একটি ধোকার নাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি

Spread the love

একটি ধোকার নাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি
বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শুকুর মাহমুদ

পল্লী বিদ্যুৎ এটি বিদেশী একটি কোম্পানী, দেশের উৎপাদিত বিদ্যুৎ স্বল্প মূল্যে ক্রয় করে উচ্চ মূল্যে, বিভিন্ন দরে বিক্রি করছে। এর সকল আয় ব্যয় ওই কোম্পানীর-ই অথচ জাতীকে ধোকা দিতে সমিতি নামক শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে। কোম্পানী যা মুনাফা করছে সকল আয়-ই ওই কোম্পানীর। স্বাধীন বাংলার অভ্যান্তরে পল্লী বিদ্যুতের নামে যত জমি ক্রয় করা হচ্ছে ওই সকল জমির মালিকানা বিদেশী ওই কোম্পানীর সম্পদ।

দেশের রাষ্ট্র প্রধান যদি বিদেশের সাথে কোন চুক্তিতে ভুল করে আর তা যদি হয় রাষ্ট্রের ক্ষতির সম্ভবনা তবে ওই চুক্তি বাস্তবায়ন হবার পূর্বে-ই ওই রাষ্ট্র প্রধানকে উৎখাত বা অবাঞ্ছিত ঘোষনা করা হলে ওই চুক্তির গুরুত্ব থাকে না। যেমন ভারতের প্রথম রাষ্ট্র প্রধান মহাত্মা গান্ধী লন্ডনে একটি চুক্তি করেছিলেন, সে চুক্তি বাস্তবায়ন হলে ভারতের আশু ক্ষতির সম্ভবনা। চুক্তিটি বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই নাথুরাম গডস গান্ধীজিকে গুলি করেছিলো, পরে চুক্তিটি আর বাস্তবায়ন হয়নি। নাথুরাম গডস এর দেশ প্রেমে মুগ্ধ হয়ে গান্ধীজি তাকে ক্ষমা করেছিলেন।

ততকালীন বাংলাদেশ সরকার প্রধান বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন পল্লী বিদ্যুতের সাথে চুক্তি করেন তখনো আমি কলাম লিখে প্রতিবাদ করেছিলাম, ওই লেখার কোন গুরুত্ব হয়নি। এরপর ২০-জুন ২০১৯ তারিখ দৈনিক কলম সৈনিক পত্রিকায় উপ-সম্পাদকীয়তে পল্লী বিদ্যুৎ সমিরি নানা অনিময়ন ও দূর্নীতির অভিযোগে একটি লেখা প্রকাশিত হয় ‘আদালতে মামলা করা উচিৎ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নামে’ লেখাটির সূত্র ধরে আজও বলছি পল্লী বিদ্যুত সমিতি একটি ধোকার নাম, এটি কিসের সমিতি? কেমন সমিতি? সমিতি হলে প্রতিটি গ্রাহক/সদস্য আর ওই সমিতির লভ্যাংশ কিছু হলেও সদস্যরা পাবেন। আর যদি কোন লোকসান হয় সেটিও সাধারণ সভা করে সদস্যদের অবগত করতে হবে। দেশের সরকারি-বেসরকারি বহু সমিতি রয়েছে সে সকল সমিতির মাসিক-ত্রৈমাসিক অথবা ছয় মাসে কিংবা বাৎসরিক সাধারণ সভা ডাকা হয়, সভায় সমিতির আয়-ব্যয়ের হিসাব উত্থাপিত হয়, সদস্য প্রতি লভ্যাংশ জানিয়ে দেয়া হয়, অথচ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নামের ধোকাটির এমন কোন কার্যক্রম দেখা যায় না।

সমিতির ব্যবসায়ের প্রয়োজনে যদি আমুল কোন পরিবর্তন প্রয়োজন হয় তা সাধারণ সভা ডেকে সদস্যদের সাথে আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিৎ অথচ পল্লী সমিতির শুরু হতে আজ পর্যন্ত এমন কোন সভার আয়োজন করা হয়নি। প্রতিটি গ্রাহক ওই সমিতির সদস্য কিন্তু শুরু হতে আজ পর্যন্ত সদস্যদের বাৎসরিক হিসাবে লভ্যাংশের ১০/২০ টাকা পৌছে দেয়া হয়নি। যেহেতু পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সকল আয়-ব্যয়, লাভ-ক্ষতি সবই কোম্পানী ভোগ করছে। অহেতুক সমিতি নামের ধোকা না দিয়ে সমিতি নামের শব্দটি প্রত্যাহার করার আহ্বান করছি।

একটি বিষয় বিশেষ লক্ষনীয়, বাজার থেকে কোন পণ্য ২৫০ গ্রাম ক্রয় করলে, যে মূল্য দেয়া হয় ওই পণ্য ৫ কেজি ক্রয় করলে অবশ্যই ২৫০ গ্রামের ক্রেতার চেয়ে ৫ কেজি ক্রেতা কিছু হলেও সুবিধা পাবে। নীতিগত দিয়ে বানিজ্যিক ও আবাসিকে বিদ্যুতের দর আগে থেকেই পৃথক করা হয়েছে। তবে আবাসিক ও বানিজ্যিক বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার করা হলে তার দর বেশি হয় কেন?

দেশে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এক দরে কিনে বিভিন্ন দরে বিক্রি করছে, তার হিসেব কি কোন গ্রাহক-সদস্যকে দেয়া হয়েছে? কোন গ্রাহক যখন বিদ্যুতের সংযোগ পেতে আবেদন করে আর বিদ্যুৎ ব্যবহারের চাহিদা তখন-ই দেখানো হয়। অথচ প্রতি মাসে বিলের সাথে ডিমান্ড চার্য যোগ করে দেয়া হয়। তাও আবার কোন কোন গ্রাহক-কে একাধিক ডিমান্ড চার্য জুরে দেয়া হয়, এর জবাব কে কোথায় পাব? এর জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নামে কেন আদালতে মামলা করা হবে না জবাব দেবেন কে?

পল্লী বিদ্যুতের মিটার এমন কি সম্পদ? যা ক্রয় ক্ষমতা কোন গ্রাহকের নেই? বিদ্যুৎ সংযোগের আগ্রহী গ্রহকের বাড়ি ওয়্যারিং করার পর সংযোগ প্রাপ্তির আবেদনের সাথে মিটারের টাকা জমা না দিলে সংযোগ দেয়া হয় না। তবে প্রতি মাসে ব্যবহারিক বিদ্যুৎ বিলের সাথে মিটার ভাড়া যোগ করে দেয়া হয় কিসের? এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের পদস্থ্য জনৈক কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব দেন ওই টাকা মিটারের জামানত বাবদ জমা নেয়া হয়। তাকে পুনরায় প্রশ্ন করা হলো পল্লী বিদ্যুতের ব্যবহারিক মিটারের মূল্য কত? যা ক্রয় ক্ষমতা কোন গ্রাহকের নেই, সকল গ্রাহক বংশানুক্রমে প্রতি মাসে মিটার ভাড়া দিতেই থাকবে? যেহেতু সংযোগ গ্রহনের পূর্বে মিটারের জামানত বাবাদ যে টাকা জমা নেয়া হয়, কোন কারণ বশত সংযোগ বন্ধ করা হলে জামানতের টাকা ওই গ্রাহককে ফেরৎ দেয়া হয় কি?

অবিলম্বে পল্লী বিদ্যুতের মিটারের মূল্য গ্রহকদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রেখে মিটার ভাড়া বন্ধ করা হোক, নইলে গ্রাহক নির্যাতনের অভিযোগ এনে কেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নামে আদালতে মামলা করা হবে না তার জবাব কে দেবেন?

যেহেতু পল্লী বিদ্যুতের প্রতিটি গ্রাহক/সদস্য আপনার ক্রেতা আর আপনি ওই প্রতিষ্ঠানের বিক্রেতা সেহেতু ক্রেতার উপর ভ্যাট আরোপ করা উচিৎ নয়। ব্যবসায় যদি না পুশে দরের মধ্যে ২/৪ % বাড়িয়ে নিন তবুও ক্রেতার উপর থেকে ভ্যাট আদায় করা বন্ধ করা হোক।
প্রতি মাসে বিদ্যুৎ ব্যবহারিক বিলের সাথে ডিমান্ড চার্য/ চাহিদা খরচ বন্ধ করতে হবে।
বিদ্যুৎ ব্যবহারিক মিটার গ্রাহকের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এনে মিটার ভাড়া বন্ধ করতে হবে।
ক্রেতার নিকট থেকে ভ্যাট বন্ধ করা হোক। আবাসিক প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দর বৈষম্যতা দূর করা হোক।
সমিতি নামের ধোকা প্রত্যাহার করতে হবে নইলে গ্রাহক/সদস্যদের ন্যায্য অধিকার দেয়া হোক।

পল্লী বিদ্যুতের প্রিয় গ্রাহক সদস্যদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান আর ঘুমিয়ে থাকার সময় নেই, উল্লেখিত দফা গুলোর দাবী আদায় না হলে অবিলম্বে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নামে উচ্চ আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হোক।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD