প্রবর্তিত ঈদ এ মিলাদুন্নবী সম্পর্কিত কিছু কথা

Spread the love

বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শুকুর মাহমুদ: ঈদ এ মিলাদুন্নবীর অর্থ, নবীর জন্মদিনের খুশি, মিলাদুন্নবীর অর্থ নবীর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করা। প্রত্যেক ইমানদারের ইমানী দায়িত্ব নবীর মিলাদ পড়া-নবীর জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা করা। নবীর সিরাতকে জানতে বা বুঝতে শুরুতে জন্ম বৃত্তান্ত এসে যায়। সিরাত নবীর জীবনাদর্শ, জীবনী লিখতে আগে জন্মবৃত্তান্ত লিখতে হয়। নবী করিম (স.) এর জীবনাদর্শ লিখতে প্রত্যেক হাদিস সংগ্রহকারী-ই নবীজির জন্মবৃত্তান্ত লিখেছেন। এ ক্ষেত্রে মিলাদে নতুন সংযোজনের কিছু নেই, যেহেতু প্রত্যেক হাদিস গ্রন্থে নবীর মিলাদ পড়া হয় সে সুত্রে প্রচলিত মিলাদ বা মিলাদুন্নবী যাকে বলা হয় এটি ইসলামে নতুন সংযোজন।

দুনিয়ার সকল কিছুই পরিবর্তনশীল, পরিবর্তন-পরিবর্ধণ সকল কিছুতেই চলে, কিন্তু পবিত্র ইসলাম ধর্মে কোন পরিবর্তন-পরিবর্ধন সংশোধন-সংযোজন বা বিয়োজনের সুযোগ নেই। ইসলাম পরিপূর্ন একটি ধর্ম, নতুন কিছু যোগ করা হলে তা গ্রহণযোগ্য নয়, বিদআত।

আল্লাহ-র হাবিব (স.) যেদিন বলেছেন আজ হতে ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করলো। তার পর হতে ইসলামে আর কোন কিছুই বাড়াবারি বা ছাড়াছারি করার সুযোগ নেই। রাসূলে আকরাম (স.) আরও বলেছেন ‘আমি যা করিনি, আমি যা বলিনি’ তা যদি কেউ করে আমার নামে চালিয়ে দেয়, সে আমার উম্মত নয়। সে সূত্রে বর্তমানে যা করা হচ্ছে এগুলো সবই বিদআত।

মহানবীর ইন্তেকালের পূর্বে ইসলাম পরিপূর্নতা ঘোষণা দিয়ে গেছেন। নবীজি ইন্তেকাল করেছেন ১১ হিজরী সালের রবিউল আউয়াল চাঁদের ১২ তারিখ, অতপর ৫৯৩ বছর পর ৬০৪ হিজরীতে ইসলামে নতুন একটি সংযোজন করেন ইরাকের ততকালীন শাসক মুজাফফর উদ্দিন আবু সাঈদ কুকড়ি। নবীজির ইন্তেকালের দিন ১২-ই রবিউল আউয়াল ওইদিন নবীর জন্মদিন ধার্য্য করে ঈদ এ মিলাদুন্নবী চালু করেছেন। তিনি ঈদ এ মিলাদুন্নবী প্রবর্তন করে ৬৩০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন।

নবীজি জন্ম-মৃত্যুদিনের উৎসব আয়োজন, খাওয়া-দাওয়া, আনন্দ মিছিল শোক র‌্যালি করেননি, বরং নিষেধ করেছেন। তাঁর নিষেধ মেনে সাহাবা আজমাইনগনও এমন কিছু করেননি, তাবেইনরা-তাবে তাবেইনরাও করেননি। নবীজির হুকুম নিষেধ মানা সুন্নাত। নবীজির হুকুম নিষেধ অমান্য করা এবং বাড়াবারি ও ছাড়াছারি করা বিদআত ও গুনাহ।

মুজাফফর উদ্দিন আবু সাঈদ কুকড়ির সূত্র ধরে ১২শ হিজরীতে ইসলামে নতুন আর একটি সংযোজন করেন লাহোরের হাজী এনায়েতুল্লাহ ও মুন্সি আব্দুল মজিদ ১২-ই রবিউল আউয়ালে নবীর জন্মদিনে ঈদ এ মিলাদুন্নবীর সাথে জুলুস চালু করেছেন। ওই সূত্র ধরে বর্তমান পৃথিবীর অনেক দেশ-ই মহা ধুম-ধামের সাথে জুলুস-আনন্দ মিছিল, র‌্যালি করছে। আমাদের দেশে ওইদিন সরকারি ছুটিও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

নবীজির জন্ম তারিখ নিয়ে রয়েছে নানা মতপার্থক্য, তিনি ইংরেজি ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের রবিউল আউয়াল চাঁদে প্রথমার্ধে জন্ম গ্রহণ করেছেন। ইংরেজি মাস ও তারিখের সাথে সমন্নয় করে একেক গবেষকের মতে একেক তারিখ এসেছে। তবে তাঁর ইন্তেকাল হয়েছে ১১ হিজরী সালের ১২-ই রবিউল আউয়াল। এটি তাঁর ইন্তেকালের দিনে জন্মদিন ধার্য্য করে ঈদ এ মিলাদুন্নবী চালু করেছেন ওই শাসক। তিনি নিজের জ্ঞানে-ই ইহা করেছেন? নাকি ইয়াহুদি-খ্রিষ্টানের ষরযন্ত্রের সিকার হয়েছেন তা বোধগম্য নয়। অতপর ১২শ হিজরীতে লাহোরের হাজী এনায়েতুল্লাহ ও মুন্সি আব্দুল মজিদ এর জুলুস এমন ষরযন্ত্রের সিকার ছিলো কি না তাও অনুমান করা মুশকিল।

ঈদ এ মিলাদুন্নবী নিয়ে চলমান প্রেক্ষাপটে যা দেখা যাচ্ছে, সে প্রশ্নের জবাব খুঁজে মিলছে না। এমন বিষয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে পুরো মুসলিম জাতি। দেশব্যাপী ঈদ এ মিলাদুন্নবীর উৎসব জুলুস, আনন্দ মিছিল ও র‌্যালির মাধ্যমে উদযাপন করা হচ্ছে। বিষয়টি যদিও ইসলাম সম্মত নয়, তারপরও যুক্তির ক্ষেত্রে মানলাম, কিছুক্ষনের জন্য মেনে নিলাম। তবে নবীজির জন্মদিনে র‌্যালির অগ্রভাগে বিশেষ বাহনে পুষ্পমাল্য গলায় নিয়ে যাকে সামনে করে র‌্যালি করা হচ্ছে, তিনি কে? যারা জুলুসে অংশ নিয়েছে নবীর প্রেমের পাগলেরা, আশেকে রাসূল হয়ে জুলুস নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। তাদের মধ্যে কেউ ফজরের নামায আদায় করেছে, কেউ নামায আদায় করা ছাড়াই বেড়িয়েছে, কেউ ঘুম থেকে উঠে হাত-মুখ ধোয়ার সুযোগ পায়নি। নবীর প্রেমের টানে বেড়িয়েছে আনন্দ মিছিলে।

প্রশ্ন হচ্ছে জন্মদিনের উৎসব করা হচ্ছে নবীর, অথচ সাজানো গাড়িতে গলায় মালা পরে হুজরাসনে আসিন হয়েছেন যিনি, তিনি কি নবীর অনুযের ভূমিকায় রয়েছেন? যিনি নবীর জন্মদিনের উৎসবের বিশেষ বাহনে পুষ্পমাল্য গলায় নিয়ে মিছিলের অগ্রণী ভুমিকা পালন করছেন, এত বড় অধিকার কোথায় পেয়েছেন? এর জবাব দিতে হবে প্রস্তুত থাকুন। নবী রবিউল আউয়াল চাঁদের ১২ তারিখে ইন্তেকাল করেছেন এটি সর্বজন শীকৃত। লক্ষ লক্ষ সাহাবি রেখে তাঁর মিশন শেষ করে পারি জমিয়েছেন ¯্রষ্ঠার ডাকে, যার স্বাক্ষী দিয়েছেন সাহাবা আজমাইনগণ।

এমন সত্য প্রমাণের পরও আজ মানুষ তাঁর ইন্তেকালের দিনে জন্মদিন ধার্য্য করে জুলুস-আনন্দ মিছিল, ঈদ উদযাপন করছে। এটি মুসলিম জাতির জন্য লজ্জাস্কর বিষয়।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD