাজ চলে না। বাঙালি জাতির নিজস্ব মাতৃভূমি আছে তেমনি আছে সমাজ ব্যবস্থা। বিভিন্ন ধর্মের লোক বসবাস করলেও ধর্মীয় শাসন প্রত্যেক জাতিরই আছে।

জাতি, ধর্ম, সমাজ চাপা পড়েছে একশ্রেণীর স্বার্থন্বেষী ব্যক্তিদের কাছে। তারা স্বার্থে মোহে আপন জনকে ঘর ছাড়া করতে পারে। অর্থ আর বিলাসীতার ক্ষেত্রে যদি লক্ষ করা যায় তাতে ধর্ম আর সমাজের অনুমতি কতটুকু আছে? পোশাক ও চালচলনে ধর্ম আর সমাজের খাপ খাইয়ে চলতে হবে।এমনি দুটি অর্থ লোভী নারীর কারণে একটি নিষ্পাপ নারীকে ঠেলে দেয়া হয়েছে পতিতাবৃত্তির সমাজে। দেশে নারী নির্যাতন আইন সংস্কার হচ্ছে বহুবার কিন্তু নারী কর্তৃক নারী নির্যাতিত হচ্ছে অহরহ। তার প্রতিকার কোথায় ?নারীদের নির্যাতনে ঘর ছাড়তে হয়েছে বহু নারীর। অবশেষে সমাজ থেকে হয়েছে বঞ্চিত। বাংলাদেশের রেল ষ্টেশন, লঞ্চ ঘাট, জেলা ও উপজেলা শহরের মত মড়মড় হয়ে যায়, তেমনি নর বিনা নারীর জীবনবদ্ধ খাচার পাখির মত ছটফট করে। বৃষ্টিহীন মরু ভূমিতে গাছ যেমন পাতা ঝড়ে যায় শুধু শাখা মেলে মেঘের পানে তাকিয়ে রয় তেমনি একজন নারী যৌবনের বারটি বছর স্বামীর অপেক্ষায় যৌবনের সবকটি পাতা ঝড়ায়ে বসে আছে স্বামীর প্রতিক্ষায়। এমনি একটি গল্প উপহার দেয়ার বাসনায় কলম হাতে নিলাম। আপনাদের দোয়াই একান্ত কাম্য।

৪র্থ প্রকাশিত বই ‘‘এ কান্নার শেষ কোথায়?’’ কাব্যগ্রন্থ। ৫ম ‘‘সামাজিকতার উৎসবে মুসলিম সমাজ কোথায়?’’ সামাজিক ও ধর্মীয় আলোকে। ৬ষ্ঠ ‘‘পশু রাজ্যের বিধান সভা’’ রঙ্গ-ব্যঙ্গ কবিতাপত্র, সমকালিন রাজনৈতিক পেক্ষাপটে বইটিলিখেছেন। ৭ম ‘‘ক্ষনিকের স্মৃতি’’ সামাজিক উপন্যাস। প্রথম প্রকাশ ফেব্রæয়ারি ২০১১। বইটি পড়ে মনে হয় লেখকের নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাকেই রূপক ঘটনা উল্লেখ করেছেন। বইটিতে লেখকের ভূমিকায় যা লিখেছেন:

জীবনে চলার পথে প্রতিদিন ঘটে যাচ্ছে অসংখ্য ঘটনা। অনেক ঘটনাই মনের মাঝে ধরে রাখা যায় না। আবার কিছ কিছু ঘটনা ঘটে যা মানুষের হৃদয়ের মাঝে বাসা বাঁধে। স্মৃতিগুলো মনের মাঝে শিহরণের মত নাড়া দিয়ে উঠে, ঘুণ পোকার মত মনের মাঝে কাটে। এমনি একটি অল্প সময়ের ঘটনা স্মৃতির মাঝে ধরে রাখতে কল্পনার সুতায় অক্ষরের মালা গেঁথে একটি জীবন্ত কাহিনী‘‘ক্ষণিকের স্মৃতি’’ রচনা করে প্রকাশ করলাম।

৮ম ‘‘ঘুণেখাচ্ছে সভ্য সমাজ’’ এটি সামাজিক ও ধর্মীয় আলোকে। বইটিতে বর্তমান ও সামাজিক কার্যক্রম সভ্য সমাজের সাথে ও ধর্মীয় আলোকে তুলে ধরেছেন। আমাদের সভ্য সমাজে কোথায় কোথায় ঘুণ লেগেছে তা তিনি লিখনির মাধ্যমে পাঠককে অবহিত করেছেন। তাছাড়াও গবেষনা মূলক এ গ্রন্থটি লেখা পর্যন্ত যে সকল 

সাথে বিয়ে হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শুকুর মাহমুদ এর উর্ধতন চতুর্থ পুরুষ (দাদার চাচা) মৌলভী মোহাম্মদ জায়েদ উদ্দিন সাহিত্যিক ছিলেন, বহু কবিতা ও গজল রচনা করে ছিলেন, সৈয়দ শুকুর মাহমুদ এর দাদা মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্যিরতœ সাহিত্যিক, উত্তরাধিকার সূত্রে সৈয়দ শুকুর মাহমুদ সাহিত্যিক। মোহাম্মদনজিবর রহমান সাহিত্যরতœ এর অগ্রজ ভ্রাতা ডাক্তার আয়েন উল্লাহ এর চার ছেলে,যথাক্রমে লুৎফর রহমান মন্ডিত, আমজাদ হোসেন, মিজানুর রহমান ও মকবুল হোসেন। সৈয়দ মকবুল হোসেনের পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শুকুর মাহমুদ।

তাঁর জীবনের শখ:
ছোটবেলা থেকেই তাঁর শখ সৈনিক হবেন। তাঁর দুলাভাই ইপিআর এর সুবেদার ছিলেন। তার বাসায় বেড়াতে গিয়ে রাতের শোবার ঘরে দুলাভাইয়ের পোশাক পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতেন। সে সময়ে গ্রামে পুলিশ বা চৌকিদার এলে অনেকেই দৌড়ে পালাতো। আর তিনি তাদের কাছে যেতেন। ঐ পোশাক নেড়ে চেড়ে দেখতেন। তাদের হাতের বন্দুক দেখে তাকিয়ে থাকতেন। অনেক পুলিশ ধমক দিয়েছে আবার অনেকেই আদর করেছে। এক সময়ে খবর পেলেন পাকিস্তান আনসার বাহিনীতে প্রশিক্ষণ হবে। এজন্য তালিকা করা হচ্ছে। তিনিও নাম লেখালেন তালিকাতে।

১৯৬৯ সালে পাকিস্তান আনসার বাহিনীতে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। সিরাজগঞ্জ মহকুমা আনসার ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ করে সৈনিকের পোশাক পড়েন, বন্দুক চালালেন, সৈনিক হবার শখ অনেকাংশেই পূরণ হলো। এরপর ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা হয়ে তাঁর মনের শখ অনেকাংশেই পূরণ হয়। ছোটবেলা থেকে তাঁর ঝোঁক ছিল তিনি লেখক হবেন। বাল্যবেলায় দেখতেন শহর থেকে অনেক মানিগুণী লোকজন আসতেন তাঁদের বাড়ি। তাঁরা এসে বড়দের সাথে কথা বলতেন। দাদা নজিবর রহমান সাহিত্যরতœ এর জীবনী অনুসন্ধান করতে, তাঁকে নিয়ে গবেষণা করতে অনেক গুণীজন আসতেন। তখন তিনি বুঝলেন কবি-সাহিত্যিক, লেখকদের মূল্য। তখন থেকে তিনি হাটি হাটি পা পা করে লিখতে গুরু করেন। তিনি ছোটবেলা হতেই ছন্দে ছন্দে কথা বলা, কবিতা পড়া, কবিতা লেখার প্রতি দারুণ মনোযোগী।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. গোলাম সাকলায়েন মোহাম্মদনজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন এর উপর গবেষণা করতে, তার জন্ম ভিটে ও বাল্যকাল শিক্ষা এবং কর্মজীবন অনুসন্ধান করতে চর বেলতৈলে আসেন। পরবর্তীকালে ড. মাজহারুল ইসলাম, বুলবুল ইসলাম ও ড. শেখ রেজাউল করিম বিভিন্ন সময়ে মোহাম্মদ নজিবর রহমান এর উপর গবেষণা করতে আসায় তাদের সাথে সঙ্গ দিয়ে সৈয়দ শুকুর মাহমুদ অনুভব করেন, একজন সাহিত্যিকের ইন্তেকালে শতবছর পরও মানুষ তাঁকে নিয়ে গবেষেণা করে, তার জীবনী অনুসন্ধান করে, তখনই সৈয়দ শুকুর মাহমুদ এর মনের মাঝে নাড়া দিয়ে ওঠে তিনি কোর্ট ভবন চত্বরে লাইসেন্স বিহীন বহু পতিতা আস্তানা করে আছে। এরা সকলেই কি পেশাদার পতিতা ? না– কেউ পেটের দায়ে আবার কেউ নির্যাতনে ঘর ছাড়া হয়ে স্থান পেয়েছে পতিতা সমাজে। তারই মাঝে সমাজের কিছু মুখোশধারী লোকেরা সর্বনাশ করছে রাতের আঁধারে। এমনি একটি অবস্থার শিকার ‘‘কে দায়ী ?’’ গ্রন্থের ঘটনা।

তাঁর লেখা প্রকাশিত ২য় বই ‘‘দূ:সাহসী নারী’’। বইটির প্রকাশ কাল ২৬ জুলাই ২০০৬ বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ৬০ মূল্য ৫০.০০ টাকা মাত্র। বইটিতে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সস্ত্রাসী কর্মকান্ড ও চাঁদাবাজির কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছেন। যদিও সামাজিক এই ব্যাধি নির্মূল করতে তার পক্ষে অসম্ভব তবুও তিনি কল্পনার মালায় একজন নারীর মাধ্যমে সস্ত্রাসী/চাঁদাবাজকে হত্যা করে সস্ত্রাস নির্মূল করেছেন। যে কারনে বইটির নামকরণ করেছে, ‘‘দূ:সাহসী নারী’’। বইটিতে লেখকের ভূমিকায় লেখা হয়েছে, বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে বৈজ্ঞানিক উপায়ে, তাঁর সাথে দেশজাতি, নীতি ও ধর্ম ঠিক রেখে তালে তালে এগিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। বিশ্ব নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, আমিও বিশ্বের সাথে মতবিরোধ নই। তবে নারীর আদর্শতা ঠিক রেখে অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই প্রকৃত মানবতা। বিশ্বে রাজনৈতিক অবস্থা, জাতিগত দ্বন্ধ হিংসা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চলছে। তথা বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক হিংসা প্রতিহিংসা, দলীয় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাজিতে দেশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে।

এদেশের নারী সমাজ স্বাধীন ভাবে রাস্তায় চলতে পারছে না। হাইজ্যাক, ধর্ষন, নারী পাচার ইত্যাদি ঘটনা ঘটেই চলেছে।একজন পরিশ্রমের অর্থ ধরে রাখতে পারছে না। উপার্জিত অর্থ দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করতে চাঁদা দিতে হয়। নিজস্ব অর্থে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করতে চাঁদা বাজের হামলার স্বীকার, তার প্রতিবাদ করলে মানসম্মান বিনাস হয়। এমনকি জীবন চলে যাচ্ছে বিফলে। এর উপর ভিত্তি করে মুক্তিযুদ্ধের আংশিক স্মৃতি বিজড়তি, স্বাধীনতা উত্তর প্রবাহমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও রাজনৈতিক ছত্র-ছায়ায় চাঁদাবাজীর সমালোচনা পূর্ণ। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতিকে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়ে, পথ নির্দেশনা স্বরুপ ‘‘দু:সাহসী নারী’’ বই খানি রচনা করলাম।বইটিতে দারোয়ান বাহাদুর মিয়ার যে চরিত্র উল্লেখ করেছেন, এটি পড়ে মনে হয় লেখক নিজেই এই বাহাদুর মিয়া। কারণ বাহাদুর মিয়া মুক্তিযুদ্ধের যে স্মৃতি চারণ করেছেন, তা একদিন লেখকের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাই শুনেছিলাম।

তাঁর প্রকাশিত ৩য় বই‘‘সত্যই তুমি নারী’’। বইটির প্রকাশ কাল ২৬ জুলাই ২০০৬। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১০২(একশত দুই)। মূল্য ৪০ টাকা মাত্র। মূদ্রিত উত্তর বাংলা প্রসেস এন্ড পিন্টার্স, বাদুর তলা, বগুড়া। বইটিতে নারীর সততা ও ধৈর্য্যশীলতার কথা উল্লেখ করেছেন এবং ধনীর দুলাল সঙ্গদোষে কী ভাবে নষ্ট হয়ে অসৎ পথে অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ে তা উল্লেখ করেছেন। বইটিতে লেখকের ভূমিকায় যা উল্লেখ করেছেন:মহান স্রষ্টাবিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন। আকশ, বাতাস, চন্দ্র-সূর্য, ফেরেস্তা-জ্বীন এ রকম সতের হাজার নয় শত নিরানব্বাই মাখলুখ। এত কিছু সৃষ্টি করেও তাঁর সাধ মিটেনি। তিনি তাঁর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে সৃষ্টি করলেন আশরাফুল মাখলুকাত ‘‘মানুষ’’। পুরুষ আদমকে সৃষ্টি করে বেহেস্তে রেখে দিলেন সত্তর হাজার বছর। তাতেও তৃপ্তি পাননি। প্রেম খেলা খেলতে বাসনা করলেন। মানুষের বংশ বৃদ্ধি করবেন। তিনি ইচ্ছে করলে কাঁঠাল ফলের মত আদমের পিঠি সন্তান ঝুঁলিয়ে দিতে পারতেন, অথবা ইচ্ছা করলে আম ফলের মত ডানায় সন্তান ঝুঁলিয়ে দিতে পারতেন, তা না করে তিনি সৃষ্টি করলেন নারী হাওয়াকে। আদমের মাঝে দিলেন কামশক্তি, হাওয়ার মাঝে দিলে ভাবশক্তি। সেই থেকে নর-নারীর মাঝে সৃষ্টি হয় প্রেম। নারী বিনা নরের জীবন শুকনো পাতার প্রস্তুত করেছেন তা হচ্ছে ‘‘ধৈর্য’ই শতিত্বের অলংকার’’ পান্ডুলিপি সামাজিক উপন্যাস (প্রকাশের অপেক্ষায়)। ‘‘গোধুলী বেলায়’’ কাব্যগ্রন্থ (প্রকাশের অপেক্ষায়)। ‘‘গল্প শুধু গল্প নয় শিশুতোষ’’ এটি শিশুদের জন্য ছোট গল্প। এছাড়াও তাঁর সম্পাদনায় যে সকল সাময়িকী, ম্যাগাজিন সাহিত্যের ছোট কাগজ প্রকাশিত হয়েছে শ্বোপার্জিত স্বাধীনতা, বৈশাখী, বর্ষা, অমর বিজয়, ঈদ, তারার মেলা ও পাতা ঝোড়লেই সব গাছ মরে না। প্রকাশিত হয়েছে এগুলো ছাড়াও জাতীয় ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত কলাম, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন।এতদাঞ্চলে বর্তমান সময়ে যে সকল কবি সাহিত্যিক ও লেখকদের বই প্রকাশিত হয়েছে তন্মমধ্যে কবি হেদায়েত আলী বাসুরি বঙ্গরতœ এর পাঁচটি কাব্যগ্রন্থই প্রকাশে সৈয়দ শুকুর মাহমুদের সহযোগিতার কথা স্বীকার করেছেন। কবি আব্দুর রাজ্জাকের তিন টি বই, কবি ইসমাইল হোসেনের ১টি বই ও অন্যান্য অনেক লেখকের লেখা প্রকাশিত হয়েছে তাঁর অনুপ্রেরণায়। ধর্মীয় ও সামাজিক আলোকে যে গ্রন্থটি প্রস্তুত হয়ে প্রকাশের অপেক্ষায় ‘হক্ক ও বাতিলের লড়াই’।

বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতিতে তাঁর অবদান:
বাংলা সাহিত্য ও বাঙালি সংস্কৃতি চর্চা ও উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সময়ে সাহিত্য সম্মেলন, সাহিত্য সংগঠন করে যাচ্ছেন। শাহজাদপুরে প্রথম সাহিত্য সংগঠন তিনিই শুরু করেন। ২০০৮ সালে তাঁর প্রচেষ্টায় শাহজাদপুর সাহিত্য পরিষদ সংগঠিত হয়।এবং তিনি প্রতিষ্ঠা কালীন সময় হতে ২০১০ সাল পর্যন্ত এ পরিষদে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সংগঠনটিতে কিছু অকবি, পদ লোভী সংযুক্ত হওয়ায় সংগঠনটি বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তিনি ঐ সংগঠন বাদ দিয়ে ২০১০ সালে শাহজাদপুর সাহিত্য মেলা নামে আরেকটি সাহিত্য সংগঠন শুরু করেন এবং শাহজাদপুর সাহিত্য মেলার মাধ্যমে বেশ কয়েকটি সংকলণ, ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও চলমান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবন্নতি লক্ষ্য করে বাংলা ভাষা ও বাঙ্গালি সংস্কৃতি সন্নত রাখতে বিভিন্ন সময়ে লিখে যাচ্ছেন। ইন্টানেটের দৌড়াত্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইউটিউবের প্রভাব বিস্তার করায় বইয়ের পাঠক হারিয়ে যাচ্ছে নিরুতসাহী হচ্ছেন লেখকরা। তারপরও তিনি লেখা-লেখি থেকে বিরত হননি কলাম-প্রবন্ধ লিখে জাতীয় ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করে যাচ্ছেন অবিরাম।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD