যে কারনে নামাজ বাতিল হয়
মুফতি খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ ।
নামাজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত। ইসলামের প্রধান স্তম্ভগুলোর মধ্যে ঈমানের পরেই নামাজের অবস্থান। নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে অনেক সতর্ক থাকতে হয়। এমন কিছু কাজ আছে যেগুলো করলে নামাজ বাতিল হয়ে যায়। সেই কাজগুলো হলো-
নামাজ বাতিল হওয়ার কারণ সমূহ:
১. নামাজে ইচ্ছাকৃতভাবে কথা বলা।
২. কিবলামুখী হয়ে নামাজে দাঁড়ানোর পর বিনা কারণে সম্পূর্ণ শরীর কিবলার দিক থেকে সরে যাওয়া।
৩. নামাজের সময় পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া।
৪. বিনা প্রয়োজনে নামাজ পড়া অবস্থায় মাত্রাতিরিক্ত নড়াচড়া করা।
৫. নামাজে অট্টহাসি দেওয়া।
৬. নামাজে ইচ্ছাকৃত রুকু-সিজদা বেশি করা।৭. নামাজি ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ইমামের আগে গেলেও নামাজ হবে না।
এছাড়া ও নামাজের মধ্যে রয়েছে ১৪টি ওয়াজিব কাজ। ওয়াজিব কাজ বলতে ঐ সব কাজকে বুঝায়, যার কোনো একটিও ছুটে গেলে সিজদায়ে সাহু আদায় করতে হয়। সিজদায়ে সাহু আদায় করতে ভুলে গেলে পুনরায় নামাজ পড়তে হয়। তাই নামাজের ওয়াজিবগুলো যথাযথ আদায় না করলে নামাজ হবে না।
নামাজের ওয়াজিবগুলো তুলে ধরা হলো-
০১. নামাজের প্রত্যেক রাকাআতে সুরা ফাতিহা (আলহামদুলিল্লাহ) পড়া।
০২. প্রত্যেক রাকাআতে সুরা ফাতিহার পর (কিরাত) সুরা মিলনো (কমপক্ষে তিন আয়াত অথবা তিন আয়াতের সমকক্ষ এক আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করা)।
০৩. ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাআতকে কিরাতের জন্য নির্ধারিত করা।
০৪. কিরাআত, রুকু, সিজদার মধ্যে ক্রমধারা বা তারতিব ঠিক রাখা।
০৫. কাওমা করা অর্থাৎ রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
০৬. জলসা করা অর্থাৎ দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা।
০৭. তাদিলে আরকান করা অর্থাৎ রুকু, সিজদা, কাওমা, জলসায় কমপক্ষে এক তাসবিহ পরিমাণ স্থির থাকা। যাতে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ যথাস্থানে পৌঁছে যায়।
০৮. কাদায়ে ওলা অর্থাৎ তিন বা চার রাকাআত বিশিষ্ট নামাজে দুই রাকাআত পর আত্তাহিয়াতু পড়া বা সম-পরিমাণ সময় বসা।০৯. প্রথম ও শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়া।১০. জাহেরি নামাজে প্রথম দুই রাকাআত ইমামের জন্য উচ্চস্বরে কিরাআত পড়া এবং সিররি নামাজের মধ্যে ইমাম ও একাকি নামাজির অনুচ্চ শব্দে কিরাআত পড়া।
১১. সালাম ফিরানো। অর্থাৎ ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে নামাজ শেষ করা।
১২. বিতরের নামাজের দোয়ায়ে কুনুত পড়ার জন্য অতিরিক্ত তাকবির বলা এবং দোয়ায়ে কুনুত পড়া।
১৩. দুই ঈদের নামাজে ছয় ছয় তাকবির বলা।
১৪. প্রত্যেক রাকাআতের ফরজ এবং ওয়াজিবগুলোর তারতিব (ধারাবাহিকতা) ঠিক রাখা।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, আল্লাহর ভয় ও আন্তরিকতার সঙ্গে যথাযথভাবে ধীরস্থিরতার সঙ্গে নামাজ পড়া। নামাজে শুধু আল্লাহর চিন্তায় মগ্ন থাকা জরুরি।
তাই খুব বেশি খুজুও খুশুর সহিত নামাযের মধ্যে দুই জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব আদায় করা ।
যা তরক হয়ে গেলে নামায বাতিল বলে গণ্য হবে।
এ দুই জায়গার একটি হল — রুকুর পরে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তাসবীহ্ পাঠ করা ও কিছুটা বিলম্ব করা।
আর দ্বিতীয়টি হল — দুই সেজদাহর মধ্যবর্তী স্থানে বিলম্ব করা।
ঐ সময়গুলোতে আমরা সুন্দর কোন দোয়া পড়তে পারি। যা পাঠ করলে সওয়াবও হবে আবার ওয়াজিবও আদায় হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ্।
রুকুর পরে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যে দোয়াটি পাঠ করবেন, সে সম্পর্কে খুব সুন্দর একটি হাদিস আছে যা নিম্নে বর্ণনা করলাম।
রাসূলে আকরাম (সাঃ) একদিন মসজিদে নববীতে নামাজের ইমামতি করছিলেন।
যথারীতি নামাজ আদায় করা হচ্ছিল।
রুকু শেষ করে যখন ‘সামি আল্লহু লিমান হামিদাহ্’ বলে দাঁড়িয়ে ‘রব্বানা ওয় লাকাল হামদ্’ বললেন, তখন কোন এক সাহাবী মনে মনে ‘হামদং কাছিরং তৈয়্যেবাম মুবারকান ফীহি’ বললেন। তারপর যথারীতি রাসূলে আকরাম (সাঃ) সাথে নামাজ শেষ করলেন।
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) নামাজ শেষ করে সাহাবীদের দিকে ঘুরে বসলেন।
তারপর তিনি (সাঃ) জানতে চাইলেন — “নামাজের মধ্যে এই অতিরিক্ত কথাটি ‘হামদং কাছিরং তৈয়্যেবাম মুবারকান ফীহি’ কে বলেছ?
সাহাবীগণ এ ওর মুখের দিকে তাকাতে লাগলেন।
এক সাহাবী ভয়ে ভয়ে বললেন — ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)! এই অতিরিক্ত কথাটি আমিই বলেছি। কোন ভুল হয়ে গেছে?
রাসূলে আকরাম (সাঃ) বললেন —-“না। তুমি যখন ঐ কথাগুলো বলো, তখন আমি দেখতে পেলাম ৩০ জন ফেরেশতা প্রতিযোগিতা করছে তোমার আমলনামায় কে কার আগে বেশি সওয়াব লিখতে পারে!”
সুবহানাল্লাহ্! সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদীহি।
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন ———
‘যে ব্যক্তি রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে “ সামি আল্লহু লিমান হামিদাহ্ ” বলার পর “রব্বানা লাকাল হামদ্ হামদং কাছিরং তৈয়্যেবাম মুবারকান ফীহি্” বলে। মহান আল্লাহ তায়ালা ৩০ জন ফেরেস্তা দ্বারা তার জন্যে সওয়াব লেখায় প্রতিযোগিতা করায় !’
~ [ বুখারি শরীফ : ৭৬৩ ]
দুই সেজদাহর মধ্যখানে সোজ হয়ে বসে পড়তে পারেন ————-
“আল্লাহুম-মাগফিরলি, ওয়ার হামনি, ওয়ার যুকনি, ওয়া’দ্বীনি, ওয়াআ’ফিনি।”
যার সুন্দর অর্থ আছে। এই দোয়াটি আমল করলে আল্লাহর কাছে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চেয়ে যাবেন!
তা হল — হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন, আমাকে রিযক দান করুন, আমাকে আপনার দ্বীনের উপর অবিচল রাখুন, আমার প্রতি দয়া করুন!
আমরা এ গুরুত্বপূর্ণ দুই জায়গায় এই আমল দুটি করে আল্লাহর সানিদ্ধ্য সহজেই অর্জন করতে পারি।
মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করুন।
মহান আল্লাহ তাআলা সকল মুসলিম উম্মাহকে নামাজ নষ্ট হওয়ার কারণগুলো থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক তরুণ আলোচক ও গবেষক